পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিশ্বের মানুষ করোনাভাইরাসে যখন বিপর্যস্ত, বাংলাদেশে যখন চলছে সর্বাত্মক লকডাউন, তখন মাহে রমজান আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে মহান আল্লাহর কৃপা অর্জনের সুযোগ হিসেবে। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের এ পবিত্র মাসে আমরা আল্লাহর দরবারে করোনা মহামারি থেকে মানব জাতিকে রক্ষার আকুতি জানাব। আল্লাহ যাতে তাঁর রহমতের ভান্ডার খুলে দেন সে প্রত্যাশায় সিয়াম সাধনা করবো।
কুপ্রবৃত্তি দমন ও আত্মশুদ্ধির সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে রোজা। রমজান মাসে অবিচ্ছিন্ন ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে নিজেকে বিরত রাখতে হবে সব ধরনের মিথ্যা ও অন্যায় অপকর্ম থেকে। রমজান আমাদের সংযমী হওয়ার শিক্ষা দেয়। শুধু পানাহার থেকে দিনের বেলায় বিরত থাকাই সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য নয়, পানাহার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি নিজের মুখ ও জিহ্বাকে সংযত রাখতে হবে। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নয়, পুরো মাসের সবটুকু সময় সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমেই সিয়াম সাধনার প্রকৃত আত্মতৃপ্তি লাভ করা সম্ভব। মহান আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের আশায় মুসলিম জনগোষ্ঠী শ্রদ্ধা ও নির্মল ভালোবাসায় বরণ করে এই মাসকে। পবিত্র এই মাসের মধ্যে নিহিত রয়েছে দুনিয়া ও পরকালের অশেষ কল্যাণ। মহান আল্লাহ এই মাসের প্রতিটি দিন ও মুহূর্তকে নির্ধারিত করে দিয়েছেন সংযম সাধনার জন্য। প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেকের জন্য সুবেহ সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকা ফরজ করেছেন। এর পাশাপাশি তাগিদ দেওয়া হয়েছে জাগতিক সব বিষয়ে সংযত জীবনাচারের। নির্দেশনা রয়েছে সব ধরনের পাপ ও অন্যায় অপকর্ম থেকে দূরে থাকার। রোজার মাসে কথায় ও কাজে মিতাচারী হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। রমজান মাসের এটাই শিক্ষা, এটাই বিধান।
এর পরও দেখা যায়, পবিত্র রমজানের সিয়াম সাধনা ও ধর্মীয় অনুশাসনগুলোর ব্যাপারে অনেকেই উদাসীন। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী পবিত্র এই মাসটিকে নিজেদের লোভ চরিতার্থ করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেয়। পণ্য মজুদ করে কিংবা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি পবিত্র রমজানের শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। সিয়াম সাধনার এই মাসে সামর্থ্যবান ও বিত্তশালীদের অনেকেই অপচয় করেন। এবার রমজান এসেছে অন্য রকম এক বাস্তবতা সামনে নিয়ে। বিশ্ব করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। বাংলাদেশেও নিম্ন আয়ের দরিদ্র জনগোষ্ঠী দুর্দশায় আছে। অনেকেরই হাতে কাজ নেই। আয়-রোজগার নেই। পবিত্র এই মাসে সাধ্যমতো মানবতার সেবায় ব্যয় করা হলে অভাবক্লিষ্ট মানুষের কল্যাণ হবে। মনে রাখতে হবে, অনাহারক্লিষ্ট মানুষের মুখে খাদ্য তুলে দেওয়াও বিত্তবানদের দায়িত্ব।
লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, উপদেষ্টা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সদস্য এফবিসিসিআই এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।