নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
মহান স্বাধীনতা দিবস এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে বিবর্ণ বাংলাদেশের ক্রিকেট। গতকাল ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ভুলের পাহাড় গড়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৪ রানে হারে তামিম ইকবালের দল। যার মাশুল গুণতে হয়েছে নিজেদের ইতিহাসে ১৪তম ও কিউইদের বিপক্ষে ৬ষ্ঠ ‘হোয়াইটওয়াশ’-এর লজ্জা দিয়ে। এরআগে বিশেষ দিবস উপলক্ষ্যে ম্যাচ শুরুর আগে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানানো হয়। ম্যাচের আগে জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় দেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।
এমন প্রহরে কোথায় বাড়তি উদ্দীপনায় উদ্ভাসিত হবেন ক্রিকেটাররা, তা নয়, উল্টো নির্বিষ আর প্রেরণাহীন ক্রিকেট খেললেন তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, সৌম্য সরকাররা। যার ফলসূতিতে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বড় হারও দেখল টাইগাররা। সব ভেন্যু বিবেচনায় নিলে ফিরে যেতে হবে ১৯ বছর আগে। শ্রীলঙ্কায় কলম্বোয় আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ব্ল্যাকক্যাপসরা জিতেছিল ১৬৭ রানে। তাদের ৯ উইকেটে ২৪৪ রানের জবাবে বাংলাদেশ ১৯.৩ ওভারে গুটিয়ে গিয়েছিল মোটে ৭৭ রানে। টস জিতে আগে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ডের ৬ উইকেটে ৩১৮ রানের বিপরীতে ১৫৪ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারিরা। মহামারীকাল পেরিয়ে এবার কিউই সফরের উদ্দেশ্য ছিল হারের বৃত্ত ভাঙা। সেটি তো হলেই না, উল্টো সেটি গিয়ে এখন ঠেকল ২৯-এ।
তবে দিনের শুরুতে বাজে ফিল্ডিংয়ে রান আউট আর সহজ কিছু ক্যাচ মিসের পরও বল হাতে বাংলাদেশের শুরুটা ভালোই এনে দিয়েছিলেন রুবেল হোসেন আর তাসকিন আহমেদ। ১২০ রানেই চার টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে আশা জাগাচ্ছিলেন নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম জয়ের। তবে সেই আশার সলীল সমাধি হয়েছে আরো বেশ কিছু ক্যাচ আর সুযোগ মিসের মহড়ায়। সেই সুযোগে সেঞ্চুরি তুলে নেন ডিন কনওয়ে আর ড্যারিল মিচেল। তাতে বাংলাদেশকে বিশাল লক্ষ্য ছুড়ে দেয় স্বাগতিকরা।
ইনিংসের শেষ বলে দৌড়ে ২ রান নিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম শতক পূর্ণ করা মিচেল অপরাজিত ১০০ রানে। সেঞ্চুরিয়ান মিচেলের তিন তিনটি ক্যাচ মিস করেছে সফরকারীরা। যে ভুলের কারণে স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধ হয়েছে কিউইদের! অবদান আছে মুশফিকেরও। শেষ বলে বল ধরতে না পেরে তাকে রান আউটের সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন বাংলাদেশের কিপার। ছোট ছোট এমন ভুলই যে পরে কাল হয়ে দাঁড়ায় সেটি স্বীকার করেছেন অধিনায়ক তামিমও, ‘অনেক সময় ছোট ছোট বিষয়ও অনেক কষ্ট দেয়। যেমন ক্যাচ মিস। তবে ওদেরও কৃতিত্ব দিতেই হবে।’
বাংলাদেশের হয়ে ৭০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন অভিজ্ঞ পেসার রুবেল। তবে আরেক তরুণ গতি তারকা তাসকিন এক উইকেট পেলেও ছিলেন কিছুটা মিতব্যয়ী, ১০ ওভারে একটি মেডেনসহ দিয়েছেন ৫২ রান। ৩৭ রান দিয়ে এক উইকেট নিয়েছেন ৮ ওভার হাত ঘুরানো সৌম্যও। তবে সবচেয়ে খরুচে ছিলেন মুস্তাফিজ। ১০ ওভারে একটি উইকেট নিতে কাটার মাস্টার দিয়েছেন ৮৭ রান! শুরু থেকেই ভোগাচ্ছিল ফিল্ডিং। হাতছাড়া হয়েছে দুটি সহজ ক্যাচ। কাজে লাগানো যায়নি রান আউটের দুটি সুযোগ। দুর্দান্ত বোলিংয়ে সেই আক্ষেপ ঘুঁচিয়ে দিয়েছেন রুবেল হোসেন ও তাসকিন আহমেদ। পরে উইকেট শিকারের তালিকায় যোগ দিয়েছেন সৌম্য সরকারও।
আগেই দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ খুইয়ে ফেলা তামিমের দলকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়াতে পাড়ি দিতে হত ৩১৯ রানের পাহাড়, গড়তে হত রেকর্ড। এমনিতেই কঠিন টার্গেট, তার ওপর আবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এত রান করার ইতিহাসও নেই বাংলাদেশের। সব মিলিয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর চ্যালেঞ্জটা ছিল কষ্টসাধ্য। কঠিন সেই চ্যালেঞ্জে খেলতে নেমে পুরোপুরি খেই হারায় বাংলাদেশ।
হেনরির তোপে ৭ ওভারের মধ্যে দলীয় ২৬ রানে বিদায় নেন তিন টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার ও লিটন দাস। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়ায় এই ধাক্কা আর সামলে ওঠা হয়নি। নিজেদের ফিরে পেলেন না মোহাম্মদ মিঠুন, মুশফিকুর রহিমদে কেউই। আগের ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা মিঠুন সংগ্রামের ইতি টানেন ৩৯ বলে মাত্র ৬ রান করে। মুশফিকুর রহিম ৪৪ বলে করেন ২১। ৮২ রানে ৭ উইকেট হারানোয় বাংলাদেশের হার হয়ে দাঁড়ায় সময়ের ব্যাপার। তবে নিউজিল্যান্ডের জয়ের অপেক্ষা কিছুটা দীর্ঘ করেন মাহমুদউল্লাহ। ৭৩ বলে ৭৬ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। তার ইনিংসে ছিল ৬ চার ও ৪ ছক্কা। মজার ব্যাপার হলো, ইনিংসের সর্বোচ্চ জুটিটা এল ১০ম উইকেটে এসে—৫২ রান। রুবেল হোসেনের সঙ্গে। এমন অদ্ভুত কিছু বোধ হয় বাংলাদেশের ম্যাচেই দেখা যায়।
১২৬ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে ম্যাচ ও সিরিজ সেরা দুটোই হয়েছেন কনওয়ে। স্বস্তি আর তৃপ্তিমাখা ম্যাচ পরবর্তী আলাপচারিতায় তিনি প্রশংসা করেছেন বাংলাদেশের পেসার তাসকিনের, ‘নতুন বলে তাসকিন সত্যিই খুব ভালো বল করেছে। জানতাম, চাপ সামলে নিতে পারলে শেষদিকে রান বের করতে পারব।’
এই হারের প্রভাব পড়েছে আইসিসি সুপার লিগের পয়েন্ট টেবিলেও। ৬ ম্যাচ খেলে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে ৫ নম্বরে নেমে গেছে বাংলাদেশ। টাইগারদের উপরে থাকা নিউজিল্যান্ড, আফগানিস্তান এবং ইংল্যান্ডের পয়েন্টও সমান ৩০। নেট রান রেটের হিসেবে বাংলাদেশের নিচে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজেরও পয়েন্ট সমান ৩০। এ ছাড়া ২০ পয়েন্ট নিয়ে ৭ নম্বরে পাকিস্তান, ১৯ পয়েন্ট নিয়ে ৮ নম্বরে ভারত এবং সমান ১০ পয়েন্ট নিয়ে যথাক্রমে ৯ ও ১০ নম্বরে রয়েছে জিম্বাবুয়ে এবং আয়ারল্যান্ড। সর্বোচ্চ ৪০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে রাজত্ব করছে অস্ট্রেলিয়া।
সংক্ষিপ্ত স্কোর : টস, নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ড : ৫০ ওভারে ৩১৮/৬ (গাপটিল ২৬, নিকোলস ১৮, কনওয়ে ১২৬, টেইলর ৭, ল্যাথাম ১৮, মিচেল ১০০*, নিশাম ৪, স্যান্টনার ৩*; মুস্তাফিজ ১/৮৭, তাসকিন ১/৫২, রুবেল ৩/৭০, মেহেদি ০/৪৬, মিরাজ ০/২৩, সৌম্য ১/৩৭)। বাংলাদেশ : ৪২.৪ ওভারে ১৫৪ (তামিম ১, লিটন ২১, সৌম্য ১, মিঠুন ৬, মুশফিক ২১, মাহমুদউল্লাহ ৭৬*, মিরাজ ০, মেহেদী ৩, তাসকিন ৯, রুবেল ৪, মুস্তাফিজ ৩; হেনরি ৪/২৭, বোল্ট ০/৩৭, জেমিসন ১/৩০, নিশাম ৫/২৭, মিচেল ০/২৫, স্যান্টনার ০/৭)। ফল : নিউজিল্যান্ড ১৬৪ রানে জয়ী।
সিরিজ : তিন ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ৩-০ ব্যবধানে জয়ী। ম্যাচ ও সিরিজ সেরা : ডেভন কনওয়ে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।