Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এই সময়ে আম খান

| প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০২১, ১২:০৬ এএম

এই সময়ে এত ফল হয়, যে মানুষের রোদে পোড়ার ক্লান্তি এবং শরীরের ক্ষতি এই ফল খাওয়ার কারনে কাটিয়ে উঠতে কোন বেগ পেতে হয় না। আরো আশ্চর্যের বিষয়, এই সময়ের সব ফলই রসালো। আম, জাম, কাঠাল, লিচু, আনারস সব যেন রস দিয়ে ভরপুর। আম এই সময়ে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় এবং খাওয়া হয়। বাংলার কোন বাড়ি আম গাছহীন এমন কল্পনাও করা যায় না। আম এমন এক ফল যা ক্রয় করা সকলের সাধ্যের মধ্যে থাকে। এই রস আর স্বাদের সাথে ফলের গুনাগুন জানা থাকলে মাওলার শুকরিয়া আদায় করা আরো সহজ হয়। এই ঋতুর অন্যতম রসালো এই ফল পুষ্টিগুণে ভরপুর। যা শরীরের ভিটামিনের অভাব পূরণের পাশাপাশি কর্মশক্তি যোগায়।

১০০ গ্রাম আমের মধ্যে শক্তি ৫৯ কিলোক্যালরি, লিপিড ০.৪০ গ্রাম, সম্পৃক্ত চর্বি ০.১০ গ্রাম, সোডিয়াম ১ মিঃগ্রাম, পটাশিয়াম ১৬৮ মিঃগ্রাম, শর্করা ১৫ গ্রাম, আশঁ ১.৬০ গ্রাম, প্রোটিন ০.৮০ গ্রাম, ভিটামিন এ ১০৮২ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন সি ৩৬.৪০ মিঃগ্রাম, ক্যালশিয়াম ১১ মিঃগ্রাম, লোহা ০.২০ মিঃগ্রাম, পাইরিডক্সিন ০.১০ মিঃগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ১০ মিঃগ্রাম, ফ্যাট ০.২০ গ্রাম আরো অন্যান্য।

আমের উপকারিতা:
১. চোখ ভাল রাখতে: কাঁচা আম ক্যারোটিন ও ভিটামিন এ সমৃদ্ধ, যা চোখের দৃষ্টি বাড়াতে সাহায্য করে, রাত কানা রোগের হাত থেকে রক্ষা করে এবং চোখ ভালো রাখে।

২. ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ: আমে রয়েছে ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স। এই ভিটামিন শরীরের স্নায়ুগুলোতে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়। শরীরকে রাখে সতেজ। ঘুম আসতে সাহায্য করে। অনিদ্রা দূর করে।

৩. দাঁত, মাড়ি, ত্বক ও হাড়ের সুস্থতায়: আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, পাকা আমের তুলনায় কাঁচা আমে ভিটামিন সি এর পরিমাণ বেশি। ভিটামিন সি স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে। দাঁত, মাড়ি, ত্বক ও হাড়ের সুস্থতা রক্ষা করতেও সাহায্য করে ভিটামিন সি। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা আমে ৬৩ মিঃগ্রাম ও পাকা আমে ৩৬-৪১ মিঃ গ্রাম ভিটামিন সি পাওয়া যায়।

৪. ক্যান্সার প্রতিরোধে: আমের মধ্যে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বিভিন্ন রকম ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে, যেমন স্তন ক্যান্সার, লিউকেমিয়া, কোলন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার ইত্যাদি

৫. কর্ম শক্তি জোগাতে: আম কর্মশক্তি যোগায়। এতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা আমে ৪৪-৫৯ কিলোক্যালোরি ও পাকা আমে ১০ কিলো ক্যালরি শক্তি রয়েছে।

৬. হার্ট ভাল রাখতে: আমে রয়েছে বেটাক্যারোটিন, ভিটামিন ই এবং সেলেনিয়াম। যা হার্টের সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে।

৭. হজম শক্তি বৃদ্ধিতে: আমে রয়েছে প্রচুর এনজাইম যা শরীরের প্রোটিনের অণু গুলো ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে, যার ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় ।

৮. রক্ত স্বল্পতা দূর করনে: আমে বিদ্যমান লোহা ও পটাশিয়াম রক্তস্বল্পতা দূর করে এবং হৃদযন্ত্র সচল রাখতে সাহায্য করে। এই ফলের আঁশ, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ যা হজমেও সহায়তা করে। পাকা আমের চেয়ে কাঁচা আমে আয়রনের পরিমান বেশি। তাছাড়া কাঁচা আম শরীরের রক্ত পরিষ্কার করে।

৯. হাড় গঠনে: আমের ক্যালসিয়াম হাড় সুগঠিত করে, হাড় ও দাঁতের সুস্থতা বজায় রাখে। কাঁচা আমে ১০-১১ মিঃ গ্রাম ও পাকা আমে ১৬ মিঃ গ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।

১০. দাঁত, নখ ও চুলের মজবুতে: আমে খনিজ লবণের উপস্থিতিও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। দাঁত, নখ, চুল মজবুত করার জন্য আমের খনিজ লবণ উপকারী ভূমিকা পালন করে শরীরের লবণ ঘাটতি পূরণ করে।

১১. দেহের ক্ষয় রোধে: প্রতিদিন আম খেলে দেহের ক্ষয় রোধ হয় ও দেহের স্থূলতা কমিয়ে শারীরিক গঠন সুন্দর করে।

১২. ত্বকের উজ্জ্বলতায়: আমের উপর দেখতে খুব মসৃন ও সুন্দর তাই আম মানুষের বাহ্যিক ত্বকতেও সুন্দর করে। আমে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের লোমকূপ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে, যা ব্রণের ও ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে।

১৩. কোষ্ঠকাঠিন্যে: আমে প্রচুর খাদ্য আঁশ রয়েছে। যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
১৪. কোলেস্টেরল কমাতে: পাকা আম রক্তে কোলেস্টেরলের ক্ষতিকর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ঘামের কারণে শরীর থেকে সোডিয়াম বের হয়ে যায়। কাঁচাআম খেয়ে শরীরের সোডিয়ামের ঘাটতি পূরণ করা যায়।

১৫. শরীর ঠান্ডা রাখতে: কাঁচা আমে পটাশিয়াম থাকার কারণে তা শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এ কারণে শরীরে ঘাম কম হয়। গরমে ক্লান্তিও দূর হয় ।

১৬. হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা হ্রাস: গরমের কারণে হওয়া স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমাতে কাঁচা আম ও জিরা বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

১৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে: আমে বিদ্যমান ভিটামিন সি এবং বিটা-ক্যারোটিন মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

১৮. রোদে পোড়া ভাব কমাতে: গ্রীষ্মকাল প্রখর রোদে মানুষের চামড়া কাল বর্ণ ধারণ করে কালো ভাব দূর করতে আম সাহায্য করে। রোদের পোড়াভাব কমাতে, ত্বকের দাগ দূর করতে ও ব্রণের সমস্যা দূর করতে আম সাহায্য করে। আমে থাকা ভিটামিন ই ত্বক ও চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

১৯. জীবানু থেকে সুরক্ষায়: আমে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ প্রোটিন যা জীবাণু থেকে দেহকে সুরক্ষা দেয়।
২০. দৃষ্টি শক্তি ভাল রাখতে: আমে রয়েছে ভিটামিন এ, যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। চোখের চারপাশের শুষ্কভাবও দূর করে।

২১. লিভার সুরক্ষায়: লিভারের সমস্যায় কাঁচা আম খাওয়া উপকারী। যকৃতের রোগ নিরাময়ের প্রাকৃতিক বন্ধু কাঁচা আম। কয়েক টুকরো কাঁচা আম চিবানো হলে পিত্তরস বৃদ্ধি পায়। এতে যকৃতের স্বাস্থ্য ভালো হয় এবং অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ দূর হয়।

২২. যৌন শক্তি সুরক্ষায়: পুরুষের যৌনশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং শরীর ফিট রাখে। পুরুষের শুক্রাণুর গুণগত মানকে ভালো রাখে।

২৩. নারীদের আয়রন ঘাটতি পূরণে: সন্তানসম্ভবা নারী এবং মেনোপোজ হওয়া নারীর আয়রনের ঘাটতি পূরণে আম বেশি উপকারি। বিশেষত কাঁচা আম উপকারি।

২৪. দাঁতের যত্নে: কাঁচা আম মাড়ির জন্য ভালো। দাঁতের ক্ষয় এবং রক্তপাত রোধ করে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

২৫. ওজন কমাতে: ও শরীরের ওজন কমাতে চাইলে কাঁচা আম খেতে পারেন। এটি পাকা আমের থেকে অনেক ভালো। কেননা পাকা আমে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে। যাঁরা ওজন কমাতে বা শরীরের বাড়তি ক্যালরি খরচ করতে চান, তাঁদের জন্য এখন আদর্শ ফল কাঁচা আম। পাকা মিষ্টি আমের চেয়ে কাঁচা আমে চিনি কম থাকে বলে এটি ক্যালরি খরচে সহায়তা করে।

২৬. অ¤øতা দূর করতে: বুক জ্বালাপোড়া বা অম্লতারর সমস্যায় ভুগছেন ? কাঁচা আম এ সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। অম্লতা দূর করতে কাঁচা আমের এক টুকরো মুখে দিয়ে দেখুন। অম্লতা কমে যাবে।

২৭. গর্ভবর্তী মায়েদের বমি ভাব: অনেকেরই সকালে উঠে বমি বমি ভাব হয়। বিশেষ করে অন্তস্বত্বা মায়েদের। এ সমস্যা দূর করতে কাঁচা আম খেতে পারেন।

২৮. ঝিমুনি দূর করতে: দুপুরে খাওয়ার পর গ্রীষ্মের গরমে অনেকের ঝিমুনি আসে। কাঁচা আমে আছে প্রচুর শক্তি। দুপুরের খাওয়ার পরে কয়েক টুকরা কাঁচা আম খেলে ঝিমুনি দূর হয়ে যায়।

২৯. ঘামাচি প্রতিরোধ করে: গরমের কারনে অনেকের ঘামাচি হয়। ঘামাচির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সবচেয়ে ভালো উপায় কাঁচা আম খাওয়া।

৩০. লবণের ঘাটতি পূরণ: গরমে অতিরিক্ত ঘামে শরীর থেকে সোডিয়াম ক্লোরাইড ও আয়রন বের হয়ে যায়। কাঁচা আমের জুস শরীরের এই ঘাটতি দূর করে।

৩১. স্মরণ শক্তি বৃদ্ধিতে: আমাদের স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে আম খুব ভালো ভূমিকা রাখে। এই ফলে থাকা উপাদান মস্তিস্কের কোষগুলোকে উজ্জীবিত করে মনোযোগ বাড়িয়ে দেয়। তাই পরীক্ষার সময় ও মস্তিস্কের চাপ যখন বেশি থাকে, তখন আম খাওয়া উপকারি।

৩২. ঠান্ডাও ফ্লু দূর করতে: অনেকেই আছেন ঠান্ডা বা ফ্লু দূর করতে যে প্রচুর ভিটামিন সি প্রয়োজন হয়, তা গ্রহণ করতে অপারগ। এমতাবস্থায় আম খাওয়া উপকারি। আমে ভিটামিনগুলো ঠান্ডা দূর করতে কার্যকর।

৩৩. ইমিউন সিস্টেম সবল করা: আমে প্রায় ২৫ রকমের বিভিন্ন কেরোটিনয়েড উপকারী ব্যাকটেরিয়া আছে যা মানুষের ইমিউন সিস্টেমকে সুস্থ ও সবল রাখে।

এছাড়াও আমে আরো উপকারিতা রয়েছে। আমারা মাওলার দেয়া সকল নেয়ামত ভোগ করি। তাঁর শোকরিয়া আদায় করি। নিজের ও মানুষের উপকারে ব্রত হই।

মুন্সি আব্দুল কাদির
ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, সিলেট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আম

৮ জানুয়ারি, ২০২২
৯ জুলাই, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ