ইতিহাস গড়লেন চীনের পরিচালক ক্লোয়ি ঝাও। অস্কারের ৯৩ বছরের ইতিহাসে প্রথম এশিয় বংশোদ্ভ‚ত নারী এবং দ্বিতীয় নারী হিসেবে সেরা পরিচালকের খেতাব জিতে নিলেন তিনি। ‘নোম্যাডল্যান্ড’ ছবির সৌজন্যে। এর আগে ২০০৯ সালে ‘দ্য হার্ট লকার’ ছবিটি পরিচালনার সুবাদে প্রথম মহিলা পরিচালক হিসেবে অস্কার পেয়েছিলেন ক্যাথরিন বিগলো। পরিচালক হিসাবে চীনা পরিচালক ক্লোয়ির দ্বিতীয় ছবি ‘নোম্যাডল্যান্ড’।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ‘গোল্ডেন গেøাব’, ‘বাফটা’-তেও সেরা পরিচালক হিসেবে সম্মানিত হওয়ার পর অস্কারের দৌড়েও এগিয়ে ছিলেন ক্লোয়ি। অস্কারের মোট ৬টি বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে এই ছবি। ‘নোম্যাডল্যান্ড’ গল্প বলে ষাটোর্ধ্ব এক বিধবা মহিলার জীবন সংগ্রামের গল্প। চাকরি হারানোর পর কীভাবে মাত্র একটি ভ্যানকে সম্বল করে জীবন যুদ্ধে বিজয়ী হয়, তা নিয়েই এই ছবি।› এর পরিচালকের আসনে বসার পাশাপাশি এই ছবির গল্প লেখা, নির্দেশনা ও প্রযোজনার দায়িত্বও সামলেছেন ক্লোয়ি ঝাও। অস্কারের ট্রফিটি হাতে তুলে মঞ্চ থেকেই ‘নোম্যাডল্যান্ড› এর সঙ্গে জড়িত প্রতিটি কলাকুশলীর উদ্দেশে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি। উল্লেখ্য, ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রথমবার ‘নোম্যাডল্যান্ড’ এর প্রদর্শনী হওয়ার পরপরই স্পটলাইটে চলে আসেন ক্লোয়ি। এটি পরিচালক হিসেবে ক্লোয়ির তিন নম্বর ছবি। এর আগে ২০১৫ ও ২০১৭ সালে যথাক্রমে তার নির্দেশনায় মুক্তি পেয়েছিল ‘সংস মাই ব্রাদার টট মি’ এবং ‘দ্য রাইডার’। অস্কার বিজয়ীর পরবর্তী ছবি মার্ভেলস এর সুপারহিরোধর্মী ছবি ‘দ্য এটারনার্ল্স’।
অন্যদিকে বায়োপিক ম্যাঙ্ক ১০টি মনোনয়ন পেয়ে একটি অস্কার জয় করেছে। ‘দ্য ফাদার’ চলচ্চিত্রে আলজাইমারে স্মৃতিভ্রংশতার কারণে বাস্তবতা এবং নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানো এক বৃদ্ধের ভ‚মিকায় অভিনয় করে অ্যান্থনি হপকিন্স শ্রেষ্ঠ অভিনেতার অস্কার পেয়েছেন। এটি তার দ্বিতীয় অস্কার। ‘নোম্যাডল্যান্ড’-এ সব হারিয়ে যাযাবর জীবন বেছে নেয়া নারী ফার্নের ভ‚মিকায় অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর অস্কার স্বীকৃতি পেয়েছেন ফ্রান্সেস ম্যাকডরম্যান্ড। এটি তার চতুর্থ অস্কার। তিনি এমি, টোনি এবং বাফটা জয়ী, ‘ট্রিপল ক্রাউন অফ অ্যাক্টিং’ অর্জনকারী একজন।
ড্যানিয়েল কালুইয়া বায়ো-ড্রামা ‘জুডাস অ্যান্ড দ্য বø্যাক মেসায়া’তে বø্যাক প্যান্থার পার্টির বামপন্থি নেতা ফ্রেড হ্যাম্পটনের ভ‚মিকায় অভিনয় করে প্রথমবারের মত অস্কার জয় করলেন পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে। একই চরিত্রের জন্য তিনি এর আগে গোল্ডেন গেøাব, বাফটা এবং আরও দুটি প্রধান সম্মাননা অর্জন করেছেন। ‘মিনারি’তে কোরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরূপ এক পরিবেশে আগত প্রোঢ়া সুন-জার ভ‚মিকায় অভিনয় করে প্রথমবারের মত অস্কার জয় করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার অভিনেত্রী জো জু-ইউং।
চিরাচরিত ২৪টির বদলে এবার ২৩ বিভাগে পুরস্কার দেয়া হয়। সাউন্ড সম্পাদনা এবং সাউন্ড মিক্সিংকে এক করে সেরা সাউন্ড বিভাগে অস্কর দেয়া হয়েছে। গত ১৫ মার্চ অস্কার মনোনয়ন ঘোষণা করেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জোনাস এবং নিক জোনাস। পুরো অনুষ্ঠানটি বিশ্বব্যাপী লাইভস্ট্রিম করা হয়। স্বাভাবিক সময়ের প্রায় দেড় মাস পর হলিউডের সুপরিসর ডলবি থিয়েটারে গতকাল বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা থেকে শুরু হয় অস্কার নামে সমধিক পরিচিত অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস ঘোষণা। অনুষ্ঠানস্থল নির্ধারণ করা হয় লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউনিয়ন স্টেশন থেকে ডলবি থিয়েটারে। এবারও স্বাভাবিকভাবে মূল ঘোষক ছাড়াই অনুষ্ঠান হল। ২৮ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত যেসব চলচ্চিত্র থিয়েটারে মুক্তি পাবার কথা ছিল তবে শেষ পর্যন্ত স্ট্রিমিং মাধ্যমে মুক্তি পেয়েছে সেগুলোও এবারের অস্কারে যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে।
এবারের জিন হার্শল্ট হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে টাইলার পেরি এবং মোশন পিকচার অ্যান্ড টেলিভিশন ফান্ড। এবিসি নেটওয়ার্ক ৯৩তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করেছে। উপমহাদেশের দর্শকদের জন্য স্টার মুভিজ অনুষ্ঠানটির সরাসরি দেখিয়েছে।
যারা বা যে চলচ্চিত্র অস্কার পেয়েছে- সেরা চলচ্চিত্র : ‘নোম্যাডল্যান্ড’, শ্রেষ্ঠ পরিচালক : ক্লোয়ি ঝাও (‘নোম্যাডল্যান্ড’), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা : অ্যান্থনি হপকিন্স (‘দ্য ফাদার’), শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী : ফ্রান্সেস ম্যাকডরম্যান্ড (‘নোম্যাডল্যান্ড’), শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা : ড্যানিয়েল কালুইয়া (‘জুডাস অ্যান্ড দ্য বø্যাক মেসায়া’), শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী : জো জু-ইউং (‘মিনারি’), চিত্রনাট্য (সংগৃহীত) : ‘দ্য ফাদার’ (ক্রিস্টোফার হ্যাম্পটন এবং ফ্লোরিয়ান জেলার, জেলারের নাটক অবলম্বনে), চিত্রনাট্য (মৌলিক) : ‘প্রমিসিং ইয়াং ওম্যান’ (এমারেল্ড ফেনেল), সেরা পূর্ণদৈর্ঘ্য এনিমেটেড চলচ্চিত্র : ‘সোল’, সিনেমাটোগ্রাফি : ‘ম্যাঙ্ক’ (এরিক মেসারস্মিট), কস্টিউম ডিজাইন : অ্যান রথ (‘মা রেইনি’জ বø্যাক বটম’), পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রামাণ্য চলচ্চিত্র : ‘মাই অক্টোপাস টিচার’ (পিপা আর্লিক, ক্রেইগ ফস্টার এবং জেমস রিড), স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্য চলচ্চিত্র : ‘কোলেট’ (অ্যালিস ডোয়ার্ড এবং অ্যান্থনি জিয়াকিনো), চলচ্চিত্র সম্পাদনা : ‘সাউন্ড অফ মেটাল’ (মিকেল ই. জি. নিলসেন), সেরা চলচ্চিত্র (বিদেশী ভাষা) : ‘অ্যানাদার রাউন্ড’ (ড্যানিশ, ডেনমার্ক, পরিচালক- টমাস ভিন্তিবের), মেকআপ ও হেয়ারস্টাইলিং : সার্জিও লোপেজ-রিভেরা, মিয়া নিল এবং জ্যামিকা উইলসন (‘মা রেইনি’জ বø্যাক বটম’), সেরা মৌলিক যন্ত্রসঙ্গীত : ‘সোল’ (ট্রেন্ট রেজনর, অ্যাটিকাস রস এবং জন বাটিস্টা)। সেরা মৌলিক কণ্ঠসঙ্গীত : ‘ফাইট ফর ইউ’ (চলচ্চিত্র- ‘জুডাস অ্যান্ড দ্য বø্যাক মেসায়া’; সুর ও কণ্ঠ- ড’মিল এবং হার, কথা- হার এবং টিয়ারা টমাস), শিল্প নির্দেশনা : ‘ম্যাঙ্ক’ (ডনাল্ড গ্র্যায়াম বার্ট এবং জ্যান প্যাস্কেল), স্বল্পদৈর্ঘ্য এনিমেটেড চলচ্চিত্র : ‘ইফ এনিথিং হ্যাপেন্স আই লাভ ইউ’, স্বল্পদৈর্ঘ্য লাইভ অ্যাকশন চলচ্চিত্র : ‘টু ডিসট্যান্ট স্ট্রেঞ্জার্স’ (ট্র্যাভর ফ্রি এবং ডেসমন্ড রো), সেরা সাউন্ড : হাইইমে বাকস্ট এবং অন্যরা (‘সাউন্ড অফ মেটাল’), ভিজুয়াল ইফেক্ট্স : ‘টেনেট’ (জিওম রশারন, গ্রেগ বাটলার এবং ডমিনিক টুহি)।