পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
অধিকৃত প‚র্ব জেরুসালেমের শেখ জাররাহ মহল্লা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে ইসরাইলি বসতি স্থাপন ও গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ সারাবিশ্বের মানুষ। শনিবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে এবং ইসরাইলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাসহ অবরোধ আরোপের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। ফিলিস্তিনিদের পক্ষে স্মরণকালের মধ্যে শনিবার বৃহত্তম র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনে। এছাড়া দেশটির অন্য শহরগুলোতেও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, বসনিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
লন্ডনসহ বিভিন্ন শহরে শনিবার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভের আয়োজন করে ফিলিস্তিনপন্থী সংগঠনগুলো। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে লন্ডনে অনুষ্ঠিত র্যালিকে স্মরণকালের মধ্যে ব্রিটেনে ফিলিস্তিনের পক্ষে বৃহত্তম র্যালি হিসেবে উল্লেখ করেছেন অংশগ্রহণকারীরা। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদক জানান, টেমস নদীর ভিক্টোরিয়া বাঁধ থেকে হাইড পার্ক পর্যন্ত এই র্যালিতে এক লাখের বেশি বিক্ষোভকারী অংশ নিয়েছেন। র্যালিতে অংশগ্রহণকারীরা ‹ফিলিস্তিন মুক্ত করো›, ‹গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করো› ও ‹ইসরাইলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দাও› বলে স্লোগান দেন। এসময় অনেকেই ফিলিস্তিনের পতাকা, প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড বহন করেন। কিছু বিক্ষোভকারী লন্ডনের ট্রাফালগার স্কয়ারে জড়ো হন এবং ফিলিস্তিনের পতাকার রঙে স্মোক ফ্লারের ধোঁয়া ছড়ান। এই সময় তারা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে সেøাগান দেন। সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার কাছে র্যালিতে অংশ নেয়া আমাল নাগভি বলেন, বাস্তবিক পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত এবং মুক্ত ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামবো না। লন্ডন ছাড়াও বার্মিংহাম, লিভারপুলসহ অন্য ব্রিটিশ শহরগুলোতে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার অ্যাডিলেড শহরে প্রাদেশিক পার্লামেন্ট ভবনের সামনে থাকা সিটি সেন্টার পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে এক বিক্ষোভ র্যালি করা হয়। শত শত বিক্ষোভকারী র্যালিতে অংশ নেন। বিক্ষোভে অংশ নেয়া জানা ফানদি বলেন, আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন যুদ্ধবিরতি মানেই সকল কিছুর সমাপ্তি নয়।
ফিলিস্তিন মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থার পরিবর্তন হবে না। অপরদিকে সিডনিতে হাইড পার্কে বিক্ষোভ সমাবেশে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী অংশ নেন। তারা প্রতিবাদী সেøাগান দিয়ে ও প্ল্যাকার্ড বহন করে ফিলিস্তিনের পক্ষে নিজেদের সমর্থনের কথা জানান। পাকিস্তানে শুক্রবার ঘোষিত ‹ফিলিস্তিন দিবসে› সারাদেশেই হাজার হাজার বিক্ষোভকারী ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ করেন। রাজধানী ইসলামাবাদ, বৃহত্তম শহর করাচি, লাহোর, পেশোয়ারসহ বিভিন্ন শহরেই ফিলিস্তিনি প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানী জাকার্তায় হাজার হাজার মানুষ মার্কিন দ‚তাবাসের সামনে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে অবস্থান নেয়।
এসময় তারা ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের নিন্দা জানিয়ে সেøাগান দেয়। শনিবার তায়েজে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী এক র্যালিতে অংশ নেয়। র্যালিতে অংশগ্রহণকারীরা ইয়েমেন ও ফিলিস্তিনের পতাকা বহন করেন এবং ইসরাইলি দখলদারিত্বের অবসানে সেøাগান দেন। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে রাজধানী সারায়েভোতে শনিবার র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণকারীরা আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের প্রতি গাজায় ভয়াবহ হামলার দায়ে ইসরাইলকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে রাজধানী প্যারিসে হাজার হাজার লোক শনিবার এক বিক্ষোভ র্যালিতে অংশ নেয়। বিক্ষোভকারীরা , ‹আমরা সবাই ফিলিস্তিনি›, ‹ফিলিস্তিন বাঁচবে, ফিলিস্তিন জিতবে› ও ‹ইসরাইল খুনি, ম্যাকরন সহচর স্লোগান দেন। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাজধানী বার্লিনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে শত শত লোক অংশগ্রহণ করেন। ফিলিস্তিনি পতাকা ও প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড বহন করে তারা বিক্ষোভে অংশ গ্রহণ করেন। এসময় অনেকেই ‹নদী থেকে সাগর পর্যন্ত মুক্ত হবে ফিলিস্তিন› বলে স্লোগান দেন। এর আগে গত ২৫ এপ্রিল শেখ জাররাহ মহল্লা থেকে ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে ইহুদি বসতি স্থাপনের আদেশ দেন ইসরাইলি এক আদালত। এই আদেশের জেরে ফিলিস্তিনিরা বিক্ষোভ করলে মসজিদুল আকসাসহ বিভিন্ন স্থানেই তাদের ওপর হামলা করে ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী। ৭ মে থেকে ১০ মে পর্যন্ত এই সকল হামলায় এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন বলে জাতিসঙ্ঘের মানবিক সাহায্য বিষয়ক দফতর ইউএনওসিএইএ।
মসজিদ চত্ত¡রে মুসল্লিদের ওপর ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর হামলায় ১০ মে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে আল-আকসা থেকে ইসরাইলি সশস্ত্র বাহিনীর সব সদস্যকে সরিয়ে নেয়ার আলটিমেটাম দেয় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি স্বাধীনতকামী সংগঠন হামাস। আলটিমেটাম শেষ হওয়ার পর গাজা থেকে ইসরাইলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামাস রকেট হামলা শুরু করে। রকেট হামলার জেরে ইসরাইল ১০ মে রাত থেকে গাজায় বিমান হামলা শুরু করে। আল-জাজিরা, টিআরটি ওয়ার্ল্ড, মিডল ইস্ট আই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।