পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আম দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ফসল। পৃথিবীর মোট উৎপদানের প্রায় ৮০ ভাগ আম এ অঞ্চলে উৎপাদিত হয়ে থাকে। পৃথিবীর মোট চাহিদার অধিকাংশ সরবরাহ হয় এশিয়া থেকেই। বাংলাদেশও আম উৎপাদনে পিছিয়ে নেই। বর্তমানে এদেশে ৯৫,২৪৩ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হচ্ছে, যার বাৎসরিক উৎপাদন প্রায় ১২.২২ লক্ষ মেট্রিক টন (বিবিএস, ২০২১)। যদিও, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, প্রায় ২ লক্ষ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়, যার বাৎসরিক গড় উৎপাদন প্রায় ২৫ লক্ষ মেট্রিক টন। দেশি-বিদেশি চাহিদা মেটানোর জন্য প্রতি বছর আম চাষাবাদের এলাকা এবং উৎপাদন বাড়ছে। এদেশের সুস্বাদু আম ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের ২৩টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। সেক্ষেত্রে গুণগত মানসম্পন্ন আম উৎপাদন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সঠিক সময়ে আমের চাষাবাদ, পরিচর্যা, সংগ্রহ এবং বিপণন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতি বছর অপরিপক্ব আম অবৈধ উপায়ে পাকাতে গিয়ে রাজধানীসহ অন্যান্য জেলায় প্রচুর পরিমাণে নষ্ট করা হয়। একই সাথে, মৌসুমের শুরু ও শেষের দিকে আমের বাজার সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে থেকে যায়, ফলে বাজারে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করে। অথচ, বাড়তি দামের সুফল প্রকৃত উৎপাদনকারী চাষিরা পায় না, পায় মধ্যস্বত্তভোগীরা। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে একদল তরুণ ও উদ্যমী গবেষক Application of Geospatial Techniques in Evaluating Spatial Variability of Commercially Harvested Mangoes in Bangladesh শীর্ষক গবেষণা শুরু করে, যা ১৯ অক্টোবর, মর্যাদাপূর্ণ জার্নাল Sustainability (Q1 & Impact Factor-3.89)-এ প্রকাশিত হয়েছে।
সেখানে, দেশের প্রধান আম উৎপাদনকারী এলাকাসমূহকে চারটি জোনে ভাগ করা করা হয়েছে। যেমন: জোন-১: চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি; জোন-২: যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, খুলনা; জোন-৩: নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং জোন-৪: নওগাঁ (পোরশা, সাপাহার, নিতপুর), রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁ, পঞ্চগড়। এ সমস্ত অঞ্চলে আম উৎপাদন ও সংগ্রহের উপর প্রয়োজনীয় উপাত্ত (মাটির আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, সমুদ্র সমতল থেকে উচ্চতা, অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ ও স্যাটেলাইট ডাটা) সংগ্রহ করা হয়েছে।
আমের পরিপক্বতা পরিলক্ষিত হয় সর্বপ্রথম জোন-১ এ এবং সব শেষে জোন-৪ এ। এই গবেষণায় প্রতিফলিত হয় যে, প্রতি ডিগ্রী অক্ষাংশ বৃদ্ধির জন্য ২-৫ দিন আমের সংগ্রহকাল পিছিয়ে যায়। একইসাথে দেখা যায়, জোন-১ এ যে কোন জাতের আম পরিপক্ব হবার ২০-২২ দিন পরে জোন-৪ এ পরিপক্ব হয়। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে, এ দেশে জোন-১ ও জোন-২ এর আম একই সাথে সংগ্রহ করে বাজারজাতকরণ করা হয়। ফলে আমের গুণগতমান এবং পরিপক্বতা নিশ্চিত হয় না। অধিকন্তু দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে অপিরপক্ব আম অবৈধভাবে পাকানোর দায়ে জব্দ করে নষ্ট করে থাকে। দেশে ও বিদেশের জন্য আম সংগ্রহের সময় নির্ধারণের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি মাথায় রেখে পরিকল্পনা করলে আমের প্রাপ্তিকালীন সময় বৃদ্ধি পাবে এবং আমের গুণগতমান নিশ্চিত হবে।
লেখক: আম বিজ্ঞানী
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।