Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুক্তরাষ্ট্র তার দীর্ঘতম যুদ্ধ শেষে কতটকু সফল?

ডানা ইশরাত | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

আফগানিস্তানের মাটি থেকে আল-কায়েদার পরিচালিত ৯/১১ হামলার ২০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্র অবশেষে সৈন্য প্রত্যাহার করে চলে যাচ্ছে। একাধিক সামরিক সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে যে, পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

বিদেশের মাটিতে বহু বছরের যুদ্ধ মার্কিন দেশটির মর্যাদা হ্রাস করেছে এবং তার অভ্যন্তরীণ রাজনীনৈতিক বিভেদে অবদান রেখেছে, যা তার বৈশ্বিক আধিপত্যকে আরও দুর্বল করে দিয়েছে। এর মধ্যে, চীনের উত্থান এবং রাশিয়ার বৈরিতায় সৃষ্ট দুর্দান্ত শক্তি প্রতিযোগিতার এক নতুন যুগ এখন সবচেয়ে বেশি উদ্বেগে ফেলেছে ওয়াশিংটনকে। পাশাপাশি, সন্ত্রাসবাদের চেয়ে কোভিড-১৯ মহামারী এপর্যন্ত কয়েক লক্ষাধিক আমেরিকানের মৃত্যু ঘটিয়েছে। তবে আফগান যুদ্ধ আমেরিকান ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ। ৩ হাজার ৫ শ’রও বেশি আমেরিকান ও তাদের মিত্র এই যুদ্ধে নিহত হয়েছে, আরও অনেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিকলাঙ্গ হয়েছে এবং কয়েক হাজার আফগান প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য এবং বেসামরিক নাগরিক যারা মারা গিয়েছে। কিন্তু এরপর কি ঘটবে, সেই প্রশ্নের জবাবের জন্য বিশে^র দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের ‘দীর্ঘতম যুদ্ধ’টির সমাপ্তি টানা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ওপর নিবদ্ধ থাকবে।

বাইডেন রাজনৈতিক বা কৌশলগত লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন কিনা, এটি একটি প্রশ্ন। তবে বিদেশে যুদ্ধ সমাপ্তির সিদ্ধান্ত প্রগতিশীল এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভোটারদের একজোট করে দিয়েছে। পরের প্রশ্নটি হ’ল যে, লাখ লাখ আফগানদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা আছে কি না, যারা মার্কিন গণতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতায় সাফল্য অর্জন করেছে এবং যারা এখন অন্যান্য সন্ত্রাসবাদের পাশাপাশি, ছোট মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়া সামন্ততান্ত্রিক তালেবানদের অধীনে নতুন অন্ধকার যুগের মুখোমুখি। আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে তালেবানরা সারা দেশে জেলাগুলির নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। আশঙ্কা রয়েছে, যে কোনও সময় আফগান সরকারের পতন ঘটবে, যা আমেরিকার প্রতিপত্তিতে ওপর গুরুতর আঘাত বলে বিবেচিত হতে পারে। আফগানিস্তানের বাইরের ঘাঁটিগুলি থেকে মার্কিন বাহিনী সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালিয়ে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে। তবে, কিছু সামরিক বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে এই ধরনের পদক্ষেপ কার্যকরী হবে না।

তাই সুদীর্ঘ ২০ বছরের এই যুদ্ধটি ঋদ্ধ ছিল কিনা, সেই প্রশ্নটি হোয়াইট হাউসের ওয়েস্ট উইং বা ওয়াশিংটন থিংক-ট্যাঙ্কেদের চেয়ে এখন ৯/১১-পরবর্তী যুদ্ধে নিহতদের সংখ্যা রক্ষাকারী আর্লিংটন জাতীয় কবরস্থানের সংখ্যাগুলিতে ঘুরছে। যখন বুশ প্রশাসন ইরাকের দিকে মনোযোগ সরিয়ে নিয়েছিল, সেখানকার যুদ্ধ নিস্তেজ হয়ে যায় এবং তালেবানরা পুনরায় সংঘবদ্ধ হয়। এর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন আক্রমণ ও আফগান বাহিনী গঠনের নতুন পরিকল্পনার উদ্ভ ঘটে। তবে, এতে যুক্তরাষ্ট্র বড় সাফল্য লাভ করেনি। ২০১২ সালে ওয়াশিংটন পোস্ট কর্তৃক প্রকাশিত গোপনীয় নথিতে বলা হয়েছে যে, উর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তারা সাধারণ আমেরিকানদের সাথে যুদ্ধের বিষয়ে আশাবাদগুলি পরিষ্কার করে ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন, যা মিথ্যা বলে তারা জানতেন।

গবেষণাপত্রটির প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘মার্কিন কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে, তাদের যুদ্ধ-পরিচালনা কৌশল মারাত্মকভাবে ত্রুটিযুক্ত এবং সেকারণে ওয়াশিংটন আফগানিস্তানকে একটি আধুনিক দেশ হিসাবে পুনর্র্নিমাণের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছে।’ সুদীর্ঘ বছর ধরে আফগানিস্তান এমন একটি যুদ্ধ ছিল, যা থেকে যুক্তরাষ্ট্র অর্জন করতে পারেনি এবং এটিকে বের হয়ে আসতেও পারেনি। তবে বাইডেন ট্রাম্পের বিদায়ের আগে ভাল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যদি কাবুল সরকারের পতন হয় এবং রক্তপাত ঘটে, তা বাইডেনের নজরদারিতেই হবে। মার্কিন কূটনীতিকরা সন্ত্রাসী হামলায় মারা গেলে তিনি মানবিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবেন। যুক্তরাষ্ট্র-পরবর্তী আফগানিস্তান অতি বিপদজ্জনক। দেশটির শীর্ষ মার্কিন কমান্ডার জেনারেল অস্টিন মিলার মঙ্গলবার নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন যে, দেশটিতে গৃহযুদ্ধ একটি বাস্তব সম্ভাবনা এবং এটি বিশ্বের জন্য উদ্বেগের বিষয় হওয়া উচিত। সূত্র : সিএএন।



 

Show all comments
  • মোঃ+দুলাল+মিয়া ৩ জুলাই, ২০২১, ১:৩৯ এএম says : 0
    তোমরা মন্তব্য করে আমেরিকা কে আফগানিস্তানে রাখতে চাইতেছে,তোমাদের কি দরকার এতো মতামতের।
    Total Reply(0) Reply
  • Shoaib Ahmad ৩ জুলাই, ২০২১, ৪:১৩ এএম says : 0
    এখন আমেরিকানরা ব্যর্থ হয়ে জানে বেঁচে পালিয়ে চলে যাচ্ছে আর তালেবানরা জিহাদ করে ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম করবে ইনশাআল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • Syed Zia Uddin Mamun ৩ জুলাই, ২০২১, ৪:১৪ এএম says : 0
    আমেরিকার উদ্দেশ্য আফগানিস্তান ছিলনা, আমেরিকার উদ্দেশ্য ছিল মধ্যপ্রাচ্য ধ্বংস করা। যা তারা ধ্বংস করে সফলও হয়েছে । তাই এখন তারা চলে যাচ্ছে। আফগানিস্তান, ইরাক, লেবানন, লিবিয়া, সিরিয়া, ফিলিস্তিন চূর্ণ-বিচূর্ণ করে এখন তারা চলে যাচ্ছে । এমনকি ইরানকে ধ্বংস করতেও চেয়েছিল পারেনি। পরে অন্যায় ভাবে ইরানের সেনাপ্রধান কে হত্যা করেছে।তবে ওরা আবারও আসবে.....
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Syfur Rahman ৩ জুলাই, ২০২১, ৪:১৪ এএম says : 0
    বিদেশের মাটিতে থেকে যুদ্ধ করে ঐসেনারাও ক্লান্ত হয়েছে। বিশেষ করে নির্দোষ মানুষ হত্যার মানসিক আঘাত সইতে না পেরে এমন অঢেল সুবিধা পাওয়া অনেক সেনা আত্মহত্যাও করেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mahdi Hasan Munna ৩ জুলাই, ২০২১, ৪:১৪ এএম says : 0
    আমেরিকা কখনোই শান্তির জন্য কোথাও ঘাঁটি স্থাপন করে না তারা মূলত তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ঘাঁটি নির্মাণ করে
    Total Reply(0) Reply
  • Md Hasan Basri ৩ জুলাই, ২০২১, ৪:১৫ এএম says : 0
    তাড়াতাড়ি চলে যাও।আর না হয় জান নিয়ে পালাতে পারবে না।পেছনে রাশিয়া,চীন,পাকিস্তান, ইরান,তুরস্ক,কেরিয়া,ইরাক, সিরিয়া,আরো অনেকে আছে।রাজনীতির মাঠে হারার শঙ্কা থাকলে কোন অজুহাতে মাঠ ছেড়ে চলে যাওয়া প্রজ্ঞাবানের পরিচয় পাওয়া যায়।আর না হয় হারতে হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Msf Rahman ৩ জুলাই, ২০২১, ৪:১৫ এএম says : 0
    তালেবান যে যুদ্ধে হারেনি বরং জিতেছে তার প্রমাণ তালেবার এখন দিচ্ছে। একের পর এক নতুন নতুন জেলা জয় করে প্রমাণ দিচ্ছে তাদের কৌশল সফলতা পাচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Bulbul ৩ জুলাই, ২০২১, ৪:১৭ এএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ, অবশেষে তালেবানদের হাতে পরাজিত হয়ে লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে, জঙ্গি,উগ্রবাদী, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আমেরিকা আর ন্যাটো।
    Total Reply(0) Reply
  • Ubayed Ullah ৩ জুলাই, ২০২১, ৪:১৭ এএম says : 0
    বৃটিশ লাল চামড়ার শয়তানরা ভারতবর্ষে দুইশত বছর জালাইছে,তারও একদিন পতন হইছে,আমেরিকারও একদিন পতন হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Neaz Morshed ৩ জুলাই, ২০২১, ৪:১৭ এএম says : 0
    বিশ বছর আফগানিস্তানে ধ্বংস যজ্ঞ চালিয়ে তালেবান নিশ্চিহ্ন করতে পারোনি, এখন বিড়ালের মতো পালিয়ে যাচ্ছো।
    Total Reply(0) Reply
  • মুসাফির ৩ জুলাই, ২০২১, ৫:৫৪ এএম says : 0
    নিশ্চয় শয়তানদের পতন অনিবার্য৷
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আফগানিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ