পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শহর নগরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদ-নদী ভরাট ও অবৈধ দখলে চলে যাচ্ছে। এক শ্রেণির ভূমিখেকো লোক স্বীয় স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে রক্ষণাবেক্ষণকারীদের উপর প্রভাব খাটিয়ে ও অর্থ ব্যয় করে এসব নদনদী ভরাট করে প্রথমে অস্থায়ী ও পরে দখল পাকাপোক্ত করে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করে চলেছে। এভাবে অবৈধ দখলের ফলে একদিকে নৌ চলাচল ও মালামাল পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে অন্যদিকে পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে, জলাবদ্ধতারও সৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। গতিপথ হারিয়ে পানি দ্বারা রাস্তা ও বসতবাড়ী প্লাবিত হচ্ছে বিনষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। এভাবে নদী ভরাট ও দখল অব্যাহত থাকলে একসময় হয়ত নদীর চিহ্নও থাকবে না, দেখা দেবে মহাবিপর্যয়। বিভিন্ন মিডিয়া, বেসরকারি সংস্থা ও পরিবেশবাদীদের প্রতিবাদের মুখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নদীর বেদখল অংশ উদ্ধার করলেও পরবর্তী পর্যায়ে কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার দখলকারীরা তাদের তৎপরতা চালিয়ে নদী ভরাট ও স্থাপনা নির্মাণ শুরু করে দেয়। জানা যায়, এসব অবৈধ কাজে যারা রক্ষক তারাই নাকি নগদ অর্থের বিনিময়ে সহযোগিতা করে থাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে।
বিভিন্ন নদী ভরাট, অবৈধ দখল ও তৈরি স্থাপনার চিত্র বিভিন্ন মিডিয়ায় সচিত্র প্রতিবেদনে। বিস্তর লেখালেখি হয় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। পরিবেশবাদীরা সোচ্চার হন এতে সরকারের টনক নড়ে। উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয় ভেঙ্গে ফেলা হয় নানা স্থাপনা। কিন্তু আবারও একই অবস্থা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজধানীসহ বিভিন্ন বড় শহরে দেখা দিচ্ছে। অথচ আমরা দেখতে পাই কোন কোন দেশ নদীকে সাজিয়েছে নিজের মতো করে। ধরা যাক সুইজারল্যান্ডের কথা। বিশ্বের একেবারে প্রাকৃতিক সম্পদ শূন্য এ দেশটি। এখানে মাথাপিছু কৃষি জমির পরিমাণ বাংলাদেশের চেয়ে ১শ ২০ গুণ বেশি। এ দেশটি শিল্পোন্নত দেশের একটি। সেখানকার উন্নয়ন পরিক্রমায় বলা হয়েছে, দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান হলো নদী, হ্রদ ও বনভূমি।
সুইজারল্যান্ডবাসীরা এটা ভেবে গর্ব অনুভব করে যে, তারা বিশ্বের সেরা শিল্পোন্নত দেশ হয়েও প্রাকৃতিক পরিবেশের বিন্দুমাত্র ক্ষতি করছে না। বিশ্বব্যাপী সুইসদের খ্যাতি রয়েছে। দেশটিতে বেশ কিছু হ্রদ, নদী এবং তৎসংলগ্ন বনভূমি রয়েছে। এসব হ্রদ ও নদী সংলগ্ন মনোমুগ্ধকর পরিবেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য হোটেল, অবসর বিনোদন কেন্দ্র, পর্যটন স্পট। এভাবে দেশটিতে অত্যাধুনিক কলকারখানার সাথে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটেছে।
একযুগ আগের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৭৫ লক্ষ মানুষের এ দেশটিতে বছরে ১ কোটির উপরে পর্যটক আগমন ঘটে। পর্যটন শিল্প হলো দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম আয়ের উৎস। আর এটা সম্ভব হয়েছে হ্রদ, নদী ও নির্মল প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য। এ আয় এতদিন আরো অনেক বেড়েছে বলে ধারণা করা যায়। পানি-বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশটি বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় একটি। ক্ষুদ্র এ দেশে আভ্যন্তরীণ নদীগুলো হতে বছরে ২৫ লক্ষ মেগাওয়াটের মত পানি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। অথচ প্রায় ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশে বছরে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় তা দিয়ে দেশের চাহিদা পূরণে হিমশিম খেতে হয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় শিল্পোন্নত দুটো দেশ হলো কানাডা ও নরওয়ে। এ দুটো দেশকে ইউএনডিপি মনুষ্য বসবাসের জন্য বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দেশ হিসাবে বর্ণনা করেছে। মানবসম্পদ উন্নয়নে বিশ্বে কানাডা ও নরওয়ের স্থান হলো যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয়। কানাডা ও নরওয়ে হাজার হাজার বছর ধরে তাদের নদীগুলোর নাব্যতা বজায়, পানিকে দূষণমুক্ত রাখা ও পানি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশ হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের দেশ দুটি বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে। বিশ্বের আরেক বৃহত্তম শিল্পোন্নত দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি বড়ো নদী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নদী ও নদীর তীরবর্তী পরিবেশ রক্ষায় অত্যন্ত কঠোর আইন প্রণয়ন করেছে। নদীর দু’ধারে ২০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো গাছপালা কর্তন ও স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শিল্পোন্নত দেশগুলো নদীর নাব্য বজায়, গতিপথ ঠিক রাখা, পানিকে দূষণমুক্ত রাখা, তীরের গাছপালাসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার জন্য ব্যয় করছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। বিপন্ন হবে পরিবেশ, আর পরিবেশ বিপন্ন হলে সমগ্র জাতি বিপন্ন হবে, মুখ থুবড়ে পড়বে তাদের শত-অজস্র বছরের উন্নয়ন ও ঐতিহ্য।
অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রকাশিত বহুল প্রচারিত এক দৈনিক পত্রিকার সংবাদে বলা হয়েছে, ২০৮০ সালের মধ্যে বিশ্বের ১১০ কোটি থেকে ৩২০ কোটি মানুষ পানির চরম অভাবের মুখে গিয়ে দাঁড়াবে। পাশাপাশি সে সময়ের মধ্যে কম করেও ২০ থেকে ৬০ কোটি লোক ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হবে। বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি বর্তমানে যেভাবে ঘটছে তার পরিমাণ ২০৮০ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি পেলে হিমবাহ তথা তুষারাঞ্চলের অবক্ষয় ঘটবে। ফলে বাড়বে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা। লক্ষ লক্ষ মানুষের ঘর-বাড়ি ভেসে সমুদ্রগর্ভে হারিয়ে যাবে। এমনকি বিশ্বের জৈব সম্পদের বৃহত্তম ভান্ডার হিসেবে পরিচিত অস্ট্রেলিয়ার উপকূলবর্তী গ্রেট বেরিয়ার রিফেরও অবলুপ্তি ঘটবে। উল্লেখ্য, জার্মানীর পটসডামে ‘ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্স’র বিজ্ঞানীরা বলেছেন, পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির পরিণামে ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ সমগ্র বিশ্বকে গ্রাস করবে এবং এর ফলে ধ্বংস হতে পারে মানব সভ্যতা। জার্মানির বিজ্ঞানীরা এ ক্ষেত্রে অতীত ইতিহাসের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলেন, মেক্সিকোর মায়া, চীনের তাং বংশের সময়কালীন সভ্যতা মোহেনজোদাড়ো এবং সিন্ধু সভ্যতা প্রাকৃতিক কারণেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। সংবাদটিতে অস্ট্রেলিয়ার প্রসঙ্গে জানানো হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রেট বেরিয়ার রিফের অবলুপ্তির পাশাপাশি প্রবাল প্রাচীর ধ্বংস হয়ে সাগরের পানি অধিক অম্লযুক্ত হয়ে পড়বে। প্রবাল কীট ও উদ্ভিদ জাতীয় জৈব সম্পদ ধ্বংসের ফলে সাদা চুনাপাথরের কঙ্কালের প্রাচীরে পরিণত হবে বিশ্বের এ জৈব সম্পদের বৃহত্তম ভান্ডারটি।
এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বৃষ্টি ও তাপমাত্রার পূর্বাভাস দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আবহাওয়াবিদদের। আবহাওয়ার পরিবর্তন নিয়ে যে আন্তঃরাষ্ট্রীয় গবেষণা সংস্থা তৈরি হয়েছে তাদের সদস্যরা দফায় দফায় বৈঠক করে আবহাওয়ার এ পরিবর্তনের কারণ খোঁজার চেষ্টা করছেন। কেন খুঁজেছেন তারা? কারণ এর সঙ্গে পানি সঙ্কটের সম্পর্ক রয়েছে। সম্পর্ক রয়েছে পানিস্তরের। আইপিসি’র কয়েক বছর আগে প্রকাশিত সূত্র মতে, (১) পানির স্তর নেমে যাওয়ার ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে এশিয়া অঞ্চলে তীব্র পানিসঙ্কট দেখা দেবে। বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে এশিয়া অঞ্চলে। (২) বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের উপকূলবর্তী এলাকায় সমুদ্র পানির তাপমাত্রা বাড়বে। (৩) ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, কলেরার জীবাণু আরো সক্রিয় হবে। (৪) তিব্বতে অন্তত চার কিলোমিটার হিমবাহ নিশ্চিহ্ন হবে। (৫) সমুদ্রের পানিস্তর বেড়ে ম্যানগ্রোভ অরণ্য তলিয়ে যাবে। (৬) ত্রিশ বছরে এশিয়ার ৩০ শতাংশ প্রবাল প্রাচীর নষ্ট হবে। (৭) বিপর্যয় ঘটবে সমুদ্রতলের টেকটনিক প্লেটে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্র নদীর পরিবেশ দূষণ রোধ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় তৎপর হয়েছে। এজন্য গ্রহণ করেছে ছোটো-বড়ো অনেক প্রকল্প। এক্ষেত্রে চীন, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ইরান প্রভৃতি দেশ এগিয়ে রয়েছে। বিশ্ব পানি কমিশন ইতিমধ্যে ভিয়েতনামের মেকং নদীতে বিশ্বের ৪টি দূষণমুক্ত নদীর একটি হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। চীন ও তার সমস্ত নদ-নদীর নাব্যতা বজায়, পরিবেশ দূষণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন, শুষ্ক মৌসুমে সেচ কাজের জন্য পানি সংরক্ষণ, মৎস্য উৎপাদন ইত্যাদি বহুমুখী নদী উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এতে আগামী ৫ বছরে প্রায় ৩ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হবে। বর্তমানে উন্নয়নের সর্ববৃহৎ প্রকল্পের মধ্যে এটি অন্যতম বলে জানানো হয়েছে। এদিকে সিঙ্গাপুর সরকার ভূমি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করেছে। এ আইনের মূল কথা হলো পানিকে দূষণমুক্ত রাখা ও নদীর অববাহিকা অঞ্চলে কোনো রকম দূষণমুক্ত শিল্প কারখানা যাতে গড়ে না উঠে তা নিশ্চিত করা। থাইল্যান্ড সরকার নদীগুলোকে দূষণমুক্ত রাখার জন্য কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ইরানও নদ-নদীর পানিকে দূষণমুক্ত রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জাতিসংঘ পরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচি নদ-নদী দূষণমুক্ত রাখতে ইরানের গৃহীত কর্মসূচীর প্রশংসা করেছে। পাকিস্তানও পিছিয়ে নেই। কারণ তারা ভালভাবে জানে নদীগুলো হলো জাতির প্রাণ, নদী বিপন্ন হলে পুরো পরিবেশ বিপন্ন হবে। নদী ভাঙ্গনের সর্বনাশা তান্ডব, নদীর নাব্যতা হারিয়ে যাওয়া, শুষ্ক মৌসুমে পানির তীব্র সংকট ইত্যাদি মারাত্মক সমস্যাতো আছেই।
বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, বিশ্বের নদীগুলোর সমস্যার সাথে এদেশের নদীগুলোর সমস্যার দু’স্তর পার্থক্য বিদ্যমান। সমগ্র বিশ্বে নদীগুলোর প্রধান সমস্যা হলো পানি দূষণ ও পরিবেশ বিপর্যয়। কিন্তু বাংলাদেশের বেলায় নদীগুলোর সমস্যা আরো ভয়ংকর এবং যেটা কোনো সচেতন মানুষকে আতংকিত না করে পারে না। নদ-নদীগুলোর পানি দূষণ, নদী ভাঙ্গনের সর্বনাশা তান্ডব নদীর নাব্যতা হারিয়ে যাওয়া, শুষ্ক মৌসুমে পানির তীব্র সংকট ইত্যাদি মারাত্মক সমস্যাতো আছেই। তার মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক ও সর্বগ্রাসী সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে নদী দখল এবং ভরাটের ব্যাপক সম্প্রসারিত কর্মকান্ড। সমগ্র দেশব্যাপী বৈধ-অবৈধ দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করে নদী নিশ্চিহ্ন করার ঘৃণ্য প্রতিযোগিতা চলছে। নদী দখলের এ অশুভ তৎপরতার ফলে আমাদের ছোট-বড় অনেক নদী ইতিমধ্যে ক্ষীণকায় হয়ে বিলীন হয়ে যেতে বসেছে।
সৌন্দর্যের আধার, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার উৎস, ব্যবসা-বাণিজ্য বিকাশের সহায়ক নদী-নালাসমূহকে নির্মমভাবে গ্রাস করার ফলে দেশের যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে সে দিকে কারো নজর আছে বলে মনে হয় না। এর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ বিভিন্ন সর্বনাশা তান্ডব ইতোমধ্যে ঘটতে শুরু করেছে। প্রতি বছর আমাদের নৌপথের আয়তন হ্রাস পাচ্ছে, শুষ্ক মৌসুমে দেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিচ্ছে, পানির অভাবে লক্ষ লক্ষ একর কৃষি জমির সেচকার্য বিঘ্নিত হচ্ছে, মাছের প্রজনন ও উৎপাদন এখন প্রায় সর্বনিম্নে, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমে নিচে নেমে যাচ্ছে, দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে মরুকরণ প্রক্রিয়ার প্রাথমিক আলামত দেখা দিয়েছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর চাপের মাত্রা ইতোমধ্যে অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছেছে, আর সে চাপ সহ্য করতে না পেরে ভূ-গর্ভ হতে উঠে আসছে প্রাণহননকারী আর্সেনিকযুক্ত বিষাক্ত পানি।
এক সময় বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে গাছপালা ছিল, বৃষ্টিপাতও হতো প্রচুর। এর ফলে নদীনালা-খালবিল ভরাট থাকতো। পানির অভাবে কৃষিকাজ বিঘ্নিত হত না। কিন্তু উষ্ণায়নের প্রভাবে আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাত খুবই কম হচ্ছে। এদিকে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত বেশিরভাগ নদীর উজান দিকে বাঁধ দিয়ে পানির স্বাভাবিক গতিপথকে বাধাগ্রস্ত করছে। তারা তাদের দেশের জন্য পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়ার ফলে বাংলাদেশ তার পানির ন্যায্য পাওনা হতে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে কৃষিকাজে ব্যাপক অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে-মাটির উর্বরতা কমে যাচ্ছে, মৎস্য চাষ ব্যাহত হচ্ছে, নানারকম রোগের সৃষ্টি হচ্ছে, গাছপালা মরে যাচ্ছে। এ সমস্যা নিরসনে উপযুক্ত ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে এবং তা এখনই।
আমরা আমাদের সভ্যতা, সমৃদ্ধির উৎস যে নদী, খাল ও বিল তাকে নির্বিচারে হত্যা করে চলেছি। আজ এক শ্রেণির লোভী, বিবেকহীন মানুষ সভ্যতার বাহন নদীর গলায় ফাঁসির রজ্জু পরিয়ে দিচ্ছে। সমাজের এলিট শ্রেণির লোকজন লোভাতুর হয়ে নদীমাতৃক বাংলাদেশকে একদিন নদীশূন্য বিরানভূমিতে পরিণত করতে উঠে পড়ে লেগেছে। তাদের দাপট সর্বত্র। সরকার তাদের মোকাবিলায় অপারগ হয়ে পড়েছেন বলে মনে হয়। নদী না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না, জাতি বাঁচবে না-বাংলাদেশ বাঁচবে না। এটা সকলেরই অনুধাবন করা উচিত।
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট। বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কার (১ম স্বর্ণপদক) প্রাপ্ত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।