Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভৌগোলিক করিডোর ও প্রতিরক্ষা হুমকি

চীনের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনায় আফগানিস্তান ১

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

ইউরেশিয়া রিভিউতে প্রকাশিত সাবেক সোভিয়েত অঞ্চল জুড়ে সামরিক ও রাজনৈতিক বিকাশ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এমিল আভাদালিয়ানির নিবন্ধটি ৩ পর্বে তুলে ধরা হ’ল:

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ফলে অনিবার্যভাবে অঞ্চলটিতে একটি ভূ-রাজনৈতিক শূন্যতার সৃষ্টি হবে। তবে, অন্যান্য শূন্যতার মতোই, ভূ-রাজনৈতিক শূন্যতাও দীর্ঘকাল থাকে না। এটি আফগানিস্তানে চলমান ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। যুক্তরাষ্ট্রের পর এই অঞ্চলের শূন্যতা পূরণের প্রশ্নে সর্বাগ্রে চীনের নামটি চলে আসে।

আফগানিস্তান বেইজিংয়ের কাছে একই সাথে একটি ভৌগলিক করিডোর এবং প্রতিরক্ষা হুমকির জন্য উর্বর ভূমি, যা নিজের রাজ্য শিনজিয়াংয়ের ওপর চীনের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা এবং ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ (বিআরআই) বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সঙ্কটপূর্ণ অঞ্চল মধ্য এশিয়াতে চীনের আধিপত্য ধরে রাখার ক্ষেত্রেও হুমকিস্বরূপ।

চীনের ৮০ কিমি সীমান্ত জুড়ে থাকা আফগানিস্তানের সাথে দেশটির সম্পর্ক গত এক দশকে জটিল হয়ে উঠেছে। মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পরিকল্পনাগুলো চীনের প্রতিরক্ষা প্রশ্নে দেশটির স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী উভয় আশঙ্কাকে দৃঢ় করে তুলেছে। চীনের কাছে আফগানিস্তান শিনজিয়াংয়ের স্বাধীনতাকামী কথিত উইঘুর চরমপন্থীদের আশ্রয়স্থলও বটে, যাদের বেইজিংয়ে সংঘটিত ১৯৯০ থেকে ২০০০ সালের সন্ত্রাসী হামলার জন্য দায়ী করা হয়।

‘আমেরিকার সেনা প্রত্যাহার পরিকল্পনা পুরো আফগানিস্তান জুড়ে বিস্ফোরক হামলা ঘটিয়েছে, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরো খারাপ করে দিয়েছে এবং মানুষের জীবন ও নিরাপত্তার পাশাপাশি, শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।’ চীনের এমন অভিযোগের পেছনে সম্ভবত সেটিই মূল কারণ। প্রকৃতপক্ষে, ২০২১ সালের ৮ মে কাবুলের একটি স্কুলের বাইরে বোমা হামলায় কমপক্ষে ৬৮ জন নিহত এবং ১শ’ ৬০ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছিল। এ বিষয়ে চীনা ও পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সাম্প্রতিক এক ফোনালাপে পরস্পরের কাছে একই রকম অনুভূতি প্রকাশ করেছেন।

চীন আরো আশঙ্কা করছে যে, মধ্যপ্রাচ্য ও আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার ওয়াশিংটনের জন্য লাভজনক প্রমাণিত হতে পারে। কারণ এটি আমেরিকার পক্ষে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যকে পূরণ করবে। প্রথমত, এ অঞ্চলের শূন্যস্থান পূরণের বিষয়টি অন্যান্য অঞ্চল (বিশেষত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল) থেকে চীনের দৃষ্টি সরিয়ে নেবে এবং দ্বিতীয়ত, দক্ষিণ ও পূর্ব চীন সমুদ্রে চীনকে দমিয়ে রাখার ক্ষেত্রে আমেরিকা আরো স্বাধীন ও আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে কাজ করতে পারবে।

মধ্য এশিয়া ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে আমেরিকা অনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্থান করার পর, এই অঞ্চলে চীন ছাড়া অন্য কোনো শক্তি আর্থিক বা ভূ-রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট প্রভাবশালী নয়। চীনই এখানে মূল খেলোয়াড়। দেশটি এ অঞ্চলে নিজের অবস্থানকে সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে অসাধারণ অগ্রগতি করেছে।

তবে মনে রাখা উচিত যে, বেইজিংয় মনে করে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আমেরিকা ও তার মিত্ররা কৌশলে তাকে এই পথে যেতে বাধ্য করেছে। প্রকৃতপক্ষে, চীনের উত্থান ঠেকাতে সমুদ্র আমেরিকা অঞ্চলগুলোতে চাপ তৈরি করে। ফলে চীনকে তার নৌ-নিরাপত্তাহীনতা পাশ কাটাতে ইউরেশিয়ার কেন্দ্রস্থলে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হয়। সেখান থেকে বিআরআই আত্মপ্রকাশ করে এবং সেখানে চীনের জন্য শূন্যস্থান পূরণের সুযোগ ঘটে।

মধ্য এশিয়া যদিও রাশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক প্রভাবের জন্য একটি ঐতিহ্যগত জায়গা, তবে এটি চীনের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের জন্য উর্বর অঞ্চল। পাকিস্তান এবং সম্প্রতি ইরানের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তবে আরো পশ্চিমে, ভূমধ্যসাগরেও বেইজিংয়ের প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে। (চলবে)



 

Show all comments
  • ইসলামের কথা ২২ জুন, ২০২১, ৬:০৩ এএম says : 0
    ইসলামের হবেই হবে বিজয় ইনশাআল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • Kamrul Sharif ২২ জুন, ২০২১, ৬:০৩ এএম says : 0
    সম্রাজ্যবাদীরা অবশেষে তালেবানদের কাছে নতি শিকার করল,এতে তালেবানরা হালাল সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি পেল।
    Total Reply(0) Reply
  • Imran Selim ২২ জুন, ২০২১, ৬:০৩ এএম says : 0
    প্রতিবেশীদের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকা জরুরি। তালেবান সেটা ভালোভাবেই রক্ষা করবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Omar Bin Shaheen ২২ জুন, ২০২১, ৬:০৪ এএম says : 0
    আশা করি তালেবান এবার কূটনতিক ভাবে আরও দক্ষ আচরণ করবে। সবার সাথে কৌশলী সম্পর্ক গড়ে তুলবে।
    Total Reply(0) Reply
  • সততাই উৎকৃষ্ট পন্থা ২২ জুন, ২০২১, ৬:০৫ এএম says : 0
    চীনের তালেবানের সাথে ভালো সম্পর্কক করা উচিত। তবেই এই রাজনৈতিক শুন্যতা সহজে পূরণ হবে। আঞ্চলিক শান্তি নিশ্চিত হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ