পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দ্বিতীয় বছরে এসে বিশ্বজুড়ে যখন করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনেশন চলছে, একের পর এক নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টে করোনা অতিমারির ঢেউ সামলে পশ্চিমা বিশ্ব যখন নিওনরমাল অবস্থায় পৌঁছতে শুরু করেছে, তখন তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো ভয়ঙ্কর অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। চীনের ওহান থেকে শুরু হওয়া করোনা অতিমারির মধ্য দিয়ে চীন তার নতুন বাস্তবতায় বিশ্বকে যে মেসেজ দিচ্ছে তাতে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, আগামী বিশ্বব্যবস্থা ও বিশ্বঅর্থনীতিতে চীন একটি সমান্তরাল নেতৃত্বে আবির্ভুত হতে চলেছে। কারণ, তৃতীয়বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র চীনই কারোনাভাইরাসের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে নতুন সম্ভাবনাকে মেলে ধরতে সক্ষম হচ্ছে। ভ্যাক্সিন কূটনীতি, পেন্ডেমিক ম্যানেজমেন্ট ও অর্থনীতিতে ভারতীয় উপমহাদেশ, মধ্যপ্রাচ্য, ল্যাটিন আমেরিকা এবং আফ্রিকার দেশগুলো যেন নতুন করে পশ্চিমা ঔপনিবেশিক বাস্তবতার মুখোমুখি হতে চলেছে। ভারতের আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ভারসাম্যহীনতা, সেখানকার বর্তমান শাসকশ্রেণীর ধর্মীয় কূপমন্ডুকতা এবং জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে পুরো উপমহাদেশে এক ধরণের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আঞ্চলিক অর্থনীতিতে বাংলাদেশ যে সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে, করোনাকালীন বাস্তবতা সেখানে যেন অনিশ্চয়তার দেয়াল তুলে দিয়েছে। আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারতের অস্বচ্ছ ভূমিকার কারণে প্রতিবেশীরা ভারত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও ভারতের বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে প্রমাণ দিতে গত একযুগ ধরে বাংলাদেশের শাসকরা সম্ভাব্য সবকিছুই করেছে। সব ডিম এক ঝুড়িতে রাখার বিপদ সম্পর্কে আধুনিক ব্যাবস্থাপকদের যথেষ্ট জ্ঞান ও সচেতনতা থাকার কথা, বিশেষত করোনা পেন্ডেমিকের মত বৈশ্বিক বাস্তবতায় শুধুমাত্র ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের উপর নির্ভরশীলতার মাশুল বাংলাদেশকে এখন দিতে হচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্বের কোনো দেশই কোনো একক ভ্যাকসিনের উপর নির্ভর করেনি। বাণিজ্যিকভাবে প্রাপ্ত প্রায় সবগুলো উৎস থেকেই ভ্যাকসিন সংগ্রহ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেনসহ ইউরোপের দেশগুলো ইতিমধ্যে কোটি কোটি মানুষকে ভ্যাক্সিন দিয়ে সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গোয়ার্তুমি আমেরিকায় পেন্ডেমিকে নজিরবিহীন অবস্থা সৃষ্টি করেছিল, সেখানে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর ভয়াবহ দৃশ্য যখন পুরো বিশ্বকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছিল, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কণ্ঠে শোনা গেছে একটি জাত্যাভিমানী আত্মম্ভরিতা। বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাক্সিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনিস্টিটিউটের উপর ভর করে ভারতীয় শাসকরা ভ্যাক্সিন কূটনীতির ডিগবাজি শুরু করে দিয়েছিল। ভারতে দেখা গেলো বিশ্বের সবচে দ্রæত সংক্রমণশীল ও প্রাণঘাতী ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার। প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষের সংক্রমণ, হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর সময় ভ্যাক্সিন কোনো কাজে আসে না। এর জন্য প্রথমে প্রয়োজন কোটি কোটি মানুষের ঘরে থাকার মত অর্থনৈতিক সামর্থ্য, লাখ লাখ মানুষের সুচিকিৎসা ও অক্সিজেন সরবরাহ এবং প্রয়োজনীয় মুহূর্তে আইসিইউ সেবা নিশ্চিত করার গ্যারান্টি। অস্ত্র প্রতিযোগিতায় পারমাণবিক ক্লাবের সদস্য এবং বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হলেও এসব ক্ষেত্রে ভারত চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। করোনাত্তোর বিশ্বে ভারতের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও আঞ্চলিক প্রভাব কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা নিয়ে ভারতীয়দের শঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
ভারতীয় বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই স্বীকার করছেন, করোনা পেন্ডেমিকে ভারতের অবস্থা বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে ভয়বহ। বিশেষত স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় ভারতের তিরিশ কোটি শিশু-কিশোরের ভবিষ্যত নিয়ে ঘোরতর অনিশ্চয়তাকে সবচেয়ে বড় ক্ষতি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। শতকোটি মানুষের বড় দেশ ভারতের প্রতিবেশী হিসেবে এবং ভারতের ক্ষমতাসীনদের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হওয়ায় ভারতের যেকোনো নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশকেও সমভাবে গ্রাস করে ফেলতে দেখা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে স্থলবন্দর দিয়ে পরিচালিত নিত্যপণ্যের বাজার থেকে শুরু করে করোনা ভ্যাক্সিন, অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ সবকিছুতেই ভারতের দ্বারা বড় ধরণের ধাক্কা সামলাতে হয়েছে বাংলাদেশকে। অথচ ভারতের রাজনৈতিক নেতারা ডায়াসে দাঁড়িয়ে ঔপনিষদিক বিশ্বপরিবারের বয়ান দিচ্ছেন, ভারতীয় মন্ত্রী ও কূটনীতিকরা ইউরোপ-আমেরিকায় গিয়ে করোনা পেন্ডেমিক মোকাবেলায় সম্মিলিত ও সমন্বিত বৈশ্বিক ইনিশিয়েটিভের কথা বলছেন, অথচ খোঁড়া অজুহাত খাড়া করে পাশের প্রতিবেশীর উপর অযাচিত নিষেধাজ্ঞা খাড়া করে ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিতে তারা মোটেও দেরি করছে না। বাংলাদেশকে এখন সেই দায়ভার বহন করতে হচ্ছে। প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। এরপরও রফতানিমুখী গার্মেন্ট কারখানাসহ কলকারখানা চালু রেখে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। গত ১২ বছর ধরে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অচলাবস্থা ও অনিশ্চয়তা ভর করলেও দেশে রাজনৈতিক আন্দোলন-বিশৃঙ্খলা, অস্থিতিশীলতা না থাকায় বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও একটি স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্য দিয়ে মধ্য আয়ের দেশে পরিনত হওয়ার পথে পা বাড়াচ্ছিল দেশ। যদিও অর্থনীতির এই অসম প্রতিযোগিতা দেশের সুষম সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করছে না। অবকাঠামো উন্নয়নের মেগা প্রকল্পগুলোর সুফল সব মানুষকেই বাড়তি সুবিধা এনে দিতে পারলেও ক্রমবর্ধমান অতিদরিদ্র মানুষ যারা নিজেদের অস্তিত্বের সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তাদের কাছে মেগা উন্নয়ন তেমন অর্থবহ ভূমিকা রাখতে পারছে না। ক্রমবর্ধমান সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্য উন্নয়নের সুফল ধনীদের হাতে কুক্ষিগত করে ফেলতে চাইছে। করোনা পেন্ডেমিকের লকডাউন-শাটডাউনে কোটি কোটি মানুষ কাজকর্ম, আয়-রোজগারের পথ হারিয়ে ভিক্ষুকের মত নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে কিছু কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের আয় দ্বিগুণ হচ্ছে, সেই সাথে সরকারের সুবিধাভোগী একটি শ্রেণী রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছে। করোনা পেন্ডেমিকে বিপর্যয়ের মধ্যেও বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া তথ্য অনুসারে, গত অর্থবছরে দেশে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার। অপরদিকে জাতীয় অর্থনীতির চালচিত্র হচ্ছে, করোনা পেন্ডেমিকে দেশের ৮০ ভাগ সাধারণ মানুষের আয় কমে গেছে।
অজানা নতুন ভাইরাসে মৃত্যুর বিভীষিকা সারাবিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ধসিয়ে দিতে বসেছে। সেখানে করোনা ভ্যাক্সিন এবং অনলাইন বিজনেসে অর্থনীতির নতুন প্যারাডাইম শিফ্ট হচ্ছে। বিশ্বের সব মানুষকে একযোগে গ্রাস করা এমন একটি ভয়াবহ প্রাণঘাতী ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শুরু থেকে এ নিয়ে আন্তর্জাতিক পরাশক্তিগুলোর মধ্যে বেøইম গেম এবং বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক প্রতিযোগিতার পাশাপাশি কনস্পিরেসি থিওরির ডালপালা বিস্তার করে চলেছে। এসব থিওরির সত্যমিথ্যা নিরূপণ এখন তো নয়ই, হয়তো কখনোই সম্ভব হবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাইন-ইলেভেন সন্ত্রাসী বিমান হামলার পেছনে কারা জড়িত তা বেøইমগেম ও কনস্পিরেসি থিওরির অন্ধকারের চাপা পড়ে গেলেও প্রেসিডেন্ট বুশের ঘোষিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অন্তহীন যুদ্ধে কারা লাভবান হয়েছে তা এখন অনেকটাই স্পষ্ট। বিভিন্ন রকম জুজু, আঞ্চলিক দ্ব›দ্ব-সংঘাত ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে মধ্যপ্রাচ্যের রাজতান্ত্রিক দেশগুলোর কাছে অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধাস্ত্র গছিয়ে দিয়ে পেট্রোলিয়াম বিক্রির আয় থেকে হাজার হাজার কোটি ডলার বাগিয়ে নেয়া থেকেই বুঝা যায়, পশ্চিমাদের অন্তহীন যুদ্ধে লাভবান হয়েছে মিলিটারি ইন্ডাসট্রিয়াল কমপ্লেক্স। সউদী আরব ও আমিরাতের কাছে বিক্রি করা হাজার হাজার কোটি ডলারের যুদ্ধাস্ত্রের বাস্তব পরীক্ষার জন্য একটি নিজস্ব ওয়ার থিয়েটার হিসেবে ইয়েমেনকে ব্যবহার করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে তিন হাজার বছরের ধারাবাহিক সভ্যতার অন্যতম কেন্দ্রভূমি ইয়েমনের ঐতিহ্যবাহী সভ্যতার নিদর্শনগুলোকেই শুধু মাটির সাথে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়নি, লাখ লাখ শিশু এখন দুর্ভীক্ষ পীড়িত জীবন্ত কঙ্কালে পরিনত হওয়ার ছবিগুলো বিশ্বসভ্যতার প্রতি বিবেকবান মানুষের হতাশা ও ধিক্কারের বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। নিরীহ-নিরন্ন মানুষের রক্তের বিনিময়ে ধনী দেশগুলোর অর্থনৈতিক মেরুদÐ খাড়া রাখা ও জায়নবাদী ইহুদিদের বøু প্রিন্ট নিয়ে লেখা কম হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে চলা নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডারের ধার অনেকটার কমে গিয়ে তা প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়ায় পশ্চিমা সুপার ক্যাপিটালিস্ট সা¤্রাজ্যবাদের জন্য একটা নতুন এজেন্ডা প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। করোনা পেন্ডেমিক হয়তো সেই অভাব পূরণ করছে। আর কনস্পিরেসি থিওরি অনুসারে ভাবতে গেলে তারা হয়তো পরিকল্পিতভাবেই এই পেন্ডেমিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। কেউ কেউ স্পষ্টভাবেই করোনা ভ্যাক্সিনেশনের সাথে পুঁজিবাদী সা¤্রাজ্যবাদের পুরনো ডিপপুলেশন এজেন্ডার সম্পর্ক তুলে ধরেছেন। গত মে মাসে গেøাবাল রিসার্চ অনলাইনে প্রকাশিত মার্কিন অধ্যাপক ও বিশ্বব্যাংক ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক কর্মকর্তা ও যুদ্ধবাদী অর্থনীতির বিশেষজ্ঞ পিটার কুয়েনিগের লেখা একটি নিবন্ধের ‘শিরোনাম ‘দি সুপার-ক্যাপিটালিস্টস’ ডিপপুলেশন এজেন্ডা’। তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে করোনা পেন্ডেমিক এবং ভ্যাক্সিন তৎপরতা বিশ্বের জনসংখ্যা কমিয়ে আনতে কাজ করছে। তিনি সায়েন্টিফিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে দেখিয়েছেন, মানবজাতির উপর করোনা ভ্যাক্সিনের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া ছাড়াও করোনা পেন্ডেমিক কিভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ ও বিনিয়োগকে পথে বসিয়ে দিয়ে বৃহদাকৃতির কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রক্ষা করছে ।
পিটার কুয়েনিগ দেখিয়েছেন, ১৯৭৪ সালের ১০ ডিসেম্বর তৎকালীন মার্কিন কুটনীতিক ও পররাষ্ট্রসচিব হেনরি কিসিঞ্জারের ন্যাশনাল সিকিউরিটি মেমোরেন্ডামে (ঘঝঝগ ২০০) বলা হয়েছিল, অধিক জনসংখ্যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। কিসিঞ্জারের বিখ্যাত উক্তি হচ্ছে, যদি তুমি খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পার তাহলে তুমি জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, যদি তুমি জ্বালানি শক্তি নিয়ন্ত্রণ করতে পারো, তাহলে তুমি মহাদেশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, আর যদি তুমি অর্থব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারো, তবে তুমি বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। কিসিঞ্জারের সেই সুত্র ধরে বিশ্বের খাদ্য, জ্বালানি এবং অর্থব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের পুঁজিবাদী সা¤্রাজ্যবাদী তৎপরতা সব সময়ই সক্রিয় রয়েছে। আগে কিসিঞ্জার রকফেলার চক্র এ কাজ করতো এখন সে স্থানে জায়গা করে নিয়েছে বিল গেটস ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো। এই তিনটি পুরনো লক্ষ্যবস্তুর সাথে এখন যুক্ত হয়েছে জনস্বাস্থ্য, তথ্যপ্রযুক্তি ও তথ্যসম্পদ। করোনা পেন্ডেমিক যেন সেসব সা¤্রাজ্যবাদী এজেন্ডার কুশীলবদের এক ঢিলে তিন পাখি মারার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। গেøাবাল ক্যাপিটালিজমে রকফেলার ইনস্টিটিউট ও রকফেলার প্রতিষ্ঠিত জনহপকিন্স স্কুল অব মেডিসিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। এখন বিল অ্যান্ড মেলিন্দা গেটস ফাউন্ডেশনের অংশীদারিত্বে সেসব কর্মকাÐ আরো ব্যাপ্তী ও প্রত্যক্ষ তৎপরতা লাভ করেছে। করোনা প্যান্ডেমিক শুরুর অনেক আগে থেকেই এ নিয়ে বেশ কিছু ফিকশন লেখা হয়েছে। তবে ২০১৮ সালে বিল গেটস বলেছিলেন, ‘একটি বৈশ্বিক মহামারী আসতেছে, সেই পেন্ডেমিকে বিশ্বব্যাপী তিন কোটি মানুষের প্রাণহানী ঘটতে পারে এবং পেন্ডেমিক আগামী দশক পর্যন্ত থাকতে পারে’। পরের বছর চীনের ওহানে করোনা পেন্ডেমিক শুরুর আগে অক্টোবরে নিউ ইয়র্কে দু’দিনব্যাপী একটি বিজনেস সম্মেলন ডেকেছিলেন, সেখানে দ্বিতীয় দিনের এজেন্ডা ছিল ‘করোনাভাইরাস পেন্ডেমিক এক্সারসাইজ’। তিনি বিজনেস মিটিংয়ের শিরোনাম দিয়েছিলেন, ‘ইভেন্ট-২০১’ তিনি আমন্ত্রিত বিশেষজ্ঞ ও মার্কেট প্লেয়ারদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘উই নিড টু প্রিপেয়ার ফর দ্য ইভেন্টস’। এর দুই বছর আগে মার্কিন প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানী এন্থনি ফৌসি বিলগেটস’র সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৯ সালে এক বিস্ময়কর জৈব মহামারীর সম্মুখীন হবেন। তাদের সেসব ভবিষ্যদ্বাণি মিথ্যা হয়নি। জৈব মহামারী শুরু, জন্য চীনের ওহান এবং ভারতের ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোকে বেছে নেয়া হয়েছে, যা তাদের গোপন ডিপপুলেশন এজেন্ডার জন্য খুব সহায়ক হতে পারে।
করোনাভাইরাস নিয়ে বৈশ্বিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত এজেন্ডা যেভাবে এগিয়ে চলেছে, তাতে পৃথিবীর মানুষ কতিপয় কর্পোরেট কোম্পানীর হাতে পুরোপুরি জিম্মি ও সরাসরি নিয়ন্ত্রিত হতে চলেছে। বিলগেটস বলেছিলেন, করোনা পেন্ডেমিক আগামী দশক পর্যন্ত কন্টিনিউ করবে। আর করোনা ভ্যাক্সিন আবিস্কৃত হওয়ার পর বিশ্বব্যাংক বলেছে, এই পেন্ডেমিক ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত থাকতে পারে। ইতিমধ্যে গত দেড় বছর সরকারি হিসেবেই প্রায় ৫০ লাখ মানুষ করোনাভাইরাসে মারা গেছে। ভ্যাক্সিনের বাণিজ্যিক উৎপাদন ও ব্যবহার শুরুর পরেও নতুন নতুন অতি সংক্রামক ও ভয়ঙ্কর প্রাণঘাতী ভ্যারিয়েন্ট আবির্ভূত হচ্ছে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, একটি ভ্যাক্সিন নিয়েই এই মহামারীর আতঙ্ক থেকে বেঁচে থাকার কোনো উপায় নেই। নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট ও নতুন নতুন উপসর্গ সব মানুষের মধ্যে নতুন আতঙ্ক হয়ে দেখা দিবে। পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতা বা লকডাউনে অচল হয়ে যাওয়া উৎপাদন ব্যবস্থা ও অর্থনীতিতে জায়গা করে নেবে কমপ্লিট অটোমেশন এবং ডিজিটালাইজেশন। সেখানে মানুষ হয়ে পড়বে অপাঙতেয়-অপ্রয়োজনীয়। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং অনলাইন বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গুগল-মাইক্রোসফটের মত হাইটেক-জায়ান্টরাই সবকিছুর নিয়ন্ত্রক হয়ে দাঁড়াবে। প্রচলিত পাসপোর্টকে মূল্যহীন করে ভ্যাক্সিন পাসপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে শুরু করেছে। মানবদেহে এমআরএনএ ভ্যাক্সিনের দীর্ঘমেয়াদী প্রতিক্রিয়া নিয়ে নানাবিধ জল্পনা রয়েছে, সত্য হোক, মিথ্যা হোক একচেটিয়া বাজার ব্যবস্থাপনা ও প্রচারণার ধরণই এমন যে, সেসব খুব বেশি আমল দেয়ার সুযোগ আর থাকছে না। চোখের সামনে ভয়ঙ্কর মৃত্যুর মিছিল দেখে ভ্যাক্সিনের প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রশ্নতোলা অবান্তর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বাজার ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক যোগাযোগ, বাণিজ্য, এভিয়েশন, পর্যটনসহ অর্থনৈতিক খাতসমুহ যেভাবে থমকে দাঁড়িয়েছে, ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন চেইনই হয়ে দাঁড়িয়েছে তার একমাত্র বিকল্প সমাধান। বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর নিজেদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাকল্পে সুপার-ক্যাপিটালিস্টদের নিয়ন্ত্রিত ল্যাবরেটরি ও ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীর মিলিত এজেন্ডা বাস্তবায়িত হচ্ছে কোভিড-১৯ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় লকডাউন, ভ্যাক্সিনেশন ও ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে। এবারের কোরবানির ঈদে লাখ লাখ পশু বিক্রি হচ্ছে অনলাইন মার্কেটিং পদ্ধতিতে। ইভ্যালির হর্তাকর্তারা বাংলাদেশ থেকে ইতোমধ্যেই শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। স্কুলের শিশুটি থেকে শুরু করে গ্রামের নিরক্ষর অশিক্ষিত কৃষক-খামারিরাও স্মার্টফোন ও অনলাইন ডেটা-এমবি কিনে এই মহাযজ্ঞের সাথে যুক্ত হচ্ছে। এটাই হচ্ছে সুপার-ক্যাপিটালিস্ট এজেন্ডায় নতুন বিশ্ববাস্তবতা, এ থেকে মুক্তির পথ আপাতত আমাদের নেই।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।