শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
মোমিন মেহেদী
শহীদ কাদরী সেই বিরলপ্রজ কবি, যিনি দীর্ঘকাল যাবৎ স্বদেশ থেকে দূরে মার্কিন মুলুকে স্বেচ্ছা-নির্বাসনে রয়েছেন।’ কিন্তু কেন? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে তার কবিতায় চোখ রেখেছি বহুবার, যতবার চোখ রেখেছি, ততবার-ই মনে হয়েছে তিনি নিজের কাছে নিজেই লুকিয়ে রাখতে চেয়েছেন নির্মলতার সুখ। যে সুখের খোঁজে জীবনভর তিনি নির্মাণ করেছেন নিমগ্ন কাব্যজগৎ। এই জগতে তার বহুপথ হাঁটার রেকর্ড থাকলেও আমরা পেয়েছি তার কাছ থেকে তিনটি কাব্যগ্রন্থ। যে গ্রন্থগুলো লেখক-পাঠক-কবি-সাহিত্যিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নিরন্তর রাজত্ব তৈরি করে রেখেছে দীর্ঘ ৫০ বছর অবধি। তার উত্তরাধিকার (১৯৬৭), তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা (১৯৭৪) এবং কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই (১৯৭৮) গ্রন্থ থেকে হাজারো রঙিনযাত্রার জন্ম হলেও তিনি নীরবে বয়ে গেছেন সকলের আড়ালে।
সঙ্গতি নামক একটি কবিতায় তিনি নির্মাণ করেছেন শব্দভবন ঠিক এভাবে- বন্য শূকর খুঁজে পাবে প্রিয় কাদা/ মাছরাঙা পাবে অন্বেষণের মাছ,/ কালো রাতগুলো বৃষ্টিতে হবে শাদা/ ঘন জঙ্গলে ময়ূর দেখাবে নাচ/ প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই
কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না.../ একাকী পথিক ফিরে যাবে তার ঘরে/ শূন্য হাঁড়ির গহ্বরে অবিরত/ শাদা ভাত ঠিক উঠবেই ফুটে তারাপুঞ্জের মতো,/ পুরোনো গানের বিস্মৃত-কথা ফিরবে তোমার স্বরে/ প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই/ কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না.../ ব্যারাকে-ব্যারাকে থামবে কুচকাওয়াজ/ ক্ষুধার্ত বাঘ পেয়ে যাবে নীল গাই,/ গ্রামান্তরের বাতাস আনবে স্বাদু আওয়াজ/ মেয়েলি গানের- তোমরা দু’জন একঘরে পাবে ঠাঁই/ প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই/ কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না...
কবি ও কবিতার জন্য নিবেদিত থাকা কাব্যজ জীবনের অধিকারীর সংখ্যা নিতান্তই কম হলেও একটি কাব্যগ্রন্থ তাকে বিন্যাস করেছে ছন্দিত রাস্তা প্রশস্তকরণের মধ্য দিয়ে। আর সেই কাব্যগ্রন্থটি হলো- কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই। এই গ্রন্থে তার বেশ কিছু সামাজিক দায়িত্ববোধের কথা উঠে এসেছে। ভালোবাসতে বাসতে তিনি নির্মাণ করেছেন নিজস্ব স্বকীয়তা। আর সেই সাথে তার রাজত্ব তৈরি হয়েছে প্রেমজ জীবনের জন্য। যে কারণে তাকে কখনোই কান্না স্পর্শ করতে পারেনি। আর তার-ই বহিপ্রকাশ ঘটেছে ঠিক এভাবে- একটি মাছের অবসান ঘটে চিকন বটিতে,/ রাত্রির উঠোনে তার আঁশ জ্যোৎস্নার মতো/ হেলায়ফেলায় পড়ে থাকে/ কোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না,/ কোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না;/ কবরের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে প্রবেশ করে প্রথম বসন্তের হাওয়া,/ মৃতের চোখের কোটরের মধ্যে লাল ঠোঁট নিঃশব্দে ডুবিয়ে বসে আছে/ একটা সবুজ টিয়ে,/ ফুটপাতে শুয়ে থাকা ন্যাংটো ভিখিরির নাভিমূলে/ হীরার কৌটোর মতো টলটল করছে শিশির/ এবং পাখির প্রস্রাব;/ সরল গ্রাম্যজন খরগোশ শিকার করে নিপুণ ফিরে আসে/ পতœীর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে, চুল্লির লাল তাপে/ একটি নরম শিশু খরগোশের মাংস দেখে আহ্লাদে লাফায়/ সব রাঙা ঘাস স্মৃতির বাইরে পড়ে থাকে/ বৃষ্টি ফিরিয়ে আনে তার/ প্রথম সহজ রঙ হেলায়ফেলায়/ কোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না,/ কোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না...
কবিদের কান্না থাকে না, থাকে না হাসিও। যে কারণে কবিদের জগতে তারা রাজার ভূমিকায়। যেমন কবি ও ছড়ার মানসুর মুজাম্মিল লিখেছেন- সুগন্ধি গাছের কাছে চলো ছুটে যাই/ তুমি তো রানী হবেই আমি তো রাজাই। হয় তো তাই কবি শহীদ কাদরী তার রাজত্বের রাজা হিসেবে বয়ে বেড়িয়েছেন নিজস্ব সম্পদ। যে সম্পদ দেশজ স্মৃতি হিসেবে বারবার ফিরে ফিরে এসেছে। মানুষের মনের পঠন পাঠন নিয়ে তিনি নির্মাণ করেছেন স্মৃতি সম্পদ ঠিক এভাবে- অদৃশ্য ফিতে থেকে ঝুলছে রঙিন বেলুন/ রাত্রির নীলাভ আসঙ্গে আর স্বপ্নের ওপর/ যেন তার নৌকা- দোলা; সোনার ঘণ্টার ধ্বনি/ ছড়িয়ে পড়ছে সমস্ত শহরের! আমি ফিরলাম/ ঝর্ণার মতো সেই গ্রীষ্ম দিনগুলোর ভেতর/ যেখানে শীৎকার, মত্ততা আর বেলফুলে গাঁথা/ জন্মরাত্রির উৎসবের আলো; দীর্ঘ দুপুর ভরে/ অপেমান ঘোড়ার ভৌতিক পিঠের মতো রাস্তাগুলো,/ গলা পিচে তরল বুদ্বুদে ছলছল নত্ররাজি,/ তার ওপর কোমল পায়ের ছাপ, -চলে গেছি/ শব্দহীন ঠাকুর মার ঝুলির ভেতর।/ দেয়ালে ছায়ার নাচ সোনালি মাছের। ফিরে দাঁড়ালাম সেই/ গাঢ়, লাল মেঝেয়, ভয়-পাওয়া রাত্রিগুলোয়/ যেখানে অসতর্ক স্পর্শে গড়িয়ে পড়লো কাঁচের/ সচ্ছল আধার, আর সহোদরার কান্নাকে চিরে/ শূন্যে, কয়েকটা বর্ণের ঝলক/ নিঃশব্দে ফিকে হল; আমি ফিরে দাঁড়ালাম সেই/ মুহূর্তটির ওপর, সেই ঠান্ডা করুণ মরা মেঝেয়...
কাব্যগ্রন্থের নাম উত্তরাধিকার। আর রাজত্বের নাম মন; মনের ¤্রয়িমান স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলা। এই এগিয়ে চলার কথা তিনি বলে দিয়েছেন বাংলাদেশের জন্মেরও অনেক আগে। বলে দিয়েছেন, মাংস, মাংস, মাংস... শিরোনাম দিয়ে অজ¯্র সমস্যা আর সমাধানের কথা। লিখেছেন, আমাকে রাঙাতে পারে তেমন গোলাপ/ কখনও দেখি না। তবে কাকে, কখন, কোথায়/ ধরা দেবো? একমাত্র গোধূলি বেলায়/ সবকিছু বীরাঙ্গনার মতন রাঙা হয়ে যায়।/ শৈশবও ছিল না লাল। তবে জানি,/ দেখেছিও, ছুরির উজ্জ্বলতা থেকে ঝরে পড়ে বিন্দু বিন্দু লাল ফোঁটা/ তবে হাত রাখবো ছুরির বাঁটে? সবুজ সতেজ-/ রুপালি রেকাবে রাখা পানের নিপুণ কোনো খিলি নয়,/ মাংস, মাংস, মাংস... মাংসের ভেতরে শুধু/ দৃঢ়মুখ সার্জনের রূঢ়তম হাতের মতন/ খুঁজে নিতে হবে সব জীবনের রাঙা দিনগুলি ...
প্রবাসী কবি হাসান আল আবদুল্লাহ কবি শহীদ কাদরীর প্রসঙ্গে লিখেছেন, বাংলা ভাষার প্রধান কবিদের একজন শহীদ কাদরী। নিউইয়র্কে এসে নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে তার সাথে প্রথম টেলিফোনে আমার যোগাযোগ হয়। তার কবিতার সাথে যতো পরিচিত হতে থাকি, ততোই মনে হতে থাকে এই কবিকে বাংলার তরুণ প্রজন্ম কেনো বিস্মৃত হবে? আমি ফলত, তাঁর বেশ কিছু সাক্ষাৎকার দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ করতে থাকি। বিশেষত দৈনিক আজকের কাগজের সাহিত্য সাময়িকীতেই এগুলো প্রকাশিত হয়। এমনকি সাময়িকীতে দু›টি বিশেষ শহীদ কাদরী সংখ্যা প্রকাশিত হয়, যার প্রায় পুরোটাই ছিল সাক্ষাৎকারভিত্তিক। ২০০৫ সালে আমার লেখা বই ‘শহীদ কাদরী : সময়ের সম্পন্ন স্বর’ প্রকাশ পায়। এইসব কাজে আমি চারবার বস্টনে যাই তার সাথে দেখা করার জন্যে। ২০০০ সালে প্রথম শব্দগুচ্ছ কবিতা উৎসবে তাকে নিয়ে আসি। থাকেন আমার বাসায়। কতো কতো গল্প, কতো কতো আড্ডা! আজ, আনন্দের ব্যাপার হলো, শামসুর রাহমান ও আল মাহমুদের পাশাপাশি আমাদের দেশের তরুণ কবিরা একই রকম গুরুত্ব দিয়ে শহীদ কাদরীর কবিতা পড়েন। আমার সম্পাদিত ‘বিশশতকের বাংলা কবিতা (মাওলা ব্রাদার্স, ২০১৫)’ সংকলনেও তিনি একজন প্রধান কবির মর্যাদা পেয়েছেন। এই কবির অসংখ্য পঙ্ক্তি আমার মুখস্থ। তার প্রথম তিনটি গ্রন্থের প্রতিটি কবিতাই আমার ধারণা কোনো না কোনোভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তার কবিতা-- ‘সাদা ভাত ঠিক উঠবেই ফুটে তারাপুঞ্জের মতো’--এমন সব চিত্রকল্প, বলবার আলাদা কৌশল, ভাষার নতুন জৌলুস চির অম্লান হয়ে থাকবে। আগস্ট মাস ইতিপূর্বে আমাদের ভাষার চার বড়ো কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, শামসুর রাহমান ও হুমায়ুন আজাদকে কেড়ে নিয়েছে, এবার নিলো শহীদ কাদরীকে। তাঁর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।
শ্রদ্ধা জানাই আমাদের নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকেও। যারা রাজনীতি সচেতন নিরন্তর চেষ্টায় অবিরত এগিয়ে চলতে চলতে বলতে বলতে তৈরি হচ্ছে- সোচ্চার হচ্ছে। যেমন সোচ্চার ছিলেন কবি শহীদ কাদরী। আর সোচ্চার ছিলেন বলেই স্বেচ্ছায় নির্বাসনে গিয়ে প্রমাণ করেছেন নিন্দা কিভাবে করতে হয় শত্রু আর অন্যায়কে। সে যাই হোক কথায় কথায় আমরা একজন কবির কাব্যজ জীবনের কথা শুনেছি ঠিক-ই কিন্তু শুনিনি কবির কাব্যজ জীবনের পাশাপাশি স্বমহিমায় উজ্জল লোভহীন নিয়ম মেনে চলা মানুষটির কথা। যিনি নিজের মত করে গড়ে তুলেছিলেন নির্মল হাস্যোজ্জ্বল সময়ের চাকা। এই চাকা ছিল বলেই কবি শহীদ কাদরী এবং তাঁর কবিতার আলোচনায় আন্দোলিত হয়েছিলেন কবি সম্পাদক আদনান সৈয়দ। তিনি শহীদ কাদরী প্রসঙ্গে লিখেছেন, নামটি যেন কোন গ্রহ থেকে খসে পড়া এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত। নিজ গ্রহ থেকে ছিটকে পড়েছেন ঠিকই, কিন্তু উজ্জ্বল আলোয় তিনি ঠিক মিটিমিটি জ্বলছেন আরেক ভুবনে। তাই শহীদ কাদরীর জীবন ও তাঁর কাব্য আমাদের নিত্য ভাবায় এবং বিস্ময় সৃষ্টি করে। শহীদ কাদরীকে যাঁরা জানেন তাঁরা সবাই স্বীকার করবেন যে তিনি আড্ডা দিতে যত ভালোবাসেন তার চেয়ে কম ভালোবাসেন তার লেখালেখি নিয়ে আলোচনা করতে। এরকম প্রচারবিমুখ কবি আমাদের আশপাশে খুঁজে পাওয়া সত্যি কঠিন। লেখালেখির প্রসঙ্গ এলেই তাঁর নির্লিপ্ত উত্তর, ‘আরে দুর, ওসব বাদ দাও’ তবে অবাক বিষয় তিনি নিজের লেখালেখি নিয়ে উৎসাহ না দেখালেও বাংলাদেশের বর্তমান লেখকদের সম্পর্কে অনেক বেশি আগ্রহ দেখান। কিন্তু পর্দার আড়ালে তিনি নিজেকে যতই গুটিয়ে রাখার চেষ্টা করুন না কেন একথাতো সত্য যে পঞ্চাশ উত্তর বাংলা কবিতায় আধুনিক মননের ছাপ এবং জীবনবোধ সংযোগ ঘটিয়ে কবিতার উৎকর্ষে যাঁরা নিমগ্ন ছিলেন কবি শহীদ কাদরী ছিলেন সে দলের অন্যতম একজন কারিগর। একথাতো সবারই জানা যে তিনি লিখেছেন খুব কম কিন্তু মাত্র তিনটি কাব্যগ্রন্থ (উত্তরাধিকার, তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা এবং কোথাও কোন ক্রন্দন নেই) দিয়ে কবি শহীদ কাদরী বাংলা কাব্য আসনে একটি স্থায়ী আসন তৈরী করে নিয়েছেন। কবি যখন বাংলাদেশে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে, ঠিক তখনিই যেন তাঁর বিদ্রোহী মন বেঁকে বসল। সবকিছু ছেড়েছুড়ে তিনি পাড়ি জমালেন ইউরোপে। জার্মান, ইংল্যান্ড হয়ে তিনি এখন উত্তর আমেরিকায় স্বেচ্ছা প্রবাসবন্দী। কিন্তু কেন এই বন্দিত্ব? না, আমরা সে খবর কেউ জানি না, আর তা জানা হয়ত সম্ভবও নয়। তবে একথা জোর দিয়েই বলা যায় যে নিশ্চয় এর পেছনে কোন কারণ ছিল। হয়ত বুকচাপা কোন অভিমান অথবা বড্ড এলোমেলো পরিতোষন সমাজের গুমোট আলো-হাওয়ায় কবির মনকে বিক্ষিপ্ত করেছিল। অথবা হয়তো কিছুই নয়। শহীদ কাদরীর বাউল মনই তাঁকে দেশ থেকে দেশান্তরিত করেছিল। শহীদ কাদরী নিজেই তার উত্তরাধিকার কাব্যগ্রন্থে এর জবাব দিয়েছেন এইভাবে, ‘না শহীদ সে তো নেই; গোধূলিতে তাকে/ কখনও বাসায় কেউ কোনদিন পায় নি, পাবে না।’
দেশের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমান বলেছিলেন, শহীদ কাদরীর কাব্যচর্চা এবং চেষ্টা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের বাংলাদেশীর জন্য অনেক চমক থাকতো। কবি শামসুর রাহমানের চিন্তা কি ছিল জানি না। তবে আমার মনে হয়, তিনি নিয়ম করে এগিয়ে এলে বাংলাদেশের প্রথম নোবেল বিজয়ী কবি হতেন। কিন্তু কি এক অভিমান, কি এক বেদনায় আহত কবি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন তা আজ যখন তিনি নেই; তখনো জানতে পারেনি কেউ। সবার জানার বাইরে ছিল তার পদক্ষেপ। এমন অল্প লিখেও খ্যতির শীর্ষে থাকা কবি শহীদ কাদরীর আরেকটি কবিতায় সমাপনী টানবো। তার আগে বলবো- যে লেখকের আত্মসম্মান নেই, আদর্শ নেই, রাজনৈতিক বিবেচনায় অগ্রসরতা নেই, সেই লেখক কখনোই সময়কে ছাপিয়ে কালান্তরের রেখায় ঠাঁই পাবে না। যেমন পায় নি নজরুল যুগের অর্ধ শত কবি- লেখক। বিংশ শতাব্দীর শতাধিক কবি লেখক। কিন্তু শহীদ কাদরী টিকে আছেন, থাকবেন এ কারণে যে, তিনি লিখেছেন ঠিক এমন নিবেদিত কবিতা- কে যেন চিৎকার করছে প্রাণপণে গোলাপ! গোলাপ!›/ ঠোঁট থেকে গড়িয়ে পড়ছে তার সুমসৃণ লালা,/ প্রেম, প্রেম ‘বলে এক চশমা-পরা চিকণ যুবক/ সাইকেল-রিকশায় চেপে মাঝরাতে ফিরছে বাড়ীতে,/ দনীলিমা, নিসর্গ, নারী’- সম্মিলিত মুখের ফেনায়/ পরস্পর বদলে নিলো স্থানকাল, দিবস শর্বরী হলো/ সফেদ পদ্মের মতো সূর্য উঠলো ফুটে গোধূলির রাঙা হ্রদে/ এবং স্বপ্নের অভ্যন্তরে কবিদের নিঃসঙ্গ করুণ গন্ডদেশে/ মহিলার মতো ছদ্মবেশে জাঁদরেল নপুংসক এক/ ছুড়ে মারলো সুতীক্ষè চুম্বন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।