পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি বলেছেন, মাদরাসা তথা দ্বীনি শিক্ষার কারণে আমরা সহনশীল সমাজ পেয়েছি, দেশে সহনশীলতা বিরাজ করছে। এ স্থিতিশীলতার কারণে দেশ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মাদরাসা শিক্ষাকে বিশ্বমানে উন্নীত করতে সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেদিন বেশি দূরে নয়, বিদেশি শিক্ষার্থীরাও এ দেশের মাদরাসায় পড়তে আসবে। মাদরাসায় পড়ে কেউ জঙ্গি হয় না। ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত অনেকে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে। মাদরাসায় শিক্ষিতরাই দেশ ও সমাজের নানা ক্ষেত্রে এখন প্রতিষ্ঠিত।
তিনি গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহরে জিননুরাইন কনভেনশন হলে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর আয়োজিত বর্ণাঢ্য এক শিক্ষক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। উপমন্ত্রী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাদরাসা তথা দ্বীনি শিক্ষাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই শিক্ষার আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। জমিয়াতুল মোদর্রেছীনের সাথে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক সম্পর্ক। আর এই কারণে পেশাজীবী এই সংগঠনের সব দাবি তিনি পূরণ করেছেন। তার সরকারের সময়ে মাদরাসা শিক্ষার যে উন্নয়ন হয়েছে তা অতীতে কোন সরকারের সময়ে হয়নি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও মহান একুশে স্মরণে আয়োজিত এ শিক্ষক সমাবেশে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পীর-মাশায়েখ, আলেম-ওলামাসহ সর্বস্তরের মাদরাসা শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ যোগ দেন। প্রধান অতিথি সমাবেশ স্থলে এসে পৌঁছলে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতৃবৃন্দ তাকে ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেন। অনুষ্ঠানে ব্যরিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী তার পিতা চট্টলবীর মরহুম এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নগরীতে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের জন্য একটি অফিস নির্মাণ করে দেয়ার আশ্বাস দেন। উপমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পিছিয়ে পড়া মাদরাসা শিক্ষাকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে দাঁড় করিয়ে যান। সেই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন করছেন। শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির পাশাপাশি অবকাঠামোখাতেও ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। ছয় হাজার কোটি টাকায় সারাদেশে ১৮শ’ মাদরাসা ভবন তৈরি হচ্ছে।
মাদরাসা শিক্ষা আধুনিকায়ন এবং উন্নত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাদরাসার ছাত্ররা দেশ পরিচালনায় ভূমিকা রাখছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী মাদরাসা থেকে আসছে। সম্প্রতি শ্রীলংকা সে দেশের মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে বাংলাদেশ থেকে সহযোগিতা নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, একসময় এ দেশে বিদেশি ছাত্ররা মাদরাসায় পড়তে আসবে। দ্বীনি শিক্ষার কারণে নৈতিক ও মানবিক সমাজ গড়ে উঠছে। যার মধ্যে আল্লাহভীতি আছে তিনি কখনো অন্যায়-দুর্নীতি করতে পারেন না। আলেম-ওলামাদের মাদরাসা শিক্ষার পাশাপাশি সমাজে দ্বীনের শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে জমিয়াতুল মোদারের্ছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ আল্লামা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী বলেন, জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সাথে এই দেশের সর্বস্তরের আলেম-উলামা, পীর মাশায়েখরা আছেন। জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীনের নেতৃত্বে আমরা দৃঢ় ঐক্যবদ্ধ। আমরা সবসময় সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালে ঢাকা আলিয়া মাঠে জমিয়াতুল মোদারের্ছীনের সমাবেশে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন এ দেশে মাদরাসা শিক্ষা থাকবে।
তার সে ঘোষণার মাধ্যমে মাদরাসা শিক্ষার যে উন্নয়ন শুরু হয়েছে তা এগিয়ে নিচ্ছেন তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আমাদের দাবি পূরণে সবসময় আন্তরিক। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসনসহ সবকিছুই তিনি করে দিয়েছেন। তার সময়ে মাদরাসা শিক্ষার যে উন্নয়ন হয়েছে তা আর কোন সরকারের সময়ে হয়নি। মুজিববর্ষ উপলক্ষে উত্তরবঙ্গে পাঁচ লাখ টাকার কম্বল বিতরণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জমিয়াতুল মোদারের্ছীন দ্বীনি শিক্ষা বিস্তারের পাশাপাশি সামাজিক কর্মকান্ডও পরিচালনা করছে। শাব্বীর আহমদ মোমতাজী ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) কে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের ঘোষণা দেয়ায় জমিয়াতুল মোদারের্ছীন ও সারাদেশের আলেম সমাজের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। সমাবেশে বক্তাগণ এদেশের মাদরাসা শিক্ষা এবং শিক্ষকদের অধিকার আদায়ে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সাবেক সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) এর অবদান গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তারা ইসলামি আরবি বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং আরও যেসব দাবি আছে তা মেনে নেয়ার আহ্বান জানান।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীন চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ আল্লামা মোখতার আহমদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতি সৈয়্যদ অছিয়র রহমান আলকাদেরী। উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আল্লামা আবুল ফরাহ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহানগর সভাপতি প্রিন্সিপাল কাযী আবুল বয়ান হাশেমী। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আল্লামা ইসমাইল নোমানী।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন বায়তুশ শরফ কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল ড. সাইয়্যেদ আবু নোমান, ছোবহানিয়া আলিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা হারুন অর রশিদ, প্রিন্সিপাল আবুল ইরফান মোহাম্মদ লোকমান চিশতী, প্রিন্সিপাল মাওলানা নজরুল ইসলাম, প্রিন্সিপাল মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন, প্রিন্সিপাল আহমেদ হোসাইন আলকাদেরী, প্রিন্সিপাল মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন, অধ্যক্ষ ইকরামুল হক, ড. খলিলুর রহমান, কারী আবু তৈয়ব, হাফেজ আবু জাফর সিদ্দিকী, ড. মহিউল হক, ড. মতিউল ইসলাম, মুহাদ্দিস আনোয়ার হোসাইন, অধ্যক্ষ রফিক উদ্দিন সিদ্দিকী, মাওলানা এনামুল হক সিকদার, অধ্যক্ষ জমিউল আকতার আশরাফী, মুহাদ্দিস আবদুস সালাম শরফী, উপাধ্যক্ষ আবদুল অদুদ, উপাধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম, মাওলানা আবুল মনসুর, মাওলানা আবু হৃদোয়ান, মাওলানা আবদুল্লাহ আল নোমান, মাওলানা নঈমুল হক, অধ্যাপক আজগর আলী, অধ্যাপক মাহফুজুল হক প্রমুখ।
শিক্ষক সমাবেশের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন কামিল শিক্ষার্থী মোহাম্মদ তানভীর। সমাবেশকে ঘিরে কনভেনশন হলে আলেম-ওলামাদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। সবশেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, হযরত মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.), চট্টলবীর এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মরহুম নেতাদের রূহের মাগফিরাত কামনা এবং প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।