বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী ও তার পরিবার থেকে শহরের দেওভোগ এলাকায় জিউস পুকুর দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষার দাবিতে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকালে জিউস পুকুর সন্নিকটে নারায়ণগঞ্জ জেলা হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যানারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপক কুমার সাহা। শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশে যোগ দেয়। ফেস্টুনে লেখা ছিল জিউস পুকুর দেবোত্তর সম্পত্তি।
গণসমাবেশের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেন জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ, জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, বাংলাদেশ ইয়ার্ণ মার্চেন্ট এসোসিয়েন, বাংলাদেশ নিটিং ওনার্স এসোসিয়েশন, জেলা আইনজীবি সমিতি, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির নের্তৃবৃন্দসহ বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠন ও জনপ্রতিনিধিরা।”ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার” শ্লোগান নিয়ে আয়োজিত এই গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও নেপালের সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক। প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী নির্মল চ্যাটার্জী।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক বলেছেন, জিউস পুকুর দেবোত্তর সম্পত্তি। এটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি। এবং রেকর্ডেও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত আছে। সেই সম্পত্তির যেই দলিলই করা হোক না কেন এটা অবৈধ ও ভুয়া দলিল। কাজেই এর বিরুদ্ধে আজকে যারা আন্দোলন করছেন এটা ন্যয় সংঘত আন্দোলন। এবং আন্দোলনের তীব্রতা ও সংঘবদ্ধ হওয়ার কারণে বিভিন্ন সংগঠন আপনাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, নাসিক মেয়র আইভী দেবোত্তর সম্পত্তিটি ফিরিয়ে না দিয়ে উল্টো বলছেন এটা তার পারিবারিক সম্পত্তি। যা অত্যন্ত দু:খজনক। এবং নিন্দীয়।
তিনি আরও বলেন, এখানে কাউন্সিলররাও বলেছেন জিউস পুকুর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করার জন্য। কিন্তু আপনি করতে দিচ্ছেন না বা করছেন না। কাউন্সিলর দায়িত্ব নিয়ে বলেছেন যেহেতু এটা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা তার দায়িত্ব তিনি এটা করবেন। কাজেই আমরা মনে করি এখানে অবৈধভাবে যারা আছেন তারা যদি আইনের শাসনে বিশ্বাসী হয় তাহলে অবৈধ দখল ছেড়ে দিবেন।
তিনি মেয়রকে উদ্দেশ্য করে বলেন, জিউস পুকুর দেবোত্তর সম্পত্তি এটা উদ্ধার হবে, যদিও আপনি বাধা দিয়ে রাখতে পারবেন না। রায় হবে, এবং রায় কার্যকরও হবে। অবৈধ দখলদার যারা আছেন তাদেরকেও এখান সরে যেতে হবে। এবং এটা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হবে।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, নগরীর দেওভোগ এলাকার কয়েক শত বছরের প্রাচীন দেবোত্তর সম্পত্তি লক্ষীনারায়ণ আখড়া ও মন্দির সংলগ্ন ঐতিহাসিক জিউস পুকুরটি দেখভাল করছিল মন্দিরের সেবায়েত ও মন্দির কমিটি। ভুমি জরিপের সিএস (বি্িরটশ) পর্চায় এই সম্পত্তিটি দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবেই রেকর্ডভুক্ত হয়। কিন্তু পঁচাত্তুরের পর স্থানীয় একটি চক্র জিউস পুকুরটি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠে। বিভিন্ন সময় জাল ও নকল দলিল তৈরি করে দখলের অপচেষ্টাও করা হয়।
বক্তাদের অভিযোগ, প্রায় ১০০ কোটি টাকা মূল্যের এই দেবোত্তর সম্পত্তি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর ভাইসহ পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন যাবত জাল দলিলের মাধ্যমে দখল করে রেখেছেন। অবৈধ দখলদাররা যে সব নকল ও জাল দলিল তৈরি করেছে তাতে মেয়র আইভীর মা এবং দুই ভাইসহ নিকট আত্মীয় বেশ কয়েকজনের নামও রয়েছে। এই সম্পত্তি রক্ষার দাবিতে মন্দিরে পক্ষ থেকে আদালতে মামলাও চলমান রয়েছে। দেবোত্তর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় যোগ্য নয় এবং কাউকে হস্তান্তর করারও কোন বিধান আইনে নেই উল্লেখ করে এই সম্পত্তি দ্রুত অবৈধ দখল থেকে উদ্ধার করে মন্দির কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে দিতে সরকারের কাছে দাবি করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা।
বক্তারা অবিলম্বে জিউস পুকুর দীঘির পাড়ে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা অপসারণসহ দেবোত্তর সম্পত্তিকে মন্দির কমিটির কাছে বুঝিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারের কাছে দাবি জানান। মিথ্যা মামলা দিয়ে দেবোত্তর সমত্তি রক্ষার আন্দোলন কোনোভাবে ঠেকানো যাবে না বলে হুঁশিয়ার দিয়ে বক্তারা যে কোন মূল্যে ভূমি দস্যুদের কবল থেকে নারায়ণগঞ্জের সকল দেবোত্তর সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত বলে ঘোষণা দেন।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- প্রধান বক্তা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শ্রী নির্মল চ্যার্টাজী বলেন, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ বাদল, মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি চন্দন শীল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মোহসীন মিয়া, নাসিক কাউন্সিলর শফি উদ্দিন প্রধান প্রমুখ।
এর আগে জিউস পুকুর ও লক্ষীনারায়ণ আখড়া মন্দিরের এই দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষার দাবিতে গত ১১ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে প্রথমবারের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল কম্সূচী পালন করেন জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ। কর্মসূচী শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন সংগঠনের নের্তৃবৃন্দ। পরবর্তীতে একই দাবিতে ২ ডিসেম্বর নগরীর চাষাড়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পালন করা হয় প্রতীকি অনশন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।