গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
একরম চিত্র সাধারণ দেখা মেলে না। বাঙালীর চিরকালের প্রেরণার প্রতীক ২১ শে ফেব্রুয়ারি। রক্তরাঙা ২১ মানেই ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ফাল্গুনের পলাশ-শিমুল ফোঁটা অগ্নিঝরা দিন। এমনদিনে কালো আর লালে ছেয়ে যায় পুরো দেশ। হাতে হাতে সবুজ পতাকা আর কপালে শহিদ মিনারের স্মৃতি সম্বলিত ব্যাজ বেঁধে ফুল দিতে যায় সর্বস্তরের মানুষ। কিন্তু করোনায় সবকিছু যেন ওলোটপালোট করে দিয়েছে।
রোববার ২১ এর প্রথম প্রহরে শহিদ মিনার এলাকায় গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। সেই ভাব-গাম্ভীর্য পরিবেশের ছিটেফোঁটাও নেই। সবার পায়ে জুতা কিংবা স্যান্ডেল। হাতে নেই সবুজ পতাকা, মাথায় বাঁধা নেই সেই ব্যাজ। এ যেন ভিন্নরকম এক চিত্রপট। দেখা মেলেনি প্রভাত ফেরির। যারা এসেছেন তাদের অধিকাংই সেলফি ও নিজের মধ্যে আড্ডায় ব্যস্ত ছিলেন।
দুধের শিশুকে ফুটপাতে বসিয়ে সারাদিন মালা গেঁথেছেন হিমা। উপলক্ষ্য অমর একুশ। তার আশা ছিল, সন্ধ্যার পর থেকেই মানুষের ঢল নামবে টিএসটি, শহিদ মিনার এলাকায়। তাই অতি যতনে গেঁধেছেন ফুলের মালা। আসবেন তরুন-তরুণীরা। তাদের সামনে তুলে ধরবেন তার পসরা। বাড়তি দাম হাঁকাবেন বলে নিয়েছিলেন সিদ্ধান্ত। কিন্তু মধ্য রাতে দেখা গেল নেই মানুষের সেই কোলাহত। বিক্রি তো দূরের কথা কেউ দামও জিজ্ঞেস করছে না।
তাই অসহায়ের মতো দেখছেন তার কাছেই আকুতি জানাচ্ছেন একটা মালা নিন। রাত হয়ছে মামা, পুঁজিও তুলতে পারুম না। আমারে বাঁচান।
এমন পরিস্থিতি দেখে তার কাছে জানতে চাইলাম, অস্থিরতার কারণ। তখন হিমা মুখ লুকায়। কষ্টের কথা কি কমু। সারাদিন খাটাখাটনি করছি, মনে করছি মালা বিক্রি করে বাড়তি আয় করুম। সবই বৃথা গেলো মামা। অনেক টেনশনে আছি। মনে হয় পুঁজিও উঠবে না। মানুষ আর এখন আগের মত ফুল নেয় না। আপনি কন, ফুলে কি করোনা আছে।
এদিকে টিএসটি এলাকাতেই দেখা মেলে কয়েকজন পতাকা ও ২১’র স্মৃতি সম্বলিত ব্যাজ বিক্রেতাকে। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সন্ধ্যা থেকেই ঘুরছেন এজায়গা-ওজায়গা। এখন মধ্যরাত পেরিয়ে গেছে অনেকটা সময়। এখন ঘড়ির কাঁটায় মধ্যা রাত। ক্লান্তিতে আর পা চলছে না তাদের। তাই ঠাঁই দাঁড়িয়ে। ছোটাছুটিতে ক্লান্ত হলেও ক্রেতার দেখা সেভাবে মেলেনি। বিক্রিতে ভাটা। করোনার কথা ভেবে অল্প কিছু মাল নিয়ে এসেছিলেন বিক্রির আশায়। কিন্তু তাও বিক্রি করতে না পেরে চরম হতাশা প্রকাশ করেন তাদের কয়েকজন। চেহারায় মলিনতা ফুটে উঠছে তাদের।
এ প্রসঙ্গে বিক্রেতা সুমন বলেন, করোনা পেটের ভাত কেড়ে নিছে। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। বড় আশা নিয়ে আজ এসেছিলাম। কিছু টাকা পয়সা ইনকাম হবে। কিন্তু যে পরিস্থিতি তাতে মনে হচ্ছে, লাভ তো দূরের কথা, পুঁজিও থাকবে না। আজ বিক্রি না হলে আর যে কবে বিক্রি হবে বলা যাচ্ছে না। আমরা গরীব মানুষ। কয়েক টাকার পুঁজি। তা হারিয়ে ফেললে নি:স্ব হয়ে যাবো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।