পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আজ পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। সব চাওয়া-পাওয়া, আশা-নিরাশা পেছনে ফেলে ১৪২৭ সাল কালের স্রোতে লীন। ১৪২৮ সালের শুভাগমনের মধ্য দিয়ে নতুন প্রভাতের সূচনা হলো। এবারও বাংলা নববর্ষ এসেছে এমন এক সময়ে, যখন গোটা বিশ্ব করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় বা তৃতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত। বিশ্বজুড়ে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি মুহূর্তেই বাড়ছে। বাংলাদেশও এর ব্যাতিক্রম নয়। স্বভাবতই দেশের মানুষের মধ্যে গভীর উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, ভীতি ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। দেশে লকডাউন চলছে। যাহোক, বাংলা নববর্ষকে আমরা এর মধ্যে স্বাগত জানাই। এটা আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অচ্ছেদ্য অংশ। বলা বাহুল্য, বাংলা সন ও নববর্ষ উদযাপন মূলত মুসলিম ঐতিহ্যজাত এবং মুসলিম শাসকরাই তা প্রবর্তন করেন। বাংলা সনের সঙ্গে বাংলার শাসনব্যবস্থার সংস্কারে মুসলমান শাসকদের ঐতিহাসিক অবদান রয়েছে। দিল্লি সালতানাতের সময়ে হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করা হলেও কৃষিভিত্তিক সমাজ বাস্তবতায় হিজরি বর্ষপঞ্জিতে কর আদায়ের ক্ষেত্রে কিছু অসামঞ্জস্য দেখা দেয়ায় একটি নতুন সনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এই প্রেক্ষাপটে ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট আকবর হিজরি সনের ভিত্তিতে বাংলা বর্ষপঞ্জি প্রবর্তনের নির্দেশ দেন। মুঘল রাজদরবারের দার্শনিক ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতেহ্উল্লাহ সিরাজী হিজরি সন ও সৌর সনের সমন্বয় করে বাংলা সন প্রবর্তন করেন। মুঘল আমলে প্রবর্তিত বাংলা বর্ষপঞ্জিতেও কিছু সমস্যা দেখা দেয়ায় ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা বর্ষপঞ্জিতে কিছু সংস্কার আনেন। তার সংস্কার অনুসারে এখন প্রতিবছর ১৪ এপ্রিলে বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণের উৎসব হয়ে থাকে। আমাদের রয়েছে একটি নিজস্ব ক্যালেন্ডার, যা জাতি হিসেবে আমাদের সমৃদ্ধ ও গর্বিত করেছে। এ কারণেই আমাদের জাতীয় জীবনে বাংলা নববর্ষের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি।
বাংলা নববর্ষ পালন এখন জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে গ্রামীণ জনপদে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হালখাতা এবং কৃষকের ঘরে নতুন ফসল উঠার এ সময়ে নববর্ষ উদযাপনে বৈশাখী মেলা হয়ে উঠত সব বয়েসী মানুষের আনন্দ-উৎসব ও অর্থনৈতিক কর্মকাÐের নতুন উপলক্ষ। সা¤প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ আবাহনে যেসব অনুষঙ্গ যুক্ত হয়েছে তা নিয়ে সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। মুখে উল্কি আঁকা, বিভিন্ন জীবজন্তু বিশেষ করে হুতুম পেঁচা, হাতি, কুমির, সাপ, বিচ্ছু ও ঘোড়ার মুখোশ পরা, প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষদের একসঙ্গে অশালীন পোশাক পরে শোভাযাত্রা করা, শোভাযাত্রায় বাদ্য-বাজনার সঙ্গে আপত্তিজনক ভঙ্গিমায় নৃত্য করা ইত্যাদি বিশেষ স¤প্রদায় বা গোষ্ঠির আচরিত সংস্কৃতি হতে পারে, তবে এদেশের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের জন্য এসব সংস্কৃতি নয়। এগুলো তাদের আচরিত সংস্কৃতির পরিপন্থী ও খেলাপ। সার্বজনীন সংস্কৃতির নামে এসব অনৈসলামিক আচারকে বৃহত্তর জনগোষ্ঠির ওপর চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চলছে। বুঝে হোক, না বুঝে হোক সরকারিভাবে এর পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে। সার্বজনীন সংস্কৃতি বলে বিশ্বে কিছু নেই। একেক দেশের একেক জনগোষ্ঠির ও সমাজের সংস্কৃতি আলাদা। এ কারণেই বিশ্বজুড়ে সংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আমরা লক্ষ করি। সংস্কৃতি গঠন ও নির্মাণে ধর্মের ভূমিকা প্রধান। ধর্মের যেহেতু বিভিন্নতা আছে, সুতরাং সাংস্কৃতিক বিভিন্নতাও থাকবে।
আমাদের স্বতন্ত্র অস্তিত্বের স্বার্থেই বহিরাগত ও অপসংস্কৃতির স্থলে নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেশে অনেক উন্নয়নের কাজ হচ্ছে বটে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, পাশাপাশি মানুষের নীতি-নৈতিকতা, ধর্মীয়, সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়ও চলছে। মাদক, যৌন হয়রানি, পারিবারিক কলহে খুন-জখম, হত্যা, ধর্ষণ, নৃশংসতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসবের মূলে রয়েছে, আমাদের নিজস্ব হাজার বছরের নীতি-নৈতিকতা, ধর্মীয় আচার-আচরণ এবং সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধকে উপেক্ষা করা এবং এ সম্পর্কে উদাসীন হয়ে পড়া, অপসংস্কৃতির গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেয়া। আমরা যতই উন্নয়ন করি না কেন, যদি নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় চলতে থাকে, তবে তা অর্থহীন হয়ে পড়তে বাধ্য। এবারের নববর্ষ একটা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে এসেছে, যা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। করোনা মোকাবেলায় লকডাউনে দরিদ্র, দিনমজুর, কায়িক শ্রমিক ও স্বল্প আয়ের মানুষরা অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। তাদের খাদ্য, অর্থ ও অন্যান্য সাহায্য প্রয়োজন। যাদের কমবেশি সামর্থ্য আছে তাদের এই সাহায্য দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। সরকার তার দিক থেকে যা কিছু করার করছে, অন্যদেরও করতে হবে। পরিশেষে বাংলা নববর্ষে আমাদের পাঠক, শুভানুধ্যায়ী, বিজ্ঞাপনদাতা ও দেশবাসীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।