পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে মসজিদের ইমাম, নওমুসলিম ওমর ফারুককে গুলি করে হত্যা করেছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। গত এক সপ্তাহেও খুনিদের কেউ ধরা না পড়ায় পাহাড়ি জনপদে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বান্দরবানের রোয়াংছড়ির দুর্গম পার্বত্য গ্রামে নিজের তৈরী মসজিদে ইমামতি ও নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় খ্রীষ্টধর্ম থেকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের এই ইমামকে গুলি করে হত্যা করার পেছনে পাহাড়ে ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রমান বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা। বছরের পর বছর ধরে পাহাড়ে খ্রীষ্টান মিশনারিরা অবাধে তৎপরতা চালাচ্ছে। দরিদ্র ও অনগ্রসর ক্ষুদ্র উপজাতীয়দের কয়েকটি সম্প্রদায়ের পুরো জনগোষ্ঠী ইতিমধ্যে খ্রীষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে গেছে বলে বিভিন্ন রিপোর্টে জানা যায়। পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা নিজেদের ধর্ম, ভাষা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষার কথা বলে রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতায় পাহাড়কে অশান্ত করে রাখলেও পশ্চিমা অর্থে মদদপুষ্ট একশ্রেণীর এনজিও ও খ্রীষ্টান মিশনারিদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। তাদের প্রলোভনে পড়ে হাজার হাজার দরিদ্র উপজাতি পরিবার খ্রীষ্টান হয়ে যাচ্ছে, এ চিত্র দেখেও পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের মাথাব্যথা নেই। কোনো প্রলোভন বা এনজিও তৎপরতা ছাড়াই নিজস্ব বিচারবোধের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করায় নওমুসলিম ওমর ফারুককে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আর কোনো উপজাতি পরিবার যেন ইসলাম গ্রহণ করার সাহস না করে, সে মেসেজ দেয়াই এ হত্যাকান্ডের মূল লক্ষ্য হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশাল এলাকা জুড়ে কোনো আন্ত:রাষ্ট্রীয় সীমারেখা চিহ্নিত না হওয়ায় শত শত বছর ধরে ভারত ও মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন উপজাতি সম্প্রদায়ের লোক এসব পাহাড়ে বসতি স্থাপন করেছে। এদেরকে কোনোভাবেই আদিবাসি বলা চলে না। তথাপি দেশের একশ্রেণীর মানুষ এদেরকে আদিবাসি বলে সম্বোধন করছে। একইভাবে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক একটি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকেও পাহাড়ের নাগরিকদের অধিকারের প্রশ্নে গোপণ তৎপরতার ইন্ধন চালিয়ে যাচ্ছে। নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর থেকে পাহাড়ে বিদেশি এনজিও এবং মিশনারিদের তৎপরতা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলে ক্ষুদ্র পাহাড়ি সম্প্রদায়ের ভাষা ও সংস্কৃতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহণের পর তাদের ভাষা ও অক্ষর রোমান হরফে রূপান্তরিত হয়েছে। পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর শান্তির সুযোগে পাহাড়ে খ্রীষ্টান মিশনারিদের তৎপরতা অবাধ হলেও কেউ স্বেচ্ছায় দেশের শতকরা ৯২ ভাগ মানুষের ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করতে গেলে তাদের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হচ্ছে। রোয়াংছড়িতে নওমুসলিম ওমরফারুক তার সাম্প্রতিক নজির। ঘটনার পেছনে যাই থাকুক, খুনি-সন্ত্রাসীদের ধরে বিচারের সম্মুখীন করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব। পাহাড়ে শান্তি-শৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তার স্বার্থে এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
গত ২০ বছরে হাজার হাজার উপজাতীয় পরিবারকে প্রলুব্ধ করে ধর্মান্তরিত করে খৃষ্টান বানানো হলেও মুসলমানদের কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকে মুসলমান হওয়ার ক্ষেত্রে জবরদস্তির কোনো নজির নেই। যারা মুসলমান হতে ইচ্ছুক, তারা স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে। পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হলে তারা কোনো বাধ সাধছে না। সেখানে উপজাতীয়রা তাদের স্ব স্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি অবাধে পালন করছে। এক্ষেত্রে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা কোনো ধরনের বাধা দিচ্ছে না। অথচ আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম পালনে বাধা দেয়া হচ্ছে, মানুষ মেরে ফেলছে-এটা হতে পারে না। পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা সেচ্ছায় ধর্মান্তরিত একজন মুসলমানকে হত্যা করেছে। সেই সাথে এটাও পরিষ্কার হয়ে গেছে, পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর সেখান থেকে শত শত সেনাক্যাম্প সরিয়ে ফেলার কারণে অস্ত্রধারি পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা বেড়ে গেছে। সেনাক্যাম্প সরিয়ে নেয়ার কারণে সেনাবাহিনীর সাথে সংঘাত-সংঘর্ষ কমে আসলেও তাদের অস্ত্রের ঝনঝনানি এবং ভিন্নমতের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর উপর আধিপত্য বিস্তারের তৎপরতা আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। তাদের এসব তৎপরতা পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতার ভিন্নরূপ বলে অভিহিত করা যায়। পাহাড়ে বিবদমান কোনো গ্রæপের সাথে ওমর ফারুক জড়িত ছিলেন না। তিনি নিতান্তই সহজসরল ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছিলেন। তিনি ইসলামের মর্মবানী অনুধাবন করে নিজ সম্প্রদায়ের বিপথগামী সদস্যদের দাওয়াতি কাজ করছিলেন। পাহাড় নিয়ে সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রকারীদের দালাল ও তাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী গ্রæপগুলোর খ্রীষ্টান মিশনারি তৎপরতা নিয়ে মাথাব্যথা না থাকলেও ইসলাম নিয়ে তাদের অসহিষ্ণুতা প্রকট হয়ে উঠেছে। নব্বইভাগ মুসলমানের দেশে সাধারণ মানুষ এ ইসলাম বিদ্বেষী সহিংসতা মেনে নেবে না। পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য ও বিভিন্ন ধর্মগোষ্ঠীর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার স্বার্থে ওমর ফারুকের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা অপরিহার্য। পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের হাতে কারা অস্ত্র ও অর্থ তুলে দিচ্ছে তা বিবেচনায় নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে তাদের নির্মূল করতে হবে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখতে হবে। পাহাড়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি বৃদ্ধি করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।