মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
দুনিয়াজুড়ে করোনা সংকট আরও দ্রুত মোকাবিলা করতে যুক্তক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট দলের অধিকাংশ সদস্য ও বিশ্বের অন্তত ১ শ’ টি দেশের চাপের মুখে অবশেষে করোনা টিকার মেধাস্বত্ত্ব প্রত্যাহারের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এবিষয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে (ডব্লিউ) সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকারি প্রশাসন। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি ক্যাথরিন তাই এক বিবৃতিতে বাইডেন প্রশাসনের সাম্প্রতিক এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে টিকার মেধাস্বত্ত¡ ছাড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি ও সমর্থন দানের বিষয়টি জানিয়ে ক্যাথরিন তাই বলেন, ‘বিশ্ব এখন বিশেষ এক ধরনের স্বাস্থ্য সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আর বিশেষ সংকট যখন দেখা দেয়, তা সমাধানের জন্য প্রয়োজন বিশেষ ব্যবস্থা।’ তবে জো বাইডেন প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রকাশিত হওয়ার পর গতকাল আন্তর্জাতিক বাজারে মডার্না, নভোভ্যাক ও ফাইজারের টিকা উৎপাদনকারী কোম্পনিগুলোর শেয়ারের দাম পড়ে গেছে।
বুধবার এই কোম্পানিগুলোর ঐক্য সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে বলেছে, মেধাস্বত্ব ছাড়ের মাধ্যমে খুব জটিল একটি সমস্যার সরল ও ভুল সমাধান দেওয়া হলো। জন হপকিন্স সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটি জেষ্ঠ স্কলার ড. আমেশ আডালজা রয়টার্সকে বলেন, এই ছাড় আসলে সেই সব ওষুধ কোম্পানির স্বত্তে¡র ওপর ‘জবরদখল’, যাদের উদ্ভাবন ও বিনিয়োগের ফলে কোভিড-১৯ টিকা আনা সম্ভব হয়েছে। তাই জানিয়েছেন যে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্যরাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসে এ ব্যাপারে একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।
গত বছর বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার সময় একমাত্র টিকার মাধ্যমে এমন সংকট থেকে রেহাই পাবার আশা প্রকাশ করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তারপর অভ‚তপূর্ব গতিতে একের পর এক কোম্পানি করোনা প্রতিষেধক আবিষ্কার করে জনজীবন স্বাভাবিক করার পথ সুগম করে। অনুমোদন, উৎপাদন, রফতানি, সত্ত¡ নিয়ে জটিলতার মতো নানা চ্যালেঞ্জের কারণে এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট সংখ্যক মানুষ করোনা টিকা পায়নি। মূলত ধনী দেশগুলোই দুর্লভ টিকার সিংহভাগ দখল করে বসে রয়েছে। অথচ মানবজাতি দ্রæত এই রক্ষাকবচ না পেলে ভাইরাস আরও রূপান্তর ঘটিয়ে প্রাথমিক সাফল্যকে ¤øান করে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিবিসি নিউজ জানিয়েছে, মেধাস্বত্ত ছাড়ের এই পদক্ষেপ অনুমোদিত হলে টিকার উৎপাদন ব্যাপকভাবে বাড়ানো যাবে এবং দরিদ্র দেশগুলোকে সুলভ ম‚ল্যে সরবরাহ করা যাবে বলে সমর্থকদের দাবি। পেটেন্টসহ নানাভাবে মেধাস্বত্ত¡ সংরক্ষণের যে বিধি রয়েছে সেটাকে মহামারি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় টিকা ও অন্যান্য পণ্যের ব্যাপক আকারে উৎপাদনের পথে বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করে আসছিল উন্নয়নশীল অনেক দেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বাইডেন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, চলমান বৈশ্বিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে বাইডেন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও এবার এমন উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। অথচ অতীতে প্রায় সব মার্কিন প্রশাসনই যে কোনও অবস্থায় মেধাসত্ত¡ শিথিলের তীব্র বিরোধিতা করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় বাইডেন প্রশাসনের শীর্ষ মধ্যস্থতাকারী ক্যাথারিন টাই বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে এমন স্বাস্থ্য সংকটের ফলে যে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার মোকাবিলা করতে অভ‚তপূর্ব পদক্ষেপ নিতে হবে। বাইডেনের আশঙ্কা, ভারতে বর্তমানে বিশাল আকারে করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবের ফলে মিউটেশনের মাধ্যমে ভাইরাসের এমন সংস্করণ তৈরি হতে পারে, যেগুলো টিকা উপেক্ষা করে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো অবশ্য এমন উদ্যোগের বিরোধিতা করছে। তাদের যুক্তি, টিকা আবিষ্কার এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী এর ক্রমাগত নবায়নের জন্য গবেষণায় বিপুল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়। একমাত্র বাণিজ্যিক স্বার্থেই এমন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা সম্ভব। মেধাস্বত্বের ওপর কোম্পানির অধিকার প্রত্যাহার করলে বাজার থেকে সেই অর্থ সংগ্রহের উপায় থাকবে না।
তাছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলোতে টিকা উৎপাদনের লক্ষ্যে দুই শতাধিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ফলে টিকা তৈরির কাঁচামালসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সমন্বয় নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে বলে দাবি ওষুধ কোম্পানিগুলির। উল্লেখ্য, করোনা টিকার মেধাস্বত্ব প্রত্যাহারের দাবিতে বাইডেন প্রশাসনের সমর্থনের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর পুঁজিবাজারে মডার্না ও নোভাভ্যাক্স কোম্পানির দরপতন ঘটেছে। মার্কিন ওষুধ কোম্পানিগুলো সম্মিলিতভাবে এমন সিদ্ধান্ত প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছে।
তবে, হোয়াইট হাউসের নীতিগত সিদ্ধান্ত সত্তে্বও এমন উদ্যোগ কার্যকর করতে অনেক মাস পর্যন্ত সময় লাগবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। তাইয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র এখন এই ছাড় আদায়ে ডবিøউটিওর আলোচনায় জোরালোভাবে অংশ নেবে। তাছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১ শ’ ৬৪টি সদস্য দেশের মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তোলাও সহজ কাজ নয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য এখনও সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেয়নি। এমন ম‚ল্যবান সময় নষ্ট না করতে বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্যাকসিন উৎপাদন বাড়ানো এবং এর কাঁচামাল সরবরাহ তরান্বিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সূত্র : বিবিসি, দ্য নিউইয়র্ক টাইম্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।