মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
সকল টিকা সম্পর্কে ভুল তথ্য ও অবিশ্বাসের প্রভাব কমাতে দেশের অভ্যন্তরের থাকা কর্মীদের দলগুলোকে সঠিক উপকরণে সরবরাহ করার জন্য ভ্যাকসিনেশন ডিমান্ড অবজারভেটরি তৈরির লক্ষ্যে ইউনিসেফ, ইয়েল ইনস্টিটিউট এবং পাবলিক গুড প্রজেক্ট প্রশিক্ষণ একাট্টা হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে টিকা নিয়ে যে সংশয় দেখা দিয়েছে তা নিরসনে পিজিপি, (দ্য পাবলিক গুড প্রজেক্টস), ইউনিসেফ ও ইয়েল ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথ আজ ‘ভ্যাকসিনেশন ডিমান্ড অবজারভেটরি’ চালু করেছে। দেশগুলো কোভিড-১৯ এর টিকাদান শুরু করেছে এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানেন যে, সর্বশেষ পদক্ষেপটিই (ওষুধের শিশি থেকে বাহুতে টিকা দেওয়া) সবচেয়ে কঠিন হতে পারে। চলমান মহামারিতে ‘ইনফোডেমিকের’ (সঠিক তথ্য ও ভুল তথ্যের দ্বিধাময় মহামারি) কারণে জনসাধারণের মাঝে অনিশ্চয়তা আরো বেড়েছে। সকল টিকা সম্পর্কে ভুল তথ্য ও অবিশ্বাসের প্রভাব কমাতে ভ্যাকসিনেশন ডিমান্ড অবজারভেটরি (দ্য অবজারভেটরি) দেশের অভ্যন্তরের থাকা কর্মীদের সঠিক উপকরণে সজ্জিত করার জন্য সরঞ্জাম তৈরি করছে, প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে ও গবেষণা করছে। এ কর্মসূটি তিনটি স্তম্ভের ওপর ভর করে সংগঠিত হয়েছে: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মতামত বিশ্লেষণ এবং সে সম্পর্কে মতামত প্রদান, সমস্ত ভ্যাকসিন সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষা কর্মসূচি এবং একটি যোগাযোগ ল্যাব।
তথ্যগত শূন্যতা পূরণে সম্পৃক্ততামূলক, প্রাসঙ্গিক কনটেন্ট তৈরি করতে ‘দ্য ভ্যাকসিন অ্যাকসেপট্যান্স ইন্টারভেনশন ল্যাব’ (ভিএআইএল) আচরণগত ও সামাজিক গবেষণা ব্যবহার করবে এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে থেকে তথ্য নেবে। ভিএআইএল টিকা সংক্রান্ত ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে গিয়ে মানুষকে টিকা দিতে ‘টিকাদান’ বার্তাও চালু করবে। বাস্তবায়নের আগে বার্তার ভাষা, কার্যবিধি এবং আচরণ পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে জানতে কনটেন্ট ও কর্মসূচিগুলো দ্রুত মাঠপর্যায়ে পরীক্ষাও করা হবে।
ইউনিসেফের সিনিয়র সমাজ বিজ্ঞানী ড. অ্যাঙ্গাস থমসন পিএইচডি বলেছেন, “তীব্র উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তার এই সময়ে টিকা সম্পর্কে মানুষের অত্যন্ত যৌক্তিক অনেক প্রশ্ন ও উদ্বেগ রয়েছে। তবে তথ্যের বিশাল শূন্যতা এবং ভুল বা অসত্য তথ্যের কারণে উত্তরের খোঁজে তাদের অনুসন্ধানগুলো তালগোল পাকিয়ে ফেলতে পারে। আমরা যদি আগে এসব উদ্বেগ বুঝতে না পারি তবে আমরা তাদের উদ্বেগের সমাধান করতে পারবো না। এরপর আমাদের অবশ্যই মানুষের কাছে কাছে কোনটি গুরুত্বপূর্ণ তা জানতে তাদের সঙ্গে কথা বলা উচিত। আর এটি করতে দেশগুলোর ক্ষমতায়নে এই ‘অবজারভেরি’ সহায়তা করবে।
একটি রোগ নজরদারি ব্যবস্থার মতো কাজ করার মাধ্যমে একটি ‘অবজারভেটরি-সাপোর্টেট কান্ট্রি প্রোগ্রাম’ স্থানীয় স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সহযোগী সংগঠনগুলোকে সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য সরবরাহের জন্য টিকা সংক্রান্ত কথোপকথনকে প্রাসঙ্গিক করে তুলবে এবং প্রশ্ন, উদ্বেগ ও ভুল তথ্যকে আলাদভাব চিহ্নিত করবে। পূর্ববর্তী প্রচেষ্টাগুলোর বিপরীতে, এই প্রোগ্রামটি ড্যাশবোর্ডের পরিবর্তে একটি ‘ফিল্ড ইনফোডেমিক ম্যানেজার’ এর মতো করে গড়ে তোলা হয়েছে। এই ‘ম্যানেজার’ কমিউনিটিগুলোতে সম্পৃক্ত দলগুলোর কাছে রিয়েল-টাইমে ব্যবস্থা নেওয়া যায় এমন মতামত ও পরামর্শ প্রদান করতে সামাজিক মতামত বিশ্লেষণ ও শনাক্তকরণ এবং টিকা সংক্রান্ত গুজবের মূল্যায়ন ও তথ্যের ঘাটতি সমন্বয় করবে।
পিজিপির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ড. জো স্মাইসার পিএইচডি, এমএসপিএইচ বলেন, ‘যেহেতু যেকোনো টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের ক্ষেত্রে স্থানীয় যোগাযোগ মূল চাবিকাঠি, তাই আমরা স্থানীয় পর্যায়ে এমন কর্মসূচি গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করেছি, যা যেকোনো বৈশ্বিক ব্যবস্থার মতোই শক্তিশালী ও পরিশীলিত। পৃথিবীর প্রতিটি দেশের নিজস্ব সাংস্কৃতিক রীতি রয়েছে। অবজারভেটরি ব্যবস্থা ভ্যাকসিন নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে চিন্তাধারা অনুসরণ ও ব্যাখ্যা করার জন্য পরিমাণগত ও গুণগত– উভয় পদ্ধতি প্রয়োগ করবে। এরপরে জনস্বাস্থ্য কর্মসূচিগুলো প্রতিটি দেশের প্রেক্ষাপটে মানানসই করা এবং সম্ভাব্য শক্তি ও প্রভাব দ্বারা মূল্যায়ন করা যেতে পারে’।
ইউনিসেফ বিশ্বের প্রায় অর্ধেক শিশুর কাছে জীবন রক্ষাকারী টিকাগুলো পৌঁছাতে সহায়তা করে এবং সেই শিশুদের পড়াশোনা, স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা পরিষেবা প্রাপ্তি মহামারির কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মতামত বিশ্লেষণ বিষয়ক কর্মসূচির দ্বারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশজুড়ে সক্রিয় কমিউনিটি সম্পৃক্ততা, যোগাযোগের ঝুঁকি, সামাজিক গতিশীলতা এবং অংশীদারিত্বের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে ইউনিসেফের কার্যক্রম রিয়েল টাইমে অবহিত করা হবে। ইউনিসেফ অন্যান্য বহুপাক্ষিক, বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব, দাতা, বেসরকারি এবং নাগরিক সমাজের সংস্থাগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন দেশে তার সহায়তামূলক কার্যক্রমে সমন্বয় করতে ‘ভ্যাকসিনেশন ডিমান্ড হাবের’ মাধ্যমে কাজ করে।
প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে, অবজারভেটরি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ভ্যাকসিন মিসইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট ফিল্ড গাইড প্রকাশ করে। এই বাস্তবধর্মী গাইডটি ছয়টি ভাষায় পাওয়া যায়, যার লক্ষ্য হচ্ছে টিকা বিষয়ক ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে দ্রæত পদক্ষেপ নিতে এবং টিকাদানের চাহিদা তৈরি করতে কৌশলগত এবং সু-সমন্বিত জাতীয় কর্ম পরিকল্পনার বিকাশের মাধ্যমে বৈশ্বিক ‘ইনফোডেমিক’ মোকাবিলায় সংস্থাগুলোকে সহায়তা করা।
অবজারভেটরির এ ধরনের প্রথম প্রকৃত প্রকল্প পশ্চিম আফ্রিকার কয়েকটি দেশে চলমান রয়েছে, যা ইউনিসেফের পোলিও দলগুলোকে মুখে খাওয়ানো যায় এমন নতুন একটি পোলিও টিকা চালু করার ক্ষেত্রে সহায়তা করছে।
ড. থমসন বলেন, ‘বৈশ্বিক পর্যায়ে টিকা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর বিদ্যমান প্রচেষ্টাসমূহের কমিউনিটি পর্যায়ে মতামত তুলে আনার জন্য বিস্তারিত তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। দেশগুলোতে প্রতিটি মানুষের কাছে যদি টিকা পৌঁছাতে হয়, সেক্ষেত্রে ন্যায়সঙ্গত উপাত্ত অপরিহার্য। অবজারভেটরি অনলাইন এবং অফলাইন-উভয় ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো একত্রিত করার বিষয়ে মনোনিবেশ করেছে, যাতে যারা ডিজিটাল সুবিধার আওতার বাইরে আমরা তাদের কথাও শুনতে পারি তা নিশ্চিত করা যায়’।
দেশগুলোতে সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে অবজারভেটরি আঞ্চলিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ড্যাশবোর্ড দাঁড় করিয়েছে, যার ব্যাখ্যা দেওয়ার দায়িত্বে আছে ইনফোডেমিক ম্যানেজাররা। তবে এখন যেহেতু তারা কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে এবং পোলিও টিকা চালু করছে এবং নিয়মিত টিকাদান কার্যক্রমে মানুষের আস্থা ধরে রাখতে কাজ করছে, তাই তারা এখন এসব উপকরণ, প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দ্রæত বিভিন্ন দেশে নিয়ে যেতে সহায়তা চাইছে।
ইয়েল ইনস্টিটিউট অব গ্লোবাল হেলথের পরিচালক অধ্যাপক সাদ বি ওমার এমবিবিএস এমপিএইচ পিএইচডি বলেন, ‘টিকা গ্রহণযোগ্যতা বিজ্ঞান থেকে আমাদের একই ধরনের দৃঢ়তা আশা করা উচিত, যেমনটা আমরা করি টিকা উন্নয়ন বিজ্ঞান থেকে। অবজারভেটরি ভুল তথ্য প্রতিরোধের জন্য এবং টিকার গ্রহণযোগ্যতা ও চাহিদা বাড়াতে প্রমাণ-তথ্য একত্রিত করতে কাজ করে’।
ড. স্মাইসার বলেন, ‘আমরা ১০০টিরও বেশি দেশে কোভিড-১৯ টিকা সরবরাহে কর্মরত ‘কোভ্যাক্স’ ব্যবস্থাকে সহায়তা দিতে দাতাদের গতিশীলতার প্রশংসা করি। তবে, ভুল তথ্য প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা এবং টিকার চাহিদা তৈরিতে যথাযথ বিনিয়োগ না করার অর্থ হচ্ছে আমরা মূল্যবান ডোজগুলোর অবাঞ্ছিত ও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকার ঝুঁকি তৈরি করছি। এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটিতে বর্তমান যে পরিমাণ বিনিয়োগ রয়েছে তা টিকার ডোজ উৎপাদন এবং বিতরণে করা বিনিয়োগের তুলনায় একটিক্ষুদ্র অংশ মাত্র’। সূত্র : ইউনিসেফ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।