পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গাজা ও পশ্চিম তীরে গত ১০ মে থেকে লাগাতর সর্বাত্মক আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। তাতে ইতোমধ্যে দু’শতাধিক মানুষ নিহত ও বহু সংখ্যক আহত হয়েছে। যার মধ্যে দুই তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু। পবিত্র আল আকসা মসজিদের ভেতরেও আক্রমণ চালিয়ে মুসল্লিদের হত্যা করা হয়েছে। এ আক্রমণে বহু স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। যার মধ্যে আল-জাজিরা ও এপির অফিস উল্লেখযোগ্য। জাতিসংঘ বলেছে, গাজায় এক সপ্তাহের হামলায় ৩৮ হাজার বাড়ি-ঘর ও স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। হামলায় বিষাক্ত গ্যাসও ব্যবহার করা হয়েছে। বেশিরভাগ মানুষ বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়েছে। মিশর তার সীমান্ত খুলে দিয়েছে। ওদিকে এ হামলাকে কেন্দ্র করে ইসরাইলের অভ্যন্তরে দাঙ্গা হয়েছে। হামাস লেবানন ও সিরিয়া থেকেও ব্যাপক রকেট হামলা চালিয়ে ইসরাইলি গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের জবাব দিয়ে যাচ্ছে। এতে অনেক নিহত-আহত হয়েছে। তন্মধ্যে হামাসের আয়াস রকেটের সক্ষমতা সমগ্র ইসরাইলব্যাপী। সবচেয়ে বড় কথা, এ রকেট ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা (আয়রন ডোম) ভেদ করতে সক্ষম। হামাস এ ধরনের কিছু ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহার করছে। ফলে ইসরাইলের আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। মানুষজন চরম আতংকিত হয়ে পড়েছে। প্রাণভয়ে অনেকে মাটির নিচে লুকিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তার সেনা ও নাগরিককে সরিয়ে নিয়েছে। ইসরাইলের এসব ক্ষতি এতদিন কল্পনাতীত ছিল।
ফিলিস্তিনে ইসরাইলের সা¤প্রতিক হামলার প্রেক্ষাপটে, আরব জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটেছে। আরব দেশগুলো ইসরাইল বিরোধিতায় একাট্টা হয়েছে। এছাড়া, মুসলিম স¤প্রদায়সহ বিশ্ববাসী চরম ক্ষুব্ধ হয়েছে। বিশ্বের বহু দেশে লাখ লাখ মানুষ প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে। তাতে ইসরাইলবিরোধী শ্লোগানে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়েছে। এমনকি আমেরিকা-ইউরোপেরও বহু শহরে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বিশাল সমাবেশ হয়েছে। ইসরাইলের অস্ত্র ও বিস্ফোরক জানার পর তা জাহাজে তুলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইতালির লিভোর্নো বন্দরের কর্মীরা। ওআইসি বলেছে, ফিলিস্তিনে পরিস্থিতির অবনতিতে সম্পূর্ণ দায়ী ইসরাইল। আরব লীগ বলেছে, সংঘাত থামাতে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও কাজ করতে হবে। মার্কিন কংগ্রেসের অনেক প্রতিনিধি বলেছেন, আমরা যুদ্ধবিরোধী, আমরা দখলদারিত্বের বিরোধী এবং আমরা বর্ণবাদ বিরোধী। পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, ইসরাইলের সহিংসতা অগ্রহণযোগ্য। ইসরাইলি মানবাধিকার সংস্থা-বি’সলেম ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, গাজায় ইসরাইলের বোমা হামলা যুদ্ধাপরাধের সমান। জাতিসংঘ রক্তপাত বন্ধের আহবান জানিয়েছে। ফিলিস্তিনের ওপর হামলার পক্ষে সমর্থন আদায়ে ইসরাইলের ‘জেরুজালেম প্রেয়ার টিম’ পেজ বন্ধ করেছে ফেসবুক। চীন, রাশিয়াসহ বহু দেশ ইসরাইলের এ বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে চীন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কারণেই দীর্ঘ কয়েক দশকে ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংকট নিরসন হচ্ছে না। তাই ফিলিস্তিন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে। চীন বেইজিংয়ের মধ্যস্থতায় ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলি নেতাদের সংলাপে বসার আহবান জানিয়েছে এবং ফিলিস্তিনের দ্রুত স্বাধীনতা দাবি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র (জার্মানি ও ফ্রান্সও) ইসরাইলের পক্ষালম্বন করেছে। গত ১৬ মে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি মার্কিন বিরোধিতায়। এর আগেও ইসরাইলের হামলা সংক্রান্ত নিরাপত্তা পরিষদের দু’টি বৈঠক বন্ধ করেছে দেশটি। উপরন্তু ইসরাইলের কাছে ৭৩৫ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি অনুমোদন করেছে, যা নিরীহ ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হবে। ইসরাইলের প্রতি পক্ষপাতিত্বের কারণে মুসলিম দেশ ও মুসলমানরা প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও ইসরাইলবিরোধী মনোভাব চাঙ্গা হয়েছে। ইসরাইলকে সমর্থন জানানোর কারণে নিজ দল ও বহির্বিশ্বে চরমভাবে নিন্দিত হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। হোয়াইট হাউসে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যায়নি আমেরিকার মুসলিম মানবাধিকার সংগঠনগুলো। এ অবস্থায় বাইডেন গত ১৭ মে নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপের সময় যুদ্ধবিরতির কথা বলেছেন। কিন্তু ইতোমধ্যেই তার সর্বনাশের ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে। ইহুদি লবিংয়ের খপ্পরে পড়ে মানবাধিকার রক্ষার শ্লোগানধারী বাইডেনের এটা হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
ইসরাইলও ঘরে-বাইরে নাজুক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। নেতানিয়াহু বলেছেন, ২৫টি দেশ তাকে সমর্থন জানিয়েছে। তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রমাণিত হয়, বাকী দেশগুলো ইসরাইলের বিপক্ষে এবং ফিলিস্তিনের পক্ষে। জেরুজালেম পোস্টে বলা হয়েছে, ছোট যুদ্ধে ইসরাইল, দীর্ঘ যুদ্ধে জিতবে হামাস। নেতানিয়াহু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এ হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এতে সম্প্রতি যেসব মুসলিম দেশ ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, তারাও চরম সংকটে পড়েছে। যা’হোক, ফিলিস্তিনে ইসরাইলের লোমহর্ষক আক্রমণ টক অব দি ওয়ার্ল্ড-এ পরিণত হয়েছে। বিশ্বের সর্বত্রই ফিলিস্তিনের পূর্ণ স্বাধীনতার এবং তা যতদিন না হয়, ততদিন সেখানে জাতিসংঘের শান্তি বাহিনী মোতায়েন করার দাবি উঠেছে। স্মরণীয় যে, মধ্যপ্রাচ্যে সংকট চলছে ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনে ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর থেকে। এ নিয়ে অনেক যুদ্ধ, হানাহানি ও ব্যাপক প্রাণহানি হয়েছে। শান্তি পরিকল্পনাও হয়েছে অনেক। দু’রাষ্ট্র ভিত্তিক শান্তি চুক্তি হয়েছে, যা বাস্তবায়ন হয়নি ইসরাইলের একগুয়েমির কারণে। উপরন্তু দেশটির বর্বোরচিত কান্ড বেড়েই চলেছে। ফিলিস্তিনের এলাকা দখল করে ইহুদিদের বসতি স্থাপন করছে ইসরাইল অনেক দিন ধরে, যা বিশ্ব প্রত্যাখান করেছে। ইসরাইলের অভ্যন্তরের মুসলমানদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, ইসরাইল তার রাষ্ট্রের মধ্যে এবং অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে আরবদের ওপর রাষ্ট্রীয়ভাবে বর্ণবাদ প্রয়োগ করছে ও নির্যাতন চালাচ্ছে। সর্বোপরি ইসরাইলের কারণে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য উত্তপ্ত কড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা দরকার এবং তা এখনই। এ শান্তি প্রতিষ্ঠার অন্যতম উপায় হচ্ছে, পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী করে দু’রাষ্ট্র ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চুক্তি বাস্তবায়নে এবং ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পূর্বের সীমানা মেনে নিয়ে দখলী এলাকা ছেড়ে দেয়া। এটা জাতিসংঘসহ বিশ্ববাসীরও আকাক্সক্ষা। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেরও নীতি ছিল এটি। যুক্তরাষ্ট্র একচোখা নীতি পরিহার করে দৃঢ় পদক্ষেপ নিলেই এটা বাস্তবায়িত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে জাতি সংঘ এবং ওআইসির বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করা জরুরি। এ মুহূর্তে বিশেষ কর্তব্য হলো, রাষ্ট্রহীন অসহায় ফিলিস্তিনেদের পাশে দাঁড়ানো ও সহায়তা করা।
কয়েক বছর আগের আরব বসন্তের প্ররিপ্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যে পরিবর্তনের হাওয়া শুরু হয়েছে। তাতে রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ইত্যাদিতে ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্ষমতাসীন হওয়ার পর তার পূর্বসূরি ট্রাম্পের ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী নীতি ত্যাগ করে যে ইতিবাচক নীতি গ্রহণ করেন, তার ফলে ইরাক থেকে মার্কিন সব সেনা সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম পরবর্তী সময়ে দেশটিতে চরম অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছিল। মার্কিন সেনার উপস্থিতি নিয়েও পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়েছে। প্রায়ই ব্যাপক আক্রমণ হচ্ছে ইরাকস্থ মার্কিন ঘাঁটিতে। তাতে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এটা বন্ধ হবে মার্কিন সেনারা চলে গেলে। তখন দেশটিতে পূর্ণ স্থিতিশীলতা ও কর্তৃত্ব ফিরে আসবে। ইরান-ইরাক সম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিও হয়েছে। ওদিকে আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা সরিয়ে নেয়া হচ্ছে, যা আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন হবে। তখন তালেবানরা পুনরায় ক্ষমতাসীন হবে এবং ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করবে। তুর্কী প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সাথে ফোনালাপের সময় পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, আফগানিস্তানে টেকসই শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য সম্ভাব্য সব রকম সহযোগিতা দেবে পাকিস্তান। তালেবানের সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে পাকিস্তানের। সেই তালেবান পরাশক্তি আমেরিকা ও তার মিত্রদের পরাজিত করে পুনরায় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তাদের এ বিজয়ে দেশটিতে আমূল পরিবর্তন ঘটবে। উপরন্তু তালেবানের বিজয়ের ঢেউ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে লাগতে পারে।
বর্তমান বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন পাকিস্তানকে ব্ল্যাংক চেক দিয়েছেন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করে সেটা জানিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রীকে। চীনের সাথেও পাকিস্তানের সম্পর্ক মধুর। সৌদি আরবের সঙ্গেও পুনরায় গভীর সম্পর্ক হচ্ছে পাকিস্তানের। কাশ্মীরনীতি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক শীতল হয়েছিল। কিন্তু স¤প্রতি পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সফরে তা দূর হয়েছে। দেশ দু’টির মধ্যে বেশ কিছু চুক্তি হয়েছে। ইরানের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তাই ট্রাম্প কর্তৃক আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার এবং ৬ জাতির পরমাণু চুক্তিতে ফিরে আসার লক্ষ্যে ভিয়েনায় কয়েকটি বৈঠক হয়েছে সংশ্লিষ্ট পক্ষের। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় ইরানের এক লাখ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটি। ইরানে মার্কিন অবরোধ উঠে গেলে দেশটির উন্নতি ব্যাপকতর হবে খুব দ্রুত। দীর্ঘদিনের অবরোধের পরও দেশটি সামরিক ও আর্থিকভাবে অনেক উন্নতি হয়েছে। পরমাণু বোমা তৈরিতেও ৬০% এগিয়ে গেছে। মার্কিন জেনারেল ম্যাকেঞ্জি দেশটির কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের আর্মড সার্ভিস কমিটির শুনানিতে বলেছেন, ‘ইরান হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের ভয়ঙ্কর সামরিক শক্তির অধিকারী। দেশটির যে ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনী রয়েছে, সেটি মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী বাহিনী। উপরন্তু ইরান ব্যাপকভাবে ড্রোন ব্যবহার করছে, যার অর্থ হচ্ছে কোরিয়া যুদ্ধের পর এই প্রথম আকাশ শক্তিতে আমেরিকা পূর্ণ কর্তৃত্ব হারিয়েছে’। ইরান সম্প্রতি বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও ব্যাপক উন্নতি করেছে। এ ক্ষেত্রে দেশটি এখন মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম ও বিশ্বে ১৬তম অবস্থা অর্জন করেছে। এ অবস্থায় ইরান-চীন ২৫ বছর মেয়াদী ৪০ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তি ইরানের উন্নতি ত্বরান্বিত করবে।
এদিকে, সউদী যুবরাজ সালমান দেশটির কট্টর নীতি থেকে সরে এসে উদার নীতি গ্রহণ করেছেন। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে। ফলে দেশটির নারীরা এখন গাড়ি চালাচ্ছে এবং বাইরে অনায়াসে চলাচল করছে আইনগতভাবেই, যা কিছুদিন আগেও কল্পনাতীত ছিল। এছাড়া, যুবরাজ সালমান তেল নির্ভর অর্থনীতি থেকে বের হয়ে ব্যবসা কেন্দ্রিক অর্থনীতি গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। যার অন্যতম হচ্ছে, সাগরে বিনোদন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা। তিনি দেশে ৫ কোটি বৃক্ষ রোপণের উদ্যোগ নিয়েছেন। এটা বাস্তবায়িত হলে তা দেশটির অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে। বায়ু মন্ডলের উঞ্চতা হ্রাসেও সহায়ক হবে। সৌদি আরবের বাদশাহ আব্দুল আজিজের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন তুর্কী প্রেসিডেন্ট এরদোগান। এটি ছিল গত এক মাসে দুই নেতার মধ্যে দ্বিতীয় ফোনালাপ। উপরন্তু গত ১১ মে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৌদি সফর করেছেন। ফলে দেশ দু’টির সম্পকোন্নয়ন ঘটছে। গত ১১ মে কাতারের আমির সউদী সফর করেছেন। কাতারের উপর সউদী আরব ও তার মিত্রদের অবরোধের পর সম্পর্ক শীতল হয়েছিল। এ সফরের ফলে সম্পর্ক আবার উঞ্চ হচ্ছে। সউদী আরবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হামিদানের নেতৃত্বে দেশটির একটি প্রতিনিধি দল সিরিয়া সফর করেছেন সম্প্রতি। সে সময় তারা দেশটির প্রেসিডেন্ট আসাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তখন দু’পক্ষ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করা এবং দামেস্কে সউদী দূতাবাস স্থাপনের বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে। উপরন্তু সউদী প্রতিনিধি দল জানিয়েছেন, আরব লীগে সিরিয়ার প্রত্যাবর্তন এবং আলজেরিয়ায় এ জোটের আগামী সম্মেলনে সিরিয়ার উপস্থিতিকে রিয়াদ স্বাগত জানাবে।
তুর্কী প্রেসিডেন্ট কিছুদিন আগে মিশর সফর করেন। মিশরের ইসলামপন্থী ড. মুরসী সরকারকে উৎখাত করে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জেনারেল সিসি ক্ষমতা দখল করলে তুরস্ক-মিশর সম্পর্ক খারাপ হয়, যা এখন আবার উঞ্চ হচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি করেছে। দেশটি চাঁদে মহাকাশযান প্রেরণ করেছে সম্প্রতি। কয়েক বছরের মধ্যে চাঁদে মানুষ পাঠানোরও পরিকল্পনা করেছে দেশটি। জ্বালানি তেলের চাহিদা ও মূল্য কমে যাওয়ায় মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোতে আর্থিক ধস নেমেছে। ফলে দেশগুলো রক্ষণশীল হয়ে উঠেছে। বিদেশি শ্রমিকের চেয়ে দেশীয় জনবলকে কাজে লাগাচ্ছে। উপরন্তু দেশগুলো বিকল্প অর্থের সন্ধান করছে। ইরান, তুরস্ক ও পাকিস্তানের সম্পর্ক গভীর হয়েছের। তারা ট্রেন সংযোগ চালু করছে, যা আফগানিস্তান ও চীন পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে। ইরান-পাকিস্তান সম্পর্ক ভালো। গত ২১ এপ্রিল পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠককালে ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেছেন, নিরাপত্তা ইস্যুতে তেহরান ও ইসলামাবাদ অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী। দুই দেশই সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদারসহ আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা চায়। পাকিস্তানের জ্বালানি চাহিদা পূরণ করতে তেহরানের প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করেন তিনি। ইরানের লেবাননের হিজবুল্লাহর সাথে সম্পর্ক গভীর। ফিলিস্তিনের হামাসের সাথেও। সিরিয়ায় ইরান ও রাশিয়ার জোরালো ভূমিকার কারণে আসাদ সরকার টিকে গেছে এবং অধিক শক্তিশালী হয়েছে। আসাদ সরকার প্রচন্ড ইসরাইল বিরোধী।
মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি মূল্যায়নে প্রতীয়মান হয়, ইরান ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। আবার সউদী আরবও ইহিতাস পরিবর্তনের লক্ষ্যে ভূমিকা রাখছে। ইরান-সউদী সম্পর্কের উন্নতিরও আভাস মিলছে। সম্প্রতি ইরাক সরকারের মধ্যস্থতায় বাগদাদে ইরান ও সউদী আরবের মধ্যে সরাসরি আলোচনা হয়েছে। সউদী যুবরাজ সালমানও গত ২৭ এপ্রিল বলেছেন, ‘ইরান আমাদের প্রতিবেশী দেশ। তাদের সঙ্গে একটি ভালো ও বিশেষ সম্পর্ক আশা করছি আমরা সবাই।’ প্রতিত্তোরে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তার বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ইরান ও সউদী আরব দুটিই আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ শক্তি এবং তারা তাদের সম্পর্ক পুননির্মাণ করতে পারে। হ্যাঁ, এ দু’ভাতৃপ্রতিম দেশের সম্পর্কোন্নয়ন হলে ব্যাপক কল্যাণ হবে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের এবং সেই সঙ্গে মুসলিম বিশ্বেরও।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।