বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাতের কব্জি হারানো ফাল্গুনী মনের অদম্য যোরে কনুই দিয়ে লিখে এসএসসি ও এইচএসসি’তে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করে এখন ব্র্যাক কর্মকর্তা। ইতোমধ্যে তার তার জীবন থেকে পিতাও চলে গেছেন। ২০০২ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই হাতের কনুই পর্যন্ত পুড়ে যায় ফাল্গুনীর। মেয়ের ভাল চিকিৎসার জন্য কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে হাতের পচন ঠেকাতে চিকিৎসকগন হাতের কব্জি কেটে ফেলেন। সুন্দর ফুটফুটে ফাল্গুনীর জীবনে অমানিশার ঘোর অন্ধকার নেমে এলেও সে থেমে থাকেনি।
কাগজ-কলম দেখলে মন খারাপ হলেও দুই হাতের কনুইয়ের মাঝখানে কলম রেখে লেখার কৌশল আয়ত্ত করে পরের বছর তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হয় ফাল্গুনী। মনের যোর আর অধ্যবসায় গলাচিপা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি লাভের পরে তার মনের যোর আরো বেড়ে যায়। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় ফাল্গুনী সাহা।
কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কিছুদিনের মধ্যেই বাবা মুদি দোকানী জগদীশচন্দ্র সাহার মৃত্যু ফাল্গুনীর জীবনে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় ডেকে আনে। ফলে লেখাপড়ার পাশাপাশি মিষ্টির বাক্স তৈরি করে কোনো মতে সংসার চালাত ফাল্গুনী সাহা।
তবে সে হার মানেনি। অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে পড়াশোনা নিয়েই টিকে ছিল ফাল্গুনী। পঙ্গুত্বের শুরুতে কলম ধরে লেখার ক্ষেত্রে এলোমেলো হয়ে যেত লাইন। কলম ধরতে ধরতে এক সময় হাতে ইনফেকশনও হয়েছিল। তবে খুব শীঘ্রই লেখা আয়ত্তে চলে আসে। ফাল্গুনী সাহা সাংবাদিকদের জানিয়েছে, এইচএসসি ফলাফলের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার কোচিং এর সময় ফার্মগেটে কিছুদিন ছিল সে। পরে সূত্রাপুর ও লালবাগে দুই আত্মীয়ের বাসায় থাকত। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে।
শুরুতে টিউশনি করে লেখাপড়ার খরচ চলত। টিউশনি চলে যাওয়ার পর চরম অর্থকষ্টে কাটে কিছুদিন। এলাকার এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে ‘মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’এর প্রতিষ্ঠাতা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী চন্দ্র নাথের সঙ্গে যোগাযোগ হলে সেখান থেকে বৃত্তির ব্যবস্থা হয়। অনার্স শেষ হলো ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগিতায়। কিন্তু মাস্টার্স শেষে কী হবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিল ফাল্গুনী।
এর মধ্যেই গত ১৭ অক্টোবর তার জীবরে একটি ভাল খবর আসে। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকে হিউম্যান রিসোর্স অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ফাল্গুনীকে । ব্র্যাক গাজীপুরে কর্মরত এসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার কামরুল হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ফাল্গুনী সাহা দুই হাত হারিয়ে বসে থাকেনি। অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে অনেক দুর নিয়ে এসেছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে ব্র্যাক-এর মত প্রতিষ্ঠানে তার চাকরির সুযোগ হয়েছে ফাল্গুনীর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।