Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মৌমিতা পারলেন না ইঞ্জিনিয়ার হতে

শিক্ষার্থীর মৃত্যু এখনও অন্ধকারে

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০২১, ১২:০১ এএম

মা-বাবার স্বপ্ন ছিল মেয়ে লেখাপড়া করে ইঞ্জিনিয়ার হবে। সেভাবেই দেশের বাইরে মালয়েশিয়ায় লেখাপড়া চলছিল মেয়ে তাজরিয়ান মোস্তফা মৌমিতার (২০)। কিন্তু পরিকল্পিত হত্যাকান্ডে শিকার হওয়ায় পরিবারের স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্ন হয়ে গেল। এশিয়ান প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির (এপিইউ) কুয়ালালামপুর শাখায় বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (আইটি) দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী মৌমিতা গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ধানমন্ডির বাসার ছাদ থেকে নিচে পড়ে মারা যায়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা কলাবাগান থানায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার এবং একজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এখনও অন্ধকারে। গতকাল পর্যন্ত মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক ঠাকুর দাস বলেন, নিহতের ঘটনায় সন্দেহজনকভাবে আমির হামজা আদনানকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তী সময়ে তাকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে, আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মৌমিতার বাবা গত ১ মার্চ একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর আদনানকে ওই হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদনসহ পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারক দুইদিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
তিনি বলেন, মামলার তদন্তে দেখা গেছে মৌমিতার সঙ্গে আসামি আদনানের সম্পর্ক ছিল। নিহত হওয়ার এক সপ্তাহ আগে মৌমিতার সঙ্গে আদনানের সম্পর্ক ছিন্ন হয়। মৌমিতা ও আদনানের ফোন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তারপরেও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। মৌমিতা কি নিজেই আত্মহত্যা করেছে, নাকি তাকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে, বিষয়টি তদন্ত শেষে বেরিয়ে আসবে। এ জন্য সময়ের প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, এ মামলার এজাহারে আদনান, ফাইজারসহ আরও কয়েকজন ব্যক্তির কথা উল্লেখ রয়েছে। মৌমিতা যে বাসায় ছিল ওই বাসা ফাইজারদের। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে তেমন কোনো তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়নি। তারপরেও সে নজরদারিতে রয়েছে। আর আদনান তো রিমান্ডে আছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা যাবে, এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে কে জড়িত।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় গত ২৭ ফেব্রæয়ারি কলাবাগান থানা পুলিশ আমির হামজা আদনান নামে একজনকে গ্রেফতার করে। এরপর তাকে এই হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানোসহ পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৯ মার্চ আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর পড়ালেখার জন্য মা-বাবাসহ মালয়েশিয়ায় চলে যান মৌমিতা। কিন্তু করোনার কারণে গত বছরের ১৮ জুন দেশে আসেন। দেশে এসে ধানমন্ডির ওই বাসাটিতে ওঠেন। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশে আসার পর থেকে ফাইজার বিভিন্ন সময় মৌমিতাকে উত্ত্যক্ত করত। ফাইজারের পরিবারকে এ বিষয়ে একাধিকবার অভিযোগ করা হলেও তারা কোনো প্রতিকার করেনি। উল্টো এ বিষয়ে ফাইজারের পরিবার ছেলের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছে।
মৌমিতার ফুপু শাহনেওয়াজ খানম সাংবাদিকদের বলেন, মৌমিতাকে ছাদে কিংবা সিঁড়িতে একা পেলেই ফাইজার তার বন্ধুদের নিয়ে উত্ত্যক্ত করত। ঘটনার দিন বিকেল ৪টায় মৌমিতা যখন ছাদে ওঠে তখন ফাইজার ও তার বন্ধুরা ছাদের গেট (দরজা) আটকে দেয় বলে আমরা জানতে পেরেছি। এরপরই মৌমিতার লাশ পাওয়া যায়। এছাড়া আশপাশের অনেক ভবনের লোকজন দেখেছিল, ঘটনার দিন বিকেল ৪-৬টা পর্যন্ত ছাদে অনেক লোকজন ছিল। কিন্তু পুলিশ ফাইজারকে আটক না করে তার বন্ধুকে আটক করেছে। ফাইজারকে আটক করলে সব তথ্য পাওয়া যাবে।
মৌমিতার পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, দুই মেয়েকে নিয়ে মালয়েশিয়ায় থাকতাম তার পরিবার। তারা সেখানে পড়ালেখা করত। মৌমিতার মা পুলিশকে জানিয়েছেন, তার তিন মেয়ে। বড় মেয়ে ডাক্তারি পড়াশোনা করে। মেজো মেয়ে মৌমিতা মালয়েশিয়ায় ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিল। আর ছোট মেয়ে ওলেভেলে পড়ালেখা করে। মেঝো ও ছোট মেয়েকে নিয়ে আমি মালয়েশিয়ায় থাকেন। তার মেয়ের কারোর সঙ্গেই শত্রæতা ছিল না।
এজাহারে বলা হয়েছে, করোনার কারণে গত বছরের ১৮ জুলাই দেশে ফিরে আসে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মৌমিতা একা বাসার ছাদে ঘুরতে যান। মৌমিতাকে বাসায় দেখতে না পেয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন সে ছাদে আছে। মৌমিতাকে দ্রুত ছাদ থেকে বাসায় ফিরে আসতে মেসেজ দেন। সে মেসেজ পেয়ে উত্তরে আসছি বলে তার বাবাকে মেসেজ পাঠায়। এরপরও মৌমিতা ছাদ থেকে ফিরে না আসায় বিকেল আনুমানিক ৪টা ৪৫ মিনিটে তার বাবা বাসার কাজের ছেলে মুজাহিদকে ছাদে পাঠায়। একটু পরে সে ফিরে এসে জানায়, ছাদে যাওয়ার দরজা ভেতরের থেকে আটকানো। তাই সে ছাদে যেতে পারেনি। তবে দরজার ভেতরে অর্থাৎ ছাদে অনেকের হইচই ও খেলাধুলা করার শব্দ শুনতে পেয়েছে।
মৌমিতার বাবা পূর্বনির্ধারিত অফিসিয়াল কাজে বাসা থেকে বের হয়ে যান। কাজ শেষে ৬টা ১৭ মিনিটে মৌমিতার খোঁজ নেয়ার জন্য ম্যাসেঞ্জারে কল দিলেও মৌমিতা রিসিভ করেনি। এর কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা ৬টা ২২ মিনিটে স্ত্রীর ম্যাসেঞ্জার থেকে ছোট মেয়ে তাকে কল করে চিৎকার ও কান্নাকাটি করেন। দ্রুত গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যেতে বলেন। সেখানে এসে মৌমিতাকে অচেতন অবস্থায় স্ট্রেচারের ওপরে দেখেন। কিছুক্ষণ পর ৬টা ৩২ মিনিটে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টায় ধানমন্ডির ৮ নম্বর রোডের বাসার ছাদে ওঠেন মৌমিতা। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিল্ডিংয়ের পেছনের গলিতে তাকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। উদ্ধার করে গ্রিন রোডের গ্রিন লাইফ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি ময়নাতদন্ত শেষে মৌমিতার লাশ মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়।



 

Show all comments
  • মোঃ তোফায়েল হোসেন ১৩ মার্চ, ২০২১, ৮:৪৩ এএম says : 0
    বিষয়টি তদন্ত করা দরকার।
    Total Reply(0) Reply
  • বারেক হোসাইন আপন ১৩ মার্চ, ২০২১, ৮:৪৩ এএম says : 0
    মা-বাবার একটা স্বপ্ন বিদায় নিলো অকালে।
    Total Reply(0) Reply
  • জোহেব শাহরিয়ার ১৩ মার্চ, ২০২১, ৮:৪৪ এএম says : 0
    িইঞ্জিনিয়ার না হতে পারাটা বড় ব্যর্থতা নয়, বড় ব্যর্থতা হচ্ছে পরকালের জীবনের জন্য পাথেও সংগ্রহ না করা।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৃত্যু


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ