পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
এ করোনাকালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে প্রকট ও প্রলম্বিত রূপ লাভ করেছে। ভারতসহ উপমহাদেশে করোনার প্রাণঘাতী অতি সংক্রামক নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার অব্যাহত থাকায় এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করতে শুরু করেছে। দেশে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি লকডাউনসহ নানাবিধ উদ্যোগের পাশাপাশি তৈরী পোশাক খাত এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান থেকে প্রাপ্ত রেমিটেন্সপ্রবাহ অব্যাহত রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা চালু রাখার সুফল হিসেবে করোনাকালেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক ও ক্রমবর্ধমান পর্যায়ে রয়েছে। এহেন বাস্তবতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা হওয়া বৈদেশিক মূদ্রার সময়োপযোগী বিনিয়োগের কথা বলা হচ্ছে গত কয়েক বছর ধরেই। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণের বদলে নিজস্ব রিজার্ভ থেকে বিনিয়োগের প্রস্তাবের বাস্তবায়ন এখনো দেখা না গেলেও এবার প্রতিবেশি দেশ শ্রীলঙ্কার বিশেষ প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কান কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ মাত্র ৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ৪৫ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ নিয়ে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। যেখানে সাধারণত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মিটানোর মত ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ থাকলেই যথেষ্ট বলে মনে করা হয়, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ কয়েকগুণ বেশি আছে।
উপমহাদেশে এক সময়ের তেজী অর্থনীতির দেশ শ্রীলঙ্কার এই দু:সময়ে বন্ধুপ্রতীম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সহযোগিতা চাওয়ার মধ্যে উভয়পক্ষের জন্যই ইতিবাচক দিক রয়েছে। স্বল্পমেয়াদে ঋণ প্রত্যাবর্তণের প্রতিশ্রæতি দিচ্ছে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যংক। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের সক্রিয় বিবেচনা বাংলাদেশের সাথে কোনো রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কারেন্সি সোয়াপের সূচনা ঘটাতে চলেছে। নীতিগতভাবে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিতে রাজি হলেও প্রথম দফায় ২০ কোটি ডলার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। গত মার্চ মাসে বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ্রা রাজাপাকসার অনুরোধে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো কারেন্সি সোয়াপে সম্মত হয়েছিল বলে জানা যায়। স্বল্প মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে লিবর বা আন্তর্জাতিক মানদন্ড বজায় রেখেই এই ঋণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে বলে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়। আনুষ্ঠানিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে এটিই কোনো বিদেশি ব্যাংক বা রাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের প্রথম ফরেন কারেন্সি সোয়াপ। আভ্যন্তরীন অস্থিতিশীলতা এবং করোনাভাইরাস অতিমারিতে শ্রীলঙ্কার পর্যটনখাতসহ রফতানিমুখী শিল্পখাতের দুর্দশার কারণে দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিশেষত বৈদেশিক মূদ্রার রির্জাভ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এ সময় বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রির্জাভ সোয়াপ চুক্তি দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরো জোরদার করবে বলে আশা করা যায়।
উপমহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে মাথাপিছু আয়, শিক্ষার হার, স্বাস্থ্য পরিষেবাসহ সামাজিক-অর্থনৈতিকভাবে শ্রীলঙ্কা অনেক এগিয়ে থাকলেও চলমান বাস্তবতা দেশটিকে এক কঠিন প্রতিকুলতার মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাসে শ্রীলঙ্কান কেন্দ্রীয় ব্যাংক চীনের সাথে দেড় বিলিয়ন ডলারের কারেন্সি সোয়াপ চুক্তি করেছিল। অর্থনৈতিক শক্তি ও সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কার বর্তমান বৈদেশিক ঋণের পরিমান জিডিপির ১০৯ ভাগের বেশি বলে জানা যায়। প্রতিবেশীদের চেয়ে অনেক এগিয়ে থেকেও অর্থনৈতিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করার ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার বাস্তবতা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। চলমান করোনা সংকটের আগে থেকেই এ সংকটের সূচনা হয়েছিল আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংঘাত থেকে। দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের বাস্তবতা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনার মধ্যেই ২০১৯ সালে ইস্টার সানডের দিনে নাশকতামূলক বোমা হামলার মধ্য দিয়ে শ্রীলঙ্কার ট্যুরিজম খাতে ধস নেমেছিল। সেই সাথে শ্রীলঙ্কার রফতানী প্রবৃদ্ধি ১৭ ভাগ কমে গিয়েছিল। এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের অতিমারী ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাকে আরো সঙ্কুচিত করে দিয়েছে। আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিরোধ ও জাতিগত সংঘাত শ্রীলঙ্কাকে বেশি ভুগিয়েছে। শ্রীলঙ্কার সম্ভাবনা ও সংকট উপমহাদেশের দেশগুলোর জন্য শিক্ষনীয় বাস্তব দৃষ্টান্ত। এসব আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিরোধ ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যকার সৌহার্দ্য ও সমঝোতা সংকট উত্তরণে বিশেষ ভ‚মিকা রাখতে পারে। শ্রীলঙ্কার সাথে ফরেন কারেন্সি সোয়াপের সমঝোতা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দিগন্তে এক নতুন মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। সেই সাথে আমাদের ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ দেশের উন্নয়ন ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেন সময়োপযোগী ভ‚মিকা রাখতে পারে, এ বিষয়ে কার্যকর সিদ্ধান্তে আসতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।