বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
পাহাড়ে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট পুরনো। তবে গেলো কয়েক বছর ধরে পানির সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে দুর্গম এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট ভয়াবহ রূপ নেয়। এবারও খাগড়াছড়ির বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে পানির সঙ্কট। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের কাজ করছে।
দুর্গম এলাকায় নলক‚প না থাকায় স্থানীয়রা ঝরনা, ঝিরি, ছড়া, কুয়াসহ প্রাকৃতিক পানির উৎস থেকে ঘরের দৈনদিন কাজে ব্যবহার করে আসছেন। কিন্তু প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে প্রাকৃতিক উৎসগুলো শুকিয়ে যায়। এতে কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। যদিও তাও পর্যাপ্ত নয়।
খাগড়াছড়ির কমবেশি সবখানে পানির সঙ্কট থাকলেও ল²ীছড়ি, মাটিরাঙ্গা, দীঘিনালা ও পানছড়িতে এই সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। সরেজমিনে জেলা সদরের ঠাকুরছড়ার দুল্লাতলী, কলাপাড়া, খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের ৮ মাইল যৌথখামার, কারবারি পাড়া, আমতলী এবং ৯ মাইল এলাকার প্রায় তিন শতাধিক পরিবার কয়েকমাস ধরে তীব্র পানি সঙ্কটে রয়েছে। খাওয়া, গোসলসহ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের জন্য পানি পাচ্ছেন না তারা। প্রত্যন্ত এলাকার মানুষগুলো মূলত ঝিরি, ছড়ার পানির উপর নির্ভরশীল। ছড়ায় ক‚প খনন করে কিংবা পাহাড় থেকে চুইয়ে পড়া পানির মুখে বাঁশ বসিয়ে সেগুলো সংগ্রহ করতো। তবে এখন প্রাকৃতিক উৎসগুলোতে পানি নেই। বর্তমানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোঁটা ফোঁটা পড়া পানিগুলো সংগ্রহ করছেন স্থানীয়রা।
জেলা সদরের ঠাকুরছড়ার দুল্লাতলী এলাকার বাসিন্দা জ্ঞান ত্রিপুরা জানান, আগে গ্রামের পাশে ঝিরি এবং কুয়া থেকে পানি সংগ্রহ করতাম। কিন্তু সেখানে এখন পানি নেই। তাই গ্রামের লোকজন প্রায় দুই কিলোমিটার দূর থেকে পানি সংগ্রহ করে আনেন। একই এলাকার খনিময় ত্রিপুরা বলেন, আমাদের এলাকায় নলক‚প নেই। খাওয়াসহ সংসারের দৈনন্দিন কাজের জন্য ছড়া, কুয়ার পানিই ভরসা।
সারাদিন জুমচাষে ব্যস্ত থাকা জুমিয়ারা এখন দিনের অর্ধেক সময় ব্যয় করছেন পানি সংগ্রহে। এতে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েছে তারা। বৈশ্বিক পরিবর্তন, অতি খরা, অব্যাহতভাবে গাছপালা কেটে ফেলার কারণে প্রাকৃতিক পানির উৎসগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা। কয়েকটি টিউবওয়েল, রিংওয়েল থাকলেও শুরু থেকে সেগুলোও অচল। দীঘিনালার জোড়াব্রিজ এলাকার বাসিন্দা ফাল্গুনি চাকমা বলেন, বর্ষা মৌসুমে পানির গতি কিছুটা বাড়লেও শুষ্ক মৌসুমে পানির গতি একদম কমে যায়। তখন দুর্ভোগের আর শেষ থাকে না। এই সময় অনেকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়।
খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী বলেন, এখনকার নদী-খাল মৃত প্রায়। উজাড় হচ্ছে বন। কারণে অকারণে গাছপালা কাটা হচ্ছে। পুরো জেলায় বয়স্ক বন নেই বললেই চলে। আগে শুষ্ক মৌসুমে পানির সমস্যা থাকলেও এখন বছরজুড়ে খাবার পানির সঙ্কট লেগেই থাকে। সামনে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে। তিনি প্রাকৃতিক পানির উৎসগুলো বাঁচিয়ে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানান।
এদিকে, তীব্র পানির কষ্টে দুর্বিষহ অবস্থায় রয়েছেন কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার হাজার হাজার মানুষ। টিউবওয়েলে পানি পাওয়া যাচ্ছেনা। কোন কোন জায়গায় মিলছে ময়লা, লবণাক্ত ও দুর্গন্ধে ভরা পানি। যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা বাড়তি টাকা খরচ করে বড়ঘোপ মেডিকেল গেইট থেকে গাড়ি করে পানি কিনে এনে চাহিদা মেটাচ্ছেন। তবে, সাধারণ মানুষকে বেশ ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। লেমশীখালী, কৈয়ারবিল, উত্তর ধূরুং এলাকায় রয়েছে সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান এবং উচ্চ ও মধ্যবিত্তের বসবাস। কিন্তু অনেক এলাকাতেই পানির জন্য চলছে হাহাকার। গৃহস্থালীর কাজ ও সুপেয় পানি জোগাড় করতে প্রতিদিনই বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। দ্বীপের উত্তর জোনের চিত্র এটি। প্রয়োজন মেটাতে লাইনে দাঁড়িয়ে লেমশীখালীর আল ফারুক দাখিল মাদরাসার টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করছেন এলাকাবাসী। টিউবওয়েলে পানি না থাকায় প্রতিদিনই কষ্ট পোহাতে হয় তাদের। শুধু লেমশীখালী, কৈয়ারবিল আর উত্তর ধূরুং নয়, পানির এমন সঙ্কট এখন দ্বীপের অনেক জায়গায়। লেমশীখালীর শাহাজির পাড়ায় পানির অভাবে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ।
আজমকলোনীর বাসিন্দারা জানান, প্রতি কলসি পানি ১০টাকা করে কিনে খাওয়া হতো। স্থানীয় চেয়ারম্যানের উদ্যোগে বর্তমানে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানীয় ব্যবস্থা করায় তাদের এ খরচটা আর হচ্ছে না। এমনও সময় গেছে লোকের অভাবে পানি আনতে না পেরে পুকুরের পানিও খেতে হয়েছে। পানির এমন সঙ্কট থেকে রেহাই দিতে শুধু আশ্বাস নয় আজম কলোনীর মতো টিউবেওয়েল বসিয়ে পাইপের মাধ্যমে পানির ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষের কার্যকর উদ্যোগ দেখতে চাইছেন দুর্ভোগের শিকার হওয়া দ্বীপের বাসিন্দারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।