Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

প্রবল ঘূর্ণিঝড় যশ ভারতমুখী

সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত : খুলনা-বরিশাল উপকূলের নিম্নাঞ্চল জোয়ারে ভাসছে : ৮০ থেকে একশ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া ও জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা : সারাদেশে নৌযান চলাচল বন্ধ

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০২১, ৬:২৯ পিএম

করোনা মহামারীর মহাদুর্যোগ চলছে। এ সময়ই উপকূলবাসীর মাঝে আরেক দুর্যোগের ভয়-আতঙ্ক, কষ্ট-দুর্ভোগের কারণ ঘূর্ণিঝড় যশ বা ইয়াস (Yaas)। ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের আগাম প্রভাবে প্রবল জোয়ারে ভাসছে খুলনা ও বরিশাল বিভাগসহ দক্ষিণ-পশ্চিমের একাংশের সমুদ্র উপকূলীয় চর ও নিম্নাঞ্চল।

আবহাওয়া বিভাগ জানায়, উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিঝড় যশ বা ইয়াস আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়েছে। বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে। আজ বিকাল পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টির গতিপথ আগের মতোই উত্তর, উত্তর পশ্চিম দিকে। অর্থাৎ ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূল বরাবর বজায় রয়েছে।

গতিপথ পরিবর্তন না হলে যশ ভারতের উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে। আগামীকাল বুধবার দুপুরে যশ আঘাত হানতে পারে।

অবশ্য আঘাতের সময়ে বা ঠিক আগেই গতিমুখ বদল করতে পারে যে কোন ঘূর্ণিঝড়। তাছাড়া বুধবার ভরা পূর্ণিমা ও চন্দ্রগ্রহণের সক্রিয় প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলেও।

ঘূর্ণিঝড় যশের প্রভাবে সমুদ্র খুবই উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের সাথে ভরা পূর্ণিমার আগাম প্রভাবে বিকালে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত খুলনা ও বরিশাল বিভাগের একাংশের বিস্তীর্ণ সমুদ্র উপকূল, চর ও দ্বীপাঞ্চলে প্রবল জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চলসমূহ। আগের ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে। তলিয়ে যাচ্ছে ফল-ফসলের জমি, বসতভিটা, ক্ষেত-খামার। দুর্যোগের মুখে পড়েছে হাজারো উপকূলবাসী।

উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলের হাজারো মানুষ যশের কবল থেকে জানমাল রক্ষায় ছুটছেন সাইক্লোন শেল্টার ও নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে।

যশের প্রভাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অনেক জায়গায় দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। উপকূলের অনেক জায়গায় গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সারাদেশে নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের সর্বশেষ পরিস্থিতি-
আজ বিকালে আবহাওয়া বিভাগের বিশেষ বুলেটিনে আবহাওয়াবিদ মোঃ হাফিজুর রহমান জানান, সর্বশেষ গতি-প্রকৃতি ও অবস্থান অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় যশ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪২০ থেকে ৫৫৫ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ, দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে।

ঘূর্ণিঝড় যশের কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৮৯ কিলোমিটার। যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড় যশ আরও ঘনীভূত ও উত্তর ও উত্তর পশ্চিম দিকে এগিয়ে আগামীকাল বুধবার দুপুরে উত্তর উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের চর, দ্বীপসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ এবং ঘন্টায় ৮০ থেকে একশ কিলোমিটার বেগে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এসব এলাকায় নিম্নাঞ্চল ২ থেকে ৪ ফুট উচ্চতায় জোয়ারে প্লাবিত হতে পারে।

এদিকে বিদেশি আবহাওয়া স্যাটেলাইট সংস্থাসমূহ ও ভারতের সংবাদমাধ্যম বলছে, যশের গতিবেগ ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১২৫ কিলোমিটার। তা আরও বাড়তে পারে আঘাত হানার আগেই। ঘূর্ণিঝড় আঘাতের সময়ে সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘন্টায় ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার।

আবার যশ শক্তিশালী হয়ে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হতে পারে আজ রাতে অথবা বুধবার ভোরে।

তাছাড়া ভারতের উপকূল বরাবর আঘাতের সময়ে সুন্দরবনসহ খুলনা উপকূলে ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে ঝড়ো হাওয়া ঝাপটা দিতে পারে। সুন্দরবন কমবেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
তবে সবকিছুই নির্ভর করছে শেষ পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টির মতিগতির উপর।

দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলসহ খুলনা ও বরিশাল বিভাগের একাংশে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ভয়ভীতি উদ্বেগ বিরাজ করছে। বুধবার পূর্ণিমা ও চন্দ্রগ্রহণের সক্রিয় প্রভাব থাকায় দেশের দক্ষিণভাগে সমুদ্র উপকূল, চর ও দ্বীপাঞ্চলে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে।

যশ আছড়ে পড়ার আগেই আজ থেকে দেশের অনেক জায়গায় দমকা হাওয়ার সাথে বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টি হচ্ছে। ইতোমধ্যে তাপদাহের দাপট কমেছে।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগ ও সংবাদমাধ্যম বলছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড়টি আরও কিছুটা উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে অধিকতর শক্তিশালী হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়টি আগামীকাল বুধবার আরও শক্তিশালী হয়ে ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের মাঝামাঝি জায়গা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমান গতিপথ পরিবর্তন না করলে সরাসরি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা কম। তবে সক্রিয় প্রভাব পড়তে পারে। এই প্রভাব বাংলাদেশের উপকূলভাগে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পড়তে পারে। উপকূল উত্তাল থাকতে পারে। সারাদেশে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঘূর্ণিঝড় ইয়াস


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ