Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামে ব্যাংক কর্মকর্তা মোরশেদ চৌধুরীর আত্মহত্যা: মামলা পিবিআইতে

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০২১, ১২:০১ পিএম

চট্টগ্রামে ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল মোরশেদ চৌধুরীর আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলার তদন্ত করবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে আলোচিত এই মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলার নথিপত্রও বুঝে নিয়েছেন পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর কর্মকর্তারা। পিবিআই কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, দ্রুতই মামলার তদন্ত শুরু হবে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে পরিদর্শক কামরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর আগে ডিবি মামলাটির তদন্ত করছিলো।
গত ৭ এপ্রিল নগরীর পাঁচলাইশ থানার হিলভিউ আবাসিক এলাকার নাহারভিলা থেকে বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মোরশেদের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মোরশেদের স্ত্রী ইশরাত জাহান চৌধুরী বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছেন। এতে মোরশেদের দুই ফুফাত ভাই জাবেদ ইকবাল চৌধুরী ও পারভেজ ইকবাল চৌধুরীসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে। অন্য দুই আসামি হলেন- সৈয়দ সাকিব নাঈম উদ্দিন ও যুবলীগ নেতা শহীদুল হক চৌধুরী রাসেল।
পিবিআই সূত্রে জানা যায়, গত ৫ মে বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজি) ড. বেনজির আহমেদ বরাবর আব্দুল মোরশেদ চৌধুরীর আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলার তদন্ত পিবিআইকে হস্তান্তরের জন্য আবেদন করেন মামলার বাদি ইশরাত জাহান। আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২০ মে মামলার তদন্তভার পিবিআইকে দেওয়ার নির্দেশ দেন আইজি ড. বেনজির আহমেদ। গত ২৭ মে এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ পেয়েছে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো।
এ ঘটনায় গত ১১ এপ্রিল ব্যাংক কর্মকর্তার আত্মহননের জন্য দায়ীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন আব্দুল মোরশেদ চৌধুরীর স্ত্রী ইশরাত জাহান চৌধুরী। এরপর ঢাকায়ও তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন।
এসময় তিনি অভিযোগ করেন, তার স্বামী ব্যবসার জন্য জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, পারভেজ ইকবাল চৌধুরী এবং সৈয়দ সাকিব নাঈম উদ্দিনের কাছ থেকে বিভিন্ন দফায় ২৫ কোটি টাকা ধার নেন। বিপরীতে তাদের কাছে লাভসহ ৩৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু বেশি লভ্যাংশের দাবিতে তার স্বামীর ওপর মানসিক চাপ, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। তাদের অনৈতিক চাপের কারণে তার স্বামী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন। যার প্রমাণ মিলেছে রেখে যাওয়া সুইসাইড নোটে।

এ ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল হক চৌধুরী রাসেল, চিটাগাং চেম্বারের সাবেক দুই পরিচালক জাবেদ ইকবাল, তার ভাই পারভেজ ইকবাল ও নাইম উদ্দিন সাকিব নামে চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মামলা করা হলেও পুলিশ কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তার অভিযোগ এখন আসামিপক্ষ উল্টো মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন ২০১৯ সালের ২৯ মে জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর পুত্র নাজমুল হক চৌধুরী ওরফে শারুন চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে দুটি গাড়িতে করে আসামিরা ১০-১২ জন যুবকসহ ব্যাংকার আব্দুল মোরশেদের বাসায় আসেন। পারভেজ ইকবাল দলের অন্যদের নিয়ে লিফটে ওপরে উঠে বাসার দরজা ধাক্কাতে থাকেন। এ সময় দরজা খুলতে না চাইলে লাথি মারতে থাকেন তারা। নিজের ও শিশুকন্যার নিরাপত্তার জন্য দরজা খুলতে না চাইলেও দরজার অন্য প্রান্ত থেকে হুমকি দিয়ে পারভেজ ইকবাল দরজা খুলতে চাপ দিতে থাকেন। উত্তেজিত পারভেজ ব্যাংকারের স্ত্রীর উদ্দেশে বলতে থাকেন, ‘আমরা আপনাকে আটকে রেখে ওকে (মোরশেদ) আনবো। ’
এ সময় ভবনটির নিচে নম্বর প্লেটবিহীন গাড়িতে হুইপপুত্র শারুন চৌধুরী ও বাচ্চু বসা ছিলেন বলে জানান ইশরাত জাহান চৌধুরী। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের মে মাসে আমার স্বামীকে পাঁচলাইশের এমএম টাওয়ারে নিয়ে যায় সৈয়দ সাকিন সাঈম উদ্দীন। সেখানে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শারীরিক নির্যাতন, আমাকে বেঁধে ১২ কোটি টাকা অতিরিক্ত দাবি করে জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে সই নেওয়া হয়েছিল। আমার ও মেয়ের পাসপোর্ট নিয়ে নেওয়া হয়। ২০১৯ সালে বাসায় হামলার ব্যাপারে মামলা করা হয়। বাসায় আক্রমণ, মেয়েকে অপহরণ, আমার স্বামীকে খুন করবে বলে অনেকবার প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া হয়। আপোস ও আলোচনার কথা বলে গত ২০১৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সাকিব অস্ত্রের মুখে ৮৪টি চেকে জোরপূর্বক সই নিয়ে নেয়। আমাদের ছয়টি অলিখিত ও স্বাক্ষরিত নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প রয়েছে তাদের কাছে।
টাকা লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে শারুনের সম্পৃক্ততা বিষয়ে ইশরাত বলেন, শারুনের সঙ্গে সরাসরি আমার স্বামীর কোনো লেনদেন ছিল না। এরপরও শারুন চৌধুরী কেন সক্রিয় হন, এ ব্যাপারে জানতে মোরশেদই একদিন প্রশ্ন করেছিলেন। জবাবে শারুন বলেছিলেন, ‘সরাসরি লেনদেন আমি করিনি। পারভেজের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আত্মহত্যা

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ