মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
যুক্তরাষ্ট্র তার দীর্ঘতম যুদ্ধের সমাপ্তি টেনে আফগানিস্তান থেকে বিদায় নিয়েছে। দেশটি হাজার হাজার নিজস্ব সেনা হারিয়েছে এবং লাখ লাখ আফগান সেনা ও বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু পর্যবেক্ষণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র আফগান যুদ্ধে ২ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয় করেছে। তবে এতে আফগানিস্তানের যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটেনি। বরং পরিস্থিতি ক্রমেই আরো খারাপ হতে চলেছে।
আফগানিস্তান থেকে মার্কিনীরা চলে পাওয়ার পর ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দেয়া এবং ৯/১১-এর পর মার্কিন-সমর্থিত আফগান বাহিনী কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত হওয়া তালেবান উগ্রপন্থীরা ভয়াবহভাবে প্রত্যাবর্তন করেছে। তারা প্রায় অর্ধেক আফগানিস্তানের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং বাকী অংশগুলিকে দখলের পাঁয়তারা করছে।
মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের বহু আগেই আফগান বাহিনী তালেবানদের কাছে আত্মসমর্পন করতে শুরু করে। আফগানিস্তানের অনেক জেলা জোর করে দখলে নেয়ার পরিবর্তে তালেবানদের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। আফগান সৈন্য এবং পুলিশ সদস্যরা মার্কিন অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং যানবাহনের বহর ফেলে রেখে আত্মসমর্পণ করেছে।
এই সপ্তাহে আফগান সেনাদের মধ্যে এক হাজারেরও বেশি উত্তর-পূর্ব প্রদেশ বাদাখশান থেকে প্রতিবেশী তাজিকিস্তানে পালিয়ে গেছে। তালেবানরা সুযোগ পেয়ে আরও চাপ সৃষ্টি করছে এবং এর মধ্যে আফগান বাহিনীর টিকে থাকার লড়াই দেশটিতে গৃহযুদ্ধ আরও তীব্র করে তুলতে পারে। অন্যান্য দেশ চীন, ভারত, ইরান, রাশিয়া এবং পাকিস্তানের মধ্যে অনেকে আমেরিকার শূন্যস্থান পূরণের চেষ্টা করলেও কেউ কেউ আবার যুদ্ধবাজদের কাছে অর্থ ও অস্ত্রও সরবরাহ করবে। এরফলে, ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিরবচ্ছিন্ন যুদ্ধে ভোগা দেশটিতে আরো রক্তক্ষয় এবং ধ্বংস ঘটবে। এভাবেই যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে ভয়াবহ এক পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়েছে।
ওয়াশিংটনের একটি থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অফ ডেমোক্রেসির পরিচালিত এক হিসাব অনুযায়ী, আফগানিস্তানের প্রায় ৪শ’ জেলার প্রায় অর্ধেক তালেবানদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কূটনীতিকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, তালেবানদের এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বরাতে জানা যায়, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মনে করে যে, ৬ মাসের মধ্যেই পতন ঘটতে পারে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সরকারের।
অনেকে আশা করেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র তার ২০ বছরের পুরানো যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে আফগানিস্তানকে একটি ভয়াবহ ধর্মান্ধতা থেকে মুক্তি দেবে। তবে আজকের সাধারণ আফগানদের জীবন ২০০১ সালের তুলনায় অনেক বেশি নিরাপত্তাহীন। ২০০১ সালে যখন দেশটিতে মার্কির সেনা মোতায়েন শুরু হয়, তখনকার তুলনায় গত বছর নাগরিক হতাহতের ঘটনা প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি ছিল।
তালেবানরা ক্ষমতায় আসলে তাদের পূর্ববর্তী শাসনামলের মতোই তারা নৃশংস ধর্মান্ধতা চাপিয়ে আফগানিস্তানকে আবার কয়েক যুগ পেছনে ঠেলে দেবে। তারা মহিলাদের তাদের বাড়িতে আটকে রাখবে, স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেবে এবং ভুল পোশাক পরিধার বা ভুল সঙ্গীত শোনার মতো পাপের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এখন আর তার মিত্র আফগান সরকারের পিছনে সময় নষ্ট করতে প্রস্তুত নয়।
আফগানিস্তানের পাশর্^বর্তী জেলা থেকে কাবুলে আশ্রয় নেয়া ২২ বছর বয়সী মুর্তজা সুলতানি জানিয়ছেন যে, জুনের মাঝামাঝিতে তার গ্রামটি বিন বাধায় তালেবানদের কাছে হস্তান্তরিত হয়। তারা তাদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবীর সন্ধান করছে বলে মুর্তজা পালিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ‘এমনকি যদি তারা আমাদের হত্যা নাও করে, তাহলেও তারা মানুষকে সীমাবদ্ধ করে দেয় এবং এটি বেঁচে থাকার কোনও উপায় নয়।
তালেবানরা শুধু কাবুলেই নয়, দেশের সর্বত্রই বিরাজমান রয়েছে। তারা শিয়াদের, ধর্মনিরপেক্ষদের, গুরুত্বপূর্ণ চাকরিতে নিয়োজিত মহিলাদের প্রানহানি ঘটানোর লক্ষ্যে রয়েছে, যারা তালেবান মতাদর্শের বিপরীতে অবস্থান করছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিশালী, স্বনির্ভর আফগানিস্তান তৈরি করতে কেবল ব্যর্থই হয়নি, পাশাপাশি, একটি শক্তিশালী বিদ্রোহকে পরাস্ত করতেও ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান আফগানিস্তানের অর্থনীতি কয়েক দশক আগের চেয়ে বড় হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র কখনই আফগানিস্তানের সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। তারা দেশটি থেকে দায়িত্বহীনভাবে প্রস্থান করে একটি বিস্ময়কর ব্যর্থতার নজির স্থাপন করেছে। সূত্র: দ্য ইকোনোমিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।