Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বামী বাঁচলেও প্রাণ গেল স্ত্রীসহ দুই সন্তানের

সিলেটে ট্রিপল মার্ডার ঘটনাস্থল পরিদর্শন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সন্দেহের তালিকায় আহত দিনমজুর হিফজুরও হত্যার নেপথ্যে থাকতে পারে জমি সংক্রান্ত বা পারিবারিক বিরোধ

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০২১, ১২:০৩ এএম

সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাটে ঘটেছে তিন খুনের ঘটনা। হত্যা করা হয়েছে এক দিনমজুরের স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানকে। নৃশংসভাবে জবাই ও কুপিয়ে হত্যা করেছে তাদের। এছাড়া প্রাণে বাঁচলেও গুরুতর আহত হয়েছেন দিনমজুর হিফজুর। আশঙ্কাজনক অবস্থায় দিনমজুর হিফজুরকে ভর্তি করা হয়েছে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতের কোনও এক সময় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে গতকাল বুধবার সকালে গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর বিন্নাকান্দি দক্ষিণপাড়া গ্রাম থেকে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতদের লাশ ময়নাতদেন্তর জন্য সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

নিহতরা হলেন বিন্নাকান্দি দক্ষিণপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হিফজুর রহমানের স্ত্রী আলেয়া বেগম (২৭), ছেলে মিজান আহমদ (১১) ও মেয়ে তানিসা (৫)। তবে হত্যা ঘটনার ক্লু পেতে কাজে নেমেছে পুলিশের একাধিক ইউনিট। পুলিশ ধারণা করছে জায়গা সংক্রান্ত ও পারিবারিক বিরোধ জেরে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়াও হাসপাতলে চিকিৎসাধীন নিহতদের অভিভাবক দিনমজুর হিফজুর রহমানও রয়েছেন সন্দেহের তালিকায়। এছাড়া পারিবারিক দ্বন্দ্ব এবং মামার বাড়ির সাথে ঝামেলার কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। হিফজুর রহমান দীর্ঘদিন থেকে মামার বাড়ি থাকছেন। এটি হয়তো কোন পক্ষের লোকজন ভালোভাবে নেননি। মূলত হত্যা তদন্তের সেই বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ডিআইজিসহ পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন ঘটনাস্থল। সেই সাথে পুলিশের একাধিক ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ঘটনার ক্লু উদ্ঘাটনে ইতোমধ্যে হিফজুরের মামা ও কয়েকজন আত্মীয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। পুলিশ ধারণা করছে জায়গা সংক্রান্ত ও পারিবারিক বিরোধ জেরে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। এদিকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যালে কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হিফজুর রহমানের জ্ঞান এখনও ফেরেনি। তবে তার চিকিৎসা চলছে পুলিশ পাহারায়।

পরিদর্শনকালে ডিআইজি মফিজ উদ্দিন বলেন, হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশের একাধিক ইউনিট সক্রিয়। কয়েকটি বিষয় মাথায় নিয়ে কাজ করছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পারবো বলে আশাবাদী আমরা। এছাড়া তিনি বলেন, ভিকটিম হিফজুর যে ঘরে থাকতেন ওই ঘরটি তার মায়ের পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত। আর পাশের আরও দুটি ঘরে তার মামারা থাকতেন। হিফজুর দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতেন। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাদের মামা সহ আত্মীয়দের। তবে এখনও পর্যন্ত কাউকে আটক কিংবা গ্রেফতার করেনি পুলিশ।

সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, পুলিশ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে রয়েছে জমি সংক্রান্ত ও পারিবারিক বিরোধ। পরিবারের কর্তা হিফজুরের চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে। জ্ঞান ফেরার পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তাকে। হামলাকারীরা শিশু দুটির গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে হত্যা করেছে। আর শিশুদের মা আলেয়া বেগমের বুকে, পিঠ সহ শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত রয়েছে ধারালো অস্ত্রের। সেই সাথে রয়েছে হিফজুরের শরীরের একাধিক স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত। আমরা ধারণা করছি, পারিবারিক দ্বন্দ্ব এবং মামার বাড়ির সাথে ঝামেলার কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।

ঘটনাস্থল পরিবর্দশনকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন, অতিরিক্ত পুলিশ (অপরাধ) আশিশুর রহমান, গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান, গোয়াইনঘাট সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ প্রবাস কুমার সিংহ, গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুল আহাদসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। প্রতিবেশী ও পুলিশ সূত্র মতে, গতকাল সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি দেখে প্রতিবেশিরা হিফজুরের ঘরের সামনে যান। ভেতর থেকে গোঙ্গানির শব্দ শুনে দরজায় ধাক্কা দেন। এসময় ঘরের দরজা খোলা ছিল। ভেতরে প্রবেশ করে তারা খাটের মধ্যে ৩ জনের জবাই করা ও হিফজুরকে রক্তাক্ত দেখে পুলিশকে খবর দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মার্ডার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ