Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আফগান শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে বৈঠকে বসছেন তিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০২১, ৫:৪৪ পিএম

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো তাদের সেনা প্রত্যাহারকে ত্বরান্বিত করার কারণে তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৃহস্পতিবার ভিডিও লিংকের মাধ্যমে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।

এর আগে সর্বশেষ ত্রিপক্ষীয় সভাটি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এবারের সভাটিও ভার্চুয়ালি আয়োজন করা হয়েছে। এবার মূলত শান্তি প্রচেষ্টায় বর্তমান অচলাবস্থা ভাঙতে কি করা যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। বৈঠকটি এমন এক সময়ে হতে যাচ্ছে যখন আফগানিস্তানের জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা (এনএসএ) হামদুল্লাহ মহিব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক মন্তব্য করার পরে দেশ দুইটির মধ্যকার সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

ইসলামাবাদ কাবুলের কাছে এ বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি আফগান এনএসএর সাথে কোনও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাকিস্তানি কর্মকর্তারা মনে করেন, এনএসএ আফগান প্রক্রিয়ায় ভারতীয় লবির প্রতিনিধিত্ব করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আপনি যদি ভারতের এনএসএ অজিত ডোভালের ভাষায় কথা বলেন তবে আমাদের কাছ থেকে কোনও সহযোগিতা আশা করবেন না।’

তবে তীব্র ক্ষোভ সত্ত্বেও, পাকিস্তান আফগান যুদ্ধের রাজনৈতিক সমাধানের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পররাষ্ট্র দফতরের এক কর্মকর্তার মতে, ত্রিপক্ষীয় বৈঠকটি সেই প্রচেষ্টারই অংশ। তিনি জানান, ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় আফগানিস্তানের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে এবং এগিয়ে যাওয়ার পথে বিভিন্ন বিকল্প নিয়ে আলোচনা করা হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পরিকল্পনা অনুযায়ী ১১ সেপ্টেম্বরের আগেই আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক। মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী এখন ৪ জুলাইয়ের মধ্যে সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন করতে চায়। তবে, শান্তি চুক্তির অভাব যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশটিতে অস্থিরতার আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। সেখানে সহিংসতাও বেড়েছে।

এদিকে, মঙ্গলবার আফগানিস্তান আইনজীবী পরিষদের স্পিকার মীর রহমান রহমানি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশির সাথে সাক্ষাত করেছেন। সেখানে কুরেশি বলেন, ‘আফগানিস্তানের শান্তি, নিরাপত্তা ও সার্বভৌম পরিস্থিতি বজায় রাখতে পাকিস্তান বদ্ধ পরিকর।’ তবে সম্প্রতি দেশটি থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহার শুরুর পর কাবুলের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে ইসলামাবাদ। পরে কুরেশী বলেন, ‘আফগানিস্তানে কোন সামরিক সমাধান নেই। রাজনৈতিক সমঝোতাই সেখানকার একমাত্র সমাধান।’

কুরেশি আশা প্রকাশ করেছেন যে, আফগান দলগুলি এই ঐতিহাসিক সুযোগটি কাজে লাগাবে এবং আফগানিস্তান ও অঞ্চলে টেকসই শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বিস্তৃত ভিত্তিক এবং ব্যাপক রাজনৈতিক সমঝোতা তৈরির কাজ করবে। তিনি আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে ও বাইরে উভয়দিকেই ‘বিলোপকারীদের’ ভূমিকা সম্পর্কে সজাগ থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছিলেন। তিনি অংশীদার লক্ষ্য অর্জনের জন্য গঠনমূলক ও সহায়ক পরিবেশ বজায় রাখার গুরুত্বের উপর জোর দেন।

কুরেশি আফগানিস্তান-পাকিস্তান অ্যাকশন প্ল্যান ফর পিস অ্যান্ড অলিডেরিটি (এপিএপিপিএস) সহ উপলভ্য ফোরামগুলি দ্বিপক্ষীয় স্বার্থের সমস্ত বিষয় মোকাবিলার জন্য ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দিয়েছিলেন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থিত একটি সময়সীমাবদ্ধ ও সু-স্বচ্ছল রোডম্যাপে আফগান শরণার্থীদের স্বদেশে নিরাপদে ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে পাকিস্তানের প্রতিশ্রুতি বিষয়টিও উল্লেখ করেন।

এদিকে ইসলামাবাদে দুই নেতার বৈঠকের দিনও বোমা হামলা হয়েছে কাবুলে। আলাদা স্থানে তিনটি বোমা হামলায় নিহত হয়েছে অন্তত ১০ জন। আহত হয়েছে আরও ১২ জন। আফগানিস্তানের হাজারা জাতিগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে এমন অঞ্চলকে লক্ষ্য করে হামলাগুলো চালানো হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত এ হামলায় দায় স্বীকার করেনি কেউ। এরআগে দেশটির শিয়া মতাবলম্বীদের বিপক্ষে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল আইএসআইএল। আফগানিস্তানে ৩৬ মিলিয়ান জনসংখ্যার মধ্যে ২০ শতাংশ শিয়া জনগোষ্ঠী।

এরআগে কাবুলে বেশ কিছু হামলায় নিজেদের সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে জানিয়েছে আইএস। গত আট মে কাবুলে একটি গাড়ি বোমা হামলায় ৯০ জন নিহত হয়। এঘটনায় নিজের জড়িত থাকার কথা জানিয়েছিল আইএস। চলতি বছরের ১ মে থেকে আফগানিস্তান থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেনা প্রত্যাহার শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের আগেই নিজেদের সব সেনা প্রত্যাহারের কথা রয়েছে দেশটির। মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু হওয়ার পর থেকেই নতুন শঙ্কা দেখা দিয়েছে আফগানিস্তানে। নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় আফগানিস্তানে নিজেদের দূতাবাস বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। এছাড়া, তিন হাজারের বেশি আফগানকে যুক্তরাজ্যে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে লন্ডন। সূত্র: সূত্র: এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, ডন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আফগানিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ