Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা দূর করতে হবে

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০২১, ১২:০২ এএম

বৈশ্বিক উন্নতির অন্যতম মাপকাঠি হচ্ছে বিদ্যুতের মাথাপিছু গড় ব্যবহার। ইদানীং এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ক্লিন এনার্জি। এসব ক্ষেত্রে যে দেশ যত বেশি অগ্রগামী হচ্ছে, সে দেশ তত টেকসই উন্নতি করছে। মাথাপিছু বিদ্যুৎ ব্যবহারের গড় হারের ক্ষেত্রে আমাদের বৈশ্বিক অবস্থান তলানিতে! আর নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে তো কোনো অবস্থানই নেই। ইদানীং দেশে দৈনিক বিদ্যুতের গড় উৎপাদন চলছে ৮-৯ হাজার মেগাওয়াট। দেশে একে ১৭ কোটি লোক ধরে ভাগ করলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে। এ অবস্থায় আমাদের উন্নয়নশীল উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা কঠিন। কারণ, সব কিছুর সাথেই বিদ্যুৎ জড়িত। তাই বিদ্যুতের অভাবে সব খাতের উন্নতি ব্যাহত হবে। বর্তমানেও তাই হচ্ছে। দেশের বিদ্যুৎ খাতের বর্তমান চিত্র দেখলেই বিষয়টি প্রমাণিত হবে। গত ২২ মে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘এখন আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াট। তার মধ্যে ক্যাপটিভ ৩.৫ হাজার মেগাওয়াট। ফলে সক্ষমতা সব মিলিয়ে ১৫-১৬ হাজারের বেশি নয়’। কিন্তু দেশে সম্প্রতি দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ৮-৯ হাজার মেগাওয়াট (তাও ক্যাপটিভ, সৌর ও আমদানিসহ)। উৎপাদন সক্ষমতা এর দ্বিগুণের বেশি। ফলে বাকী অংশের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় হলেও কোনো ফায়দা নেয়া অসম্ভব হচ্ছে। অথচ, দেশের প্রায় সব মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়ায় দৈনিক চাহিদা প্রায় ১২ হাজার মেগাওয়াট দাঁড়িয়েছে। চাহিদা মাফিক বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে না। বিশেষ করে গ্রাম-গঞ্জে। তাই সেখানে লোডশেডিং ব্যাপক। রাজধানীতেও অনেকবার লোডশেডিং হয় প্রতিদিনই। আর ভোল্টেজ আপ-ডাউনের তো ইয়ত্তা নেই। বিদ্যুতের এই দৈনদশার কারণ সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা মান্ধাতা আমলেরটিই রয়েছে। চাহিদা মাফিক উন্নত করা হয়নি। শুধুমাত্র উৎপাদন বাড়ানোর দিকেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ফলে ব্যাপক লোডশেডিং হচ্ছে! উপরন্তু কম ক্যাপাসিটির লাইন দিয়ে বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে, যার অন্যতম হচ্ছে ট্রান্সমিটার বাস্ট। উৎপাদন ও সরবরাহের মধ্যে এমন ফারাক বিশ্বে বিরল! বেশিরভাগ দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা করা হয় চাহিদার ২০% বেশি। কিন্তু বাংলাদেশে সেটা হয়েছে ৫০% এর বেশি।

খবরে প্রকাশ, ‘পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক স্ট্রেনদিং প্রজেক্ট’ নামের ১৪,৩২৬ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ পায় চীনের সিসিসিই ও ইটার্ন। এই প্রকল্পের আওতায় ৭৯টি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণসহ ৯০টি প্যাকেজ রয়েছে। যার মেয়াদ ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কাজ শুরুই হয়নি। ঋণের ব্যবস্থা করবে, এই শর্তেই তাদেরকে কাজ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সময়মত ঋণ আনতে ব্যর্থ হয়। এর সঙ্গে রয়েছে নকশার ত্রুটিও। সেসব এখন ঠিক করা হচ্ছে। প্রকল্পটি ২০৩০ সালের আগে শেষ হবে না।’ অর্থাৎ উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। তাতে দেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। তবুও বিকল্প ব্যবস্থা করা হয়নি! অন্য খবরে প্রকাশ, ‘রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদন শুরু হবে আগামী বছর। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে সঞ্চালন লাইন তৈরি হবে না। ফলে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হবে।’ পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রেরও একই পরিণতি হয়েছে! এ ব্যাপারে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিমের অভিমত হচ্ছে: ‘বিদ্যুতের ভ্যালু চেইন অনুসারে উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ সমান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমাদের পরিকল্পনাবিদরা সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার দিকে কম গুরুত্ব দিয়েছেন।’

বিদ্যুৎ খাতে প্রয়োজনীয় দক্ষ লোক নেই বলে বহুবার বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন। এমনকি বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট পণ্যগুলোও চালনা ও মেরামত করার জন্য পর্যাপ্ত দক্ষ লোক নেই। দক্ষ লোক থাকবে কীভাবে? প্রতি বছর যে যৎসামান্য বিদ্যুৎ প্রকৌশলী পাশ করে বের হয়, তাদের বেশিরভাগ চলে যাচ্ছে বিদেশে। থাকবেই বা কীভাবে? যে দেশে ঘি আর পানির দাম সমান হয়, সে দেশে ঘি পাওয়া যায় না। বিদ্যুতের তার ও খুঁটি নিয়েও প্রকট সমস্যা রয়েছে। যেমন, অনেক খুঁটি নড়বড়ে, অনেকগুলো রাস্তার মাঝে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে, বেশিরভাগ খুঁটি ইন্টারনেট ও টিভি ক্যাবলের তারে জরাজীর্ণ, অনেক তার বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় ছড়িয়ে থাকে। এসব কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত। এ অবস্থায় বিদ্যুতের তার মাটির নিচ দিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করা হয়েছে। এটা খুব ভালো উদ্যোগ। কিন্তু সম্পন্ন হবে কবে কিংবা আদৌ হবে কি-না না তা বলা কঠিন।

দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে সক্ষমতা আছে, তন্মধ্যে সরকারি খাতের কম, বেসরকারি খাতের বেশি। স্বল্প মূল্যের বিদ্যুতের সরকারি প্লান্টের অনেকগুলো সংস্কার না করে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। আবার অনেকগুলো গ্যাসের অভাবেও বন্ধ থাকে। অপরদিকে, বেসরকারি খাতের বিদ্যুতের মূল্য অধিক সত্তে¡ও সেটাই ক্রয়ের দিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে কুইক রেন্টাল ও রেন্টালও আছে, যার পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার মেগাওয়াট, যার মূল্য সর্বাধিক। তাই এই বিদ্যুৎ ক্রয়ের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা বহুবার প্রবল আপত্তি জানিয়েছেন। তবুও এই বিদ্যুৎ কেনা বন্ধ করা হয়নি! ফলে ভর্তুকি বেড়েই চলেছে, যার জন্য গত এক দশকে বিদ্যুতের মূল্য বহুবার বাড়ানো হয়েছে! বিদ্যুতের সিস্টেম লস, চুরি, ওভারলোড ও বিল বকেয়া বন্ধ করার লক্ষ্যে প্রিপেইড মিটার বসানো হচ্ছে। এটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক দশকের বেশি সময়ে প্রায় চার কোটি বিদ্যুৎ গ্রাহকের মধ্যে মাত্র ১০% গ্রাহকের কাছে এটা পৌঁছেছে বলে খবরে প্রকাশ। এরূপ শম্ভুক গতিতে চললে এই শতকেও সব গ্রাহকের কাছে এটা পৌঁছতে পারবে বলে মনে হয় না! এই অবস্থায় ডেসকো তার এলাকায় ‘স্মার্ট প্রিপেইড মিটার’ বসানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আগামী বছর থেকেই এটা বসানো শুরু হবে এবং ২০২৩ সালে সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির এ শীর্ষ কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেছেন, প্রিপেইড মিটারের তুলনায় ‘স্মার্ট প্রিপেইড মিটার আধুনিক ও সুবিধাযুক্ত। উত্তম কথা। কিন্তু এটা আগে বোঝা যায়নি কেন? দ্বিতীয়ত: এর পর হয়তোবা সারাদেশেই ‘প্রিপেইড মিটার’ সরিয়ে সেখানে ‘স্মার্ট প্রিপেইড মিটার’ বসানো হবে। এই হচ্ছে আমাদের বেশিরভাগ উন্নয়ন কর্মের স্বরূপ। অর্থাৎ নতুন কাজের চেয়ে পুরানো কাজই করি বারবার এবং তা বিপুল অর্থে! এছাড়া, ব্যাপক অ-উৎপাদনশীল কাজ, দুর্নীতি, অপচয় ইত্যাদির তো অন্ত নেই। আর এভাবেই জিডিপি বাড়ছে, মাথাপিছু গড় আয় বাড়ছে, প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। কর্তৃপক্ষ এসব নিয়ে বাহাদুরি করলেও এতে সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না। শুধুমাত্র মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ রাতারাতি ধনী হচ্ছে।

গত এক দশকে দু’বার বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা করা হয়েছে, একবার ২০১০ সালে, অন্যটি ২০১৬ সালে। শেষের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে ৪২ হাজার মেগাওয়াট ও ২০৪১ সালের মধ্যে ৬২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। এরমধ্যে ৩০ হাজার মেগাওয়াট হবে নবায়নযোগ্য। অথচ, পরিকল্পনা মাফিক কাজ হচ্ছে না। তাই মহাপরিকল্পনাটি সংশোধন করা হচ্ছে। তাতে জ্বালানিমিশ্রণ, সঞ্চালন ব্যবস্থায় বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করা ও চাহিদা বিবেচনায় নতুন কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। ২০১৬ সালের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য হচ্ছে: ৩৫% কয়লায়, ৪৫% গ্যাস ও এলএনজিতে, ১০% তরল জ্বালানিতে ও ১০% নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানির পরিমাণ ২% ও এলএনজির পরিমাণ ৫%। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে এই খাতে বিনিয়োগ ক্রমান্বয়েই বাড়ছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের রিপোর্ট মতে, বিশ্বজুড়ে জ্বালানি রূপান্তরে ব্যয় ২০১৯ সালে ছিল ৪৫,৮০০ কোটি ডলার। ২০২০ সালে যা বেড়ে হয়েছে ৫০,১০০ কোটি ডলার। বিশ্বের বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বন্ধ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করছে। চীন, ভারতসহ অনেক দেশে নতুন করে কয়লার বিদ্যুৎ প্লান্ট অনুমোদন করছে না। পুরাতনগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে।

এই অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে বাইডেন নির্বাচিত হওয়ার পর দেশটি প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরে এসেছে। উপরন্তু বাইডেনের উদ্যোগে ‘ওয়ার্ল্ড লিডার্স সামিট অন ক্লাইমেট’ অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ২২-২৩ এপ্রিল। তাতে চীন, রাশিয়া, ভারত, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৪০টি দেশ অংশগ্রহণ করেছে। বিভিন্ন দেশ স্বীয় দেশের কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে। যেমন: যুক্তরাষ্ট্র ২০৩০ সাল নাগাদ ২০০৫ সালের তুলনায় ৫০-৫২% কমাবে, চীন ২০৩০ সাল থেকে কার্বন নিঃসরণ কমাতে শুরু করবে এবং ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষ করবে, জাপান ২০৩০ সালের মধ্যে ২০১৩ সালের তুলনায় ৪৬% কমাবে, কানাডা ২০০৫ সালের তুলনায় ৪০-৪৫% কমাবে, জার্মান ২০৪৫ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্য করবে। এর আগে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে পর্যায়ক্রমে বেরিয়ে আসতে ১০১ নোবেল বিজয়ী বিশ্ববাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন। অপরদিকে, জি-৭ এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে সম্প্রতি। তাতে চলতি বছরের মধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলমান কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পগুলোয় অর্থায়ন বন্ধ এবং জোটভুক্ত দেশে ২০৩০ সালের মধ্যে ক্রমান্বয়ে সব ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আগামী নভেম্বরে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমনের মাত্রা ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনা। কারণ ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীব্যাপী কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ একেবারে শূন্যতে নামিয়ে আনতে হলে এটি করা জরুরি বলে গত ৩ জুন বাংলাদেশ সফরকালে বিবিসিকে জানিয়েছেন, কপ-২৬ সভাপতি ও ব্রিটিশ এমপি অলোক শর্মা। উপরন্তু তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎকালে বৈশ্বিকভাবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ওপর জোর দিয়েছেন এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে রূপান্তরে বাংলাদেশকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। আইইএ জানিয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল বিশ্বের কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে দেশগুলোকে সহায়তার জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ১ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত অর্থায়ন প্রয়োজন।

উন্নয়নশীলতা উত্তরণের চ্যালেঞ্জ সন্নিকটে, যা মোকাবেলা করার জন্য দেশের সব খাতেই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। প্রতিটি খাত ও ব্যক্তির সাথে বিদ্যুৎ জড়িত। তাই চাহিদা মাফিক সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করা অপরিহার্য। উপরন্তু বৈশ্বিক চাহিদা অনুযায়ী এবং দেশের পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে বিদ্যুতের কমপক্ষে অর্ধেক হওয়া প্রয়োজন নবায়নযোগ্য। গত ৩০ মে পি৪জির শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৪১ সালে আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন ৪০ গিগা ওয়াটে দাঁড়াবে। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতেই হবে। সে জন্য দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের সুযোগের শতভাগ সদ্ব্যবহার ও এর সব উপকরণ শুল্ক ও ভ্যাটমুক্ত করতে হবে। অপরদিকে, ৫০ বছর পর্যন্ত চাহিদা মাফিক বিদ্যুৎ সরবরাহ সার্বক্ষণিক করার সক্ষমতা অনুযায়ী সঞ্চালন, বিতরণ ও সম্প্রসারণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া, জীবাশ্ম জ্বালানি, বিশেষ করে কয়লা ও তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্লান্ট ত্যাগ করে গ্যাস ভিত্তিক প্লান্টে গুরুত্ব দিতে হবে। কুইক রেন্টাল ও রেন্টালের বিদ্যুৎ ক্রয় বন্ধ করতে হবে অবিলম্বে। এর মেয়াদ আর না বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিও গত ১১ মার্চ মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করেছে। তাই এটা খুব দ্রুত কার্যকর হওয়া দরকার। অপরদিকে, সরকারি সব প্লান্ট চালু রাখতে যা যা করা দরকার তা করতে হবে। এসব হলে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় ব্যাপক হ্রাস পাবে। বিদ্যুতের মূল্য কমানো যাবে। পরিবেশের উন্নতি ঘটবে। এছাড়া, খুব দ্রুত বিদ্যুৎ খাতের প্রয়োজনীয় দক্ষ লোক তৈরি ও নিয়োগ এবং সব গ্রাহকের কাছে স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার পৌঁছে দিতে হবে। তাহলে বিদ্যুতে চুরি ও হয়রানি বন্ধ হবে। প্রশাসনিক ব্যয়ও হ্রাস পাবে। বিদ্যুতের অপচয় বন্ধ ও বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট সব পণ্যে সেনসর ব্যবহারে মানুষকে উদ্বুব্ধ করতে হবে। তাহলে বিদ্যুতের অনেক সাশ্রয় হবে। দেশে গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধান জোরদার করতে হবে। নেপাল ও ভুটান থেকে স্বল্প মূল্যের পানি বিদ্যুৎ আমদানি করতে হবে বিপুল পরিমাণে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্যুৎ

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৮ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন