২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
নতুন এক আতঙ্কের নাম ফাঙ্গাস। নতুন করে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে ভারতে মহামারি আকার ধারণ করছে। করোনা মহামারির মধ্যে কালো ছত্রাক বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে আতঙ্ক ছড়ালেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ছোঁয়াচে না হওয়ায় সুরক্ষার সুযোগ তুলনামূলক বেশি।
করোনার মতো লাখ লাখ মানুষকে আক্রান্ত করবে না এই রোগ। ঝুঁকিতে তারাই যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই কম।
রোগটির ওষুধ আছে আর তা উৎপাদন হয় বাংলাদেশেই। যদিও চাহিদা বাড়লে সেই কোম্পানিটি চাহিদা পূরণ করতে পারবে কি না তা নিয়ে আছে সংশয়।
করোনা মহামারিতে নাজেহাল ভারতে ব্যাপক হারে দেখা গেছে এই ছত্রাকের সংক্রমণ। দেখা মিলছে দেশেও। চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোগটি মিউকরমাইকোসিস নামে পরিচিত।
মঙ্গলবার ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের উপসর্গ নিয়ে দেশে একজনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে বারডেম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেখানে আরও দুই জন চিকিৎসা নিচ্ছেন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, এটি দেশে নতুন কোনো ছত্রাক নয়। এটি আগেও ছিল। তবে সম্প্রতি সময়ে ভারতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার সেখানে মহামারি ঘোষণার পর আলোচনা বেশি হচ্ছে।
ঝুঁকি যাদের বেশি
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ও ইনফেকশাস বিভাগের চিকিৎসক ফরহাদ উদ্দিন হাছান চৌধুরী মারুফ জানান, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রোগী, করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে অক্সিজেন গ্রহণ করেছেন- এদের ঝুঁকি কিছুটা বেশি।
এর বাইরে কিটো অ্যাসিডোসিস আক্রান্তরা উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন। এ ছাড়া, ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী, অতিরিক্ত ব্রড-স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার, অন্তঃসত্ত্বা, অত্যাধিক স্টেরয়েড গ্রহণ করা, কিডনি বা অন্য অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা রোগী এবং চরম অপুষ্টিজনিত রোগীদের ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ হতে পারে।
সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে মিউকরমাইকোসিস আক্রান্ত রোগীদের ৫০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ রোগী মৃত্যুবরণ করে থাকে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শরফুদ্দিন আহমেদ জানান, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস পরিবেশে সব সময়ই থাকে। থাকে মানুষের শরীরেও। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলে এটা রোগ হিসাবে দেখা দেয়।
বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকে, তাদের ঝুঁকি বেশি। আবার স্টেরয়েড গ্রহণ করা ব্যক্তিরাও এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।
তিনি জানান, এই ছত্রাক নাক, চোখ এবং কখনও কখনও মস্তিষ্কে আক্রমণ করে।
যেভাবে বুঝবেন আক্রান্ত
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস দেহের বেশ কয়েকটি জায়গায় ক্ষত করতে পারে, সাধারণ বেশি নাকে ক্ষত তৈরি করে।
মাথা ও নাক ব্যাথা থাকতে পারে। নাকে বেশি ক্ষত হলে সেখান থেকে রক্ত আসতে শুরু করে। আস্তে আস্তে এটা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।
এটা ধীরে ধীরে মস্তিষ্কে উঠে আসে। তখন রোগীর মানসিক অবস্থা পরিবর্তন করে ফেলে। এটা ফুসফুসেও ক্ষত তৈরি করতে পারে।
ফুসফুসে ক্ষত হলে নিউমোনিয়া বেশি দেখা দেয়। কাশি থাকে রক্ত আসতে পারে। শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।
চোখে অনেক সময় এই ছত্রাক ছাড়িয়ে যেতে পারে। তখন দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
চেহারাতেও এই ছত্রাক ক্ষত তৈরি করতে পারে। চেহারাই আক্রান্ত হলে চেহার রং পরিবর্তন হতে পারে। যদি দ্রুত সময়ে এই ছত্রাক শনাক্ত না করা হয় তাহলে চোখ তুলে ফেলতে হয়।
এ ছাড়া, চোখে ঝাপসা দেখা, নাক বন্ধ, সর্দি এই ছত্রাকে সংক্রমিত হওয়ার লক্ষণ।
শ্বাসকষ্ট, মুখের একদিকে ফুলে যাওয়া, নাক অথবা দাঁতের মাড়ি কালো হয়ে যাওয়া, কফের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, রক্ত বমি, নতুন করে নিউমোনিয়ার সংক্রমণ, মাথা ব্যথা, দাঁতে ব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা, স্কিনে কালো দাগ দেখা দেয়।
সুরক্ষায় উপায়
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) জুনিয়র চিকিৎসক তাসনিম জারা বলেন, ফাঙ্গাসগুলো মাটি, পানি বাতাসে মিশে থাকে। অনেকভাবে মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু যতজনের শরীরে এই ফাঙ্গাস ঢুকে সবাইকে আক্রান্ত করে না।
তিনি বলেন, ‘আমাদের শরীরে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে সেটা ফাঙ্গাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে। অধিকাংশ সময় রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা এই ফাঙ্গাস ধ্বংস করে ফলে। তাদের রোগী প্রতিরোধ ক্ষমতা ধুবই দুর্বল তাদের ক্ষেত্রে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে।’
স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ নিজে নিজে না খাওয়া, যেসব স্থানে অনেক ধূলাবালি বা বাড়িঘর নির্মাণ হচ্ছে এমন সব স্থান এড়িয়ে চলতে হবে।
মাটিতে হাত দেয়ার আগে হ্যান্ড গ্লাভস পরে নেয়া, নিয়মিত হাত পরিষ্কার করা, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়েটিক না খাওয়া আর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শও দিয়েছেন এই চিকিৎসক।
যেভাবে দেয়া হয় চিকিৎসা
ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাছান চৌধুরী জানান, চিকিৎসাটা চারভাগে করা হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির যদি ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে প্রথমে সেটি নিয়ন্ত্রণে নিতে হয়। রোগী আগে থেকে স্টেরয়েড-জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে সেটিও অনেক কমিয়ে দিতে হবে।
এমন কিছু রোগের ক্ষেত্রে রোগীর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমানোর ওষুধও দিতে হয়। তবে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হলে সেসব ওষুধও বন্ধ রাখতে হয়।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসবিরোধী একটি ইনজেকশন আছে। সেটি প্রয়োগের পাশাপাশি কোনো স্থানে যদি ক্ষত তৈরি হয়, সেই ক্ষতটি কেটে ফেলতে হয়। চোখে ক্ষত হলে চোখও তুলে ফেলতে হয়।
নার্জাল এন্ডোস্কোপি করে যদি ব্ল্যাক ফাঙ্গাস প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হয়, তাহলে বিদ্যুতের শকও দেয়া হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।