Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চীন বিদ্বেষী প্রচারণা পশ্চিমা গণমাধ্যমে

সিনেটে ৩শ’ মিলিয়ন ডলারের বিল

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

মার্কিন সিনেট সবেমাত্র ‘২০২১ সালের কৌশলগত প্রতিযোগিতা আইন’ নামে চীনবিরোধী একটি বিশাল বিল পাস করেছে। সিনেটের নিম্ন কক্ষের প্রতিনিধি পরিষদের মাধ্যমে পাস করা বিলটি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে।

বাম্পার বিলটি চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ সম্পর্কে নেতিবাচক সংবাদ ছড়িয়ে দিতে ৩শ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলারসহ গণমাধ্যম-কেন্দ্রিক উদ্যোগের জন্য কয়েক মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন বিরোধী প্রভাব বিস্তারের কর্মসূচি চালানো, বেইজিংকে মোকাবেলায় সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ এবং মার্কিন সরকারের মালিকানাধীন রেডিও ফ্রি এশিয়াতে চীনা ভাষায় অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা। চীনের উত্থান এবং আমেরিকা ও ইউরোপের তুলনামূলক পতন এখন একটি ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা। ব্রিটিশ বিশ্লেষক টম ফাউডি সম্প্রতি বলেছেন যে, পশ্চিমে অনেকে চীনবিরোধী প্রচারণাকে স্বাভাবিক হিসাবে গ্রহণ করেন। কারণ আধিপত্যবাদী পশ্চিমা দেশগুলো সভ্যতা থেকে পিছিয়ে থাকা অ-পশ্চিমাঞ্চলকে বাঁচানোর জন্য সত্য এবং আলোকিতকরণের একটি উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।

তবে, চীনের অসাধারণ উত্থান সেই ভিত্তিকে নাড়া দিয়েছে যেটার ওপর পশ্চিমাদের আধিপত্যবাদের ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত। বিষয়টি কেবল পশ্চিমা সরকারগুলোর জন্যই নয়, তাদের প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোর সুস্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্যও উদ্বেগজনক। সে কারণেই চীনকে মোকাবেলা করতে গণমাধ্যমের দ্বারা একটি ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন ঠেকানোর কাজ শুরু হয়েছে।

ইতোমধ্যে, পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোতে চীনবিদ্বেষী প্রচারণা তীব্রতর হয়ে উঠেছে। ওয়াশিংটন মনে করছে যে, আমেরিকার নেতৃত্বাধীন এ বিশাল প্রভাবশালী গণমাধ্যম এখনও পর্যাপ্ত মাত্রায় চীনবিদ্বেষী নয়! আমেরিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রবীণ বিশ্লেষক টম প্লেট সম্প্রতি চীন ও ভারতের সাথে আমেরিকার সম্পর্ককে পর্যবেক্ষণ করে বলেছেন যে, উভয় দেশে মুসলমানদের ওপর কথিত নিপীড়নের তুলনা করার সময় আমেরিকা চীনের খল চরিত্রকে তুলে ধরে, তবে ভারতের ক্ষেত্রে আমেরিকা দেশটির গণতন্ত্রের দোহাই দেয়। এমন উদাহরণ অগণিত।

সিএনএন-এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জুলাই ২০১৯ সালের ইউয়েন লং-এর ঘটনার প্রতিফলন ঘটেছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘অহিংস প্রতিবাদকারীরা’ হংকংয়ের ‘গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভ’ থেকে সবেমাত্র ফিরে এসেছেন। সিএনএন-এর এ প্রতিবেদনটি ক্যাপিটল দাঙ্গার ৩ মাস পর প্রকাশিত হয়েছিল। কার্যত সমস্ত মার্কিন গণমাধ্যম জানুয়ারির সেই মারাত্মক সহিংসতাটিকে হালকাভাবে ‘বিদ্রোহ’ হিসাবে অভিহিত করেছিল।

দ্য ইকোনোমিস্ট ইতোমধ্যে তারা চীনের অত্যাধুনিক ‘ডিজিটাল কারেন্সি’ পরিকল্পনাকে ঢামাচাপা দিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অনাগত, প্রচুর ব্যয়বহুল ‘বিল্ড ব্যাক বেটার’ প্রকল্পের ওপর ইতিবাচক খবর ছাপছে, যা আধিপত্যবাদী আমেরিকার কথিত মেরুকরণের প্রদর্শনী। তবে, বেইজিং আমেরিকা এবং তার মিত্রদের চেয়ে আরো কার্যকর এবং দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।

এদিকে, প্রকাশ্য অর্থায়নে প্রচারিত পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর চীন-নিন্দা কীভাবে আমেরিকাতে দ্রুতগতির চীন-বিরোধী এবং এশিয়ান বিরোধী ঘৃণ্য অপরাধের ভয়াবহ সমস্যাটির জন্য সহায়তা হতে চলেছে তা, ব্যাখ্যা করা হয়নি। আসলে, এটি ব্যাখ্যা করা যায়নি।

তবে, এই সন্দেহের অবকাশ খুব কমই আছে যে, সমাজ সংস্কারের উদ্দেশ্যে বড় বড় করদাতাদের অর্থায়নে চীন বিদ্বেষের পরিবর্ধন প্রকৃতপক্ষে এসব অপরাধকে প্ররোচিত করবে এবং আমেরিকার মাটিতে সহিংসতার মাত্রা বাড়িয়ে তুলবে। পাশাপাশি, কিছু উন্নত প্রশিক্ষণ এবং টাস্কফোর্স প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া, এশিয়ান বিরোধী ঘৃণ্য অপরাধের উত্থানের বিরুদ্ধে হোয়াইট হাউস-ঘোষিত কর্মসূচির জন্য বিশাল নতুন চীন-বিদ্বেষ বিপণনের বাজেটের তুলনায় খুব নগন্য তহবিল বরাদ্দ রয়েছে।

আমেরিকা এবং তার মিত্র দেশগুলোর চীনের বিরুদ্ধে নির্ভরযোগ্যভাবে উৎসর্গীকৃত গণমাধ্যমগুলোর সাথে একত্রিত হয়ে তীব্রভাবে চীনের ভাবমর্যাদা খর্ব করার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, আমেরিকাকে পাশ কাটিয়ে স্পষ্টতই বিশ্ব চীনের প্রতি ইতিবাচকভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। এটি গ্রহণযোগ্য নয়। তাই সিনেটের ‘কৌশলগত প্রতিযোগিতা আইন’কে এই চ্যালেঞ্জের সমাধানের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হিসাবে দেখছে আমেরিকা। সূত্র: চায়না ডেইলি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ