Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হবিগঞ্জ শহরে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ৪০ কোটি টাকা

হবিগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০২১, ১২:১৫ পিএম

হবিগঞ্জ শহরে প্রায় ৪০ কোটি টাকা বকেয়া বিদ্যুৎ বিল রয়েছে। উক্ত বিল আদায়ে হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) হিমসিম খাচ্ছে। বার বার তাগিদ দেয়া সত্বেও কোন সারা পাওয়া যাচ্ছে না। চলতি মাসের বিলের পরিমাণ হচ্ছে ৫ কোটি ৭৯ লাখ, ৫৩ হাজার ৭৯৫ টাকা। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ৪ কোটি ৩২ লাখ ২২ হাজার ৬১৭ টাকা।
পিডিবি সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জ শহর ও আশপাশ এলাকায় এলাকার জন্য প্রতিদিন ১৫ মেঘাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহও রয়েছে। হবিগঞ্জ পিডিবি আওতাধিন এলাকাকে ৭টি ফিডারে ভাগ করা হয়েছে। এসব ফিডারের আওতায় প্রায় ৩৪ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে পোস্ট পেইড গ্রাহক প্রায় ১৫ হাজার এবং প্রি-পেইড গ্রাহক প্রায় ১৯ হাজার। এসব গ্রাহকের নিকট গত মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার পরিমান ৩৯ কোটি ৯৪ লাখ ১৬ হাজার ৩৯৬ টাকা। এ বকেয়া বিলের মধ্যে আবাসিক গ্রাহকের নিকট বকেয়া ২০ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার ৪৫ টাকা, সেচ খাতে বকেয়া রয়েছে ৬৭ লাখ ৮৮ হাজার ৮০৬ টাকা, বিভিন্ন বয়লারসহ ছোট শিল্প কারখানায় বকেয়া ২ কোটি ৪৩ হাজার ৫ টাকা, পৌরসভার নিকট ৮০ লাখ টাকা, অনাবাসিক লাইট ২ কোটি ৮৭ লাখ ৯৬ হাজার ৮৩৯ টাকা, বানিজ্যিক প্রতিষ্টানের নিকট ৬ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬০২ টাকা। এছাড়া বিভিন্ন সরকারী, আধা সরকারী, স্বায়ত্ব শাসিত প্রতিষ্টানের নিকট লাখ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। এ সব বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে বার বার পত্র দেয়া হলেও কাজে কাজ কিছুই হচ্ছে না। বরং বকেয়ার তালিকা দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে। বকেয়া বিল আদায়ে গ্রাহকের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ আদালতে প্রায় ৮০টি মামলা রয়েছে। মামলা দিয়েও বিল আদায় করা যাচ্ছে না গ্রাহকের নিকট থেকে। সূত্র জানায়, চলতি অর্থ বছরে অভিযান চালিয়ে অবৈধ সংযোগসহ বিভিন্ন অপরাধের জন্য প্রায় ৭৮ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
এদিকে যে সব গ্রাহক পোস্ট পেইড থেকে প্রি-পেইড গ্রাহক হয়েছেন তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। প্রতিদিন শত শত গ্রাহক তাদের অভিযোগ নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসে হাজির হচ্ছেন। এর মধ্যে অধিকাংশ গ্রাহকের অভিযোগ পূর্বের পোস্ট পেইড মিটারে হাজার হাজার টাকা বকেয়া বিল দেখি প্রি-পেইড সংযোগ লক করে দেয়া হচ্ছে। এ অযাচিত বিল নিয়ে গ্রাহকরা নেতা-কর্তাদের পিছন পিছন দৌড়াচ্ছেন মুক্তির আশায়। কিন্তু কোন সমাধান পাচ্ছেন না।
গতকাল সোমবার অভিযোগ নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসে আসা একজন গ্রাহক জানান, বিলের ঝামেলা এড়াতে শুরুতেই তিনি পোস্ট পেইড মিটারে প্রি-পেইড মিটার সংযোগ করেন। স্বাভাবিক ভাবে তিনি বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন। কয়েক মাস পূর্বে তার নামে ৬৫ হাজার টাকার বকেয়া বিল প্রদান করা হয়েছে। এ বিল পেয়ে মাথায় হাত। ছুটে আসেন অফিসে। জানতে পারেন পূর্বের পোস্ট পেইড মিটারের বকেয়া বিল রয়েছে। অথচ ওই গ্রাহকের জানা মতে তার কোন বকেয়া বিদ্যুৎ বিল নেই। এর পর থেকে শুরু হয় তার অফিসে আসা যাওয়া। কিন্তু কোন সমাধান নেই। মিটার লক হলেই তিনি ছুটে আসেন অফিসে, খুলে দেয়া হয়। আবার লক হয়। এভাবেই চলছে তার বিদ্যুৎ ব্যবহার। ওই গ্রাহক জানান, তার সমস্যা সমাধানে এমপি মহোদেয়কে দিয়ে তদবির করিয়েছেন। জেলা প্রশাসক মহোদয়কে দিয়ে তদবির করিয়েছেন। কিন্তু কোন সমাধান নেই। সর্বশেষ গতকালও তার সমস্যা সমাধানে সরকারী দলের একজন নেতাকে নিয়ে তদবিরে আসেন নির্বাহী প্রকৌশলীর নিকট। ওই গ্রাহকের মতো শত শত গ্রাহক যারা পোস্ট পেইড থেকে প্রি-পেইডে আপডেট হয়েছেন তারা হাজার হাজার টাকার অযাচিত বিল নিয়ে প্রতিদিন অফিসে ধর্ণা দিচ্ছেন।
এসব বিষয়ে হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল মজিদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বকেয়া বিল আদায়ের জন্য সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের বার বার পত্র দিচ্ছি। তিনি সহ কর্মকর্তাগণ ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে বিল পরিশোধের জন্য গ্রাহকদের অনুরোধ জানানো হচ্ছে। কিন্তু আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছি না। তিনি দ্রুত বকেয়া বিল পরিশোধ করে হবিগঞ্জ শহরে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন। অযাচিত বিল সম্পর্কে তিনি বলেন, কোন গ্রাহককেই তার ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিলের অতিরিক্ত বিল দেয়া হচ্ছে না। অনেকে না বুঝে আমাদের দোষারূপ করছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পিডিবি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ