বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
দক্ষিণাঞ্চলবাসির স্বপ্নের লেবুখালী সেতুর ‘ক্লোজিং সেগমেন্ট’ ঢালাইয়ের পরে এর নির্মাণ কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলতি মাসেই মূল সেতু ও সংযোগ সড়কটি যানবাহন চলাচলের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। কুয়েত, ওপেক এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার যৌথ অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে ‘এক্সট্রা ডোজ প্রী-স্ট্রেসড বক্স গার্ডার’ টাইপ-এর সেতুটি। আগামী মসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুটি উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে। নির্মাণ কাজের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সহ কাজের মান যাচাই ও মূল্যায়নে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আবদুস সবুর শুক্রবার সেতু এলাকা পরিদর্শন করবেন।
ঢাকা-ফরিদপুর-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের লেবুখালীর পায়রা নদীর ওপর ১ হাজার ৪৭০ মিটার দীর্ঘ সেতুটির মাধ্যমে পটুয়াখালী ও কুয়াকাটা সহ দক্ষিণাঞ্চলের সাথে সারা দেশের সরাসরি সড়ক সংযোগ স্থাপিত হচ্ছে । বরিশাল মহানগরী থেকে ২৬ কিলোমিটার দক্ষিণে লেবুখালী সেতুটি পায়রা সমুদ্র বন্দরকে চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্র বন্দর ছাড়াও দেশের সবগুলো স্থল বন্দরকে যুক্ত করবে। এ সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে কুয়াকাটায় পৌছতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ ৭ ঘন্টা। এমনকি উত্তরবঙ্গের সাথেও সাগর পাড়ের কুয়াকাটার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করবে লেবুখালী সেতু।
গত ৩১ মার্চ সকালে প্রায় দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্য চার লেনের এ সেতুটির মূল অংশের ‘ক্লোজিং সেগমেন্ট’এর ঢালাই সম্পন্ন হবার মধ্যে দিয়ে পায়রা নদীর দুপাড়ের সংযোগ স্থাপিত হয়।
বাংলাদেশ, চীন ও কুয়েতের যৌথ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান- ‘আইসিটি-কুনহুয়া-নারকো-ইপিসি-জেভি’র প্রকৌশলীদের তত্বাবধানে চীনের ‘লংজিয়ান রোড এন্ড ব্রীজ কনস্ট্রাকশন কোম্পানী’র প্রকৌশলী ও কর্মীগন এখন দিনরাত সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষ্যে কাজ করছেন। তবে গত কয়েকদিনের বৈরি আবহাওয়ায় সেতুর দুপ্রান্তের সংযোগ সড়কের ওয়ারিং কের্স সহ বিটুমিনাস কাজ কিছুটা ব্যহত হচ্ছে।
চুক্তি অনুযায়ী আগামী ৩০ জুনের মধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করছে চীনা নির্মাণ প্রতিষ্ঠানটি। তবে লেবুখালীতে পায়রা নদী শাসন সহ নির্মিত সেতু ও সংযোগ সড়কের যেকোন ত্রুটি বিচ্যুতি সংশোধনে জন্য প্রকল্পের মেয়াদকাল, ২০২২-এর ৩০ জুনের মধ্যে অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে হবে। মূল চুক্তি অনুযায়ী ২০১৯-এর এপ্রিলে সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও ‘আম্পান’ ও ‘করোনা’র মত প্রাকৃতিক দুর্যোগে তা দু বছর পিছিয়েছে। ইতোমধ্যে সেতু পারাপারের টোল নির্ধারণ করে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশ করেছে।
চট্টগ্রামের দ্বিতীয় কর্ণূফূলী সেতুর আদলে লেবুখালীর মূল সেতুটি বক্স গার্ডার ছাড়াও স্টে-ক্যাবলের ওপর স্থিতিশীল থাকছে। ২০০৫-০৬ সালে পরিকল্পনা করা এ সেতুটি নির্মাণে কুয়েতের সাথে প্রথম ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর হয় ২০১২’র ১৩ মার্চ। ঐ বছরই ৮ মে সোয়া ৪শ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয় সম্বলিত ডিপিপি একনেক-এ অনুমোদন লাভের পরে ইতোমধ্যে দুবার সংশোধনের ফলে প্রকল্পব্যায় প্রায় সাড়ে তিনগুন বেড়ে ১ হাজার ৪৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলের প্রথম ৪ লেনের এ সেতুটির দু প্রান্তে ১ হাজার ২৬৮ মিটার সংযোগ সড়ক এবং টোল প্লাজাও নির্মিত হচ্ছে। পায়রা নদীর মূল অংশের ৬৩০ মিটার ‘বক্স গার্ডার’ ৪টি স্প্যানের ওপর নির্মিত হয়েছে। যার মূল অংশ ২শ মিটার করে দুটি স্প্যান ১৮.৩০ মিটার ভার্টিক্যল ক্লিয়রেন্স রাখা হয়েছে পায়রা সমুদ্র বন্দরে উপকূলীয় পণ্য ও জ্বালানীবাহী নৌযান চলাচলের জন্য। এছাড়া সেতুর মূল অংশের দুপ্রান্তে ৮৪০ মিটার ভায়াডাক্ট-এ ৩০ মিটার করে ২৮টি স্প্যানে বর্ধিত অংশের ভার বহন করছে। লেবুখালী সেতুর ৩২টি স্প্যান এখন দাড়িয়ে আছে ৩১টি পিয়ার-এর ওপর। সেতুটির ২৮টি স্প্যানের ১২টি বরিশাল প্রান্তে এবং ১৬টি পটুয়াখালী প্রান্তে।
খরস্রোতা পায়রা নদীর ভাঙন থেকে ১,৪৭০ মিটার দীর্ঘ দেশের অন্যতম বৃহৎ লেবুখালী সেতু রক্ষায় পটুয়াখালী প্রান্তে ১ হাজার ৪৭৫ মিটার নদী শাসন কাজও এগিয়ে চলছে। আগামী মার্চের মধ্যে নদী শাসনের এ কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টগন। তবে ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে বরিশাল প্রান্তেও নদী শাসনের কাজ করার কথা জানিয়েছেন নদী বিশেষজ্ঞগন।
প্রকল্পের আওতায় বরিশালে একটি প্রশাসনিক ভবনও নির্মিত হচ্ছে। সেতুটির বরিশাল প্রান্তে ৬১০ মিটার ও পটুয়াখালী প্রান্তে ৬৫৮ মিটার সংযোগ সড়কের ওয়ারিংকোর্স শেষ করে বিটুমিনস কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। মূল সেতু ও তার ভায়াডক্টের জন্য টেষ্ট পাইল, ওয়ার্কিং পাইল, পীয়ার ক্যাপ, পীয়ার এবং ভায়াডাক্ট সহ মূল সেতুর ফাউন্ডেশন ছাড়াও সাব-স্ট্রাকচার-এর নির্মাণ কাজ নিবিড় তত্ববধানে চীনা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ইতোপূর্বে সম্পন্ন করেছে।
গত ৩১ মার্চ প্রত্যুষে ‘ক্লেজিং সেগমেন্ট’ ঢালাই-এর মাধ্যমে মূল সেতুর ভায়াডাক্টের সুপার স্ট্রাকচার শতভাগ সম্পন্ন হয়। ভয়াডাক্ট’র ওয়ার্কিং পাইল সহ পাইল ক্যাপ, এ্যাবাটমেন্ট ওয়ালও কঠোর মান নিয়ন্ত্রণে ইতোপূর্বে সম্পন্ন হয়। মূল সেতুটি বিভিন্ন মাপের ৫৫টি টেষ্ট পাইল সহ দশটি পীয়ার, পাইল ও পীয়ার ক্যাপ-এর ওপর নির্মিত হয়েছে। এছাড়া ১৬৭ টি বক্স গার্ডার সেগমেন্ট নির্মাণ কারতে হয়েছে।
দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের মতে, দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষের স্বপ্নের লেবুখালী সেতু এ অঞ্চলের মত সারাদেশের আর্থÑসামাজিক ব্যবস্থা উন্নয়নেও এক অনন্য মাইলফলক হয়ে উঠবে অদূর ভবিষ্যতেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।