নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ে। আজ এ ম্যাচের আবেদন কেমন? একেবারে নেই বললেই চলে। অথচ ১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশটি যখন ক্রিকেটাঙ্গণে হাঁটিহাঁটি পা পা করে এগুচ্ছিল তখন মানুষের কাছে এ দু’দলের লড়াই মানেই ছিল ‘সুপার ক্লাসিকো’। যে কোন দলের বিপক্ষে খেলার আগেই সমর্থকদের সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি ছিল ‘সম্মানজনক হার’। কালের বিবর্তণে যখন আমরা প্রতিপক্ষের বুকে আতঙ্ক ছড়াতে পেরেছি, তখনই বুঝেছি হার মানেই অসম্মানের। হার কখনোই সম্মানের হয়না। তবে সমীহ জাগানিয়া হতে পারে।
আজ সকাল পেরিয়ে দুপুর হলেই আবারও মুখোমুখি হবে দল দুটি। জিম্বাবুয়ের হারারে স্পোটিং ক্লাবের মাঠে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে এগিয়ে যাওয়ার লড়াই। অথচ তেমন কোন উত্তেজনা, উত্তাপ নেই। নেই হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্ব›দ্বীতার আভাস। তবুও নিরুত্তাপ খেলায় যেহেতু একটা ফল আসবে, তাই সবারই প্রত্যাশা জয়।
পরিসংখ্যানের পাতা দেখে একটি বিষয় না তুললেই নয়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সবশেষ টানা ১৬ ম্যাচে অপরাজিত তামিম ইকবালের দল। আজ সেই সংখ্যাটা ১৭ তে নিয়ে যেতে চান তিনি। তবে টেস্টে জয় যতটা সহজে এসেছে, ওয়ানডেতে ততটা সহজ হবে না- অধিনায়ক তামিম সেটা আগেই বলে দিয়েছেন। টেস্টের তুলনায় জিম্বাবুয়ের ওয়ানডে দল ভালো। কোনো এক ‘সুন্দর’ সকালে হয়তো তারা বাংলাদেশের ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন ভেঙেও দিতে পারে। হারারের কন্ডিশনে জিম্বাবুয়ের ‘সুন্দর’ সকাল মানেই বাংলাদেশের অসুন্দর দিনের শুরু।
টানা ১৬ ম্যাচে জয়ের পরও কেন সাবধানী তামিম? খর্বশক্তির জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে লড়তেও কি সতর্কতার দরকার আছে? হ্যাঁ, আছে। এই হারারেতে সবশেষ খেলা তিনটি ম্যাচেই শেষ হাসিটা ছিল আফ্রিকার দেশটির। শুধু তাই নয় আজকের ভেন্যুতে দু’দল সর্বমোট ১৭টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের জয় মাত্র ছয়টিতে, বাকি ১১ ম্যাচেই দর্শকদের ‘ভিক্টোরি সাইন’ দেখিয়ে মাঠ ছেড়েছেন জিম্বাবুইয়ানরা। বাংলাদেশ যে টানা ১৬টি ম্যাচ জিতেছে, তার সবগুলোই কিন্তু ছিল ঘরের মাঠে। সবশেষ লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের হার ২০১৩ সালে, বুলাওয়েতে। স্বাগতিকরা সেবার সিরিজ জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে। সেটিই ছিল জিম্বাবুয়েতে বাংলাদেশের সর্বশেষ সফর। এই আট বছরে দু’দলের বদলও চোখে পড়ে মোটা দাগে।
‘ঘরের মাঠে বিড়ালও বাঘ’-এ প্রবাদটা শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই নয়, সত্য জিম্বাবুয়ের ক্ষেত্রেও। জিম্বাবুয়ের মাঠে এ পর্যন্ত দু’দল খেলেছে ২৮টি ম্যাচ। সেখানে জিম্বাবুয়ের জয় ১৫টিতে, বাংলাদেশের জয় ১৩ ম্যাচে। আবার বাংলাদেশের মাঠে মোট ম্যাচ আয়োজন হয়েছে ৪৪টি। সেখানে জয়ের পাল্লা ভারী টাইগারদেরই। বাংলাদেশের ৩৩ জয়ের বিপরীতে ব্রেন্ডন টেইলররা জিতেছে ১১টি। এছাড়া দু’দল সব ভেন্যু মিলিয়ে ম্যাচ খেলেছে ৭৫টি। বাংলাদেশের ৪৭ জয়ের বিপরীতে জিম্বাবুয়ে জিতেছে ২৮টিতে। পরিসংখ্যানের পাল্লায় বাংলাদেশ পুরোপুরি ফেভারিট হলেও ঘরের মাঠের একটা বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে জিম্বাবুয়ে। তবে বছরের হিসেবে টানা ৮ বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হার নেই বাংলাদেশের। যেখানে ম্যাচের সংখ্যা ১৬। দু’দলের দ্বৈরথে একটু চোখ বুলালে দেখা যায়, বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে প্রথম মাঠে নেমেছিল ১৯৯৭ সালে। আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জিততে সময় লেগেছিল ৭ বছর (২০০৪ সালে)। ম্যাচের হিসেবে ১৩টি।
টাইগারদের এবারের জিম্বাবুয়ে সফরের শুরুটাও হয়েছে দুর্দান্ত। সফরের একমাত্র টেস্টে জিম্বাবুয়েকে ২২০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে মুমিনুলরা। ক্রিকেটাররাও আছেন বেশ ছন্দে। তাই এবার ওয়ানডে অধিনায়ক তামিমও একই পথে হাঁটতে চান। জিম্বাবুয়ে বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডের আগে সকালের পেসবান্ধব উইকেটের দিকে মনোযোগ টাইগারদের ওয়ানডে অধিনায়কের। আগে বোলিং করলে তিনি প্রথম ঘন্টা কাজে লাগানোর তাগিদ দিলেন বোলারদের। আর ব্যাট করতে নামলে সেটা চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মানছেন তামিম। হারারে থেকে ম্যাচপ‚র্ব অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তামিম বলেন, ‘জিম্বাবুয়েতে ২-৩টা সিরিজ খেলেছি তবে ৬-৭ বছর আগে। সাড়ে নয়টায় ম্যাচ শুরু হবে, তাই বোলাররা শুরুতে সুবিধা হবে বিশেষ করে প্রথম ঘণ্টায়। এটা চ্যালেঞ্জিং হবে যদি আগে ব্যাট করি। আগে ব্যাট করলে সাবধান থাকতে হবে। আগে বোলিং করলে এই এক ঘণ্টা কাজে লাগাতে হবে।’
এদিকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজটি ওয়ানডে সুপার লিগের অংশ। তাই এই সিরিজ থেকে ৩০ পয়েন্ট তুলে নেওয়া টাইগারদের জন্য খুবই গুরুত্বপ‚র্ণ। ইতোমধ্যে ৯ ম্যাচে ৫ জয়ে ৫০ পয়েন্ট নিয়ে সুপার লিগের পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে সফরে প্রতিটি ম্যাচ জিতে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় রাখতে চান তামিম। সেক্ষেত্রে প্রথম ম্যাচ দিয়ে ভালো শুরুকে চাবিকাঠি মানছেন তিনি। সিরিজ জয়ের ব্যাপারেও আশাবাদী টাইগার অধিনায়ক, ‘ভালো শুরু করাই আমার কাছে কী পয়েন্ট। আমাদের সব সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। আমি তো চাইব প্রত্যেক ম্যাচই জিততে। কিন্তু দিন শেষে এটা ক্রিকেট। আশাবাদী সিরিজ জিতব। কালকের (আজ) প্রথম ম্যাচই সবচেয়ে গুরুত্বপ‚র্ণ।’
দু’দলের শুরুর ও শেষের পরিসংখ্যানে কেউ আশা খুঁজবেন, কেউবা খুঁজে পেতে পারেন হতাশা। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে এক সময়ের শক্তিশালী দলটির আজ কি হাল! এবার যদি আমরা নিজেদেরই প্রশ্ন করি, যতটুকু এগিয়ে যাওয়া দরকার ছিল আমরা কি ততটুকু এগুতে পেরেছি? উত্তরটা না হয় নিজের মতো করেই খুঁজে নিন। তবে দল যেমনই হোক না কেন জয় সর্বদাই আনন্দের। কাজেই তামিমের দলের কাছ থেকে আমরাও জয়ই প্রত্যাশা করি। ম্যাচশেষে তামিম হাসলে, হাসবে গোটা বাংলাদেশ। তিনি কাঁদলে, কাঁদবে সারাদেশ।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে
মুখোমুখি বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ে
ম্যাচ ৭৫ ৪৭ ২৮
জিম্বাবুয়েতে ২৮ ১৫ ১৩
বাংলাদেশে ৪৪ ৩৩ ১১
হারারেতে ১৭ ৬ ১১
সর্বাধিক ম্যাচ
বাংলাদেশ : মুশফিকুর রহিম, ৪৮টি
জিম্বাবুয়ে : এল্টন চিগুম্বুরা, ৫৫টি
অধিনায়ক হিসেবে
বাংলাদেশ : হাবিবুল বাশার, ২০টি
জিম্বাবুয়ে : প্রসপার উৎসেয়া, ২৬টি
সর্বোচ্চ দলীয়
বাংলাদেশ : ৩২২/৩, সিলেট ২০২০
জিম্বাবুয়ে : ৩২৩/৭, বুলাওয়ে ২০০৯
সর্বনি¤œ দলীয়
বাংলাদেশ : ৯২, নাইরোবি ১৯৯৭
জিম্বাবুয়ে : ৪৪, চট্টগ্রাম ২০০৯
বড় জয়
বাংলাদেশ : ১৬৯ রানে ও ৯ উইকেটে
জিম্বাবুয়ে : ১৯২ রানে ও ৮ উইকেটে
সর্বাধিক রান
বাংলাদেশ : তামিম ইকবাল, ৪১ ম্যাচে ১৬৮৪
জিম্বাবুয়ে : ব্রেন্ডন টেইলর, ৫৩ ম্যাচে ১৪১০
সেরা ইনিংস
বাংলাদেশ : লিটন দাস ১৭৬, সিলেট ২০২০
জিম্বাবুয়ে : চার্লস কভেন্ট্রি ১৯৪*, বুলাওয়ে ২০০৯
সর্বাধিক সেঞ্চুরি
বাংলাদেশ : শাহরিয়ার/তামিম/সাকিব, ৩টি করে
জিম্বাবুয়ে : ব্রেন্ডন টেইলর, ৫৩ ম্যাচে ২টি
সর্বাধিক ফিফটি
বাংলাদেশ : তামিম ইকবাল, ৪১ ম্যাচে ১২টি
জিম্বাবুয়ে : ব্রেন্ডন টেইলর, ৫৩ ম্যাচে ১১টি
সিরিজে সর্বাধিক রান
বাংলাদেশ : ইমরুল কায়েস, ৩ ম্যাচে ৩৪৯
জিম্বাবুয়ে : চার্লস কভেন্ট্রি, ৫ ম্যাচে ২৯৬
সেরা জুটি
বাংলাদেশ : তামিম/লিটন ২৯২ (১ম উই.), সিলেট ২০২০
জিম্বাবুয়ে : গ্রান্ট/অ্যান্ডি ১৬১ (১ম উই.), নাইরোবি ১৯৯৭
সর্বাধিক উইকেট
বাংলাদেশ : সাকিব আল হাসান, ৪৫ ম্যাচে ৭৪টি
জিম্বাবুয়ে : রেমন্ড প্রাইস, ২৫ ম্যাচে ৩৫টি
সেরা বোলিং
বাংলাদেশ : আব্দুর রাজ্জাক, ৯.২-০-২৯-৫
জিম্বাবুয়ে : ব্রায়ান স্ট্র্যাং, ১০-২-২০-৬
সিরিজে সর্বাধিক উইকেট
বাংলাদেশ : আব্দুর রাজ্জাক, ৫ ম্যাচে ১৫টি
জিম্বাবুয়ে : ব্রায়ান ভিটোরি, ৩ ম্যাচে ১১টি
সর্বাধিক ক্যাচ
বাংলাদেশ : মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, ৩৮ ম্যাচে ১৮টি
জিম্বাবুয়ে : হ্যামিল্টন মাসাকাদজা, ৫২ ম্যাচে ২৫টি
সর্বাধিক ডিসমিসাল
বাংলাদেশ : মুশফিকুর রহিম, ৪৮ ম্যাচে ৬৩টি
জিম্বাবুয়ে : ব্রেন্ডন টেইলর, ৫৩ ম্যাচে ৪৩টি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।