পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
সউদীর সাংবাদিক খাসোগিকে হত্যার ঘটনায় গত শুক্রবার দেশটির ৭৬ জন নাগরিকের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এই ভিসা নিষেধাজ্ঞাকে ‘খাসোগি নিষেধাজ্ঞা’ বলে অভিহিত করেছে। সেই তালিকায় সউদী আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আছেন কি না, তা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে না বলে নিশ্চিত করেছে হোয়াইট হাউস।
সোমবার সংবাদ সম্মেলনে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন বলেন, ‘আমরা মনে করি, খাশোগি হত্যার মতো ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে আরও কার্যকর পথ রয়েছে। আর সউদী আরবের সঙ্গে যেহেতু আমাদের চুক্তি রয়েছে, সে কারণে আমাদের জাতীয় স্বার্থের ব্যাপারও রয়েছে। আসলে ক‚টনীতি ব্যাপারটা এমনই হয়।’ যুবরাজকে নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে কারণ ক‚টনৈতিক সম্পর্ক আছে, এমন দেশের সরকারপ্রধানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। এই তথ্য জানিয়ে বলেন, গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদান এবং রিয়াদের ওপর আসা হুমকি ও রকেট হামলা থেকে সুরক্ষা দেয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। যখন প্রয়োজন, তখন দেশগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে বৈশ্বিক ক‚টনীতি দরকার। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জাতীয় স্বার্থও কাজ করছে।’
এদিকে অভিযোগ থাকার পরও যুবরাজ সালমানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কেন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সময় সোমবার ওয়াশিংটন ডিসিতে সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও সউদী আরবের সম্পর্ককে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি আমরা।’ তিনি বলেন, সউদী-মার্কিন সম্পর্কে বিচ্ছেদ নয়, পুনরুদ্ধারের কাজ করছে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশাসন। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরপরই ৭৬ সউদী নাগরিকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে সউদীর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানায়নি তারা।
নেড প্রাইস বলেন, নিষেধাজ্ঞার এই তালিকায় সউদীর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আছেন কি না, তা বলবেন না। তিনি বলেন, ৭৬ জনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের বিশদ পরিচয় দেয়ার মতো অবস্থানে তারা নেই। এমনকি ভবিষ্যতে যারা এই তালিকায় যুক্ত হতে পারেন, তাদের কথাও বলা সম্ভব হচ্ছে না। তালিকায় সউদীর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আছেন কি না? এমন প্রশ্নে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘আমি সুনির্দিষ্ট করে কাউকে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত বা বাদ দিচ্ছি না।’ তিনি বলেন, নিকট ভবিষ্যতে সউদীর যুবরাজের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, সে সম্পর্কে তিনি অবগত নন।
গত শুক্রবার বাইডেন প্রশাসন খাসোগি হত্যার বহুল কাঙ্খিত গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের কার্যালয় (ওডিএনআই) বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, খাসোগি হত্যার বিষয়টি সউদীর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান জানতেন। তিনি খাসোগিকে হত্যার অভিযানে সরাসরি অনুমোদন দিয়েছিলেন। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরপরই ৭৬ সউদী নাগরিকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে সউদীর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানায়নি তারা।
খাসোগি হত্যায় যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে দায়ী করা হলেও তাকে কোনো শাস্তি না দেয়ায় বাইডেন প্রশাসন সমালোচিত হচ্ছে। জাতিসংঘের বিশেষ দূত অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, সউদীর যুবরাজের অপরাধকে স্বীকার করার পর তাঁকে সাজা না দেয়ার বিষয়টি খুবই ভয়ানক একটি পদক্ষেপ। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদনটি ‘নাকচ’ করেছে সউদী আরব। এ বিষয়ে সউদীর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রতিবেদনটিতে সউদী আরবের নেতৃত্ব সম্পর্কিত নেতিবাচক, মিথ্যা ও অগ্রহণযোগ্য মূল্যায়ন সউদী সরকার পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রতিবেদনটি ভুল তথ্য ও সিদ্ধান্তে ভরা। আগের মতোই সউদী আরব দাবি করে, এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত।
এদিকে, হত্যাকান্ড সম্পৃক্তার প্রমাণ পাওয়ার পরও সউদী যুবরাজের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে তা চরম উদ্বেগ ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। তারা বলছে, ‘সউদী আরবের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। শুধু কয়েকজন ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে হবে না। যারা এই হত্যাকান্ডর মূলহোতা তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন নির্বাচনী প্রচারণার সময় বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় এলে বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকারসহ নতুন যুগের সূচনা করতে চেয়েছিলেন। এখন এসব বিষয়ে তিনি নীরব থাকলে সেটি দুঃখজনক।’
প্রসঙ্গত, সউদীর যুবরাজ বিন সালমান ও সউদীর রাজপরিবারের কড়া সমালোচক ছিলেন খাসোগি। তিনি তার বিয়ের জন্য কাগজপত্র আনতে ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সউদী কনস্যুলেটে যান। সেখানে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তার লাশ কেটে টুকরা টুকরা করে গায়েব করে দেয়া হয়। তার দেহাবশেষ আজও পাওয়া যায়নি। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান, বিজনেস ইনসাইডার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।