Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০২১, ১২:০২ এএম

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার স্বীকৃতি পেয়েছে, যা কার্যকর হবে ২০২৬ সালে। তার পর নিয়ম অনুযায়ী আরও ৩ বছর এলডিসি দেশের সুবিধা পাবে। বাংলাদেশের এই অর্জন স্বাধীনতাত্তোর থেকেই ধারাবাহিকভাবেই হয়েছে। হয়তবা সময় ভেদে কিছু কম-বেশি হয়েছে। এ কৃতিত্বের বড় অংশীদার অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এ উপলক্ষে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘বাংলাদেশ গত ২৬ ফেব্রুয়ারি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পূর্ণ যোগ্যতা অর্জন করেছি। সমগ্র জাতির জন্য এটা অত্যন্ত আনন্দের এবং গর্বের। বাংলাদেশের জন্য এ উত্তরণ এক ঐতিহাসিক ঘটনা। এ কৃতিত্ব এ দেশের জনসাধারণের। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই মাইলফলক অর্জন করতে পেরেছি। আমাদের এ অর্জনকে সুসংহত এবং টেকসই করতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন, ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চমধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের জন্য এটি একটি বিশেষ ধাপ’।

উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি দেশের জন্য অত্যন্ত গর্বের, আনন্দের। মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকালে এটা এক বিশাল অর্জন। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ‘বাংলাদেশ ইজ বিকামিং সাউথ এশিয়াজ ইকোনমিক বুল কেস’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় চীন, ভিয়েতনাম এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় বিভিন্ন পর্যায়ে যে সফল উন্নয়ন মডেল দেখা গেছে, বাংলাদেশ তাদের খুব কাছাকাছি’। জাতিসংঘ, বিমসটেক ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান অভিনন্দন জানিয়েছে বাংলাদেশের এই উত্তরণে।

উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার স্বীকৃতির কারণে বাংলাদেশের বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ও আঞ্চলিক জোটগুলোতে মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। উপরন্তু বহুপক্ষীয় বা দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ক্ষেত্রে অধিক মূল্যায়ন করা হবে। অবশ্য, উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পর দেশের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জও রয়েছে, যেমন, বিদেশি আর্থিক অনুদান, স্বল্প সুদে ঋণ, শুল্কমুক্ত, কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা ইত্যাদি বন্ধ হবে। ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরে মেধাস্বত্ব আইনের শিথিলতা থাকবে না। অভ্যন্তরীণ বাজারে রফতানি প্রণোদনা বা ভর্তুকিসহ বিভিন্ন মেধাস্বত্ব আইনের ক্ষেত্রে যেসব নীতি সহায়তা দেয়া আছে, তা থাকবে না। এসব অন্য উন্নয়নশীল ও ধনী দেশের মতোই হবে, যা খুবই চ্যালেঞ্জিং। তাই স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়া দেশগুলোর মধ্যে অনেক দেশ সফল হতে পারেনি। উপরন্তু ফাটা বাঁশে আটকা পড়েছে। যেমন: স্বল্পোন্নত দেশ হতে এ পর্যন্ত মালদ্বীপসহ পাঁচটি দেশ বের হয়েছে। তন্মধ্যে বোতসোয়ানা ও ইকোইটোরিয়াল গিনি শুধু মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ করে এলডিসি থেকে বের হয়েছে। অন্য দুটি সূচকে কখনই নির্ধারিত মান অর্জন করতে পারেনি। আবার মালদ্বীপ, সামোয়া ও কেইপ ভার্দে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে মান অর্জন করতে পারেনি’।
কিন্তু বাংলাদেশের সে অবস্থা হবে না। সফল হবেই। কারণ, এ দেশের মানুষের ইতিহাস সংগ্রামে জয়ী হওয়ার ইতিহাস। উপরন্তু এ দেশের মানুষ দারিদ্র্য, খরা, বন্যা, জ্বলোচ্ছ¡াস, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব, করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন প্রতিক‚লতা অত্যন্ত সফলতার সাথে মোকাবেলা করেই সামনের দিকে এগিয়েছে। কখনোই পিছপা হয়নি। এছাড়া, এ দেশের ভূমি খুবই উর্বর ও প্রয়োজনীয় মিঠা পানি রয়েছে, যা ব্যাপক শস্য উৎপাদনের জন্য খুবই অনুকূল। সর্বোপরি এ দেশের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ যুব সম্প্রদায়। এরা সকলেই খুবই উদ্যমী, সাহসী, কর্মঠ। তাদের অর্ধেকের বেশি শিক্ষিত। উপরন্তু বয়স্ক মানুষও কর্মঠ। নারীর ক্ষমতায়নের হারও ভাল। তাই উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পর চ্যালেঞ্জ যত কঠিনই হোক, তা মোকাবেলা করতে সক্ষম এ দেশের মানুষ। অবশ্য তার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে এখন থেকেই। অন্যদিকে করোনা মহামারির ভয়াবহ ক্ষতও মোকাবেলা করতে হচ্ছে, যার রেশ চলবে কয়েক বছর। উপরন্তু এসডিজি বাস্তবায়নেও সফল হতে হবে। এসডিজির মেয়াদকাল ২০১৬-৩০ সাল। তাই এর কার্যক্রম চলছে। আর উন্নয়নশীল দেশের কার্যকারিতা শুরু হবে ২০২৬ সাল থেকে। অবশ্য জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী কোনও দেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ার পরও তিন বছর পর্যন্ত বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত থাকে। তাই ২০২৯ সাল পর্যন্ত এলডিসিভুক্ত দেশের সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সরকার বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে চিঠির মাধ্যমে বলেছে, ‘করোনা মহামারীর কারণে বৈশ্বিক সংকট দীর্ঘায়ত হওয়ায় উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পরও যেন বাণিজ্য সুবিধাগুলো আরও ১২ বছর অব্যাহত রাখা হয়’। এলডিসি গ্রুপের ৩৬ দেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় দাবি জানিয়েছে, ‘যে দেশই এলডিসি থেকে গ্র্যাজুয়েট করুক না কেন, তাদের অতিরিক্ত ট্রানজিশন পিরিয়ড দিতে হবে’। এসব আবেদন বিবেচিত হবে কি-না, জানা যায়নি। তবে, এলডিসি দেশের সুবিধা ২০২৯ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে তা নিশ্চিত।

বর্ণিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশবাসী সক্ষম ও প্রস্তুত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রধান করণীয় হচ্ছে সরকারের। কারণ, উক্ত দু’টি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য দেশে সুশাসন ও সকল কর্মের জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা, স্থিতিশীলতা সৃষ্টি, প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা নিখুঁতভাবে বাস্তবায়ন, প্রতিটি কর্মই নির্দিষ্ট সময়ে, অর্থে ও মানে সম্পন্নকরণ, অপচয়, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অর্থপাচার, মাদক, দূষণ, চাঁদাবাজি, দখলবাজী, ভেজাল, মজুদদারি, দূষণ, অনুৎপাদনশীল খাতের ব্যয় ইত্যাদি বন্ধ করতে হবে। এছাড়া, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণ, সব নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকৃত গণ প্রতিনিধি নির্বাচন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, সার্বজনীন শিক্ষা, কর্মমুখী শিক্ষা চালু, শিক্ষার মানোন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি, সার্বজনীন সুচিকিৎসা, দারিদ্র্যমুক্ত, আয় বৈষম্য, দারিদ্র ও বেকারত্ব দূর করতে হবে। এসব কাজের এখতিয়ার সরকারের। তাই এসব করতে হবে সরকারকেই। উপরন্তু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশবাসীকে অনুপ্রাণিত করা, কাজে উদ্বুদ্ধ করা, মানুষের কাজের সব প্রতিবন্ধকতা দূর করা, মানুষকে উন্নয়নমুখী কর্মে সম্পৃক্ত করা ও বেসরকারি খাতকে পূর্ণভাবে সহায়তা করার দায়িত্বও সরকারের। উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার খুশিতে শুধুমাত্র টগবগ করলেই চলবে না, এর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আরও উন্নতি করার জন্য প্রয়োজনীয় কাজগুলো করতে হবে যথাসময়েই এবং নেতৃত্ব দিতে হবে সরকারকেই।

উন্নয়নশীল দেশের কার্যকারিতা শুরু হওয়ার পর বিদেশি অনুদান বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া, ঋণ গ্রহণ করতে হবে চড়া সুদে ও কঠিন শর্তে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণ পাওয়াও কঠিন হবে। তাই উন্নয়ন কর্ম ও জলবায়ুর প্রভাব মোকাবেলা নিজস্ব অর্থ দিয়েই করার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। সে জন্য সরকারি আয় বৃদ্ধি করতে হবে। যার প্রধান হচ্ছে, কর। করের আওতা বৃদ্ধি ও করযোগ্য সব কর আদায় করে কর-জিডিপির হার উন্নয়নশীল অন্য দেশের সমান করতে হবে। এ দায়িত্বও সরকারের। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার দায়িত্ব মূলত সংশ্লিষ্ট পণ্য উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীদের। আর সরকারের কর্ম সহায়তা করা। বাণিজ্যে সফলতার জন্য প্রতিটি পণ্যের মান ও মূল্য বৈশ্বিক পর্যায়ের হতে হবে। এ জন্য সব পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যয় কমানোর জন্য সব উৎপাদন কেন্দ্রকে আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর করা, দক্ষ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা, দক্ষ জনবল নিয়োগ ও অপচয়-দুর্নীতি বন্ধ করা দরকার। বৈশ্বিক সুবিধাসমূহ এবং দেশের অভ্যন্তরীণ ভর্তুকি, প্রণোদনা ও মেধাস্বত্ব সহায়তা বন্ধ হলে দেশের পণ্য মূল্য ব্যাপক বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে ওষুধের মূল্য। সেটা হলে তার ব্যাপক প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের উপর। রফতানিও অনেক হ্রাস পেতে পারে। রফতানি পণ্য, বিশেষ করে গার্মেন্ট খাত অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। আইটি পণ্যেরও রফতানি হ্রাস পেতে পারে। এভাবে দেশের মোট রফতানি বছরে ৫৩৭ কোটি ডলার হ্রাস পেতে পারে বলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার অভিমত। এই অবস্থায় রফতানি বহুমুখীকরণ করে দেশীয় কাঁচামালভিত্তিক পণ্য তথা কৃষি পণ্য রফতানি বৃদ্ধির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। রফতানি বৃদ্ধিতে বৈচিত্র্যও আনতে হবে। ‘হেক্সা রিসার্চে’র মতে, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক হালাল পণ্য ও সেবা বাজারের আকার দাঁড়াবে প্রায় ১২.১৪ ট্রিলিয়ন ডলার। এই বিশাল সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে হবে। উপরন্তু হাইকোয়ালিটি গার্মেন্ট রফতানির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। পশ্চিমা দেশগুলোতে এর ডিমান্ড অত্যধিক। অবশ্য, ইউরোপীয় কমিশন শ্রমিক বান্ধব ও মানবাধিকার রক্ষা সংক্রান্ত ২৭টি শর্ত পালন করলে বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাস সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছে।এতে সরকার রাজী হয়েছে। তাই শ্রম আইন সংশোধন করার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। এটা চূড়ান্ত হয়ে বাস্তবায়ন শুরু হলেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি প্লাস পাওয়া যাবে।ফলে ঐ বিশাল বাজারে(দেশের মোট রফতানির ৬০%) বাংলাদেশের রফতানি বহাল থাকবে। তাই দুঃশ্চিন্তার কারণ নেই। অবশ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের উক্ত দাবিসমূহ বাস্তবায়নের কারণে দেশের কিছু শিল্প-কারখানা কিছু ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তবুও সেটি করতেই হবে। রফতানির নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করে কাজে লাগাতে হবে। বাণিজ্য বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন দেশের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে। কৃষিতে ভর্তুকি ও প্রণোদনা প্রদান বন্ধ হয়ে গেলে কৃষির উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে খাদ্য দ্রব্যের মূল্য অনেক বেড়ে যেতে পারে।তাই কৃষিকে সম্পূর্ণরূপে যান্ত্রিকরণ, সর্বত্রই উচ্চ ফলনশীল বীজ ব্যবহার, শস্য বহুমুখীকরণ, পানি, সার ও কীটনাশকের অপব্যবহার রোধ, চাষের সব জমিকে সেচের আওতায় আনা, সব সেচ মেশিন বিদ্যুৎ চালিত করতে হবে। সব কৃষিপণ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে অপচয় ও পচন বন্ধ হবে। অর্গান ফুডের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এসব হলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। ব্যয়ও অনেক হ্রাস পাবে। ফলে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি রোধ হবে। সর্বোপরি দেশের অনাবাদী সব জমিতে ফসল ফলাতে হবে। তাহলে খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। নদী ভাঙ্গনও রোধ করতে হবে। কারণ, নদী ভাঙ্গনে অনেক ফসলি জমি বিলীন হয় যায় প্রতি বছরই। সর্বোপরি কৃষিযন্ত্র সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় দক্ষ (সংযোজন, চালনা ও মেরামত) লোক তৈরি করা দরকার। ভর্তুকি উঠে গেলে জ্বালানি, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সব সেবা খাতেও ব্যয় বেড়ে যেতে পারে অনেক। এ অবস্থায় বৈদ্যুতিক যান ব্যবহার বৃদ্ধি (সৌর বিদ্যুৎ হলে বেশি ভালো হয়) ও রোগ প্রতিরোধ হিসাবে দূষণ, খাদ্যে ভেজাল ও রাসায়নিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। সমদ্র সম্পদকে কাজে লাগাতে হবে।

উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পর জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিজনিত সাধারণ মানুষ যেন সংকটে না পড়ে, সে জন্য ব্যয়বৃদ্ধির তুলনামূলক হারে তাদের আয়বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে। একইভাবে সামাজিক সুরক্ষার আর্থিক পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। সে সাথে এর পরিধিও বৃদ্ধি করতে হবে। নতুবা সাধারণ মানুষ চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। নতুন পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে দেশবাসীকে। স্মরণীয় যে, গত জুন পর্যন্ত দেশের প্রতিটি মানুষের গড় বৈদেশিক ঋণের পরিমাণপ্রায় ২৩.৫ হাজার টাকা, যার মোট পরিমাণ জিডিপির প্রায় ১৬%। এছাড়া, অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণও বিপুল সরকারের। এছাড়া, করোনাকালে দারিদ্র বেড়ে ৪২% হয়েছে। আর অতি ধনী হওয়ার দিকে বাংলাদেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে গত তিন বছর। ফলে দেশে আয় বৈষম্য বিপদসীমায় পৌঁছেছে! সর্বোপরি আইএমএফের ২০১৯ সালে তৈরি তথ্য অনুযায়ী, পিপিপিতে মাথাপিছু জিডিপি অনুসারে ১৯১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৪৩তম (৫,০২৮ ডলার)। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোনমিক কমপ্লেক্সিটি বা উৎপাদন সক্ষমতার সূচকে ১৩৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০৮তম। অথচ, ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের অবস্থান এর চেয়ে ভালো ছিল। গণতন্ত্রও ভঙ্গুর। ফ্রিডম হাউসের ‘ফ্রিডম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড ২০২১ ডেমোক্রেসি আন্ডার সিজ’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, গত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা সংকুচিত হওয়া দেশগুলোর তালিকায় ৭ নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ। এবার বাংলাদেশের স্কোর ৩৯ ও ‘আংশিক মুক্ত’ দেশের কাতারভুক্ত। এসব আলোর নিচে ঘোর অন্ধকার দূর করতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ


আরও
আরও পড়ুন