পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে বছরে ৭০ লাখ টন গরুর গোশতের চাহিদা রয়েছে। এই চাহিদার বড় অংশই এক সময় আমদানিকৃত ভারতীয় গরু দিয়ে মেটানো হতো। বর্তমানে সে অবস্থা আমূল পাল্টে গেছে। ভারত নির্ভরতা বন্ধ করে নিজস্ব উৎপাদন সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে গত ৫-৬ বছরে দেশকে গোশতে স্বনির্ভর করতে সক্ষম হয়েছেন দেশের কৃষক ও খামারিরা। এখন কোরবানি ঈদসহ সারা বছরের চাহিদার প্রায় পুরোটাই উৎপাদন করছে দেশীয় খামারিরা। নিজস্ব চাহিদা মেটাতে সারাদেশে গড়ে ওঠেছে গবাদি পশুর ছোটবড় হাজার হাজার খামার। যতই দিন যাচ্ছে গোশতের চাহিদা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে গবাদি পশুর উৎপাদন। তবে ভারত থেকে গরু-মহিষ আমদানি বন্ধ থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে গরু-মহিষের হিমায়িত গোশত আমদানি বেড়ে গেছে। এটা দেশের পশু খামারিদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষত আমদানিকৃত মহিষের গোশতকে ভোক্তা পর্যায়ে এবং হোটেল-রেস্তোঁরায় গরুর গোশত হিসেবে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। অপেক্ষাকৃত অনেক কম মূল্যে আমদানি করা হিমায়িত মহিষের গোশত দেশে উৎপাদিত গোশতের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়ে উঠছে। এর ফলে দেশের হাজার হাজার খামারি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।
দেশের নদ-নদী, খালবিল ও হাওরে উৎপাদিত মাছ আমাদের আমিষের চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করে থাকে। এ ছাড়া পোল্ট্রি খামার ছাড়াও প্রতি বছর দেশে উৎপাদিত এক কোটির বেশি গবাদি পশুর গোশত ও দুধ আমাদের খাদ্য এবং পুষ্টির চাহিদা পূরণ করছে। জলবায়ুর পরিবর্তন বা ক্লাইমেট চেঞ্জের কারণে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ কারণে খাদ্য রফতানিকারক দেশগুলোর উৎপাদন ও রফতানি সক্ষমতা ক্রমেই সংকীর্ণ হয়ে পড়তে শুরু করেছে। এহেন বাস্তবতায় আমাদের মত দরিদ্র জনবহুল দেশে খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষার মূল মানদÐই হচ্ছে চাহিদা ও উৎপাদনের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং অপ্রয়োজনীয় আমদানি বন্ধ করা। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশে ভিন্ন চিত্র লক্ষ্য করা যায়। আমন-বোরোর বাম্পার ফলন ও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদনের সময়ও ভরা মওসুমে ভারত থেকে চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়। অসময়ে চাল আমদানি করায় বিক্রয় মূল্যে ধস নামায় ধানের উৎপাদন খরচের চেয়েও কমমূল্যে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হয় দরিদ্র কৃষকরা। এভাবে কৃষকরা ধানচাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তার মত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে এটি একটি চরম হতাশাজনক বাস্তবতা। হিমায়িত গোশত আমদানির মাধ্যমে দেশের ক্রমবর্ধমান ডেয়ারি ফার্ম ও পশুখামারিদেরও একসময় অনুরূপ বাস্তবতার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ হওয়ার পর গত ৬ বছরে দেশে গবাদি পশুর খামারের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। বর্তমানে দেশে ছোটবড় প্রায় ৬ লাখ খামারে অন্তত ৩০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান ও হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। এ খাতকে কেন্দ্র করে ব্যাওয়ার্ড লিঙ্কেজও সৃষ্টি হয়েছে। খাতটি এখন ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। বিশ্বের অন্যতম গোশত উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়েছে। সেই সাথে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে আমদানি নির্ভরতা অনেকটা কমে এসেছে। এ প্রেক্ষিতে, ভারত থেকে হিমায়িত মহিষের গোশত আমদানি খাতটিকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। তার উপর এসব গোশত কতটা মানসম্পন্ন তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে ২৭ জুন পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ১১ হাজার ৮১ মেট্রিক টন, যার আর্থিক মূল্য ২৯৮ কোটি টাকার বেশি। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, যেখানে আমাদের দেশ পশু সম্পদে স্বয়ংসম্পূর্ণ সেখানে ভারত থেকে হিমায়িত গোশত আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই। এতে দেশ থেকে প্রচুর অর্থ বাইরে চলে যাচ্ছে। বরং আমাদের দেশের খামারিদের উৎপাদিত গরুর গোশত দেশের চাহিদা মিটাতে সক্ষম। উল্লেখ করা প্রয়োজন, এখন কোরবানির সময় গরু উদ্বৃত্ত থাকে। চাহিদা পূরণ করেও অনেক গরু উদ্বৃত্ত থেকে যায়। বার্ষিক চাহিদা মেটানোও সম্ভব হচ্ছে। এ অবস্থায় গোশত আমদানি বিশেষ করে ভারতীয় মহিষের গোশত আমদানি করার অর্থ হচ্ছে, আমাদের দেশীয় খামারিদের ক্ষতির মুখে ফেলা। এটা অনেকটা দেশের খামারীদের বঞ্চিত করে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সহায়তা করা। আমরা মনে করি, গবাদি পশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পর গোশত আমদানী করার বিষয়টি আত্মঘাতী এবং এ খাতকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়ার শামিল। অবিলম্বে দেশের পশুসম্পদ রক্ষার স্বার্থে ভারতীয় হিমায়িত গোশত আমদানি বন্ধ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।