Inqilab Logo

বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১, ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

চীনকে আফগানিস্তানের ‘বন্ধু’ বিবেচনা করছে তালেবান

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০২১, ১০:৩০ এএম

চীনকে আফগানিস্তানের ‘বন্ধু’ হিসেবে বিবেচনা করছে তালেবান। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান পুনর্গঠনে চীন বিনিয়োগ করবে বলে আশা করছে সংগঠনটি। এমনকি চীনের জিনজিয়াংয়ের উইঘুর যোদ্ধাদের তালেবান কোনো রকম সহযোগিতা করবে না বলেও বেইজিংকে আশ্বস্ত করেছে সংগঠনটি।
তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহিন হংকংভিত্তিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে আফগানিস্তানের ৮৫ শতাংশ দখলের বিষয়টি জানিয়ে দেশটির পুনর্গঠনে চীন বিনিয়োগ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন। তালেবান ক্ষমতায় গেলে আফগানিস্তান পূর্ব তুর্কিস্তান ইসলামিক আন্দোলনের (ইটিআইএম) জন্য কেন্দ্র হয়ে উঠবে বলে চীন উদ্বেগ প্রকাশের পর তালেবানের তরফ থেকে এই মন্তব্য করা হলো।
এর আগে তালেবানের সঙ্গে আল-কায়েদার সংশ্লিষ্টতা আছে বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেছিল চীন। এমনকি চীনের জিনজিয়াংয়ে উইঘুর আন্দোলনের পেছনে তালেবানের ইন্ধন আছে বলে অভিযোগ করে আসছিল বেইজিং। তবে আফগানিস্তানে শান্তি স্থাপন প্রক্রিয়া শেষ না করেই সেখান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে বেশ বেকায়দায় পড়েছে চীন। ইতিমধ্যেই চার্টার্ড বিমানে করে আফগানিস্তানে থাকা ২১০ চীনা নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে বেইজিং।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ি বলেছিলেন, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি চীন আর পাকিস্তান- দুই দেশের ওপরই প্রভাব ফেলছে। তাই আঞ্চলিক শান্তি রক্ষায় বেইজিং ও ইসলামাবাদের একসঙ্গে কাজ করা দরকার।
সাক্ষাৎকারটি এমন সময়ে প্রকাশ করা হয়েছে যখন তালেবানরা আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলের প্রদেশগুলোর দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার কার্যক্রম প্রায় শেষদিকে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ধারণা করছে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে কাবুলের ক্ষমতাসীন সরকারের পতন হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রায় ২০ বছর পরে আবার তালেবানরা আফগানিস্তানের শাসনভার দখল করতে যাচ্ছে।
শাহিন বলেন, ‘মার্কিন সেনাবাহিনী চলে যাওয়ার পর আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী রাষ্ট্র চীনের সঙ্গে আলোচনায় বসা জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা অনেকবার চীনে গিয়েছি এবং তাদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক আছে। চীন একটি বন্ধুভাবাপন্ন রাষ্ট্র এবং আমরা আফগানিস্তানের পুনর্গঠন ও উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য তাদেরকে স্বাগত জানাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, আফগানিস্তানে বিশ্বের বৃহত্তম অবিকৃত খনিজ পদার্থের আঁকর আছে। সেখানে আছে তামা, কয়লা, লোহা, গ্যাস, কোবাল্ট, পারদ, সোনা, লিথিয়াম ও থোরিয়ামের খনি। এসবের আনুমানিক মূল্য এক ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
২০১১ সালে চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (সিএনপিসি) ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে নিলাম জয়লাভ করে ২৫ বছরের জন্য তিনটি তেলের খনি খনন করার অনুমতি পেয়েছিল, যেখানে আনুমানিক ৮৭ মিলিয়ন ব্যারেল তেল আছে।
এছাড়াও, চীনের প্রতিষ্ঠানগুলো রাজধানী কাবুল থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লোগার প্রদেশের মেস আয়নাকে তামা খনন করার অনুমতি পেয়েছিল।
তবে, ১৯৯০ সালের দিকে ‘গেরিলা বিদ্রোহ’ ঘটানোর উদ্দেশ্যে চীন থেকে আফগানিস্তানে পালিয়ে যাওয়া উইঘুরদের একটি দলের ব্যাপারে দেশটির অভিযোগ রয়েছে। চীন ‘ইস্ট তুর্কেস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট (ইটিআইএম)’ নামের দলটিকে শিনজিয়াং অঞ্চলের পশ্চিম প্রদেশের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য দায়ী করে।
তবে শাহিন এ ব্যাপারে আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘আমরা অঙ্গীকার করেছি, অন্য দেশের নাগরিক বা কোন গোত্র যদি আফগানিস্তানকে চীন সহ অন্য যেকোনো দেশকে আক্রমণ করার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করতে চান, তাহলে আমরা তা প্রতিহত করবো।’
‘দোহা চুক্তি অনুযায়ী এটি আমাদের অঙ্গীকার। আর আমরা সে চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল’, বলেন শাহিন।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে দোহায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালিবানদের স্বাক্ষর করা শান্তি চুক্তিটিকে ‘দোহা চুক্তি’ বলা হয়। এই চুক্তির ফলশ্রুতিতে মার্কিন সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের পথ তৈরি হয়।
ইটিআইএমের ব্যাপারে আলাদা করে প্রশ্ন করা হলে শাহিন নিশ্চিত করেন, ‘হ্যাঁ, তাদেরকে আমরা প্রবেশ করতে দেব না।’
তিনি আরও জানান, আল-কায়েদা অতীতের বিষয় এবং তাদেরকে এই দেশে আর কখনও কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না। তিনি দাবি করেন আফগানিস্তানে বর্তমানে আল-কায়েদার আর কোনো সদস্য নেই।
গবেষক এবং চীনের বৈদেশিক নীতিমালা বিশেষজ্ঞ ও সিনিয়র ট্র্যান্সঅ্যাটলান্টিক ফেলো অ্যান্ড্রু স্মল বলেন, তালেবানদের সঙ্গে চীনের সম্পর্কটি অনেক পুরনো। তালেবানরা ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত দেশটি শাসন করার সময় থেকেই এই সম্পর্কটি টিকে আছে।
তিনি বলেন, 'চীন তালেবানদের সঙ্গে কূটনীতিক পর্যায়ে যোগাযোগ রক্ষা করে ‘বন্ধু’ হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।'
তবে, এখন চীন ‘নতুন করে দেশটিতে বিনিয়োগ করতে বা তাদের প্রতি কোন ধরণের অঙ্গীকার করার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করবে’, জানান তিনি।
তিনি জানান, চীনের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের উৎস উইঘুর বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। চীনের ধারণা, তালেবানরা তাদেরকে ১৯৯০ সালে দিকে আশ্রয় দিয়েছিল।
তবে ২০১৩ সালে তালেবানদের প্রয়াত নেতা মোল্লাহ ওমরের সঙ্গে উইঘুরদের ব্যাপারে একটি সমঝোতা হয়েছিল, জানান স্মল।
বেইজিং এখনও সন্দিহান, সে সমঝোতার কতটুকু তালেবানের বর্তমান নেতৃবৃন্দ মেনে চলবেন, কিংবা চলতে পারবেন। এছাড়াও, বেইজিং তাদের নিজেদের অঞ্চলের নিরাপত্তা ঝুঁকির ব্যাপারেও চিন্তিত, কারণ শিনজিয়াং অঞ্চলে দুই দেশের মধ্যে একটি ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘চীন ও পাকিস্তান উভয়েই আফগানিস্তানের সংশ্লিষ্ট সকল গোষ্ঠীকে সহায়তা করতে ইচ্ছুক, যাতে আলোচনার মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছানো যায় এবং সকল গোত্রের সহাবস্থানের মাধ্যমে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।’
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার হলে দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে চলতি সপ্তাহেই ঘনিষ্ট মিত্র পাকিস্তানকে সহযোগিতা করার বিষয়ে অবহিত করেছে। এর সঙ্গে আফগানিস্তান নিয়ে বেইজিংয়ের ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিষয়টিও জড়িত।
চীন-পাকিস্তান সম্পর্কের ৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বৈঠকে গত মঙ্গলবার চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং শি বলেন, ‘চীন-পাকিস্তানের যৌথভাবে আঞ্চলিক শান্তির বিষয়টি রক্ষা করতে হবে। আফগানিস্তানে সমস্যাগুলো প্রকৃত চ্যালেঞ্জ। পাকিস্তান ও চীনকে সেসব সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদের বিষয়গুলো।’
যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ায় তালেবানের পুনরুত্থান কৌশলগতভাবে চীনের জন্য লাভবান হবে। কারণ হলো তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তানের রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তবে আল-কায়েদা এবং তালেবান সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলো নিয়ে ইসলামাবাদ ও বেইজিং উভয়ই উদ্বিগ্ন।



 

Show all comments
  • AKM Nurul Islam ১১ জুলাই, ২০২১, ১১:০৩ এএম says : 0
    Present situation in Afghanistan is very volatile and unpredictable. If there is no political understanding between various factions and tribes than there is all possibilities of a civil war which will be long lasting and devastating .There are many actors centering Afghanistan. But fact remains Afghans need stability for their better future.
    Total Reply(0) Reply
  • গোলাম মোস্তফা ১১ জুলাই, ২০২১, ১২:৪৭ পিএম says : 0
    বিশ্বের সেরা মুজাহিদ।
    Total Reply(0) Reply
  • রুহান ১১ জুলাই, ২০২১, ১২:৪৯ পিএম says : 0
    মাসাল্লাহ সুন্দর সিদ্ধান্ত
    Total Reply(0) Reply
  • Afran Hossain ১১ জুলাই, ২০২১, ১২:৫২ পিএম says : 0
    Ocirei Uighur Muslim ra mukti pabe insaallah, Alhamdulillah
    Total Reply(0) Reply
  • Mosharef Hossain Mushu ১১ জুলাই, ২০২১, ১২:৫২ পিএম says : 0
    কি সুন্দর সুন্নাতি পোশাক!
    Total Reply(0) Reply
  • Mosharof Hossain ১১ জুলাই, ২০২১, ১২:৫৩ পিএম says : 0
    তিন পরাশক্তিরে খাইয়া এখন চীনাদের দিকে নজর দিছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Monjur Rashed ১১ জুলাই, ২০২১, ২:৪৬ পিএম says : 0
    Anticipating a comment from DEADHACK.
    Total Reply(0) Reply
  • Monjur Rashed ১১ জুলাই, ২০২১, ৬:১৯ পিএম says : 0
    Many people in our country blame Imran Khan for intimate relationship with China. Now these people are silent when Taleban is making relationship with China. I think foreign affairs & international relationship should be included in back dated Madrasha curriculum.
    Total Reply(1) Reply
    • Morshed ১১ জুলাই, ২০২১, ৭:৪৫ পিএম says : 0
      ভাই, আপনি ইংরেজিতে লিখছেন যে সকল হুজুররা বুঝবে তো?

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আফগানিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ