পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আঞ্চলিকতা, আন্তর্জাতিকতা, ভৌগোলিক মানচিত্র, রাজনৈতিক ক্ষমতা ও মতাদর্শ নির্বিশেষে রাষ্ট্র একটি বিমূর্ত ধারণা। ভোটের রাজনীতিতে, সামরিক বা গণঅভ্যুত্থানে সহজেই দেশের সরকারের পতন বা পরিবর্তন ঘটতে পারে। কিন্তু বহি:শক্তির আক্রমণে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের উপর সরাসরি হস্তক্ষেপ না হলে রাষ্ট্রের পতন বা কোনো পরিবর্তন ঘটে না। রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্সার দ্বারা। হাজার বছরের রাজনৈতিক পথপরিক্রমায় আজকের বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্র বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিনতি লাভ করলেও কোনো কোনো রাষ্ট্র গঠনে দেশের জনগণকে অনেক বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। আবার ফিলিস্তিন, কাশ্মীরের মত জনপদের মানুষ ৭ দশকের বেশি সময় ধরে অনবরত রক্ত ঝরিয়েও তাদের কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা পায়নি। যে অল্প কিছু সংখ্যক জনপদ বা রাষ্ট্রের মানুষ লাখো প্রাণের বিনিময়ে নিজেদের জন্য একটি স্বাধীন আবাসভূমি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে, সেই বিরলপ্রজ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। রাষ্ট্র গঠণের প্রতিটি ধাপেই এ জনপদের মানুষকে কঠিন আত্মত্যাগ করতে হয়েছে। শতবর্ষ ব্যাপী বৃটিশবিরোধী আন্দোলন, সাতচল্লিশের দেশভাগ, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তুরের স্বাধীনতাযুদ্ধ পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলন, সংগ্রাম ও যুদ্ধে মূলত বাঙালী মুসলমানের রক্তদানের মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে একেকটি বিজয় অর্জিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালী মুসলমানের প্রথম রাষ্ট্রশক্তি অর্জনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস এখন ইতিহাসের আরেক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। একাত্তুরের মুক্তিযুদ্ধের মূল স্পিরিট ছিল রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উপর প্রতিষ্ঠিত করা। আজ আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর বছরে পদার্পণ করেছি। নতুন প্রজন্ম এখন রাষ্ট্রের কাছে, সরকারের কাছে, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে, রাষ্ট্রে ও সমাজে ও রাজনীতিতে সেই প্রত্যাশিত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতার জবাবদিহিতা চাইবে। ওদশে এমন কোনো রাজনৈতিক শক্তি কি আছে যারা নতুন প্রজন্মের কাছে এই জবাবদিহিতায় নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে সক্ষম হতে পারে?
এটা মার্চ মাস। দখলদার-আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে চ‚ড়ান্ত রাজনৈতিক বিজয় অর্জনের লক্ষ্যে স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ নামক একটি নতুন রাষ্ট্রের গোড়াপত্তনের নতুন ইতিহাস রচনার মাস। এ মাসের রাজনৈতিক ঘটনাক্রম আমাদেরকে শিক্ষা দেয়, কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি, গতানুগতিক নেতৃত্ব ও প্রথাগত পদ্ধতির বাইরেও জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বে কিভাবে রাষ্ট্র তার আপন গতি ও বাস্তবতা পরিগ্রহ করে। সাতই মার্চে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষনের মধ্য দিয়ে যে অমিত সম্ভাবনা জেগে উঠেছিল, দখলদার শক্তি রাতের অন্ধকারে ক্র্যাকডাউন করে, বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করেও সেই অমিত সম্ভাবনাকে দমিয়ে রাখা যায়নি। এটি ছিল হাজার বছরের বাঙ্গালী মুসলমানের জাতিসত্ত্বার চূড়ান্ত অগ্নিগর্ভময় মুহূর্ত। এখন রাজনৈতিক ক্ষমতার হিসাব-নিকাশ, বোলচালে ইতিহাসে নতুন প্যারাডাইম যুক্ত হতে পারে, কালের বিচারে তা কতদিন স্থায়ী হবে তা সময়ই বিচার করবে। সাত মার্চের ভাষণে শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমরা সবকিছু বন্ধ করে দিবে’। এরপরও তিনি একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আলোচনায় যেতে রাজি হয়েছিলেন। তিনি পশ্চিমাদের সাথে আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন। জাতির পরীক্ষিত নেতা বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে একজন সৈনিক জিয়াউর রহমানের কণ্ঠে বিদ্রোহের বাণী সেই হাজার বছরের রাজনৈতিক অভিপ্সারই প্রতিফলন। রাষ্ট্র যে জনগণের স্বাধীন ইচ্ছার প্রতিফলন, আমাদের সুদীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারাবাহিক ইতিহাস ও যুদ্ধের সূচনাপর্ব থেকে চ‚ড়ান্ত পরিনতি পর্যন্ত জনগণের স্বাধীন ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটেছে।
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর বছরে এই স্বাধীনতার মাসে আজকের বাংলাদেশে আমরা এখন কি দেখছি? একাত্তুরের আগে সামরিক জান্তার বুটের তলায় গণতন্ত্রের বন্দিত্বের বিরুদ্ধে আমাদের স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহের স্ফুলিঙ্গকে পরাশক্তির মদদেও দমানো যায়নি। একটা দেয়াল লিখন দেখলাম, কে যেন বলেছেন, ‘নেতা নয় নীতির পরিবর্তন চাই’। স্পেনিশ সাম্রাজ্যবাদিদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াই করতে গিয়ে ফিলিপাইনের জাতীয় বীর, ফিলিপিনো জাতির পিতা জোসে রিজালও বলেছিলেন, যদি শাসক শ্রেণীর চরিত্রের পরিবর্তন না ঘটে, তবে স্পেনিশরা এ দেশে থাকলে যা, না থাকলেও তাই ঘটবে। সাহিত্য ও গোপন রাজনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে নিজ জাতির মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করার অপরাধে স্পেনিশ সাম্রাজ্যবাদীরা জোসে রিজালকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছিল। স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত ফিলিপিনোদের প্রতিরোধ, গেরিলা যুদ্ধ কৌশল ও ব্যাপক জনসমর্থন কাজে লাগিয়ে স্পেনিশ-আমেরিকান যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজয়ের পর দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ পর্যন্ত ফিলিপাইনে প্রায় অর্ধশত বছর আমেরিকান দখলদারিত্ব কায়েম ছিল। এর কারণ হচ্ছে, ১৮৮৯ সালে প্যারিসে সম্পাদিত একটি চুক্তি অনুসারে স্পেনিশরা ফিলিপাইনের দখলদারিত্ব আমেরিকার উপর অর্পন করেছিল। এক পরাশক্তির গ্যাঁড়াকল থেকে আরেক পরাশক্তির কবলে পতিত হওয়াই যেন উপনিবেশোত্তর তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর অমোঘ নিয়তি। প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ, দখলদারিত্বের যুগ শেষ হয়ে গেলেও পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ আগের চেয়েও এখন অনেক বেশি সক্রিয়। এর ব্যত্যয় হলেই দেশে দেশে রিজিম চেঞ্জ ও একতরফা যুদ্ধের খড়গ নেমে আসতে দেখা যায়। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী শক্তির নিয়ন্ত্রিত ক্রীড়নক অবস্থা থেকে বিশ্বের এক নম্বর সামরিক-অর্থনৈতিক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এখন সরাসরি সম্পর্কে গড়ে তোলার কথা বলা হচ্ছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। তবে এসব বিতর্ক অনেকটাই অস্বচ্ছ ও বিমূর্ত।
রাষ্ট্র তখনই শক্তিশালী হয় যখন রাষ্ট্র তার প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়। এ ক্ষেত্রে আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিই প্রথম ও প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আর রাষ্ট্রের সরকার যদি সেই কায়েমী স্বার্থবাদীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তাহলে তা এক সময় জটিল আকার ধারণ করে। রাষ্ট্র সবকিছুর ঊর্ধ্বে তার শক্তিকে সাধারণ মানুষের কল্যাণে ও নিরাপত্তায় ব্যবহারে অঙ্গিকারাবদ্ধ। রাষ্ট্রীয় আইন বা আইনের শাসনের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে দলমত, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে, বৈষম্যহীনভাবে সব মানুষের অধিকার ও আইনগত সুরক্ষা নিশ্চিত করা। জনগণের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ বা খবরদারি করা একটি আদর্শ রাষ্ট্র ও সরকারের বৈশিষ্ট্য নয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা অনুসারে, ‘গুড গর্ভনেন্স ইজ দ্য লেস গর্ভান্ড’। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতনভুক মন্ত্রী-এমপি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সামরিক বাহিনী, সরকারি আমলা, বিচারপতি-ম্যাজিস্ট্রেটরা যদি জনগণের সেবকের ভূমিকার বদলে জনগণের উপর কর্তৃত্ব-প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাহলে রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্যই ব্যর্থ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে আমরা আমাদের দেশে কয়েক বছর আগে ব্যাপক প্রচারিত একটি বাক্য স্মরণ করতে চাই, যেখানে বলা হয়েছে, ‘মাছের রাজা ইলিশ, দেশের রাজা পুলিশ’। কি সাংঘাতিক কথা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তার জন্য দুষ্টের দমন শিষ্টের লালন থিমকে সামনে রেখে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও ভরসাস্থল পুলিশ যদি আইনগত ক্ষমতা ও অস্ত্রবলে দেশের রাজা হয়ে যায় তাহলে রাষ্ট্রের মালিকানা আর জনগণের হাতে থাকতে পারে না। জনগণ যদি ভোট দিয়ে নিজেদের পছন্দের প্রতিনিধি দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ না পায়, পুলিশ যদি কোনো বিশেষ রাজনৈতিক শক্তির পক্ষে কাজ করে ভোটের ফলাফল পাল্টে দিতে ভূমিকা রাখে তাহলেই কেবল এ পরিস্থিতি তৈরী হতে পারে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সে পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে কি? এর জবাব এখন আমার কাছে নেই।
সরকার যদি নাবিক হয় যাত্রিরা তার জনগণ আর জাহাজটি হচ্ছে রাষ্ট্র। জাহাজটিকে ঠিকমত পরিচালনা করতে না পারলে যাত্রিরা নাবিককে ভর্ৎসনা করবে, নতুন নাবিক নিয়োগ দেয়ার দাবি জানাবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে নাবিকের মনে কুমতলব থাকলে যাত্রিদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করবে এবং তার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে জাহাজ ডুবিয়ে দেয়ার চেষ্টার অভিযোগ তুলতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় আইন, বিচারাদালত এবং পাইক-পেয়াদারা আসল বিষয়টি উদঘাটন করেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন। রাষ্ট্রে রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির এজেন্ট থাকতে পারে, সেটা অনেক বড় অপরাধমূলক তৎপরতা হিসেবে গণ্য হতে পারে। কিন্তু সরকারের বিরোধিতাকে রাষ্ট্র বিরোধিতা বা রাষ্ট্রোদ্রোহিতা বলে প্রচারণা চালালে প্রকৃত রাষ্ট্র বিরোধিদের সুবিধা হয়ে যায়। এভাবে কোনো বিশেষ মতাদর্শের ব্যক্তি বা জনসমষ্টিকে বিশেষ লেবেল লাগিয়ে দিয়ে কোনঠাসা করে কিছুদিনের জন্য ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করা গেলেও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্র দুর্বল হয়ে পড়ে। কারণ, মতের ভিন্নতা সত্তে¡ও জনগণের ঐক্যবদ্ধ সহাবস্থান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার মূল শক্তি। সেই শক্তিকে বিভাজিত করে প্রতিহিংসার রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালুর পদক্ষেপ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য আত্মঘাতী। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে বাংলাদেশে আমরা সেই আত্মঘাতী রাজনৈতিক বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করছি। পুরোদেশ যেন সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক সংগঠ, পেশাজীবী সংগঠন, ছাত্র সংগঠন, শ্রমিক-শিক্ষক সর্বত্র যেন নৈরাজ্য-বিশৃঙ্খলার প্রতিযোগিতা চলছে। সরকারের তরফে বিরোধীদল দমন করতে করতে এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, এখন সরকারি দলের অস্ত্রধারী ক্যাডাররা নিজেদের দলের ভেতরেই প্রতিপক্ষ গ্রুপ তৈরী করে শক্তির মহড়া দিতে শুরু করেছে। শুধু মহড়া বললে ভুল হবে, নিজেদের মধ্যেই রীতিমত রক্তারক্তি চলছে। এ সপ্তাহে নোয়াখালির কোম্পানিগঞ্জে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সশস্ত্র সংঘাতের সময় অস্ত্রধারি সন্ত্রাসীদের ভিডিও ধারণ করায় স্থানীয় সাংবাদিক বুরহানউদ্দিন মুজাক্কিরকে গুলিতে ঝাঝরা করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষ যখন বিক্ষোভ করতে রাস্তায় নেমেছে তখন পুলিশকে বিক্ষোভ দমনে অতি তৎপর দেখা গেছে। অথচ সরকারি দলের দুই গ্রুপের সংঘাতের সময় পুলিশকে এমন ভূমিকায় দেখা গেলে মুজাক্কিরের মত সম্ভাবনাময় সাংবাদিকের এমন নির্মম মৃত্যু ঘটত না।
লেখক মুশতাকের মৃত্যু নিয়ে বিশ্বসম্প্রদায়ের উদ্বেগ প্রকাশিত হয়েছে। পশ্চিমা ১৩টি দেশের রাষ্ট্রদূতরা এক যৌথ বিবৃতিতে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তীর বছরে এসে আমরা এ কেমন বাংলাদেশকে প্রত্যক্ষ করছি। যেখানে স্বাধীন দেশের সাংবাদিক সমাজকে পেশাদার খুনি, সরকারি দলের সন্ত্রাসী, রাষ্ট্রীয় কালাকানুনে নির্যাতিত হয়ে, শত শত গুলিতে ঝাঝরা হয়ে মরতে হচ্ছে! চুয়াত্তরবার সময় পিছিয়েও সাগর-রুনী হত্যার চার্জশিট জমা দিতে পারেনি পুলিশ। তাদের পিতা-মাতা ও সন্তানরা প্রিয়জন হত্যার বিচারের আশা ছেড়েই দিয়েছেন। এ দেশ কি কতিপয় রাজনৈতিকদলের পালাক্রমে ক্ষমতার ভাগাভাগির জন্য, ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিরোধীদল ও বিরোধীমত দমনে রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহারের জন্য স্বাধীন হয়েছিল? গত এক দশকে অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছে। গুম-খুন রাজনৈতিক নির্বতনের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহসী-সত্যবাদি কণ্ঠগুলো স্তব্ধ করে দিয়ে একটি ত্রাসের পরিবেশ কায়েম করা হয়েছে। সাংবাদিক মুজাক্কির ও লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু তার সর্বশেষ উদাহরণ। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হলে, লাখো শহীদের রক্তদানের লক্ষ্য ও ১৭ কোটি মানুষের প্রত্যাশা ও নিরাপত্তার প্রতি রাষ্ট্রকে অবশ্যই এ বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারি রাজনৈতিকদল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শাসনামলে জাতি এমন ভয়ানক নিরাপত্তাহীনতার নিগড়ে নিক্ষেপিত হওয়ার বাস্তবতা মেনে নেয়া কঠিন। মুজাক্কির-মুশতাকের মৃত্যু জাতিকে সত্যবোধের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সব কালাকানুন অপরাজনীতি এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিলোপ ছাড়া এ থেকে জাতির মুক্তি নেই।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।