পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রতিদিনই আগের দিনের রেকর্ড ভেঙ্গে করোনায় মৃত্যুর নতুন রেকর্ড তৈরী হচ্ছে। গত সোমবার ১৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মাত্র ৩৪ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে ৯ হাজার ৯৬৪ জনের নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে। অর্থাৎ শনাক্তের হার শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ। সীমান্ত জেলাগুলোর কোথাও কোথাও শনাক্তের হার ৬০-৭০ ভাগের বেশি। অবস্থা খুবই ভয়াবহ। ভারতীয় ডেল্টা ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়ছে। গত কয়েকদিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অর্ধেকই গ্রাম থেকে আসা বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এক সপ্তাহ ধরে সারাদেশে কঠোর লকডাউন চলছে। পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি সেনাসদস্যরাও মাঠে নেমে রাস্তায় মানুষের সমাগম নিয়ন্ত্রণ করে লকডাউন সফল করতে কাজ করছে। এরপরও বেড়ে চলেছে সংক্রমণের হার ও মৃত্যুর সংখ্যা। সরকারি হিসেবে এ পর্যন্ত ১৫ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় মারা গেছে। তবে এ সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা ভেবে আতঙ্কিত হতে হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে, কঠোরভাবে লকডাউন নিশ্চিত করার পাশাপাশি দরিদ্র, বেকার ও নি¤œ আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা, করোনার নমুনা পরীক্ষা, চিকিৎসা এবং সামগ্রিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যেঠস নেয়ার বিকল্প নেই।
শুরু থেকেই দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে এক ধরণের শৈথিল্য লক্ষ্য করা গেছে। গত বছর করোনার প্রথম লকডাউনে এবং দুই ঈদের ছুটিতে শহর থেকে লাখ লাখ মানুষের গ্রামে-গঞ্জে ছুটে যাওয়ার দৃশ্যটি ছিল খুবই আতঙ্কিত হওয়ার মত। গত মে মাসেও ঈদুল ফিতরে লাখ লাখ মানুষের যাতায়াত করোনা পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করে তুলেছে বলে স্বাস্থ্যবিদরা মনে করছেন। ভারতের ভয়াবহ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষের সংক্রমণ ও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর বাস্তবতার মধ্যেও সীমান্তপথ ও স্থল বন্দরগুলো কঠোরভাবে বন্ধ করা হয়নি। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকে দেড় বছর আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে আমরা অপেক্ষাকৃত ভাল সময় পার করেছি। আমাদের রফতানি বাণিজ্য ও অর্থনীতির চাকা এখনো সচল রয়েছে। কিন্তু এখনকার সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত থাকলে, কঠোর লকডাউন মাসের পর মাস ধরে অব্যাহত রাখার সামাজিক-অর্থনৈতিক শক্তি আমাদের নেই। এবারের এই ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ দ্রæততম সময়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সংক্রমণ ও মৃত্যু মহামারী আকার ধারণ করতে পারে। এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের কোনো রেডিমেড ম্যাজিক কারো হাতেই নেই। লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে পরিকল্পিত ও সমন্বিত প্রক্রিয়ায় সংক্রমণ মোকাবেলা করতে হবে। বিভাগীয় শহার থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে করোনা টেস্ট এবং চিকিৎসা সুবিধার সরঞ্জাম রাখা অপরিহার্য। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সেনাবাহিনীর লজিস্টিক সাপোর্ট কাজে লাগাতে হবে। যেখানে যে ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন সে ধরনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। করোনা লকডাউনে লাখ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। ঘরে খাবার না থাকলে প্রয়োজনীয় খরচাদির ন্যুনতম ব্যবস্থা না থাকলে এসব মানুষকে ঘরে আবদ্ধ রাখা অসম্ভব। সরকারকে এসব মানুষের কথা ভাবতে হবে। শুধুমাত্র সরকারের পক্ষে এতবড় অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করা কঠিন। সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান এবং স্বচ্ছল ব্যবসায়ী ও বিত্তবানদের এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। সামর্থ্য অনুসারে দরিদ্র, অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তরফ থেকে যত বেশি সম্ভব নমুনা পরীক্ষার উপর জোর দেয়ার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম জনসংখ্যার দেশ বৃটেন, স্পেন, ফ্রান্স, কানাডা প্রতিদিন লাখ লাখ নমুনা পরীক্ষা করার পাশাপাশি লাখো মানুষের কোয়ারেন্টাইন, চিকিৎসা ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার মাধ্যমে লকডাউন সফল করে করোনা প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে। সেখানে ১৭ কোটি মানুষের দেশে আমরা এখনো দিনে ৩০-৩৫ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করতে পারছি না। গ্রামে-গঞ্জে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে করোনার নমুনা পরীক্ষা এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি জেলা শহরের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেড, অক্সিজেন ও হাইফ্লো নাজাল ক্যানোলার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ডাক্তার ও চিকিৎসা সামগ্রী পরিবহনে প্রয়োজনে সামরিক ও বেসরকারি হেলিকপ্টার ব্যবহারের উদ্যোগ নিতে হবে। আর কিছুদিন পরেই কোরবানীর ঈদ। কোরবানীর পশু ক্রয়-বিক্রয়ে অনলাইন কেন্দ্রিক ব্যবস্থা জনপ্রিয় হয়ে ওঠা আশাব্যঞ্জক। কোরবানি নিরুৎসাহিত করার কোনো সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে, কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যবস্থা করতে হবে। ঈদে লাখ লাখ মানুষের শহর থেকে গ্রামে চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজনে ঈদকে লকডাউনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। গ্রামে-গঞ্জের সর্বত্র সকলকে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনই হচ্ছে করোনাভাইরাস মোকাবেলার একমাত্র বিকল্প। যত দ্রæত সম্ভব সব উৎস থেকে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন সংগ্রহ করে তা দ্রুত প্রয়োগ করতে হবে। বৈশ্বিক এবং জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে এই সংকট মোকাবেলায় পুলিশ বাহিনী, সেনাবাহিনী, ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি সক্ষম ও সামর্থ্যবান সব মানুষের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।