পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনার ভ্যাকসিন অ্যাস্ট্রাজেনেকা দেশে উৎপাদন বা সরাসরি আমদানি ও প্যাকেটজাত করার জন্য উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠান বৃটিশ-সুইডিশ বহুজাতিক ফার্মাসিউটিক্যালকে প্রস্তাব দিয়েছে সরকার। দশ দিন আগে প্রতিষ্ঠানটির কাছে এ প্রস্তাব দিয়ে চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। চিঠিতে অনুরোধ করে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি যাতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রযুক্তি, মূল উপাদান প্রদান অথবা আমদানি ও প্যাকেটজাত করার অনুমতি দেয়। এতে দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদন দ্রুত এবং কমদামে ব্যাপকভাবে প্রয়োগের সুবিধা হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক বলেছেন, দেশে বেশ কয়েকটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির এই ভ্যাকসিন উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় ভ্যাকসিন উৎপাদনে সক্ষম, এমন কয়েকটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি পরিদর্শন করে তাদের সক্ষমতা যাচাই করেছে। ভ্যাকসিনের প্রযুক্তি ও মূল উপকরণ পেলে প্রতিষ্ঠানগুলো সেটি উৎপাদন করতে পারবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভ্যাকসিন বায়োএনটেক-ফাইজার এবং মর্ডানার উৎপাদিত ভ্যাকসিনের মতো মাইনাস ডিগ্রীর তাপমাত্রায় সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই। ২ থেকে ৮ ডিগ্রীর রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ ও বহন করা যায়। ফলে দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন উৎপাদন ও সংরক্ষণে কোনো জটিলতা সৃষ্টি হবে না। উল্লেখ্য, করোনার এই ভ্যাকসিন ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত হচ্ছে। সেখান থেকে আমদানির মাধ্যমে এখানে প্রয়োগ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে ৬ মাসের মধ্যে তিন কোটি ভ্যাকসিন ৬০০ কোটি টাকায় কেনা হয়েছে। জানুয়ারি থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এক কোটি দুই লাখ ভ্যাকসিন পাওয়া গেছে।
দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রস্তাব দেরিতে হলেও নি:সন্দেহে একটি ভাল উদ্যোগ। এই উদ্যোগ আরও আগে নেয়া উচিৎ ছিল। তাহলে অধিক মূল্যে ভ্যাকসিন আমদানির যেমন প্রয়োজন পড়ত না, তেমনি অপেক্ষা এবং অনিশ্চয়তার মধ্যেও থাকতে হতো না। ওষুধশিল্পে আমাদের দেশ এখন অনেক এগিয়ে। বিশ্বের প্রায় শতাধিক দেশে ওষুধ রফতানি হচ্ছে। বেক্সিমকো, এসকেএফ, ইনসেপ্টা, গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বমানের ওষুধ উৎপাদন করে রফতানি করছে। ফলে অ্যাস্ট্রাজেনেকার মতো ভ্যাকসিন দেশে উৎপাদন করা অসম্ভব কিছু নয়। এর প্রযুক্তি ও উপকরণ পেলে তারা তা উৎপাদন করতে পারবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনার শুরুতে কার্যকরি ভ্যাকসিন উৎপাদন এবং বিতরণ নিয়ে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোতে একধরনের রাজনীতি ও প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এর উৎপাদন ও বিতরণ নিয়ন্ত্রণে জোটবদ্ধ হতে দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্র প্রায় নব্বই কোটি ভ্যাকসিন আগাম বুকিং দিয়ে রাখে। এতে ভ্যাকসিন নিয়ে রাজনীতির আভাস পাওয়া যায়। বাস্তবেও তাই দেখা যাচ্ছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বরাবরই ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করে বিবৃতি দিয়ে আসছে। সবার জন্য ভ্যাকসিন প্রাপ্তির নিশ্চয়তার ব্যাপারে উৎপাদনকারী ও প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রতি আহবান জানায়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এই আহবান খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি। এখনও ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রায় শতাধিক দেশ বঞ্চিত রয়েছে। দেশগুলোতে ভ্যাকসিন পৌঁছেনি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার দক্ষতার সাথে ভ্যাকসিন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে চুক্তি করে ধাপে ধাপে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন আমদানি ও প্রয়োগ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে এক কোটির বেশি টিকা এলেও বাকি প্রায় দুই কোটি ভ্যাকসিন সময়মতো পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলে পত্র-পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ভারত সরকার টিকা রফতানির ক্ষেত্রে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় আগামী ৮ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় ধাপের ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু করার ক্ষেত্রে সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এ প্রেক্ষিতে, দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন উৎপাদন, আমদানি এবং প্যাকেটজাত করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সরকারের প্রস্তাব দেয়া ইতিবাচক। প্রতিষ্ঠানটির ১৫টি দেশে ২০টির বেশি সরবরাহকারি সংস্থা এবং যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটিসহ আটটির বেশি দেশে উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট এই ভ্যাকসিন উৎপাদন করছে। এ বিবেচনায় বাংলাদেশ টিকা উৎপাদন ও সরবরাহকারি দেশ হলে টিকা প্রাপ্তি সহজ ও সুলভ হয়ে উঠবে।
দেশে ইতোমধ্যে করোনার কিট এবং ভ্যাকসিন আবিষ্কারের সাফল্যের খবর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিট এবং গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন কার্যকর হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। এতে আমাদের দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতার প্রমাণ পাওয়া যায়। অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন উৎপাদন ও বিতরনে যে তারা সক্ষমতা দেখাতে পারবে তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। প্রয়োজন শুধু এ ভ্যাকসিনের প্রযুক্তি ও উপকরণ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া। আমরা মনে করি, অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন দেশে উৎপাদন, আমদানি ও প্যাকেটজাত করার প্রস্তাব দিয়ে বসে থাকলে চলবে না, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দ্রুত অনুমোদন লাভে জোরদার তৎপরতা চালাতে হবে। প্রস্তাব অনুমোদিত হলে দেশে করোনার ভ্যাকসিন উৎপাদনের স্থায়ী ব্যবস্থা হবে। এতে ভ্যাকসিনের জন্য অন্যদেশের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকার পাশাপাশি বিশ্বের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ভ্যাকসিন উৎপাদনেরও উদ্যোগ নেয়া উচিৎ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।