Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ মার্চ, ২০২১, ২:০৭ পিএম | আপডেট : ২:১৬ পিএম, ১৬ মার্চ, ২০২১

রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজটে আটকে আছে যানবাহস। যত দূর চোখ যায় শুধু থেমে থাকা সারি সারি যানবাহন। বাসের সারির মধ্যে ফাঁক পেয়ে মোটরসাইকেল চালকরা সামনে যাওয়ার চেষ্টা করেও পারছেন না। জটের মধ্যেই একাধিক অ্যাম্বুলেন্স দ্রুত সামনে ছুটতে শব্দ করেই চলেছে। কিন্তু গাড়ির জট খুলছে না।
মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টা থেকেই রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে এমনই চিত্র দেখা গেছে। ট্রাফিক কন্ট্রোলরুম সূত্র জানায়, সকালে তেজগাঁও এলাকায় গার্মেন্টসকর্মীরা রাস্তা অবরোধ করলে যানজটের সূচনা হয়। সেই যানজটের প্রভাব পড়েছে পুরো রাজধানীতেই।
মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানের কারণে ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত ১০ দিন রাজধানীতে যানজটের আশঙ্কার কথা আগেই জানিয়ে রেখেছে পুলিশ। এসময়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজন থেকে বিরত থাকতেও পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া জনসাধারণকে চলাচল সীমিত করতে অনুরোধ করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)।
কিন্তু নির্দিষ্ট দিনের আগেই রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। সকাল থেকে প্রগতি সরণীর বাড্ডা, কুড়িল, রামপুরায় গাড়ি চলছে থেমে থেমে। অন্যদিকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজটের তীব্রতা বাড়তে থাকে উত্তরা-বিমানবন্দর সড়কে। একই চিত্র মোহাম্মদপুর, গাবতলী, মিরপুর সড়কেও। এছাড়া বিজয় সরণী, ফার্মগেট, শাহবাগ, পল্টন ও মতিঝিল সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগিরা জানিয়েছেন, মেট্রোরেলের একাধিক প্রকল্পের কাজ, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের জন্য আগে থেকেই কিছু রাস্তা বন্ধ বা কাটা ছিল। সেকারণে সড়কগুলোতে গাড়ির জট সৃষ্টি হয়েছে। তবে ট্র্যাফিক পুলিশ বলছে, আগের চেয়ে গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে যানজট হচ্ছে।
প্রগতি সরণী সড়কটিকে রাজধানীর তুলনামূলক কম যানজটপূর্ণ এলাকা মনে করা হয়। কিন্তু এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা গত তিন দিন ধরে ব্যাপক যানজটে পড়েছেন। এ কারণে দীর্ঘ সময় লাগছে গন্তব্যে পৌঁছাতে।
পুলিশের ট্রাফিক গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, মেট্রোরেলের কাজের কারণে গত দুই দিন ধরে বাড্ডা এলাকার সড়কগুলো ছোট হয়ে এসেছে। মেট্রোরেলের শ্রমিকরা সড়কের প্রতিটি লেনের ১০ মিটারের মতো জায়গা ব্যবহার করছে, যার কারণে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে এবং যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া যানজটের অন্য কোনো কারণ নেই।
মহাখালী ফ্লাইওভারে সৃষ্ট যানজটে আটকে থাকা মোটরসাইকেল চালক জামাল হোসেন বলেন, শাহবাগ থেকে জট ঠেলে এখানে এসেও আটকে পড়তে হলো। অথচ এখানে এত বেশি যানজট হয়নি গত কয়েকদিনে। শিকড় পরিবহনের বাস চালক বাবুল মিয়া বলেন, সকাল ৮টায় শাহবাগে পৌঁছাই। সেখান থেকে ফার্মগেট হয়ে বিজয় সরণী অংশ পার হতে দেড় ঘণ্টা লেগেছে। বিজয় সরণীতে দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশ সদস্য মো. কবীর বলেন, গাড়ির চাপ বেড়ে গেছে, তাই জট লেগে গেছে।
এদিকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শাহবাগ হয়ে পল্টন ও মতিঝিল যেতে পড়তে হচ্ছে তীব্র যানজটে। মৎস্য ভবন এলাকায় দায়িত্বে থাকা এসআই রাজিব হাসান বলেন, আমি কোর্টে ছিলাম। রাস্তায় যানজট বেড়েছে। আমার আওতাধীন এলাকায় যানজটের মূল কারণ ভিআইপিদের আগমন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক কাজ।
বেলা ১১টায় উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে বনানীমুখী গাড়ির চাকা আর নড়েনি। প্রায় এক ঘণ্টা এমন অচলাবস্থা ছিল। যাদের অফিস আশপাশে তারা বাস থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেন। ভুক্তভোগীরা জানান, মূলত যানজট শুরু হয়েছে সকাল সোয়া ৯টার দিকে। এরপর বাড়তে থাকে। এখন তা অসহনীয় পর্যায়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে হেঁটে রওনা হচ্ছেন তারা।
প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে যানজটে বনানীতে আটকে থাকা নির্মল কুমার নামের এক যাত্রী জানান, ফার্মগেটে আরও ঘণ্টাখানেক আগে পৌঁছে যেতাম। কিন্তু অদৃশ্য যানজটের কবলে পড়ে অসহায়ের মতো বসে আছি। জরুরি কাজে বের হয়েছি। কিন্তু কী আর করা। দুই-চার কিলোমিটার হলে তো হেঁটেই যেতাম।
সরেজমিনে মিরপুর-১০ গোল চত্বরে দেখা যায়, এ এলাকায় সকাল থেকে তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। এ সড়কে চলাচলকারী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিরপুর সড়কে যানজট লেগেই থাকে, বিশেষ করে অফিসে যাওয়ার সময় সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে। আবার বিকেলেও যানজট থাকে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এ সড়কে যানজটের প্রধান কারণ মূলত চারটি- গুরুত্বপূর্ণ চারটি সড়ক এখানে মিলেছে, গাড়িগুলো দ্রুত বের করার ব্যবস্থা নেই, যানবাহনের এলোমেলো চলাচল ও মেট্রোরেলের কাজের কারণে অর্ধেকের বেশি রাস্তা বন্ধ রয়েছে এবং সর্বশেষ সড়কে ওপর বিভিন্ন যানবাহন পার্কিং করে রাখা।
তারা জানিয়েছেন, এক-দেড় মাস আগে আগারগাঁও এলাকা থেকে রাস্তার দুই পাশে মেট্রোরেল প্রকল্পের অংশ হিসেবে বিদ্যুতের তার স্থানান্তরের কাজ শুরু হয়। এ কারণে রাস্তার মাঝে খুঁটি লাগিয়ে রাস্তা কাটা হচ্ছে। এতে রাস্তার আয়তন কমে গেছে। এ রাস্তা দিয়ে আগে যে গতিতে গাড়ি চলেছে, সেই গতিতে এখন গাড়ি চলতে পারে না। এতে অনেক সময় যানজট তৈরি হয়।
মিরপুর-১০ গোল চত্বরের ফুটপাতে জুতা বিক্রি করেন শামীম। তিনি বলেন, এ এলাকায় মূল সমস্যা মেট্রোরেল। এরপর ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা তো রয়েছে। তিনি জানান, সকালে ও বিকেলে অফিসে আসা যাওয়ার সময় মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়তে হয় মিরপুরবাসীকে।

এ এলাকায় যানজট আগেও ছিল। মেট্রোরেলের কাজের কারণে সমস্যা কিছুটা বেড়েছে। তবে এটিই যানজটের একমাত্র কারণ নয়।



 

Show all comments
  • Anwar+Hossain ১৬ মার্চ, ২০২১, ৫:১৮ পিএম says : 0
    Oh ! !! !!! ...........!!!!!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যানজট

১৯ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ