এটিএম শামসুজ্জামান ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। আর গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের ভোলাকোটের বড় বাড়ি। তার বেড়ে ওঠা তথা শৈশব-কৈশোর কেটেছে পুরান ঢাকার দেবেন্দ্রনাথ দাস লেন এলাকায়। তিনি পড়াশোনা করেছেন ঢাকার পগোজ স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহীর লোকনাথ হাই স্কুলে। ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করার পর এটিএম জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চতর শিক্ষালাভ করেন।
তার চলচ্চিত্র জীবনের শুরু ১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে। প্রথম কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের জন্য। অভিনেতা হিসেবে এটিএম শামসুজ্জামানের অভিষেক ১৯৬৫ সালে। এরপর ১৯৭৬ সালে আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘নয়নমণি’ চলচ্চিত্রে খলনায়ক হিসেবে তিনি আলোচনা আসেন। এই সিনেমার পর তিনি বহু বছর ধরে খল চরিত্রে অভিনয় করেছেন। আর কুড়িয়েছেন প্রশংসা। স্বনামধন্য এই অভিনেতা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। ছিলেন সমান তালে জনপ্রিয়। দর্শক প্রিয় এই অভিনেতা জীবনের শেষ বয়সেও অভিনয়ের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছিলেন।
চলচ্চিত্রে এটিএম শামসুজ্জামানের রয়েছে অনেক প্রাপ্তি। শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা হিসেবে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনবার, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে একবার, শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব চরিত্রে একবার এবং আজীবন সম্মাননা হিসেবে একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। এছাড়া ২০১৫ সালে শিল্পকলায় অসামান্য অবদান রাখায় রাষ্ট্রীয় সম্মান একুশে পদক লাভ করেন এই গুণী অভিনেতা।
এটিএম শামসুজ্জামান ছিলেন খুবই জনপ্রিয় একজন অভিনেতা। তার অভিনীত সিনেমার তালিকাটা দীর্ঘ। সেই তালিকায় সফল সিনেমার সংখ্যাই বেশি। তার মধ্যে রয়েছে- ‘বড় বউ’, ‘ওরা ১১ জন’, ‘লাঠিয়াল’, ‘নয়নমনি’, ‘অশিক্ষিত’, ‘সুর্য দীঘল বাড়ি’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘লাল কাজল’, ‘দায়ী কে?’, ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’, ‘আমার স্বপ্ন তুমি’, ‘দাদীমা’, ‘ডাক্তার বাড়ি’, ‘চাঁদের মতো বউ’, ‘গেরিলা’, ‘লাল টিপ’
ইত্যাদি।
বর্তমান সময়ে তিনি সিনেমায় কাজ করলেও তার অভিনীত শত শত নাটক রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ‘রঙের মানুষ’, ‘ভবের হাট’, ‘শিলবাড়ি’, ‘ঘর কুটুম’, ‘বউ চুরি’, ‘নোয়াশাল’, ‘শতবর্ষে দাদাজান’, ‘সেরা কিপ্টুস’, ‘নাপিত’, ‘গরু চোর’, ‘মুরুব্বি জামাই’, ‘আমার বউ বেশি বুঝে’, ‘পিতা পুত্র’, ‘সিন্দুকনামা’, ‘ওস্তাদজি’, ‘আক্কেল আলীর নির্বাচন’, ‘ইলু ইলু’, ‘শোধবোধ’, ‘এই যে দুনিয়া’, ‘তরিক আলী হাডারি’
ইত্যাদি।
এই বরেণ্য চলচ্চিত্র অভিনেতা সূত্রাপুরের নিজ বাসভবনে শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারী) সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। বাদ জোহর তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। আর বরেণ্য এই অভিনেতাকে দাফন করা হবে জুরাইন কবরস্থানে।