Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

প্লাবিত হচ্ছে অনেক এলাকা

বরিশালে পয়ঃনিষ্কাশনে অব্যবস্থাপনা ও কির্তনখোলার তলদেশ ভরাট

বরিশাল ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০২১, ১২:০৩ এএম

দুর্বল পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও কির্তনখোলা নদীর তলদেশ ক্রমশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই বরিশাল মহানগরীর বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। মৌসুমী জোয়ারের সময়ও বিনা বৃষ্টিপাতে নগরীর ড্রেন উপচে অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাও পানিতে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। নগরীর অনেক নিচু এলাকাও জোয়ারের পানিতে সয়লাব হচ্ছে। দিনের পর দিন পানিবদ্ধতার শিকার অনেক এলাকায় মানবিক বিপর্যয়ও সৃষ্টি হচ্ছে। গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ১৬.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতেই নগরীর বেশিরভাগ রাস্তাঘাট ছিল পানির তলায়। বৃষ্টির পানির বদলে ওইদিন মূলত জোয়ারের পানি কির্তনখোলায় সংযুক্ত ৭টি খাল দিয়ে নগরীতে প্রবেশ করে জনজীবন অচল করে দেয়। এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন কারিগরি জরিপ পরিচালিত না হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক দায়িত্বশীল প্রকৌশলী কির্তনখোলা নদীর তলদেশ ভরাটের বিষয়টি স্বীকার করেন। এ কারণে শুধু পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাই নয়, ভবিষ্যতে নগরীর অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা আরো দীর্ঘ সময় পানির তলায় থাকার আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন প্রকৌশলীরা। পরিস্থিতি উত্তরণে কির্তনখোলার সাথে সংযুক্ত খালগুলোর মুখে রেগুলেটর ও পাম্প হাউস নির্মাণসহ মহানগরীর সবগুলো খাল পুনরুদ্ধার ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণেরও তাগিদ দিয়েছেন কারিগরি বিশেষজ্ঞরা। একই সাথে একটি পরিপূর্ণ মডেল স্ট্যাডি করে বরিশাল বন্দরে দীর্ঘ মেয়াদী ড্রেজিং করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন প্রকৌশলীরা।
গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বরিশাল নদী বন্দরের নাব্যতা রক্ষায় কির্তনখোলায় অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং করে নদীতেই সে পলি অপসারণ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কারিগরি কমিটির দিক নির্দেশনা ছিল মূল ভাটার সময় বন্দরের সামনের পলি অপসারণ করে তা কির্তনখোলার অপর পাড়ের ভাঙন কবলিত এলাকায় ফেলার। প্রয়োজনে এ লক্ষ্যে বন্দরের নৌ চলাচল প্রতিদিন ২-৩ ঘণ্টা বন্ধ রাখারও সুপারিশ ছিল।
কিন্তু বিআইডবিøউটিএ সে নির্দেশনা অনুসরণ না করে জোয়ার-ভাটার চিন্তা না করেই তাদের সময় সুযোগ মত ড্রেজিং করে নদীর মধ্যভাগে পলি অপসারণ করেছে। ফলে গত প্রায় ২০ বছরে বরিশাল বন্দর থেকে ভাটি এলাকার দপদপিয়া সেতু পর্যন্ত কির্তনখোলার তলদেশ ক্রমশ ভরাট হয়ে গেছে। যারই ফলশ্রুতিতে একটি বড় জোয়ার হলেই বরিশাল মহানগরীর রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
কিন্তু পরিস্থিতি উত্তরণে তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেই। বরিশাল সিটি করপোরেশন গত প্রায় ৫ বছর ধরে নগরীর কিছু খাল খনন করে পুনরুদ্ধারের প্রকল্প নিয়ে মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনে দৌড়ঝাঁপ করলেও তা অনুমোদন লাভ করেনি। সাবেক নগর পরিষদের সময় প্রায় সোয়া ২শ’ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) দাখিল করলেও ইতোমধ্যে নতুন নগর পরিষদ দায়িত্ব গ্রহণ করে। বর্তমান পরিষদ প্রায় সাড়ে ১১শ’ কোটি টাকার একটি ভিন্ন ডিপিপি দাখিল করে। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে পরামর্শক নিয়োগ করে প্রকল্প ব্যয় কমিয়ে ডিপিপিটি পুনর্গঠনের দিক নির্দেশনা দিয়ে তা ফেরত দেয়। নগর কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে পরামর্শকের মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার ২শ’ কোটি টাকার একটি সংশোধিত ডিপিপি দাখিল করলেও মন্ত্রণালয় তা অনুমোদন না করে ফেরত পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।
অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশাল মহানগরীর ৭টি খাল সংস্কারে ১০.৭৫ কোটি টাকার একটি ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছে বলে জানা গেছে। আগামী অর্থবছরে নগরীর পলাশপুর খাল, আমনতগঞ্জ খাল, জেলখাল, ভাটার খাল, চাঁদমারী খাল, সাগরদী খাল ও রূপাতলী খালগুলোর প্রায় ১৮ কিলোমিটার অংশ সংস্কার করার প্রস্তাবনা রয়েছে ডিপিপিতে। প্রকল্পের আওতায় এসব খালের দুধারে ওয়াকওয়ে ও বসার জন্য কিছু অবকাঠামো নির্মাণের কথাও বলা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এসব খাল সংস্কার করে দিলেও তার পরবর্তী মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনই বহন করবে বলে জানা গেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বরিশাল

২৯ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ