Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়ার পথে বড় উল্লম্ফন চীনের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০৭ এএম

১৯৭০-এর দশক থেকে চীন বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠতে দৌড়ঝাঁপ করে চলেছে। মহামারী থেকে শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে এ দশকেই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলতে পারে। অথচ ২০০০ সালেও চীনের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) মার্কিন জিডিপির মাত্র ১১ দশমিক ৮ শতাংশ ছিল। ২০০১ সালে চীন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডবিøওটিও) সদস্যপদ লাভ করে। এর পরের ইতিহাসটি বিশ্বের জন্য এক অনন্য মডেল। এক দশকের মধ্যে চীনের অর্থনীতি অভ‚তপ‚র্ব গতিতে বেড়েছে এবং দেশটি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পণ্য রফতানিকারকে পরিণত হয়েছে। খবর বøুমবার্গ। ২০০৭-০৮ সালে বৈশ্বিক আর্থিক মন্দার পর থেকে চীন প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বিশাল অবকাঠামোয় বিনিয়োগ অভিযান চালিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সংকুচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশটি দ্রæত যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ক্ষমতায় আসার আগে চীনের বৃদ্ধি ম‚লত নিয়ন্ত্রিত ছিল। বিশেষ করে বিশ্বজুড়ে চাহিদা হ্রাস এবং বিনিয়োগে আয় কমার কারণে এমনটা হয়েছিল। তবে শি জিনপিং ক্ষমতা গ্রহণের পর চীনের প্রবৃদ্ধির চিত্র পাল্টে যেতে থাকে। প্রতি বছর দেশটির অর্থনীতি স্থিতিশীল বৃদ্ধির সাক্ষী হয়েছে। এমনকি ২০১৬ সালে চীনা মুদ্রার অবম‚ল্যায়ন হলেও দেশটির অর্থনৈতিক অগ্রগতি থামানো যায়নি। এটার সর্বশেষ উদাহরণ কভিড-১৯ মহামারী। মহামারী মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় অর্থনীতিগুলোর লেজেগোবরে অবস্থা হলেও ব্যতিক্রম ছিল চীন। কঠোর হস্তে ও দক্ষতার সঙ্গে মহামারী মোকাবেলা করে এগিয়ে চলেছে দেশটি। মহামারীতে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম থমকে যাওয়ায় এ সুযোগে চীনা পণ্যকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দিয়েছে শি জিনপিংয়ের সরকার। ভাইরাস থেকে দ্রæত পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে দ্রæতগতিতে বৈশ্বিক বাজারে চীনা পণ্যের অংশীদারিত্ব বাড়িয়ে তোলা হয়েছে। গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সময়েও দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে যায় দেশটির রফতানি। কিছু প‚র্বাভাস অনুযায়ী, মহামারীর প‚র্বের প্রত্যাশার চেয়ে দুই বছর আগেই ২০২৮ সালে চীনের অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। যদিও এক্ষেত্রে বেশকিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বার্ধক্যপ‚র্ণ জনসংখ্যা ও ঋণের মিশ্রণের মাধ্যমে চীন দ্বিতীয় স্থানেই থেকে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন। তবে পরবর্তী সময়ে যেটাই ঘটুক না কেন, চীনের এমন সম্ভবনা ওয়াশিংটনের জন্য গভীর উদ্বেগের। দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, মার্কিন অর্থনীতিকে জোরদার করতে তিনি উদ্ভাবন ও অবকাঠামোয় আরো বেশি ব্যয় করবেন এবং তিনি চীনকে ছাড়িয়ে যেতে দেবেন না। তিনি বলেছিলেন, ‘বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশ, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ এবং বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ হওয়ার জন্য সামগ্রিক লক্ষ্য রয়েছে। এক্ষেত্রে আমার কোনো ঘাটতি থাকবে না।’ এরই মধ্যে চীনকে আটকাতে বহুমুখী উদ্যোগ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মাইক্রোচিপের মতো ম‚ল প্রযুক্তিগুলোয় চীনের প্রবেশাধিকার কমানোর জন্য ট্রাম্পের চাপানো পদক্ষেপগুলো দ্বিগুণ করছে বাইডেন। এটি কেবল যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিলেও চীনকে আটকাতে চেষ্টা করা হচ্ছে। জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সম্মিলিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র চীনের প্রভাব সীমিত করার উদ্দেশ্যে একটি ভ‚রাজনৈতিক বøক তৈরি করছে। যদিও বেইজিংকে থামানো সহজ হবে না। শি জিনপিং সরকার ২০৩৩ সালের মধ্যে অর্থনীতির আকার দ্বিগুণ করার উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে জৈব প্রযুক্তি এবং সবুজ অঞ্চলের দিক থেকে শীর্ষস্থানে পৌঁছতে সরকার বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করছে। গত বছরই চীনের ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক প্রভাবের বেশকিছু উদাহরণ দেখা গিয়েছিল। দেশটি প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে, ফরচুনের তালিকায় বিশ্বের বৃহত্তম সংস্থা হিসেবে চীনের সংস্থাগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে গেছে এবং সরবরাহ চেইনের বৈচিত্র্যের হিসাবে বিশ্ববাণিজ্যে চীনের অংশীদারিত্ব রেকর্ড গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে ক্রয়ক্ষমতার দিক থেকে জিডিপি গণনা করলে চীন এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে গেছে। তবুও হতাশাবাদীদের অভাব নেই, যারা ভাবেন যে চীনের প্রবৃদ্ধি থমকে যাবে। তাদের মতে, ঋণের মাত্রা বৃদ্ধির ফলে চীনের অর্থনীতির পতন ঘটবে এবং একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দমন-পীড়ন দেশটির অর্থনৈতিক সচ্ছলতা কমিয়ে আনবে। তবে চীন তাদের প‚র্বাভাস ভুল প্রমাণ করার একটি দীর্ঘ ট্র্যাক রেকর্ডে রয়েছে। জিনপিং প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক মতবিরোধ দমন করেছেন, তবুও গত দশকে অর্থনীতির আকার দ্বিগুণ হয়েছে। বøুমবার্গ।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ