Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বজ্রপাতের পূর্বাভাস ও প্রতিরোধ নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১০ জুন, ২০২১, ১২:০২ এএম

ভূ-প্রাকৃতিক কারণেই বাংলাদেশ বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় পড়েছে। সুদূর অতীত থেকেই এদেশের মানুষ বজ্রপাতে মৃত্যুর শিকার হচ্ছে। তবে অবাধে গাছপালা কর্তন ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা তথা জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশে বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এটা ক্রমবর্ধমান আতঙ্কজনক হওয়ায় কয়েক বছর আগে বজ্রপাতকে দেশের অন্যতম জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণার পাশাপাশি বজ্রপাত কমিয়ে আনতে তালগাছ রোপণের মতো প্রাকৃতিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এ লক্ষ্যে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকাগুলোতে পরিকল্পিতভাবে তালগাছ রোপণের একটি জাতীয় পরিকল্পনার কথা জানা গেলেও গত ৫ বছরে তা আদতে তেমন দৃশ্যমান হয়নি। তালগাছ একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ হওয়ায় এর বাড়বাড়ন্ত অত্যন্ত ধীর। প্রাকৃতিক সনাতন পদ্ধতি হিসেবে তালগাছ দীর্ঘমেয়াদে বজ্রপাত নিরোধসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ ও অর্থনৈতিক সম্পদ হিসেবে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হলেও বজ্রপাতের কারণে ক্রমবর্ধমান মৃত্যু থেকে মানুষকে বাঁচাতে আরো কার্যকর প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষত বজ্রপাতের কয়েকদিন বা কয়েক ঘণ্টা আগে মানুষকে সতর্কীকরণ ব্যবস্থাকে যুযোপযোগীকরণ এবং বজ্রপাত নিরোধক পোল বসিয়ে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিচ্ছেন।

সরকারি হিসাবে গত এক দশকে দেশে বজ্রপাতে আড়াই হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। আর একটি বেসরকারি সংস্থার দেয়া তথ্যে বলা হয়েছে, গত দেড়মাসে বজ্রপাতে দেশে ১৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বর্ষাকালে গড়ে প্রতিদিন এর অর্ধেক সংখ্যক মানুষও যদি বজ্রপাতে মারা যায় তাহলেও বছরে সহস্ত্রাধিক মানুষ মারা যাচ্ছে। বন্যা-জলোচ্ছ¡াসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাধারণ মানুষের প্রাণহানির সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব হলেও বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। বজ্রপাত ও বজ্রপাতজনিত মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়ার পেছনের কারণগুলো সঠিকভাবে অনুধাবন করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। আধুনিক প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে আমাদের গতানুগতিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। বজ্রপাতসহ বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসের পুরাতন পদ্ধতি বদলে বজ্রপাতের সুনির্দ্দিষ্ট সতর্কীকরণ বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে, নির্দিষ্ট স্থানে সম্ভাব্য বজ্রপাতের সময়টাতে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে পারলে বজ্রপাতে প্রাণহানি কমিয়ে আনা সম্ভব। বিশেষত হাওর ও নদীতে মাছধরা এবং কৃষিখামারে কর্মরত জেলে-চাষিরা বজ্রপাতের শিকার হওয়ায় দেশের কৃষি উৎপাদন ও খাদ্যনিরাপত্তা ক্রমে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে।

এই করোনাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের সাথে বজ্রপাত এক নতুন মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। এমনকি পরিষ্কার মেঘহীন আকাশেও হঠাৎ বজ্রপাতে প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় সারাবিশ্বেই বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে গেলেও সেটেলাইট ও উন্নত প্রযুক্তির থান্ডারর্স্টম ডিটেকটিভ সেন্সরের মাধ্যমে বজ্রপাতের পূর্বাভাস দিয়ে প্রাণহানি কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে। কয়েক বছর আগে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের ৮টি অঞ্চলে আটটি ডিটেক্টিভ লাইটেনিং সেন্সর বসিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, প্রতিটি সেন্সরের আড়াইশ কিলোমিটার এলাকা কভার করার ক্ষমতা থাকায় ৮টি সেন্সর যন্ত্রে দেশের অধিকাংশ এলাকার বজ্রপাতের পূর্বাভাস দিতে সক্ষম হওয়ার কথা। কিন্তু এসব সেন্সর যন্ত্রের যথাযথ মনিটরিং এবং সতর্কবার্তা সাধারণ মানুষের কাছে সময়মত পৌঁছে দেয়ার কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বজ্রপাত সতর্কতা ও পূর্বাভাস ব্যবস্থায় পরিবর্তনের পাশাপাশি বজ্রপাত নিরোধ ব্যবস্থা ও আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা থাকলেও তার বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না। দেশের মোবাইলফোন অপারেটরদের টাওয়ারগুলোতে আর্থিং পদ্ধতি সংযোজনের পাশাপাশি বজ্রপাতপ্রবণ এলাকাগুলোতে লাইটেনিং অ্যারেস্টার বসানোর কথা শোনা যাচ্ছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। এসব সময়োপযোগী পরিকল্পনাগুলোকে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতা থেকে মুক্ত করে এখনই কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। হাওরে এবং মাঠে কাজ করা কৃষিশ্রমিক, জেলে এবং পথচারীদের বজ্রপাত সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় কংক্রিটের তৈরি বজ্রপাত আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলার ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিমাসেই বজ্রপাতে মানুষ মারা যাচ্ছে। কিন্তু এ মৃত্যু কারো কাম্য হতে পারে না। তাই, বজ্রপাতের পূর্বাভাস, প্রতিরোধমূলক অ্যারেস্টার এবং আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলার মাধ্যমে মানুষের জীবন রক্ষায় সময় ক্ষেপণের কোনো অজুহাতই গ্রহণযোগ্য নয়।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বজ্রপাত

১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন