Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিটিজেন জার্নালিজম ও বিশ্বজনমতের সাথে সাম্রাজ্যবাদী কর্পোরেট মিডিয়ার দ্বন্দ্ব

জামালউদ্দিন বারী | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০২১, ১২:০১ এএম

গাজার প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হাতে মার খেয়ে গত দেড় দশকে তৃতীয়বারের মত পরাজিত হয়ে হাত গুটাতে হলো আগ্রাসী জায়নবাদী ইসরাইলকে। এটি এমন সময় ঘটল যখন ইসরাইল এবং তার অন্ধ সমর্থক মার্কিন জায়নিস্টরা ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগ্রাম এবং আরব-ইসরাইল সংকটের গতানুগতিক চিন্তাধারাকে পাল্টে দিয়ে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা এবং উত্তেজনাকর উত্থানের সম্ভাবনাকে চিরতরে দমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল। গত বছরের শুরুতে ডিল অব দি সেঞ্চুরি আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই অর্থের বিনিময়ে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ ও স্বাধীনতার সংগ্রামের কণ্ঠ কিনে নিতে চেয়ে চরমভাবে হোঁটট খেয়েছিল। এখানে ব্যর্থ হলে বা ফিলিস্তিনীরা রাজি না হলে কি ঘটতে পারে সে সম্পর্কেও আগেই হুমকি দিয়ে রাখা হয়েছিল। সেসব হুমকি তামিল করার আগে কতিপয় ধনী আরব রাজার সাথে মৈত্রী সন্ধী করে যে বার্তা দিতে চেয়েছিল, তা হল ফিলিস্তিনীরা এখন আর আরবদের একচ্ছত্র সমর্থন পাচ্ছে না। অর্থাৎ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও সংকট নিরসনে ইঙ্গ-মার্কিনী ও পশ্চিমাদের কপটতা ও নির্লিপ্ততার অন্দরে চরম জায়নবাদী চক্রান্ত সদা সক্রিয় থাকলেও এতদিন আরবদের মধ্যে ফিলিস্তিন ও পূর্ব জেরুসালেম তথা মসজিদুল আকসার সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে যে ঐক্য ছিল কতিপয় আরব রাজার সাম্প্রতিক ভূমিকায় তা নতুন বাস্তবতায় রূপ নিয়েছে। জায়নবাদের বশংবদ অপরিণামদর্শী আরব রাজাদের হাত-পা পশ্চিমা ডিপস্টেটের গোয়ালঘরে বাঁধা পড়লেও গাজায় এবারের ইসরাইলী হামলার সময়টা হামাসের অভাবনীয় প্রতিরোধ ও পাল্টা হামলার সাথে সাথে নজিরবিহীন এক মনস্তাত্বিক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। সেখানে বিশ্বের শতকরা ৮০ভাগ জনমত ছিল ফিলিস্তিনের পক্ষে। এ ধরণের বাস্তবতা অতীতেও দেখা গেছে। এবারের প্রেক্ষাপটটি ছিল ভিন্নতর এক সুদূরপ্রসারী পরিবর্তনের নতুন উন্মোচন। সেখানে দেখা গেছে পশ্চিমা প্রায় সব বড় শহরে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বর্বর ইসরাইলী হামলার প্রতিবাদ বিক্ষোভ। নিউইয়র্কে আরব-ইসরাইলীদের সমাবেশ হাতাহাতির সম্মুখ লড়াইয়ে পরিনত হতে দেখা গেছে। ইসরাইলের অভ্যন্তরে থাকা মুসলমানরা এবার ফিলিস্তিনের পক্ষে প্রকাশ্য সমর্থন দিতে দেখা গেছে। এমনকি ইসরাইলসহ বিভিন্ন দেশের অর্থডক্স ইহুদিরাও এবারে প্রকাশ্যে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনীদের সমর্থনে রাস্তায় নেমেছে। তারা পুরো ফিলিস্তিন ভূ-খÐ ফিলিস্তিনের ভূমিপুত্রদের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছে। পশ্চিমা মেইনস্ট্রিম মিডিয়া বরাবরের মতো সত্য চেপে রাখার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখলেও সিটিজেন জার্নালিজম ও সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে গাজায় এবারের ইসরাইলী হামলা সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় বিশ্বজনমতকে একটি মানবিক ঐক্যে আবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। আল আকসায় নামাজরত ফিলিস্তিনী মুসল্লিদের উপর, শিশু ও নারীদের উপর ইসরাইলী আগ্রাসি বাহিনীর জান্তব হাত, ফুলের মত নিষ্পাপ শিশুদেরকে সেনাদের বুটের তলায় আর্তনাদ করার বদলে মৃদু হাসির তিরস্কার বিশ্ববিবেক জাগ্রত করেছিল।

গাজায় তুমুল যুদ্ধের শুরুতে গ্রেফতার হওয়ার সময় ফিলিস্তিনী তরুণী মারিয়াম আফিফির মোহনীয় হাসির মধ্যে যেন পারমানবিক বোমার চেয়েও বেশি শক্তি ছিল। জায়নবাদী বাহিনীর বোমারু বিমানের জেট ইঞ্জিনের গগন বিদারি আওয়াজ, ছিন্নভিন্ন ফিলিস্তিনের কঙ্কাল সেই তিরস্কারের হাসিকে ¤øান করে দিতে পারেনি। আগ্রাসী বাহিনীর যুদ্ধবিমান প্রথম আঘাতে গাজা টাওয়ারকে ধুলোর সাথে মিশিয়ে দিয়ে যে বার্তা দিয়েছিল তা ফিলিস্তিনের সাহসী যোদ্ধাদের মনে কাঁপন ধরাতে পারেনি, এসব ধ্বংসযজ্ঞ তাদের সংকল্প বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। অবশেষে মারিয়াম আফিফির সেই হাসিরই জয় হয়েছে। রোজার প্রথম দিনে শেখজারা এলাকার ফিলিস্তিনী বসতি উচ্ছেদ এবং বায়তুল মোকাদ্দাসের একটি ফটক বন্ধ করে দেয়া ছিল জায়নবাদিদের প্রথম উস্কানি। এসব উস্কানি ও আগ্রাসন উপেক্ষা করে পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশ দিন ক্বদরের রাত্রিতে হাজার হাজার মুসল্লির উপর নির্মম আগ্রাসন হামাসের রকেটের গতি ও পাল্লা বাড়িয়ে দেয়। ইসরাইলি জঙ্গি বিমানের বোমা হামলায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া গাজার বাসিন্দারা ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে পারেনি। বারো দিনের অসম যুদ্ধের পর গাজা থেকে নিক্ষিপ্ত রকেটের আঘাতে ইসরাইলের সবচেয়ে সুরক্ষিত এলাকাগুলোতেও ধ্বংসের আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। তাদের অহংকারের আয়রনডোম ফাঁকি দিয়ে হামাসের শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের হৃৎপিন্ডে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে। প্রথমে ইসরাইলের আত্মরক্ষার গতানুগতিক ডায়ালগ ছাড়লেও শেষ পর্যন্ত নাস্তানাবুদ অবস্থা দেখে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুদ্ধ বন্ধের আহবান জানিয়েছিলেন। প্রতিত্তোরে নেতানিয়াহু লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত হামলা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছিল। লক্ষ্য অর্জনে তার সে খায়েশ প্রকাশের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই হামাসের শর্ত মেনে যুদ্ধ বিরতির ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছে নেতানিয়াহু।

ইতিপূর্বে ২০১৪ সালে নেতানিয়াহুর নির্দেশে ইসরালী বাহিনী গাজায় প্রায় ২ মাসব্যাপী বিমান হামলা চালিয়ে পুরো গাজা সিটিকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছিল। হামাসের সব অস্ত্র, সামরিক স্থাপনা এবং সুড়ঙ্গ ধ্বংসের লক্ষ্য নিয়ে চালানো অভিযানে দুই হাজারের বেশি বেসামরিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। অন্যদিকে, হামাসের রকেট হামলায় ইসরাইলের খুব বেশি ক্ষতি না হলেও পাল্টা আক্রমনে লন্ডভন্ড আইডিএফ’র স্থল অভিযানের বেশ কয়েকজন ইসরাইলী সেনা সদস্য হামাসের হাতে আটক হওয়ার পর যুদ্ধ বিরতি এবং বন্দি বিনিময়ে বাধ্য হয় ইসরাইল। দুই মাসের বিরামহীম বোমাবর্ষণে গাজার হাজার হাজার বাড়িঘর ধ্বংস করার ৬ বছর পর হামাস এখন পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। এবার ১১ দিনেই ইসরাইল হাত গুটিয়ে হামাসের শর্ত মেনে আগ্রাসন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। ইসরাইলের সামরিক শক্তির পেছনে যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করছে, একইভাবে হামাসের শক্তিবৃদ্ধি ও ক্ষেপনাস্ত্র উন্নয়নে ইরানের নেপথ্য ভূমিকার কথা বলা হচ্ছে। দুইপক্ষে দুই অসম শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শক্তির বিজয়ে মানুষের মধ্যে এক নতুন চিন্তাধারার উন্মেষ হতে পারে। সামরিক-অর্থনৈতিকভাবে যতই দুর্বল হোক, আগ্রাসী শক্তিকে প্রতিরোধের চেতনা সমুন্নোত থাকলে বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক শক্তিও সেই শক্তিকে হারাতে পারেনা। গত কয়েক দশকে ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, সিরিয়া ও ইয়েমেন যুদ্ধের ফলাফল সেই সাক্ষ্য দিচ্ছে। এসব যুদ্ধের পেছনে জায়নবাদী নীল নকশা ও মিথ্যা তথ্যের প্রচারনা এখন বিশ্বের সামনে খোলাসা হয়ে গেছে। একযুগ ধরে অবরুদ্ধ গাজার প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হাতে বিশ্বের সবচেয়ে প্রিভিলেজড সামরিক শক্তি আইডিএফ তৃতীয়বারের মত কৌশলগত পরাজয় মধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্যবাদী নীলনকশার পরিবর্তন অবশম্ভাবী হয়ে উঠেছে। যুদ্ধ ও ভলকানাইজেশন ও আগ্রাসনের মধ্য দিয়ে যারা নিজেদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি ও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চায় তাদের জন্য গাজা নতুন অশনি সংকেত হয়ে দেখা দিয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা নিয়ন্ত্রণ এবং পশ্চিমা জনগণকে বিভ্রান্ত করে সাম্রাজ্যবাদী নীল নকশা বাস্তবায়ণে জায়নবাদ প্রভাবিত পশ্চিমা কর্পোরেট মিডিয়ার ডিজইনফরমেশন ক্যাম্পেইন এবার ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতার পেছনে কাজ করেছে কিছু ইন্ডিপেন্ডেন্ট সাংবাদিকের সাহসী ভূমিকা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সিটিজেন জার্নালিজমের সময়োপযোগী ভূমিকা। প্রায় দেড় দশক ধরে গাজা উপত্যকার উপর অবরোধ আরোপ করে সেখানে একটি মানবেতর পরিবেশ তৈরী করা হয়েছে। পশ্চিমা জনগণের কাছে এবার সেটা অনেকটাই পরিস্কার হয়ে গেছে। কর্পোরেট মিডিয়ার ডিজইনফরমেশন ক্যাম্পেইনের লক্ষ্য এখন অকার্যকর হতে শুরু করেছে। সাম্প্রতিক বিশ্বরাজনীতি ও গণমাধ্যমে হুইসেল বেøাইং শব্দটি বিশেষ অবস্থান লাভ করেছে। হুইসেল বেøাইং মানে হচ্ছে, সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রশক্তি, কর্পোরেট মিডিয়া এবং কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠির ধামাচাপা দেয়া তথ্য উৎঘাটন করে জনগণের কাছে জনগণের স্বার্থকে তুলে ধরার সাহসী ভূমিকা। সাম্প্রাতিক সময়ে এডওয়ার্ড স্লোডেন, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, মার্ক ফেল্ট তাদের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ও তথ্য উৎঘাটনের মাধ্যমে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণমূলক অপতৎপরতার মুখোশ উন্মেচন করে দিয়ে সারাবিশ্বে হইচই ফেলে দিয়েছেন। ইতিপূর্বেও বিভিন্ন সময়ে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের নেপথ্য ঘটনাবলীর রহস্য উন্মুক্ত করে হাওয়ার্ড জিন, মার্থা গেলহর্ণ, বব উডওয়ারর্ড’র মত সাংবাদিকরা ভিয়েতনাম যুদ্ধ, প্রেসিডেন্ট নিক্সনের ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি উন্মোচিত করে রাষ্ট্রশক্তির ভিত কাঁপিয়ে দেয়। পেশাদার সাংবাদিকতার বাইরে থেকেও অনেকে রাষ্ট্রের যুদ্ধবাদী ও মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডের চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। আশির দশকে ইসরাইলের পারমানবিক অস্ত্র প্রকল্পের তথ্য ফাঁস করে সাবেক ইসরাইলী নিউক্লিয়ার টেকনিসিয়ান ভানুনু মরদেচাই একজন হুইসেল ব্লেয়ারের খেতাব লাভ করেছেন।

সম্প্রতি ঢাকার একজন নারী সাংবাদিক অনুসন্ধানী রিপোর্টের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সচিবালয়ের স্বাস্থ্য সচিবের অফিসে নাজেহাল ও পুলিশি হয়রানির শিকার হয়েছেন। দেশের সাংবাদিক সমাজ তাদের রাজনৈতিক মতপাথর্ক্য ভুলে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে রাজপথে নেমেছিলেন। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, এমনকি জাতিসংঘ পর্যন্ত রোজিনা ইসলামের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। একজন সংবাদকর্মী হিসেবে এটা আমাদের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তি ও নিরাপত্তাবোধ সৃষ্টি করে। সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র চুরি করার চেষ্টা করেছেন বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের তরফ থেকে বলা হয়েছে। সেসব তথ্য ফাঁস হলে নাকি চীন ও রাশিয়ার সাথে করোনা টিকার চুক্তি বাতিল হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এটি নি:সন্দেহে আশঙ্কা ও উদ্বেগের কথা। আমাদের টিকা ও করোনা মোকাবেলা নিয়ে আঞ্চলিক কূটনৈতিক রশি টানাটানি ও প্রবঞ্চনার নতুন ইতিহাস রচিত হয়েছে। অনুসন্ধানি সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম সেসব কারসাজির কোনো পক্ষের হয়ে কাজ করতে চেয়েছিলেন কিনা, অথবা করোনা টেস্ট কিটসহ টিকাসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সাম্প্রতিক কর্মকান্ডে যে সব অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি ও ব্যর্থতার ঘটনা ঘটেছে তার ভেতরের তথ্যাবলী হস্তগত করে একজন হুইসেল ব্লেয়ারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চেয়েছিলেন কিনা, তা আমাদের কাছে এখনো স্পষ্ট নয়। তবে রোজিনা ইসলামের ভূমিকা নিয়ে দেশের সাংবাদিক সমাজের একাট্টা হতে দেখা গেলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কিন্তু আমরা যখন দেখি অশীতিপর বৃদ্ধ সাংবাদিক আবুল আসাদকে তার অফিস থেকে টেনে হিঁচড়ে পুলিশ ভ্যানে তুলে নিয়ে জামিন না দিয়ে মাসের পর মাস জেলে ভরে রাখে, চল্লিশ বছর ধরে দেশের সাংবাদিক সমাজের নেতৃত্বদানকারী নেতা রুহুল আমিন গাজী এবং শাহাদাত হোসেন নির্বতনমূলক আইনের মামলায় এখনো জেল খাটছেন, বয়োবৃদ্ধ সাংবাদিক শফিক রেহমান পুলিশি নিপীড়নের পর একেবারে চুপ হয়ে গেছেন। হামলা-মামলায় কারারুদ্ধ ও রক্তাক্ত হয়ে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। এরা কেউ রাষ্ট্রের ভিত কাঁপিয়ে দেয়ার মত হুইসেল ব্লেয়ার ছিলেন না। এরা সরকারের ভিন্নমত পোষণ করেন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে জনগণের আকাক্সক্ষার পক্ষে কথা বলেছেন। দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থা বা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর এদের জন্য মাথাব্যথা নেই। এমনকি দেশের সাংবাদিক সমাজের একটি অংশ শুধুমাত্র রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে মাসের পর মাস ধরে কারারুদ্ধ দেশের প্রবীণ সাংবাদিকদের জন্য প্রতিবাদী ভূমিকায় দেখা যায়নি। যেমনটি দেখা গেছে রোজিনা ইসলামের বেলায়।

গ্রেফতারের ৬ দিনের মাথায় রোজিনা ইসলাম জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তার জামিন শুনানিতে আদালত বলেছেন, গণমাধ্যম হচ্ছে গণতন্ত্রের অন্যতম অনুসঙ্গ। রাষ্ট্র ও সরকারের দায়বদ্ধতা জনগণের কাছে। গণমাধ্যমকর্মীরা সেই দায়বদ্ধতার নিরিখে তাদের দায়িত্ব পালন করার কথা। কিন্তু সমরকার নিয়ন্ত্রিত ও কর্পোরেট মিডিয়ার সাম্প্রতিক ভূমিকা জনগণকে ডিজইনফরমেশন মিশনে নিয়োজিত রেখে জনবিরোধী ভূমিকায় ঠেলে দেয়। এ ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট জার্নালিজম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে আসা সিটিজেন জার্নালিজম গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত ইন্ডিপেন্ডেন্ট জার্নালিস্ট ও মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ জোনাথন কুক স্বাধীন সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে কর্পোরেট মিডিয়ার কারসাজি রুখে দেয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। জোনাথন কুকের মত সাংবাদিকদের জোরালো ভূমিকার কারণেই সম্প্রতি গাজা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিশ্বজনমত গড়ে উঠেছিল। আমাদের দেশের গণমাধ্যম ও স্বাধীন সাংবাদিকরা কি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম? সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম সাংবাদিকতা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। মামলার বিচারিক বিতর্কের বাইরে গিয়ে ঘটনার পেছনের ঘটনা সম্পর্কে গণমাধ্যম কর্মীরা স্বচ্ছতার দাবি রাখে এবং স্বাধীন সাংবাদিকতা ও কর্পোরেট মিডিয়ার কারসাজির পার্থক্য সম্পর্কে আমাদের গণমাধ্যম কর্মীদের আরো সচেতন হতে হবে।
[email protected]



 

Show all comments
  • Dadhack ২৬ মে, ২০২১, ৫:৩২ পিএম says : 0
    O'Allah wipe out Enemy of Allah from our Beloved country so that we will be able to live in peace, security of life, medicine, food, shelter, human dignity and there will be no more enemy of Allah and there will be no more poor people.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফিলিস্তিন


আরও
আরও পড়ুন