Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চিড় ধরছে মোদির অক্ষয় ক্যারিশমায়?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০২১, ১২:১৩ এএম

বীর সাঙভী একজন ভারতীয় সাংবাদিক, লেখক, কলামিস্ট এবং উপস্থাপক। প্রভাবশালী ভারতীয় প্রত্রিকা হিন্দুস্তান টাইম্সের এ সপ্তাহের ‘দ্য টেস্ট’ কলামে তিনি লিখেছেন, ‘এ মুড অফ দ্য নেশন জরিপ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, হিন্দুত্ববাদ ইস্যুতে সরকারের প্রতি সমর্থন রয়েছে, তবে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি নিয়ে অসন্তুষ্টি রয়েছে।’

বীর লিখেছেন যে, ভারতীয় জনগণ মোদির হিন্দুত্ববাদের ভজন শুনে রোমাঞ্চিত হতে পারে এবং হিন্দি বেল্টের কিছু অংশ তাঁকে সাধুসন্ত জ্ঞানে আরাধনা করতে পারে। তবে, দক্ষিণাঞ্চলকে এ বিষয়ে কম উৎসাহী বলে মনে হচ্ছে। কেরলা এবং তামিলনাড়ুর সাম্প্রতিক নির্বাচন দেখিয়ে দিয়েছে যে, ভোটাররা অকার্যকর এ প্রধানমন্ত্রীর বাগ্মিতায় বিমোহিত নয় এবং পশ্চিম বাংলায় তার এই কৌশল দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
সম্প্রতি এবিপি নিউজের জন্য সি-ভোটের করা ‘স্টেট অফ নেশন’ জরিপে মোদির দ্বিতীয় মেয়াদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কী তা জানতে চাওয়া হলে ৪৭.৪ শতাংশ ভোটার বলেছেন যে, ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা। ২৩.৭ শতাংশ মোদির সর্বোচ্চ সাফল্য হিসেবে রাম মন্দিরের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তে কথা বলেছে।

হ্যাঁ, সিএএ, কাশ্মীর এবং রাম মন্দিরের মতো তথাকথিত হিন্দুত্ববাদ তথা জাতীয়তাবাদের ইস্যুগুলোতে ভারতীয় জনগণের সমর্থন এখনও তুলনামূলকভাবে শক্ত। তবে তা আর প্রশ্নাতীত নয়। এমনকি, রাম মন্দিরের বিষয়ে রায়ের প্রশংসা করা লোকেরাও মনে করে যে, এপ্রিলের কুম্ভ মেলাটি সংক্ষিপ্ত করা উচিত ছিল।

জরিপের পরের প্রশ্নগুলোতে মোদির চিড়ধরা ভাবমর্যাদা আরো খারাপের দিকে গেছে। লাদাখে চীনের দখলদারিত্বে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতা আছে কিনা জানতে চাইলে, ৪৪.৮ শতাংশ লোক ‘হ্যাঁ’ বলেছেন, ‘না’ বলেছেন ৩৭.৩ শতাংশ। ৪১.৯ শতাংশ বলেছেন যে, সরকারের উচিত ছিল কৃষকদের দাবি মেনে নেয়া।
মোদি সরকারের আমলে কারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছে জানতে চাইলে ৬৪.৪ শতাংশ বলেছেন, ‘বড় বড় কর্পোরেট হাউস’। মাত্র ৭.৪ শতাংশ ‘বেতনভুক শ্রেণি’র কথা বলেছেন এবং মাত্র ১২ শতাংশ বলেছেন ‘কৃষক ও শ্রমিক’। ৪৭ শতাংশ মানুষ মোদি সরকারকে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির জন্য দায়ী করেছেন।
জরিপের সংখ্যাগরিষ্ঠ ৬০.৮ শতাংশ ভোটার বলেছেন যে, সরকারের নির্বাচন স্থগিত করা উচিত ছিল এবং ৫৯.৭ শতাংশ বলেছেন যে, নির্বাচনী প্রচারণা চালানো মোদির মোটেই উচিত হয়নি। ৫৫.৩ শতাংশ বলেছেন যে, কুম্ভ মেলাকে কেবলমাত্র একটি প্রতীকী অনুষ্ঠানে রূপ দেয়া উচিত ছিল।

সরকারের বৃহত্তম ব্যর্থতা কী তা জানতে চাইলে, ৪১ শতাংশ ভোটার বলেছেন যে, কোভিড নিয়ন্ত্রণ করা। আরো ২৩ শতাশ বলেছেন যে, এটি কৃষক আন্দোলন। লকডাউনের সময় সরকারের সহায়তা মানুষের কাছে পৌঁছেছে কিনা জানতে চাইলে ৫২.৩ বলেছেন যে, সেটি হয়নি। সরকার ভ্যাকসিন প্রোগ্রাম যথাযথভাবে পরিচালনা করেছে কিনা জানতে চাইলে, ৪৪.৯ শতাংশ হ্যাঁ বলেছেন, ৪৩.৯ বলেছেন ‘না’।

এসব ফলাফল প্রমাণ করে যে, করোনা মহামারিই জনসাধারণের অসন্তুষ্টির জন্য সবচেয়ে বড় কারণ। মোদি সরকার জানে যে, ভোটাররা কেবল গল্পের কীভাবে শুরু হয় তা বিবেচনা করে না, বরং কীভাবে গল্পের শেষ হয়, তা বিবেচনা করে। তাই মোদি সরকার মনে করে যে, পরবর্তী নির্বাচনে যাওয়ার আগে কোভিড ইস্যুকে সামলে নেয়ার জন্য তাদের দীর্ঘ ৩ বছর সময় হাতে আছে।

কিন্তু নরেন্দ্র মোদি এই মুহূর্তে দু’টি বাস্তব সমস্যার মুখোমুখি। প্রথমত, তিনি যেসব কৌশল খাটিয়ে নিয়ে হিন্দুত্ববাদের প্রতি অন্ধদের সন্তুষ্ট করে সমর্থন আদায় করতে চান, সেগুলো দ্রæত ফুরিয়ে আসছে। এরপর তিনি সিভিল কোড চাপিয়ে দিতে পারেন, তবে তারপরের বিকল্প পথগুলো সীমাবদ্ধ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীরত্ব দেখানোর কৌশলটি দ্বিতীয়বার কাজ করবে কিনা, তাও এখনও পরিষ্কার নয়।

দ্বিতীয়ত, ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে তিনি আর কৃষকদের মতো মৌলিক গোষ্ঠীগুলোর সাথে দ্ব›েদ্ব জড়াতে পারবেন না এবং দেশদ্রোহী নাগরিক হিসাবে তাদের চিত্রিত করার ক্ষেত্রে তিনি জনসমর্থনের কথা বিবেচনা করতে পারবেন না এবং তিনি আর তার অকর্মা মন্ত্রীদের বরখাস্ত করতে অস্বীকার করতে পারবেন না।

বর্তমানে হিন্দুত্বের বিজয় উদযাপনকারী ভোটাররাও শাসক হিসেবে মোদির কার্যকারিতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। হিন্দুত্ববাদের কান্ডারি হিসেবে যে বিপুল অন্ধ সমর্থনকে মোদি অক্ষয় বলে ধরে নিয়েছেন, তাও এখন অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে এবং অবশেষে, চিড় ধরতে শুর করেছে মোদির অক্ষয় ক্যারিশমায়। পাশাপাশি, এখন শাসকে হিসেবে মোদির কার্যকারিতার হিসাব কষা শুরু হয়ে গেছে। সূত্র : হিন্দুস্তান টাইম্স।



 

Show all comments
  • Mozammel Hoque ৪ জুন, ২০২১, ২:২৭ এএম says : 0
    কেবলমাত্র শুরু,,,,, সামনে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে তার
    Total Reply(0) Reply
  • Mustain Billah ৪ জুন, ২০২১, ২:২৭ এএম says : 0
    বাবরী মসজিদ ভেঙ্গে রাম মন্দির বানানোর ফল কি একটু ভোগ করবে না এ কি করে হয়?
    Total Reply(0) Reply
  • আহমেদ শেহজাদ ৪ জুন, ২০২১, ২:২৮ এএম says : 0
    অশিক্ষিত নরখাদক লোকজনকে দেশের প্রধানমন্ত্রী বানালে এমনটাই হবে, বুঝতে হবে ভারতবাসী কে।
    Total Reply(0) Reply
  • Shorif Shuvo ৪ জুন, ২০২১, ২:২৮ এএম says : 0
    যে দেশের সরকার প্রধানের দায়িত্ব একটা অমানুষের হাতে থাকে, সেই দেশে আর কি হতে পারে।
    Total Reply(0) Reply
  • Ansur Ullah Nur Rahman ৪ জুন, ২০২১, ২:৩৬ এএম says : 0
    হিংস্র নরেন্দ্র মোদী একজন সাম্প্রদায়িক নিকৃষ্টতর বর্বর খুনি
    Total Reply(0) Reply
  • চৌধুরী হারুন আর রশিদ ৪ জুন, ২০২১, ২:৩৬ এএম says : 0
    কোন ক্যারিশমায়ই কাজ হবে না
    Total Reply(0) Reply
  • Abbas ৪ জুন, ২০২১, ৩:৩৬ এএম says : 0
    Modire char Ketle Dia Delhi gate a Boshano hok. Cha bikri Koratai uttom ei .. jonno
    Total Reply(0) Reply
  • Modi ৪ জুন, ২০২১, ৭:৪০ এএম says : 0
    Cha lagbe cha? Keu cha kitten? Gorom cha gorom.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মোদি

২৮ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ