পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত বছর মার্চমাসে শুরু হওয়া করোনা মহামারি সরকারের নানা উদ্যোগ ও জনসচেতনতার মাধ্যমে সহনীয় মাত্রায় চলে আসার পর দেশে আবারো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুহার বেড়ে চলেছে। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউয়ের আক্রমণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি ও উৎপাদন ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। সরকার ও মালিকপক্ষের সমন্বিত উদ্যোগে করোনাকালেও আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড অনেকটা স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হলেও বিশ্ব সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জন করতে না পারায় এসব উদ্যোগের পুরো সুফল পাওয়া যায়নি। আমাদের দেশেও ইতিমধ্যে শত শত গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। লাখ লাখ মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছে এবং রফতানি আয়ে বড় ধরনের বিচ্যুতি দেখা দিয়েছে। এক বছর পেরিয়ে গেলেও দেশের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলা যায়নি। করোনা মহামারির ফলে এটা আমাদের জন্য অনেক বড় ক্ষতি। গত বছরের মাঝামাঝিতে বেশ কয়েকটি করোনা টিকার সাফল্যের সম্ভাবনার মধ্যেও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা করোনাভাইরাসের সামাজিক-অর্থনৈতিক ইম্প্যাক্ট দু’তিন বছর থাকতে পারে বলে মত দিয়েছিলেন। অর্থাৎ করোনা টিকা শুরু হলেও এর ইতিবাচক প্রভাব শুরু হতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। অনেক দেশে এখনো করোনা ভ্যাকসিনেশন শুরুই হয়নি। প্রায় দেড়মাস আগে বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে করোনা ভ্যাকসিনেশন শুরু হলেও এর মন্থর গতি এবং ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা টিকার সুফল প্রাপ্তির সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বছরের প্রথমদিকে দিনে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের হার হাজারের নিচে এবং মৃত্যুহার দুই ডিজিটের নিচে নেমে এলেও এখন তা পৌনে দুই হাজার এবং মৃত্যুর সংখ্যা ২৫-৩০ জনের উর্ধ্বে পৌঁছে যাচ্ছে। অন্যদিকে করোনা টিকা কর্মসূচি চলছে অনেকটা ঢিমে তালে। ভারতের সেরাম ইনস্টিউটের সাথে চুক্তি অনুসারে তিন কোটি টিকা সময়মত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা ইতিমধ্যেই ধূমায়িত হয়ে উঠেছে। আর যদি সময়মত এসব টিকা পাওয়া যায়ও, দেশে ভ্যাকসিনেশন সফল করতে হলে প্রতিজনে দুই ডোজ হিসেবে অব্যাহত ধারাবাহিকভাবে প্রায় ৩০ কোটি ডোজ টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। করোনাভাইরাস ব্যাপক সংক্রামক এবং দুরারোগ্য হওয়ায় ভালনারেবল জনগোষ্ঠির শতকরা ৭৫ভাগ লোকের টিকা গ্রহণ নিশ্চিত হওয়ার আগে এর সংক্রমণ রোধে অন্য কোনো ব্যবস্থা কাজে আসবে না। প্রয়োজনীয় টিকার পর্যাপ্ত মজুদ না থাকলেও দেশে শুরু হওয়া টিকা কর্মসূচিতে এক প্রকার ধীরগতি, অনীহা ও অনাস্থার ভাব দেখা যাচ্ছে। এ জন্য বিদ্যমান অপপ্রচার ও ভুল ধারণার বিপরীতে প্রয়োজনীয় জনসচেতনতামূলক প্রচারণার অভাব রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এক শ্রেণীর মানুষ রেজিস্ট্রেশন করার পর মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও করোনা টিকা গ্রহণের শিডিউল পাচ্ছেন না। আবার অনেকে রেজিস্ট্রেশন করেও বিভ্রান্তি ও অনাস্থার কারণে টিকা নিতে টিকা কেন্দ্রে যাচ্ছেননা। এ বাস্তবতা অপ্রত্যাশিত ও উদ্বেগজনক।
করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলার সক্ষমতা চলমান বিশ্বব্যবস্থায় জাতি হিসেবে সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থান ধরে রাখার অন্যতম মানদন্ড হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এমনিতেই সামাজিক-অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে দেশের জনগোষ্ঠির সুস্বাস্থ্য অনেক বড় ফ্যাক্টর। সেই সাথে একটি বৈশ্বিক মহামারি মোকাবেলার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে দেশের জনগণকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকাদেয়া নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। টিকাদান কার্যক্রম শুরুর প্রায় দেড়মাস পেরিয়ে গেলেও দেশের ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে এককোটি মানুষকেও টিকা দেয়া যায়নি। টিকা কার্যক্রম এভাবে চলতে থাকলে কয়েক বছরেও দেশকে করোনা ঝুঁকিমুক্ত করা সম্ভব হবে না। করোনায় নতুন আক্রান্তদের এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি হারে আইসিইউ সার্পোটের প্রয়োজন হচ্ছে বলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে। এর মানে হচ্ছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমনের তীব্রতা আগের চেয়ে বেশি। কোনো বিকল্প না থাকায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা অপরিহার্য। এর মাধ্যমেই করোনার সামাজিক-অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলার উদ্যোগ নিতে হবে। করোনা ভ্যাকসিনেশন এবং সংক্রমন নিয়ন্ত্রণের বিশ্বাসযোগ্য অগ্রগতির মাধ্যমেই কেবল দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম, বাণিজ্য, শিক্ষা ও সামাজিক কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে করোনা টিকাদান কার্যক্রম সহজ, গতিশীল করার পাশাপাশি অন্য উৎসগুলো থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের ক‚টনৈতিক ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। দেশের মানুষকে প্রাণঘাতী ভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যে রেখে সামাজিক-অর্থনৈতিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখা অসম্ভব। করোনা টিকা কার্যক্রমকে কাঙ্খিত মাত্রায় সফল করতে হলে সব ধরনের জটিলতা নিরসনসহ সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করতে হবে। সাধারণ মানুষকে টিকা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করাসহ এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জনসচেতনতা সৃষ্টির কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।