পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
‘শান্তির শহর’ বলে খ্যাত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নিবার্চন অনুষ্ঠিত হলো রক্তপাত, প্রাণহানি, কেন্দ্র দখল ও সহিংসতার মধ্য দিয়ে। নির্বাচনের পরিবেশ আগে থেকেই উত্তপ্ত ছিল। এ কারণে নির্বাচনের দিন সহিংস ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল নির্বাচন বিশ্লেষক, নাগরিক সমাজ ও প্রশাসনের তরফ থেকে। আশঙ্কা ও উত্তেজনা সত্তে¡ও দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যথাযথ নিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে আবারো চরমভাবে ব্যর্থ হলো নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন। এমনিতেই গত এক দশকে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি দেশের মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদল ঘটে থাকে এবং সারাদেশে একযোগে একদিনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় সেখানে ক্ষমতাসীন দলের প্রতি পুলিশ এবং প্রশাসনের পক্ষপাত হয়তো এড়ানো যায়নি। কিন্তু প্রতিটি স্থানীয় নির্বাচনে সে ধারা অব্যাহত রাখার মধ্য দিয়ে দেশের নির্বাচনব্যবস্থার প্রতি ভোটার ও নাগরিক সমাজের অনাস্থাকে এখন ভীতির পর্যায়ে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এ প্রবণতা আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, সে প্রশ্ন এখন প্রকট হয়ে উঠেছে। এ থেকে উত্তরণের কোনো রাজনৈতিক প্রয়াসও দেখা যাচ্ছে না।
গত বছর অনুষ্ঠিত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগেও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে আশঙ্কা দেখা গিয়েছিল। ভোটের দিন তারই প্রতিফলন দেখা গিয়েছিল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাতের ভোটসহ ব্যাপক নির্বাচনী অনিয়মের মধ্য দিয়ে বিতর্কিত নির্বাচন কমিশন স্থানীয় নির্বাচনে অন্তত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনবে এবং নির্বাচনকে সত্যিকার অর্থেই অংশগ্রহণমূলক করে তুলবে, এটাই ছিল সচেতন নাগরিকদের প্রত্যাশা। আদতে তা হয়নি। প্রায় প্রতিটি নির্বাচনেই নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা, অদক্ষতা এবং দুর্বল অবস্থানের চিত্রই ফুটে উঠেছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন তার সর্বশেষ উদাহরণ। যেখানে আগের নির্বাচনগুলো সরকারিদলের পক্ষে প্রায় একতরফা হওয়ার কারণে নির্বাচনে সব ধরনের অনিয়ম সত্তে¡ও সংঘাত-সহিংসতা এমন প্রকট হয়ে উঠেনি। চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে সে ধারায় নতুন বাস্তবতা দেখা গেলো। নির্বাচনে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি প্রার্থীরা টিকতে না পেরে রণে ভঙ্গ দিলেও সরকারি দলের মনোনীত ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা গোলাগুলি ও সংঘাতে প্রাণ গেল অন্তত ৫ জনের। এরা প্রায় সবাই সরকারিদলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থক বলে জানা গেছে। নির্বাচনের প্রার্থী, সমর্থক এবং প্রিসাইডিং অফিসারসহ নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশিত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। নির্বিঘেœ ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেয়ার উপযুক্ত পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই নির্বাচন কমিশন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব ছিল। সে দায়িত্ব পালনে তারা ব্যর্থ হয়েছে।
নির্বাচনের পর প্রশাসনের নির্লিপ্তভাব, নির্বাচন কমিশন এবং সরকারি দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি এবং বিরোধীদলের পক্ষ থেকে নানা অভিযোগ তুলে নির্বাচন প্রত্যাখ্যানের ব্যত্যয় হয়নি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভোটকেন্দ্রের চিত্র থেকে সহজেই বোঝা যায়, ভোটের পুরো দৃশ্যপট ছিল সরকারিদলের প্রার্থী ও বিদ্রোহীদের দখলে। তাদের কোন্দলের কারণে অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে নৈরাজ্যকর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। বিএনপির অধিকাংশ এজেন্টকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, ভোটের গোপন কক্ষ সরকারি দলের এজেন্টদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া এবং ভোটকেন্দ্রেরে বাইরে অস্ত্র ও পেশিশক্তির মহড়া ইত্যাদির দায়ভার নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে। নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে আসছে, আগামী নির্বাচনের আগে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে এই নির্বাচনটি নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি বড় পরীক্ষা ও চ্যালেঞ্জ ছিল। কমিশন এখানেও চরমভাবে ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এ ক্ষেত্রে প্রার্থী ও সমর্থকদের ভূমিকা নজরে রাখার দায়িত্বও নির্বাচন কমিশন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। দেশের অর্থনৈতিক রাজধানী চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের একটি ইতিবাচক শান্তিপূর্ণ ঐতিহ্য আছে। এবারের নির্বাচনে তা ব্যাহত হলো। নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, ব্যাপক ব্যাবধানে সরকারিদলের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী বিজয়ী হয়েছেন। অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হলে তিনিই হয়তো বিজয়ী হতেন। অথচ, এখন নির্বাচন ও বিজয় কালিমালিপ্ত হলো নির্বাচনে কমিশন ও প্রশাসনের ব্যর্থতায়। যাহোক, আমরা নবনির্বাচিত মেয়রকে অভিনন্দন জানাই। তিনি একজন স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ এবং যোগ্য প্রার্থীও বটে। বিগত দিনে চট্টগ্রাম নগরীর যে সব নাগরিক সমস্যা দূর করা সম্ভব হয়নি। তিনি তার সমাধান করতে পারবেন, এই প্রত্যাশা রাখছি। এই নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল, ভোট জালিয়াতি, সশস্ত্র মহড়া, সহিংসতা, বিশৃঙ্খলা ও প্রাণহানির ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী নির্বাচনগুলোকে যথাযথ নিরাপত্তা দিয়ে ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।